বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়) শ্রীশ্রী বুড়াশিব ধাম প্রতিষ্ঠীত । এমন্দিরটি দেখতে প্রাচীনতম আদলে নির্মিত । অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে এটি কত সালে প্রতিষ্ঠিত । এ প্রশ্নের জবাব এক কথায় দেয়া মুসকিল । কারণ ঐতিহাসিক মতে এ প্রশ্নের উত্তর খুজে নিতে হবে ।
শঙ্করাচার্য্যদেব (মহাশাস্ত্রবিধ, আত্মজ্ঞান, আত্মশক্তিতে মহাশক্তিধর ও সর্বজ্ঞাতা) প্রথম আবিষ্কার করেন বৃদ্ধগঙ্গার (বুড়িগঙ্গা) তীরবর্তী রমণার ঐ ভয়ঙ্কর বনমধ্যে মহাদেবের স্বয়ম্ভু মহালিঙ্গ এই বৃদ্ধ গঙ্গাধরকে । তিনি কাঁশিতে বসে কালিকাপুরানের অশীতিতম (৮০তম)অধ্যায় অধ্যয়নকালে লক্ষ্য করেন –
বৃদ্ধগঙ্গা জলস্যান্তস্তীরে ব্রহ্মসূতস্যবৈ
বিশ্বনাথাহবয়ো দেবঃ শিবলিঙ্গ সমন্বিতঃ ।। ২৩
বঙ্গানুবাদঃ বৃদ্ধগঙ্গা জল মধ্যে ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে, বিশ্বনাথ নামে শিবলিঙ্গ এবং যোনী মন্ডলরুপা মহাদেবী অবস্থিত ।
কতিপয় পংক্তিমালার উল্লেখ আছে । তিনি শাস্ত্রের বচন সত্য ভেবে বৃদ্ধগঙ্গার তীরে গঙ্গাধর বিশ্বনাথ দর্শন ও ব্রহ্মপুত্র নদে স্নান তর্পন কর্ম সম্পন্ন সংকল্পে তাঁর শিষ্য সহ পায়ে হেটে কাঁশি থেকে রওনা হলেন । বহুদূর পথ পাড়ি দিয়ে বহু মন্দির দর্শন করে শেষে ব্রহ্মপুত্র নদের প্রান্তদেশে প্রবাহিত বুড়িগঙ্গার তীরে এসে পৌছালেন । তিনি দেখলেন এক ভয়ংকর বনাকীর্ণ নির্জন স্থান । জনমানবহীন বনভূমি । কোন দেবতার মন্দির কোথাও চোখে পড়ে না । কিন্তু মনে সুদৃঢ় প্রত্যয় ।
আচার্য্যদেব বৃদ্ধগঙ্গাধর শিবের দর্শন না পেয়ে পূজামনসে আবিষ্টচিত্তে ভাবছেন । এমন সময় বনমধ্য থেকে বৃদ্ধ ব্রাহ্মণের বেশে এক অজ্ঞাত পরিচয় বৃদ্ধবর এসে আচার্য্য সকাশে উপনীত হলেন । বৃদ্ধ ব্রাহ্মণ আচার্য্যদেবকে জিজ্ঞাসা করলেন-তুমি কী কারণবশে এই ভয়ঙ্কর জঙ্গলে এসেছ বাবা ? কে তুমি বালক ? জিজ্ঞাসিত হয়ে আচার্য্যদেব ঐ দ্বিজবরকে বললেন-আমার নাম শঙ্কর।আমি কাশীতে বাস করি । শাস্ত্রে পড়েছি, এ-স্থানে বিশ্বনাথ আছেন । শাস্ত্রকথিত বাক্য মিথ্যা হবার নয় বলে সুদৃঢ় বিশ্বাস করি । কিন্তু এ স্থানে দেবতা স্থান দেখি না । মানবও দেখি না । তাহলে দর্শন অভিলাষ পূরিত হবে না ? দীনের ভাগ্যে বুঝি আর দর্শন হল না ! আচার্য্যদেবের মনোবেদনার কথা শুনে বৃদ্ধ দ্বিজবর তখন বালকদেবের উদ্দেশ্য বললেন- প্রভু, তুমি আমার বচন শ্রবন কর । আজ তুমি দয়া করে আমার গৃহে আগমন কর।আমি এই বনমধ্যে একা বাস করি । আমার এ-স্থানে কেহ নাই । আমি একা থাকি । তাই আমিও হতাশমনে একাকী পড়ে আছি । আমর অতিবৃদ্ধা পত্নীও আমার সাথে বাস করে এ স্থানে । তিনিও অতি বৃদ্ধা । কর্ম্মেও অক্ষমা । অনন্যোপায় হয়ে সেবার অভাবে অতিশয় ক্ষুণ্ণমনে এই বনমধ্যে একা পড়ে আছি । সেবার অভাবে আমি উপবাসী থাকি । দেশের লোক এসে কেউ জিজ্ঞাসাও করে না । এই হেতু অতি দুঃখেই কাল কাটাই আমি । তুমি চলো তবে এখন আমার ঘরে । বহুকাল হতে তোমার খোঁজ করি । কিন্তু বিধির এমনি লিখন যে এতকাল তোমার দর্শন পাই নি । আজ যখন দয়া করে দর্শন দিলেই, তবে এবার আমাকে উদ্ধার করো । তুমি ছাড়া কেই বা আমাকে উদ্ধার করবে।শঙ্কররূপে নরশ্রেষ্ঠ তুমি । তুমি দয়া করে এসো আমার ঘরে।আমিই তোমাকে সে-বিশ্বনাথ দর্শন করাবো । তুমি চলো আমার সঙ্গে ।
অজ্ঞাত পরিচয় বৃদ্ধ ব্রাহ্মণের কথা শুনে আচার্য্য শঙ্কর দ্বিজবরের অনুগমন করতঃ বনমধ্যে চলতে লাগলেন । কিছুদূর অনুগমন করতেই সে-দ্বিজবর কোথায় অন্তর্ধান হলেন । আচার্য্য শঙ্করের দৃষ্টিগোচর থেকে অন্তর্হিত হলেন । এমন আশ্চর্য্য কাণ্ড দেখে আচার্য্যদেব তাঁর সহগামী শিষ্যসন্তানের উদ্দেশ্যে বললেন-ঐ অজ্ঞাত পরিচয় ব্রাহ্মণবেশী অতি বৃদ্ধবরই বুঝি সেই দেবপরাৎপর বিশ্বনাথ।আচার্য্যদেব এই উক্তি করে ধীরে ধীরে বনমধ্যে অগ্রসর হলেন।বনপথে চলতে চলতে সামনে নজরে পড়লো পথের সামনে এক বিশাল অশ্বত্থ ও বিশাল বটবৃক্ষের যুগ্ম অধিষ্ঠান । শান্ত শীতল ছায়াঘেরা ঐ যুগ্মদেশে ক্লান্তদেহ আচার্য্যদেবের কিয়ৎ বিশ্রামের ইচ্ছা হলো । বিশ্রাম অভিলাষের ঈষৎ আশায় ঐ যুগ্মবৃক্ষ মূলের দিকে কিঞ্চিৎ অগ্রসর হতেই দেখলেন, জগতের স্বামী লিঙ্গরূপে পড়ে আছেন গলিতপত্রের আচ্ছাদনে । পরম উপাস্যদেবকে বৃক্ষমূলে পড়ে থাকতে দেখে শঙ্করাচার্য্যের মনে হলো,এই সেই বিশ্বনাথদেব ত্রিলোচন । বৃদ্ধ দ্বিজবরের ছদ্মবেশে কৃপাপরবশ হয়ে পথ দেখিয়ে স্ব-স্থানে তথা ঐ বৃক্ষমূলে নিয়ে এলেন । দর্শন দিলেন সেখানে দেব একাকী কতকাল ধরে অবস্থান করছেন । সেবা অভাবে করতে আদেশ করলেন । বললেন, এই মহালিঙ্গ উদ্ধারের নিমিত্ত তিনি একাগ্রমনে যত্নবান হবেন ।
শ্রীধাম দর্শন
ঐ অতি বিশাল বটবৃক্ষসনে আলিঙ্গনাবদ্ধ অশ্বত্থমূলে শম্ভু মন্দির স্থাপিত হয় পরে । রমণীয় বনানী প্রান্তর।অতিরম্য দেবতা দুর্লভ স্থান।সুমিষ্ট ফলে ফুলে ভরা । বকুল, চম্পক, নাগেশ্বর কদম্ব, কাঞ্চন ফুলে পল্লবিত অতি রম্য বনভূমি । তমাল, পিয়াল, ঋর্জ্জুর, তাল, দেবদারু ও শ্রীফলবৃক্ষ চারিদিক ঘিরে আছে । মাধবীলতার শাখায়িত শোভায় কী সুন্দর মনোলোভা এই নিভৃত বনভূমি । দূরে মনোদুঃখে কেতকী পুষ্প বিষন্নবদনে দাঁড়িয়ে আছে যেন ধিবের চরণে কত অপরাধী । ঐ গভীর বনকে বেষ্টন করে হিংস্র ব্যাঘ্র ঐ স্বয়ম্ভুরাজকে গর্জন রবে প্রদক্ষিণ করছে । এমন ভীষণ দৃশ্যতেও আচার্য্য শঙ্কর কোনরূপ ভীত না হয়ে জয় বিশ্বনাথ হুংকারে দুই বাহু তুলে শিবলিঙ্গ সমীপে উপনীত হলেন । সমীপবর্তী হয়ে দেখেন, নানাবিধ বন্যকীটে শিবের অভিন্ন সঙ্গী সহোচর হয়ে স্খলিত গলিত ঐ স্তূপীকৃত ছিন্নপত্রের আচ্ছাদনে ঢাকা শিবের মাথায় মহানন্দে খেলা করছে । শিবের এই ভাব দেখে আচার্য্যদেবের বুক ফেটে যায়।কিন্তু শিবের ছলনা বোঝে এমন সাধ্য কার । কে বুঝবে শিবের চাতুরীকলা । অতঃপর পবিত্র বুড়ীগঙ্গা জল, বিল্বদল ও রাশি বনজফুল, গন্ধ ধূপ দীপের নানা উপচারে ভক্তিভরে পূজন করলেন ঐ শূলপাণিদেবকে ।
মহালিঙ্গ উদ্ধারণ
আচার্য্যদেব শঙ্কর অতঃপর ঐ লিঙ্গমূলে ধ্যানমগ্ন যোগাসনে তিন অহোরাত্র শ্রীভগবান শিবের আরাধনা করলেন । রাত্রি শেষে প্রলয় পয়োধিসম ভীষন গর্জ্জনে মহাশব্দ উত্থিত হল সেই স্থানে । সমুদ্র মন্থন কালে মন্দার পর্ব্বতে যেরূপ সেই ভীতিপ্রদ মহাভীমধ্বনি উত্থিত হয়েছিল, ঠিক সেইরূপ ভয়ঙ্কর মহাশব্দ শ্রবনে আচার্য্যদেব উদ্ভ্রান্তচিত্ত হলেন । বুড়ী-গঙ্গাজলের প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপে দেখলেন সেখানে মহাতেজের আবির্ভাব হয়েছে । সেই মহাতেজ দর্শনে শঙ্করের চিত্ত ব্যাকুল উদ্বেল হল । ভয়ে থর থর হলো শঙ্করের সমগ্র সত্ত্বা । এমন মহাতেজের আভির্ভাব দেখে তিনি দিশাহারা হলেন । এবং মোহগ্রস্ত হয়ে শঙ্কর নিজ অন্তর থেকে বিচার করে জ্ঞাত হলেন মহাতেজ সৃষ্ট এই ভয়ঙ্করতা নিশ্চয় শিবের শাম্ভবী মায়া । স্থির নিশ্চয় আত্ন প্রত্যয়ে বশীভূত হয়ে তাই নিজ জানুদেশ ভূমিতে স্থাপন করে একাগ্র মনে শম্ভুনাম উচ্চৈঃস্বরে উদগীরণ করতে লাগলেন। দেব পঞ্চাননের উদ্দেশ্যে স্তব করতে লাগলেন । তুমি বিপন্নজনের বন্ধু। দুঃখ অপরাধী তুমি । হে ত্রিপুরারি, তুমি আমাকে দয়া কর । তুমি বিশ্বেশ্বর । বিশ্ববন্ধু তুমি হে দিগম্বর । অনাথ সন্তানের প্রতি কৃপাপরবশ হও । সংসারের ভীতি হতে পরিত্রাণ করো । তোমা ছাড়া আমার গতি নাই । তুমিই প্রভু করুণানিদান । ভূমিস্থিত যত বৃক্ষলতা আদি প্রলয়কালে তোমাতেই লয়প্রাপ্ত হয় । তেমনি জীবের স্রষ্টাও তুমি । জীবসৃজন করে আবার মহাকালরূপ ধারণ করে তুমিই শেষে সংহার করো । দেবতা গন্ধর্ব্ব আদি যত সিদ্ধগণ ও সুরাসুর নরনারীও তোমারি সৃজন । গঙ্গা আদি তরঙ্গিনী ও সমুদ্র তোমাতেই অবস্থান করে হে চন্দ্রমৌলে । সুক্তিতে রজত যেমন নিজেকে ভুলে ভ্রান্তিবশে অবস্থান করে, তেমনি জীবও জগৎমায়ায় মোহিত হয়ে স্ব-আমিত্ব ছাড়তে পারে না । তোমারই মায়াবশে এই জগৎ সৃজিত হয়েছে । তোমার এ-মায়া কে বুঝবে, বলো হে ত্রিলোচন । আমি অতি দীন হীন । তুমি আমার প্রতি সদয় হও । দয়াপরবশ হও । আমাকে ক্ষমা কর । ইত্যাদি বলে শঙ্কর অনেক স্তব স্তুতি করলেন । তাঁহার বন্দনায় পরম ঈশ্বর আশুতোষ তুষ্ট হলেন । শিবের চরণে প্রণাম করে শঙ্করের অন্তর প্রফুল্ল হল । প্রণামান্তে আচার্য্য শঙ্করের চিত্ত ভাবে গদগদ হল ।
কমল আঁখি উন্মীলন করে যেই আশুতোষ পানে তাকালেন, তেমনি নজরে পড়লো শীতাংশু সমান এক মহাতেজের প্রাদুর্ভাব হয়েছে । যতই সে অলৌকিক মহাতেজ পানে দৃষ্টি দেন ততই তাঁর দৃষ্টিপাতে সাগরমন্থনোস্থিত নবনীর মত শুভ্রবৃষ দর্শনে আচার্য্য দেবের অন্তরে অচিন্ত্য পুলক সঞ্চার হল । ব্যাঘ্রচর্ম্ম পরিহিত সেই পরমধ্যেয় পশুপতির এমন রূপমাধুরী দেখে শঙ্কর অভাব্য পুলক শিহরণে ক্রমশঃই রোমাঞ্চিত হতে লাগলেন । দেখলেন, ব্যাঘ্রচর্ম্ম পরিহিত সেই পশুপতির শ্রীদেহকান্তি স্বচ্ছ স্ফটিকের মত উজ্জ্বলতায় জ্যোতির্ম্ময় মূর্ত্তিতে জ্যোতিম্মান । কোটি সূর্য্যের মহাজ্যোতি বিচ্ছুরণে দেবদেহ ঝলমল করছ । আর কোটি চন্দ্রের শীতলতায় তাঁর দিব্যদেহশ্রী যেন শ্রান্তিহরা সুশীতল । শ্রীভগবানের ঐ কলেবর জড়িয়ে যুক্ত রয়েছে সর্প । ঠিক যেন দেব অঙ্গে শোভায়মান । সেই নীলকন্ঠদেবের শিরোপরি চপলা সদৃশ পিঙ্গলজটা আর ঐ শ্রীঅঙ্গ আবরিত করে রয়েছে ব্যাঘ্রচর্ম্মের উত্তরীয় । এতাদৃশ শিবদর্শন শঙ্কর অভিভূত হলেন । সেই আরাধ্যদেব ত্রিলোচনের যুবাশ্রেষ্ঠ সচ্চিদানন্দ সেই অতি মনোহর দিব্যমূর্ত্তি শুভ্রকায় মহাবৃষের পৃষ্ঠদেশে আরূঢ়মান দেখে আচার্য্য শঙ্কর অভাবিত আত্ননন্দে দিশাহারা হচ্ছেন।অনির্ব্বনীয় আনন্দে মোহিত হচ্ছেন । আরও দেখছেন, সেই সুদর্শন বৃষের পৃষ্ঠদেশের একাংশে সমারূঢ়া নীলেন্দীবরলোচনী দেবী ত্রিনয়না জগন্মাতাকে সাক্ষাৎ দর্শন করে মহামতি শঙ্কর অতি তুষ্ট এবং অনির্ব্বনীয় আনন্দে আত্নহারা বোধ করছেন । পূর্ণচন্দ্রাননা মাতার সে-দিব্যরূপ বর্ণনার অতীত । আচার্য্য শঙ্কর দেখছেন, জগন্মাতার সে-সুশোভিতা স্তনযুগল যেন বিন্ধ্য পর্ব্বতের ন্যয় সু-উচ্চভারে মায়ের শ্রীতনু যেন অবনমিত।মায়ের কটিদেশ অতীব তন্নী ওসুক্ষ্ম । তনুশ্রীখানি অতি রমণীয় আভরণে সুবেশ ধারিনী । শ্রীদেহের দিব্যগন্ধে চতুর্দ্দিক আমোদিত । দিব্যবস্ত্র, দিব্য মাল্যথরা পরিধানা অতি মনোহারিনী রূপলাবন্য ফেটে পড়ছে মায়ের সর্ব্বদেহ থেকে । শ্রীমুখ খানি তাম্বুলের রক্তরাগে সুশোভিত । শিব অঙ্গে নিজঅঙ্গ ঢেলে রূপবতী জগন্মাতা যেন অভিসারিকার লীলানৈপূন্যে শিবের আলিঙ্গন পিয়াসে ব্যাকুলিত প্রাণা । মায়ের সেরূপ জগতের উপাদানস্বরূপে অরূপা । জগতের সমস্ত সৌন্দর্য্যরাশি বিশ্বজননী নিজ অঙ্গে ধারণ করে বিশ্বরূপা মূর্ত্তিতে প্রতিভাত হচ্ছেন । মায়ের এমন রূপলহরী দর্শনে প্রফুল্লচিত্ত শঙ্করার্য্যদেব কৃতাঞ্জলিপুটে ভক্তিবিনম্রচিত্তে মায়ের স্তবস্তুতি করতে লাগলেন ।
দেবীস্তুতি
মা, তুমি অশুভনাশিনী, বিশ্বরূপা শিব সীমান্তিনী । তুমি জগৎময়ী সাকারা বিশ্বমাতা হয়ে প্রকাশিতা । মা তুমি নিরাকারা । তোমার তত্ত্ব বর্ণণের সাধ্য কার । মা তারা তুমি । তোমার তত্ত্ব বর্ণনের সাধ্য কার । মা তারা তুমি । তোমার রাঙ্গা চরণ এই প্রসন্ন দীন সন্তান অহরহ পূজন করে । মা, তুমি মহেশযোগিনী মূর্ত্তি । বৈরাগ্যে তুমি সদায় বিভোরা । মা, তুমি গায়ত্রী সাবিত্রী শক্তি লীলারূপ ধরে জ্ঞানরূপে জগৎজনেরমুক্তিদাত্রী । সদা চিত্তে ত্রিপুরারী, জগত তারীনী তুমি, এই তোমার স্বরূপ । আর সকলে তোমারই কিঙ্কর মাত্র । ত্রিতাপ জ্বালায় সর্ব্বদা আমার অন্তর দগ্ধ হচ্ছে । ভবক্ষুধা পিপাসায় নিরন্তর কাতর হয়ে ভয়ে ভীত, মোহে অন্ধ হয়ে কোন উপায় দেখি না । তাই এই অনাথ অকৃত দীন সন্তান তোমার চরণ ভিখারী হয়েছি । তোমার এই দীন সন্তান তোমার রাতুল চরণে প্রণাম করি । মা, এ সংসারে প্রান্তর মহারণ্যময় এক ভীষণ কারাগার তুল্য মনে হয় । ছয় রিপুর সাথে অবিরত দারুণ সংগ্রামে ক্লান্ত হয়েছি । রিপুর নিরন্তর আক্রমণ রোধে অপারগ হয়েছি । তুমি এই দুষ্কৃত কর্ম্ম থেকে আমাকে উদ্ধার কর।মুক্ত কর । মা, তুমি একমাত্র গতি । তুমিই জগত তারিণী মা আমার । তুমিই বিপদবারিণী মা তারা । মা, তুমি এই বিপদ থেকে আমাকে ত্রাণ কর । মা, কামনার অন্ত নাই । অনন্ত অপার সমুদ্রের মত কামনা বারিধিও অনন্ত অপার । বায়ুর মত আশাও বেগে বয়ে চলেছে । জলোচ্ছাস সৃজিত অনন্ত মেঘপুঞ্জরাশির মত কর্ম্মঘোরও অগণিত । অনন্তমোহ মা তোমারই সৃজন । আর মোহঅন্ধে অনন্ত জন্মও তোমারি সৃজন । এই ভয়ঙ্কর বারিধি হতে তুমি আমাকে পরিত্রাণ করো, মা । এ-বিপদে, মা, তুমি আমাকে রক্ষা করো । তোমার চরণে এই প্রার্থনা আমার । মা, তুমি লীলাবশতঃ অসুর বিনাশ করে দেবতার জননী হয়েছো । মা, তোমার দানব দলনী চন্ডীচরণে প্রাণিপাত হই । মা, তুমি অনন্তরূপা অন্নতশক্তিরূপিনী জগজ্জননী মা তুমি সঙ্কটনাশিনী । মা সঙ্কটে রক্ষা কর । জগতজনে ত্রাণ করে তুমি জগতজননী হয়েছ । কলুষ নাশিনী তোমার শ্রীপাদপদ্মে আজ শরণাগত হয়েছি । মাগো, তোমার স্বরূপে দ্বৈত প্রবঞ্চনা নাই । নানা খেলার ছলনায় মায়াতে তুমি নানারূপ ধারণ কর।তুমি বিষ্ণু আরাধিকা মায়া । তুমি যোগরূপা । তুমি অনন্ত অপারাজিতা । তুমি মা অভয়দায়িনী । তুমি ঈড়পিঙ্গলা সুযুম্নারূপে দুঃখহরা মা দুর্গা । তুমিই সত্য সনাতনী আদ্যামাতা,শচীমাতা । তুমি সরস্বতী । তুমি মা উমা, ভীমা, কালরাত্রি তুমি । তুমি সতী অরুন্ধতী । যোগৈশ্চর্য্য পূর্ণা মোক্ষস্বরূপিনী তুমি মা আমার জননী । হে ত্রৈলোক্য জননী, তোমার শ্রীপদ প্রণাম করি । মা, অজ্ঞান কামনার অসুর আক্রমনে আমার মনে বড় ত্রাস তুমি এই অজ্ঞান কামনা রাশিকে বিনাশ করো, মা জগত তারিণী ।
বরদান ও আদেশ
আচার্য্য শঙ্করের এইরূপ স্তবে আশুতোষ ও হৈমুবতী যুগলেই খুব তুষ্ট হন । অতঃপর শূলপাণিদেব শঙ্করের আরাধনায় পরম তুষ্ট হয়ে বললেন –
তোমাকে আমার অদেয় বস্তু কিছুই নাই । আমার কাছে এই স্থানে তুমি যা চাইবে, তাই পাবে । তুমি আমার তপোধন । তোমার কী বাসনা, সরলমনে বলো আমাকে । শঙ্কর অতি ভক্তিপ্লুত বিনম্রতায় তদুত্তরে বললেন-হে প্রভু, তোমাকে প্রকাশ করাই দীনের একান্ত বাসনা । শঙ্করের এই শুভ বাসনা শুনে এ্যম্বক বললেন- তুমি পুরুষরত্ন । এখন তবে একাগ্রমনে আমার বচন শ্রবন কর তুমি । এতদিন এই গভীর অরণ্যমাঝে বিশ্বনাথ শিবলিঙ্গ সকলের অগোচর ছিল । এখন তুমি আমার মহিমা জগত মাঝে প্রচার কর । এখন থেকে তুমি ‘বুড়াশিব’ নামে আমাকে প্রকাশ কর । আর প্রকাশ কর ‘বৃদ্ধাশ্রম’ আমার শক্তি । আমি বৃদ্ধেশ্বর । আমাকে এইবলে মানবমাঝে প্রকাশ কর । রমণীয় স্থান বলে আমি এই বনমধ্যে বাস করি । আমার এই আবাস ভূমি সময়ে রমণা নামে প্রকাশ হবে । এই স্থানে যেজন সাধন করবে, তার সর্ব্বসিদ্ধি হবে । পূর্ণমনষ্কাম হবে তার সকল বাসনা । আচার্য্য তখন দেবত্রিলোচনের উদ্দেশ্য কাতরপ্রাণে নিবেদন করলেন-দয়াময় প্রভু অজ্ঞান জীবগনের কী উপায় হবে । বেদজ্ঞদ্বিজ বেদার্থ জ্ঞাত হয়েও সত্যপরায়ণ হয়েও প্রকৃত সাধবিষয়ে কেন মনন করে না । কেহ বা সাধন করেও আত্নাকে সম্যক অবহিত হতে পারে না । আবার কেহ বা জেনেও সব মিথ্যা বলে ভ্রমগ্রস্থ হয়ে পড়ে । এ বিষয়ে আমার সন্দেহাকূল অন্তরের সংশয় ছিন্ন করো তুমি হে দিগম্বর । ত্রিলোচন শঙ্করের এই প্রার্থনা শুনে আদর করে বললেন-ভক্তি ছাড়া কে বা মোরে লভিবারে পারে ।
সাধনা ও সিদ্ধি
ত্রিলোচন বললেন-আমার(শিবের মায়া) দৈবগুণময়ী সুদুষ্করা, দূরগম্যা এবং অতি ভয়ঙ্করা মায়া । যারা আমাকে প্রাপ্ত হতে অক্ষম হয়, তারা পুণঃ পুণঃ নানা যোনি ঘুরে বারম্বার সংসারে ঘোরপাক খেয়ে মরে । এইরূপ কোটি জন্মে সে-জীবের আমার প্রতি ভক্তি উৎপন্ন হয় । এবং এটাও নিশ্চিত জানবে ভক্তিই মুক্তির একমাত্র হেতু । আমাতে যার সুদৃঢ় ভক্তি হবে, সে এ ভব সংসারে আর পুর্ণবার আসবে না । আমার উপর অচলা ভক্তি সৃজিত হবে, তার তত্ত্বজ্ঞান লাভের অভাব হয় না । যার শতকোটি জন্মেও জ্ঞানলাভ হয় না-সে আমার প্রতি ভক্তিহেতুই অবশ্যই নিস্তার পাবে । যাগযজ্ঞ ব্রত আদি যত কর্ম্মই করো, কিন্তু আমার প্রতি ভক্তিবীনা কিছুতেই মুক্তি নাই তার । এ মহাসত্যটি জানবে নিশ্চয় । আত্নযোগ জ্ঞানযোগ প্রভৃতি সাধনের ভক্তিই জানবে একমাত্র মুক্তির কারণ । হে আমার তপোধন, তুমি বিষন্ন হয়ো না । আমার বচন শুন সকল নিদানে বন্ধু আমি ত্রিলোচন । নিজের কর্ত্ততাভিমান ছেড়ে আমাতে আত্নদান কর । আত্নসমপর্ণের তুল্য আমার অন্য কোন বিধান নাই, জানবে । আমার প্রতি পরাভক্তির আত্নসমর্পণই একমাত্র লক্ষণ।অতঃপর, আমাকে সাধন করার আর কোন বিধান নাই, জেনো । আচার্য্য ব্ললেন-প্রভু, কী তোমার প্রকৃতভক্তি কী তার লক্ষণ, কী তোমার সাধন, এ বিষয়ে জানতে সাধ হয় আমার । কী কর্ম্ম করলে জীব ভবনদী পার হয় । কী করলে পরাভক্তি উজ্জীবীত হয় । দুরন্ত প্রবৃত্তিরাশির পরম নিবৃত্তিলাভ কী করে ক্ষইয়প্রাপ্ত হয়, হে গিরিজাকান্ত প্রভু তোমার সন্নিধানে জানতে সাধ হয় আমার । ভবেশ বললেন-ওহে তপোধন শুন, সকল কর্ম্মের সাক্ষী আমি ত্রিলোচন । যে জীব সমস্ত কর্ম্মফল আমাতে সমর্পন করে শুধু আমাকেই স্মরণ করে সাধন করবে, যাগযজ্ঞ, অধ্যায়ন করবে, না দান করবে, সেই আমার প্রিয়ভক্ত হবে । আমার শাস্ত্রের এই বিধান, জানবে । যজ্ঞকারী ব্রাহ্মণের গৃহ হতে যজ্ঞানুষ্ঠানকৃত ভস্মাবশেষ অগ্নিমন্ত্র পাঠ করে বিশুদ্ধ মনে অঙ্গে বিলিপ্ত করে, সেই ভস্ম দ্বারা যে আমাকেই স্মরণ করে, আমার অর্চ্চনা করে, তার নানাবিধ মহাপাপ খণ্ডন হবে । যে রুদ্রাক্ষের মালা অঙ্গে ধারণ করে, সেই আমার প্রীতিভাজন ভক্ত । তার মত প্রিয় ভক্ত আমার আর কেহ নয় । যে আমার পঞ্চাক্ষর যুক্ত মন্ত্র জপ্ করে, সেই আমার প্রীতিভাজন অতিপ্রিয় ভক্ত । ভস্মশায়ী হয়ে যে নর নিরন্তর রুদ্র অধ্যায় পাঠযোগ করে, সেই আমার প্রিয় ভক্ত । যে-ভক্ত নিজ আত্না হতে অভেদজ্ঞানে বিশুদ্ধ মনে এই চরমসত্যটি উপলব্ধি করে, জড়দেহে থেকেও সে নিশ্চয় আমার সমতুল্য হবে । ঋগ্বেদ, যজুর্বেদ, অথর্ব্ববেদ, শিবকৈবল্য ও শ্বেতাশ্বতর উক্ত যাহা, তাহাই আমার রুদ্রসুক্ত । যে অতি সযত্নে উপনিষদ্ পাঠাভ্যাসে সদায় মননিযুক্ত রাখে, পৃথিবীতে সেই আমার অতি প্রিয়ভাজন প্রিয়ভক্ত । এই আমার অমোঘ বচন, জানবে । যে বৈদিকাগ্নি, স্মার্ত্তাগ্নি ও শৈবাগ্নি উদ্ভত বিভূতি প্রণবোচ্চারণ দ্বারা বিশুদ্ধমনে মন্ত্রপূত করে আমার পূজন করে, সেই নর আমার প্রীতিভাজন হয় । যে গৃহের যজ্ঞকৃত দাবাগ্নি ভস্ম মন্ত্রোচ্চারণ দ্বারা সে ভক্ত সর্ব্ব অঙ্গে বিলিপ্ত করে, সে-ভক্ত যদি জাতিতে শূদ্র কূলোদ্ভবও হয়, তবুও সে নিশ্চয় মুক্তি পাবে, এই আমার শিববাক্য, দৃঢ়নিশ্চয় জেনো, হে তপোধন । যে বিশেষতঃ গিরিজাত পুষ্প, কুশ, ধুস্তর ফুল ও বিল্লবদলে প্রণামোচ্চারণ করতঃ নিত্য আমার পূজন করে, জগত মাঝে সেই আমার প্রিয় ভক্ত হয় । প্রণবের তুল্য মন্ত্র নাহিক আমার । আর কিছু বলার নাই আমার, হে গুণধর । পত্র পুষ্প ফল মূল নানা উপচার সহ প্রণব মন্ত্র উচ্চারণ করে যে আমার পূজন করবে, সে ভক্তের জন্ম কর্ম্ম ফল সফল হবে । নিয্ প্রণব মন্ত্র হতে তার কোটিগুণ ফল লাভ হবে । বলেছি না-প্রণবের মন্ত্র তুল্য নাহিক আমার । আমার তত্ত্বজ্ঞান মহিমা যে প্রচার করে, নিশ্চিত জেনো সেই ভক্তই আমার প্রিয়ভক্ত । আমার এ বচন কভু মিথ্যা নয়, সবিশেষ জেনো, বৎস । প্রদোষকালে যে আমার পূজন করবে, সে সত্ত্বর বাসনারূপ ফললাভ করবে এবং অবশেষে আমাতেই লয় প্রাপ্ত হবে । এই আমার সত্যবাক্য, সুনিশ্চিৎ জেনো । বিভূতি ভূষিত অঙ্গে কৃষ্ণপক্ষে যে আমার অর্চ্চনা করবে, সে আমার প্রিয়ভক্ত । যে একাদশী রাত্রিতে আর প্রতি সোমবারে উপবাসী থেকে আমার পূজা করবে তাকে আপদ বিপদে কখনো পাবে না । অতি আনন্দে সে জীবন কাটাবে । যে পঞ্চামৃত পঞ্চগব্য পুষ্পসজ্জিত হয়ে কুশযুক্ত ফুলে তামার রুদ্রমুক্ত পাঠ করে অতি সযত্নে আমার অভিষেক সরবে, সেই আমার সর্ব্বপ্রেষ্ঠ ভক্ত । নাভিজলে অবস্থান করে আদিত্য অভিমুখে দাঁড়িয়ে যে সূর্য্যমণ্ডলের ধ্যানে যে সুখমগ্ন হয় এবং ঈশপোনিষদের সুরে তান ধরে যে অথর্ব্ব শ্রুতির গান আমার মন্ত্র উচ্চারনকরতঃ সতত আমার পাশে ভক্তি করে, সেই আমার ভক্তিযোগের প্রকৃত অধিকারী হয় । হে বৎস, এই আমার ভক্তিযোগ তত্ত্ব, তোমার সকাশে ব্যক্ত করলাম । কামধনুস্বরূপ আমার এ ভক্তিযোগ সাধন করলে আর কোন ভেদ থাকবে না । এই আমার পরম যোগ । এই আমার সার কথা তোমাকে বললাম । বলো বৎস, আমার সকাশে তোমার আর কী জিজ্ঞাসা আছে ? শিবের শ্রীমুখ নিঃসৃত ইত্যাকার বচন শুনে সুমতি শঙ্কর বিশ্বনাথের প্রতি করপুটে নিবেদন করলেন যে বর্ত্তমান এই স্থানে অর্চ্চনাবিহীন অবস্থায় এ্যম্বক পড়ে আছেন । তোমার কোন সেবক নাই এস্থানে সেবাবিহীন কৃৎ অপরাধের শেষ নাই । প্রভু,তুমি দীনবন্ধু । এখন দয়া করে বলো প্রকৃত অপরাধের কী উপায় হবে । মহেশ তখন শঙ্করের প্রতি বললেন-বৎস, তুমি না আমার ভক্ত প্রধান । আমার লীলা প্রকাশ করার বিধান দিলাম তোমাকে । এতদিন তোমার বাসনায় আশাপথ চেয়ে বসেছিলাম এই বন মাঝে । আমার অনিচ্ছা বশে আমাকে প্রকাশ করে, ধরামাঝে হেনজন আছে কী কোথাও ? আমি নির্গুন,নিরাকার, গভীর অন্ধকার আমার স্বরূপ । আমাকে সগুণে কল্পনা করে পৃথিবীতে এমন সাধ্য কার আছে।মানব ও দুর্লভ দেবতার সাধ্য নাই আমাকে প্রকাশ করে । আমার ইচ্ছা ছাড়া আমাকে প্রকাশ করবে কে ! তুমি আমার প্রিয়ভক্ত । তাই তোমার একান্ত সান্নিধ্যে এই ঘোর অরণ্য মাঝে এই মহা বৃক্ষ মূলে আমার মায়াকথা সবিস্তারে প্রকাশ করলাম । তোমার আগ্রহে আমি অমূর্ত্ত স্বরূপ হয়েও মূর্ত্তিমানরূপে দর্শন দিয়ে তোমার মনোরথ পূরণ করলাম । তুমি আমার পুরুষরত্ন । তপোধন তুমি । তোমার ভক্তিতে আমি স্বরূপে তোমার কাছে প্রকাশ হলাম । ভক্তিভাবে যে আমাকে সযত্নে ডাকে, আমি সতত তার সহায় হই । তোমার এই উৎসবের দিনে তপঃ সিদ্ধি এই আমার বিধান প্রদান করলাম তোমাকে । সকল ভক্ত মিলে আজ তোমরা সকলে উৎসব করো । যে বিধানমত আমার পূজন করবে তার সকল অভীষ্ট সফল হবে । আমাকে সাধনের এই আমার পরম কৌশল তোমার সন্নিধানে আজ ব্যক্ত করলাম । এখানে উল্লেখ থাকে, স্বামী ভূমানন্দ শ্রীশ্রী বাবার মন্ত্রশিষ্য সন্ন্যাসী ।
লক্ষণীয়
১. কালিকাপুরানে উল্লেখ বৃদ্ধগঙ্গার (বুড়িগঙ্গা) তীরবর্তী রমণার ঐ ভয়ঙ্কর বনমধ্যে মহাদেবের স্বয়ম্ভু মহালিঙ্গ এই বৃদ্ধ গঙ্গাধর ।
২. শংকরাচার্য্যের প্রথম আবিষ্কার ও দর্শন লাভ বৃদ্ধব্রাহ্মন বেশে এবং আদিষ্ট হওয়া বুড়াশিব নামে জগৎ মাঝে প্রচার করার ।
৩. ভগবান ব্রজানন্দের নানা বাণী
-লোকনাথ তো আকাশের উপর দিয়ে হেঁটে যেত । ওর একবার খুব অসুখ করেছিল, গিয়েছিলাম ওকে দেখতে । বলেছিলাম দেখ কে এসেছ তোমার সামনে । বুড়াশিব এসেছে তোমার কাছে । শোনা মাত্র ও উঠে বসেছিল । অসুখ নিরাময় হয়েছিল । দেখেছ ব্রজানন্দের লীলা ।
-তিনি প্রায়ই স্বীয় পরিচায়ক ধ্বনি দিতেন – “বোল্ একবার সব কা বানানাওয়ালা আদিপুরুষ ভগবান ব্রজানন্দ জীউ কী ।” “বোল্ একবার অযোনী স্বয়ম্ভু ভগবান ব্রজানন্দ জীউ কী ।” “আমি তো নিরাকার ছিলাম । সাকার হলাম হুংকার দিলাম । এই তোমাদের ওঁকার ।”
-আমি স্বয়ং ভগবান । এবারের ঘোরকলিতে বুড়াশিব আমার মর্ত্যপরিচয় । আমি এবার আবার এসেছি জীবের দুঃখ মোচন করতে । প্রেম ও শান্তির বাণী প্রচার করতে ।
আশা করি এবার আর বুঝতে বাকি নাই ।