“পরমেশ্বর ভুবনে স্বাগত”
আত্মানাং বিদ্ধি=নিজেকে জানো বা আত্মাকে জানো।
আত্ম উপলব্দি ও আত্মরুপান্তরের এ অভিযাত্রায় আপনাকে অভিনন্দন।
নিজেকে জানুন, বিকশিত করুন নিজের অসীম সম্ভাবনাকে।
সংসারী লোক তো মরিতে আসিয়াছে। আর আমরা মৃত্যুকে জয় করিতে আসিয়াছি।
আপন আত্মা পরমাত্মার স্বরুপ, এই অভেদ উপাসনা। এই উপাসনায় জীব সকল সিদ্ধি লাভ করিতে পারিলেই পরস্পরে বিবাদ বিসম্বাদ, হিংসা দ্বেষ থাকিবে না। জীব সকল শান্তি লাভ করিবে, অশান্তি ভোগ করিতে হইবে না। এই সত্য জ্ঞানের অভাব হেতুই জীব সকল অশান্তি ভোগ করিতেছে। আমি এই জ্ঞান জীবের অন্তরে প্রকাশ করিয়া সর্ব অমঙ্গল দূর করিয়া মঙ্গল স্থাপন করিব।
জগৎগুরাচার্য্য পরমহংস পরিব্রাজক শ্রীমৎ স্বামী ব্রজানন্দ সরস্বতী জীউ (১৭১৯ – ১৯৭৯খ্রিঃ) ছিলেন সনাতন ধর্মের পরমপুরুষ। “পৃথিবীর বিভিন্ন ধর্ম্মাবলম্বী চিরস্মরণীয় সাধক ও মহাপুরুষগণের মধ্যে ঠাকুর ব্রজানন্দের স্থান একটু স্বতন্ত্র কারণ তিনি সাধক নহেন স্বয়ং স্বাধ্য উপাসক নহেন উপাস্য এবং কোন ঠাকুর-দেবতার আরাধনা করেন না। ভগবান ব্রজানন্দ সকল ঐশ্বর্য্যে বিশ্ববিধায়ক”- তাঁর শিষ্যসমাজে, এমনকি তাঁর আধুনিক ভক্তসমাজেও তিনি ঈশ্বরের অবতাররূপে পূজিত হন।
“হরে ব্রজানন্দ হরে, হরে ব্রজানন্দ হরে, গৌর হরি বাসুদেব, রাম নারায়ণ হরে।”-এই তারকব্রহ্মনাম নাম আমি গোলক থেকে এনেছি। এই নামের মধ্যেই আমার পরিচয়। সত্যযুগে আমি নারায়ণরূপে, ত্রেতাযুগে রামরূপে, দ্বাপরযুগে কৃষ্ণরূপে ও কলিযুগে গৌরহরিরূপে। এখন ঘোর কলিতে পাপী উদ্ধারী ব্রজানন্দ রূপে।
এই বৃক্ষাধি জীবকূল যা দেখছো, সব আমারই সৃষ্টি। আবার সব আমাতেই লয় হবে।
এই জগতে সর্ব্বত্রই একমাত্র গুরুদেবেরই লীলা খেলা। একমাত্র ব্রজানন্দই জগৎ ব্যাপিয়া আছেন। এই জগতে যা কিছু সবই “ব্রজানন্দ”।
আমি সর্বভূতে বিদ্যমান। আমাকে বলে যেখানে যা অর্পণ করবে তাহা আমাতেই যাবে।
আমি নির্গুণ নিরাকাররূপে এবং সগুণ সাকার রূপে চরাচর বিস্তার আছি। আমা হইতে দ্বিতীয় কেহ নাই। এই সংসারে সব উপাধিই আমার অথচ কোন উপাধিই আমার নয়।
গুরুতে সব সমর্পন কর। গুরুকে ভালোবাস। ঠিক ঠিক ভালোবাসা। যা তা না। গুরু ছাড়া জানে না । তাকে না দেখলে থাকতে পারে না। নিজের ভালোমন্দ দুই-ই জানেনা। কিসে তাঁর শান্তি এই চিন্তা। এই ঠিক ভালোবাসা।
নব যুগের নব অবতার ব্রজানন্দ স্বামীজীর বাণী
নব যুগের নব অবতার ভগবান ব্রজানন্দ স্বামীজীর “বাণী” মাত্র একটি কথায় বলা যেতে পারে, যে বাণী তিনি দিবানিশি সদা সর্বদা উচ্চারণ করেছেন “শিবোহম্”। এ বাণী ভারতের নিজস্ব অতি অন্তরের বাণী। এই বাণীই সংক্ষেপতঃ ভারতের উপনিষদ, ভারতের বেদান্ত, ভারতের দর্শন শাস্ত্র। ভারতবাসী আজ এই মহাকাব্য ভুলেছে বলেই না তার যত দুঃখ দৈন্য, দারিদ্র্য ও দুর্গতি, ব্রজানন্দ স্বামী তাই আজ এই আত্মবিস্মৃত জাতির দুয়ারে দুয়ারে করাঘাত করে জলদ গম্ভীর নিনাদে ঘোষণা করেছেন–
“ওগো ভারতবাসী, আত্মনম্ বিদ্ধি।”
ভাব একবার তুমি কে? দুঃখ দৈন্য দারিদ্র্য প্রপীড়িত মুঢ় জীব। মিছাই তুমি যশ মান অর্থের কাঙ্গাল হয়ে ভিক্ষুকের মত দ্বারে দ্বারে ফিরছ, একবার ফিরে চেয়ে দেখ নিজ অন্তরের ঐ অন্দর মহলে – আত্মার মনি কোঠায়; চেয়ে দেখ কত অগণিত ধন ভান্ডার সঞ্চিত রয়েছে সেথায়। তবে কেন তোমার এ দীন কাঙ্গালের বেশ। ধন, জন, মান, প্রতিপত্তি কামনা করছ কেন? কিসের জন্য? সুখের জন্যই তো? কিন্তু সুখ – শান্তি সেত বাইরে নয়। শান্তি অন্তরে, শান্তি আত্মায়। শান্তি আত্মারাম শ্রীভগবানে। শ্রুতি বলে-
“প্রেয়ো বিত্তাৎ প্রেয় পুত্রাৎ প্রেয়োহন্যাস্মাৎ সর্বাস্মাৎ অন্তরতরং ষদয়ং আত্মা”
অর্থাৎ আত্মা ধন হ’তে প্রিয়, পুত্র হ’তে প্রিয়, অন্য সমস্ত প্রিয় হতেই প্রিয়তর এবং সর্বাপেক্ষা প্রিয়তম। অতএব আত্মাতেই সমস্ত সুখ কেন্দ্রিভূত। আগে জানো কি সেই আত্মা তোমার নিজস্ব রূপ, নিজ আত্মাকেই তুমি জানো না তাইত তোমার যত দুঃখ, যত দৈন্য যত তোমার হাহুতাশের এই যে সমস্যা – ইহা মানবজাতির চিরন্তন সমস্যা। এই সমস্যা জর্জরিত হয়ে মানবজাতি চিরকাল মুক্তির প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেছে। এই প্রশ্নের সমাধানকল্পেই ভগবান বার বার মানবদেহ ধারণ ক’রে পৃথিবীতে অবতীর্ণ হয়েছেন। এই প্রশ্নের উত্তর অনুসন্ধানে রাজপুত্র বুদ্ধ জীর্ণ কন্থা পরিধান করে সংসার বিরাগী সন্ন্যাসী হয়েছেন।
বর্তমানে অধর্মের মধ্যে দিশেহারা আত্মবিস্মৃত মানব জাতির সত্যিকারের আত্মজিজ্ঞাসাও এই প্রশ্ন; এই জিজ্ঞাসার উত্তর নির্দেশ করবার জন্যই ভগবান ব্রজানন্দ স্বামী মানবের দ্বারে দীন সন্ন্যাসীর বেশে উপস্থিত হয়েছেন। ঐ শোন মোহ – মুগ্ধ মানব তোমারি তরে নগ্ন সন্ন্যাসীর বেশে করুণাময় ভগবান ব্যগ্র ব্যাকুল কন্ঠে ডেকে তোমাকে বলছেন-
“ওগো পাশবন্ধ জীব আত্মবিস্মৃত বিমুঢ় হ’য়ে রয়েছ কেন – তুমি যে শিব; একবার আত্মচৈতন্য লাভ করে পাশ মুক্ত হও। “নির্গতোহসি জগজ্জ্বালা, পিঞ্জরাদিব কেশরী।” প্রবল পরাক্রম সিংহ তুমি, সামান্য বক্ষ পিঞ্জরে আবদ্ধ হ’য়ে ঘুমিয়ে রয়েছ। অমতি তেজ সিংহ শাবক হয়ে তুমি ভেড়ার দলে মিশে ভেড়া বনে গেছ। নিজের চেহারার দিকে একবার দৃকপাত করো! মায়ামোহের অধীনতা পাশে আবদ্ধ হ’য়ে আছ বলেই তুমি জীবনের দাসত্ব করছ, এই মায়ামোহের অধীনতা পাশ ছিন্ন করে মুক্ত’ হয়ে শিবত্ব লাভ করো। সেইত তোমার সত্যিকারের স্বাধীনতা, প্রকৃত স্বরাজ।”
বস্তুতঃ অধীনতাই জীবত্ব আর স্বাধীনতাই শিবত্ব বা ঈশ্বরত্ব। মায়া মোহের অধীন হয়ে পরিচালিত হওয়া জীবত্ব আর মায়ামোহ হতে মুক্ত অবস্থাই ঈশ্বরত্ব। যখন মানব কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ, মাৎসর্য ইত্যাদির অধীন হয়ে তাদের ইঙ্গিতে পরিচালিত হ’য়ে, ইন্দ্রিয়ের দাস হয়ে, ইন্দ্রিয় সেবাতে আত্মনিয়োগ করে, তখন সে জীব; আর যখন ইন্দ্রিয় ও তদীয় বৃত্তিগুলোকে বশীভূত করে মানব জিতেন্দ্রিয় হয় অর্থাৎ যখন ঐ সকল বৃত্তিতার অধীন ও আজ্ঞাধীন হ’য়ে পরিচালিত হয়, তখন সে ঈশ্বরতুল্য বা ঈশ্বর। এক কথায় শক্তির বশীভূত থাকাই জীবত্ব, শক্তিকে স্ববশে আনা ও তদ্বারা ইচ্ছামত কার্য্য ক’রে নেওয়াই ঈশ্বরত্ব। শাস্ত্রকারও বলছেন—
“পাশবদ্ধো ভবেজ্জীব, পাশমুক্ত সদাশিবঃ।”
অর্থাৎ পাশবদ্ধ হলেই জীব, আর পাশবিমুক্ত হলেই শিব। ঘৃণা, শঙ্কা, ভয়, লজ্জা, জুগুপ্সা (নিন্দা) কুল, শীল ও মান – এই আটটি জীবের বন্ধনের কারণ, এজন্য শান্ত্রে এরা পাশ বা বন্ধন রজ্জুরূপে কীর্তিত হয়েছে। যিনি এই অষ্ট পাশ হ’তে মুক্ত হয়েছেন তিনি সদাশিব বা ঈশ্বরতুল্য। পাশবন্ধ জীবের দুঃখে আক্ষেপ করে বিমুক্ত সাধক গেয়েছেন –
“চিদানন্দ স্বরূপে যার নিত্য শুদ্ধ নিরঞ্জন
বিন্দুনাদ কলাতীতং সাক্ষীভূত সনাতন।
সে কিনা আজ মায়ার ফেরে পাশবন্ধ কারাগারে
অনিত্য বাসনা লয়ে মায়ার খেলা খেলিছেরে।”
ভগবান ও জীবন পরমাত্মা ও আত্মা, স্বরূপতঃ এক। জীবভাব পরিত্যাগ হলেই জীবাত্মা পরমাত্মার মিলন হয়। জীব যত দিন তার এক সত্য স্বরূপে অবস্থান না করবে অর্থাৎ যতদিন তার সচ্চিদানন্দরূপ ঈশ্বর লাভ না হবে ততদিন পর্যন্ত কিছুতেই পূর্ণ শান্তি বা পূর্ণ আনন্দের অধিকারী সে হতে পারবে না। জীব জগৎ রহস্য অবগত হ’য়ে “নেতি” “নেতি” সত্ত্বার “নেতি” বিচার দ্বারা জীব ভাব ত্যাগ করে চৈতন্যময় ব্রহ্ম সত্ত্বার সহিত সতত নিদিধ্যান করলেই ব্রহ্মত্ব লাভ সুনিশ্চিত; এবং তাতেই জীবের পরা শান্তি। নইলে মোহমুগ্ধ অজ্ঞানান্ধকারাচ্ছন্ন জীব যতই নিজের ক্ষুদ্রতার মধ্যে ঘুরতে থাকবে ততই তার দুঃখ দুর্গতি। জীবের দুঃখ ব্যাথাভারাতুর হৃদয়ে সাধক গেয়েছেন –
“প্রকৃতির দ্রষ্টা হ’য়েও ভুলে রইলে বিকারেতে
রূপ রসাদির ধাঁধায় পড়ে, হাস, কাঁন্দ সুখ দুঃখেতে।
সুপ্ত সিংহ তোমরা সবে, ভুলে কেন রয়েছরে,
অমৃতের সন্তান হ’য়ে, হেন দশা সাজে কিরে।”
বস্তুতঃ জীবের যদি একবার এই জ্ঞান আসে যে সে অমৃতের সন্তান, কাজেই অস্ত্র তাকে ছিন্ন করতে পারে না, অগ্নি তাকে দগ্ধ করতে পারে না, সে অজয় অমর তবে কি আর তার দুঃখ কষ্ট থাকতে পারে?”
শক্র যদি তাকে হত্যাও করে তবু সে জানে আমি ত আমার দেহ নই – দেহের বিনাশে ত “আমি” বিনষ্ট হই না। আমি ত আমার অজয় অমর আত্মা। এই আত্মার দর্শন যিনি পেয়েছেন তিনি জীবন্মুক্ত মহাপুরুষ – সাংসারিক দুঃখ – দৈন্য তাকে বিচলিত করতে পারে না। ওগো ভারতবাসী ভারতের আর্য ঋষিগণ একদিন তোমাদিগকে প্রেমামৃত প্রদানে অমর করিবার জন্য সস্নেহে সাদর আহবানে মধুর কণ্ঠে বিজয় নিনাদে বলেছিলেন –
শৃন্বন্তু বিশ্বে অমৃতস্য পুত্রাঃ।
হে বিশ্ববাসী অমৃতের পুত্রগণ তোমরা শ্রবণ করো। যদি জ্ঞানামৃত পানে জরা মরণের হাতে অব্যাহতি পেয়ে অমর হ’তে চাও, তবে জ্ঞানময়, সর্ব্বগুণাকর; সর্ব্বশক্তিমান, সর্ব্বব্যাপী, সর্বত্র পরিপূর্ণ, অখন্ড চিন্ময় ভগবৎ সত্তায় চিরতরে ডুবে যাও। ব্রহ্মানন্দ রস পান কর অমরত্ব লাভ কর। “নান্যপন্থাঃ বিদ্যতে আয়াময়।” হে জীব, এ ভিন্ন যে আর তোমার গতি মুক্তি নাই। মনে পড়ে প্রাচীন ভারতের আর্য ঋষিগণের কথা। তারাও একদিন জগতের দুঃখ – দৈন্য দারিদ্র্যের হাতে অব্যাহতি পাবার জন্য সকলে সমবেত হ’য়ে মুক্তির পথ খুঁজছিল। এ দুর্গম সংসার অরণ্যের মাঝে মুক্তির পথ কৈ — এ প্রশ্নে দিশেহারা হয়ে তারা তখন স্তম্ভিত হ’য়ে বলেছিল তখন ষোড়শ বর্ষীয় ঋষি বালক দাঁড়ায়ে জলদ গম্ভীর নিনাদে দৃপ্ত কণ্ঠে বলেছিল – শোন বিশ্বজন
“শোন অমৃতের পুত্র যদ দেবগণ
দিব্যধাম বাসী আমি জেনেছি তাঁহারে
মহান্তপুরুষ যিনি আঁধারের পারে
জ্যোতির্ময়, তারে জেনে তার পানে চাহি
মৃত্যুরে লঙ্ঘিতে পারো অন্য পথ নাহি।”
আজ ভগবান ব্রজানন্দ স্বামীও ভারতের সেই ভুলে যাওয়া অন্তর্নিহিত মহাবাণীকেই জাগ্রত ক’রে তুলছেন। ওগো মোহবদ্ধ জীব, ছুটে এসে আশ্রয় মাগ তার ঐ অতুল রাতুল চরণ তলে। এই তো তোমার একমাত্র পথ। এই আদর্শে যদি তুমি আজ আত্মোপলব্ধি করতে না পার তবে মিথ্যা তোমার রাজনৈতিক স্বরাজ সাধনা, মিথ্যা তোমার সন্বন্ধ সংস্কার প্রচেষ্টা, মিথ্যা তোমার বড় হবার নিষ্ফল আকাংখা। আগে নিজের, নিজ জীবনের, নিজ আত্মার স্বরাজ লাভ করো, বিশ্বের স্বরাজ এসে হাজির হবে তোমারি দুয়ারে। নইলে বৃথা তোমার আষ্ফালন। কবি সত্যই তো বলেছেন-
“রে মৃত ভারত
শুধু এই এক আছে, নাহি অন্য পথ।”
হে মায়ামুগ্ধ জীব, আবার বলছি যদি ব্রহ্মানন্দ রসপানে জরামরণের হাত হতে অব্যাহতি পেয়ে অমরত্ব লাভ করতে চাও, তবে ছুটে এস আশ্রয় মাগ এই যুগের নব অবতার ব্রজানন্দ স্বামীর শাশ্বত অভয় বাণী – “শিবোহম্” “শিবোহম্” ধ্বনির তলে। যদি প্রেম চাও তবে ভক্ত রঞ্জণ, পতিত পাবন প্রেমময়, মদন মোহন ভগবান ব্রজানন্দ স্বামীর শ্রীচরণসরোজে সম্পূর্ণরূপে আত্মবলি দান করো। যদি রূপের অভিলাষ করে থাকো তবে সর্ব রূপাধার, করুণা পারাবার নতুন যুগের অবতার ব্রজানন্দ স্বামীর অনন্তরূপ মাধুর্য পরিপূর্ণ রূপ দর্শন করে আত্মহারা হও। আর যদি রস বা আনন্দ পেতে চাও তবে সর্ব রসানন্দের আঁধার পূর্ণতম রস বিগ্রহ স্বামীজীর অনন্ত লীলা রস মাধুর্য আস্বাদন ক’রে প্রেমামৃত রসার্ণবে অনন্তকালের জন্য ডুবে অনন্ত মিলনে মিলিত হও – আরপ্রেম কারুণ্য কন্ঠে বলো—
“ত্বমেব মাতা চ পিতা ত্বমেব, ত্বমেব বন্ধুশ্চ সখা ত্বমেব”।
ত্বমেব বিদ্যা দ্রবিনং ত্বমেব, ত্বমেব সর্বং মম দেবদেব”।।
অর্থাৎ হে দেবাদিদেব তুমি আমার মাতা, তুমি আমার পিতা, তুমিই আমার বন্ধু, তুমিই আমার সখা, তুমিই আমার ধন, আর তুমিই আমার সর্বস্ব।
ভগবান ব্রজানন্দ বেদবাণী
এবার আমার অবতীর্ণ হ’বার একমাত্র উদ্দেশ্য ভক্তের উদ্ধার।
আমি স্বয়ং ভগবান। ঘোরকলিতে বুড়াশিব আমার মর্ত্যপরিচয়। আমি এবার এসেছি জীবের দুঃখ মোচন করতে। প্রেম ও শান্তির বাণী প্রচার করতে।
১. জীবনের লক্ষ্য উদ্দেশ্য নির্ধারণ করা সর্বাগ্রে প্রয়োজন।
২. স্ব (নিজ) প্রয়োজন অপেক্ষা মুক্তি প্রয়োজনই শ্রেষ্ঠ।
৩. নির্ব্বান মুক্তিই একমাত্র কাম্য। মনুষ্য জন্ম লাভও সেই জন্যই।
৪. তুমি আত্মজয়ী হইয়া জন্মমৃত্যুর হাত হইতে মুক্ত হও। তোমার জন্ম সফল হউক।
৫. ত্যাগেই সুখ, ভোগে সুখ নাই। তন্ মন্ ধন্ সব কিছুই ধর্ম্মার্থে লাগাইয়া দাও। জীবনের উদ্দেশ্যও তাই বটে।
৬. খাওন নিধনের জন্য কাঁদিও না। তোমার গোপাল লাভ হয় নাই সেই জন্য কাঁদ। এ দুদিনের ভোগ সুখ দিয়া কি করিবে? ভোগে কি সুখ আছে? সুখ যোগে। সুখ গুরু পাদ পদ্মে। সে সুখ কোন কালে ফুরায় না। সংসার সুখে কেবলি দুঃখ আর জ্বালা। কেবল ঘোরাঘুরি, আসা যাওয়া। মুক্তি নাই।
৭. আত্মসমর্পণের তুল্য আর যোগ নাই।
৮. যার জগৎ তাতে যত বেশী মন দেবে তত শান্তি পাবে।
৯. ইচ্ছাময়ের ইচ্ছায় ইচ্ছা মিলাইয়া দাও। তাঁহার যাহা ইচ্ছা তাহাই ভাল, তাহাই আদরের সহিত গ্রহণ কর। ভগবান যতই কেন কষ্ট দিন না ভক্ত তাঁহার দিক ভিন্ন অন্য দিকে তাকান না।
১০. যে হৃদয়ে ক্ষমা নাই, দয়া নাই সে হৃদয়ে ভক্তি ও জ্ঞানের বীজ অংকুরিত হইতে পারে না।
১১. অহিংসা পরম ধর্ম্ম, অহিংসা জীবে দয়া এইসব কর্ম্মই অন্ধকার হইতে আলোর পথে লইয়া যায়। যেখানে হিংসা, দ্বেষ, অপ্রেম সেখানে আলোর প্রকাশ হইতে পারেনা।
১২. নির্দয়ের হৃদয় অতিশয় কঠিন ও পাষানবৎ হয়। সেই হেতু সৎসঙ্গধারী হাজার সিঞ্চন করিলেও ভক্তিবীজ অঙ্কুরিত হইতে পারেনা।
১৩. দ্বৈত ভাব ত্যাগ কর, সর্ব্বভূত প্রাণীতে দয়াশীলা হও।
১৪. অন্তর্দৃষ্টিহীন অবিদ্যাগ্রস্ত জীব স্বীয় আত্মাকে ভুলিয়া বহির্দৃষ্টিতে বাহ্যেশ্বর আরাধনা ও ইন্দ্রিয়ক্রিয়ায় লিপ্ত হইয়া অশেষ দুঃখের ভাগী হয়।
১৫. গুরুর অধিক আরকেহ নাই, গুরু সর্ব্বেশ্বর, সকলের নিয়ন্তা ও নির্ব্বাহ কর্ত্তা।
১৬. বিনয়ী, নম্র, দয়ালুহৃদয়বিশিষ্ট হইলে তবে সে শিষ্য পদের অধিকারী হয়।
১৭. আমার কৃপা লাভের যোগ্য হও।
১৮. বাবা যেখানে ব্রজানন্দের মহিমাকথা বলবে, সেখানে তার ও তোমার মাঝে আমি হাজির থাকবো বাবা।
১৯. ভক্তিতেই মুক্তি।
২০. এ চরণ শিবের চরণ। এ-চরণ ভজে কেউ বিমুখ হয়নি।
২১. যে আমার একান্ত শরণ নেয় সে বিপদের মাথায় পা দিয়ে চলে। আমার ভক্তের বিনাশ নাই।
২২. বিধাতার কলম একমাত্র গুরুই রদ্ করতে পারে।
২৩. সংসারী লোক তো মরিতে আসিয়াছে। আর আমরা মৃত্যুকে জয় করিতে আসিয়াছি।
২৪. তোমাদের ঐহিক ও পারত্রিক কল্যাণের পথ মুক্ত করিয়া দেওয়াই আমার একমাত্র কর্তব্য।
২৫. তোমাদের ইহ -পারলৌকিক মঙ্গল কামনাই আমার একমাত্র জীবন ব্রত।
শ্রীশ্রী ব্রজানন্দ অষ্টোত্তরশতনাম
গীতমালা
অহং নামে আত্মদেব, তুমি ব্রজানন্দ। ১
অন্তরাত্মা রুপে আত্মা, সচ্চিদানন্দ। ২
অনাদি নামেতে দেব সত্য সনাতন। ৩
আদিদেব নামে তুমি পুরুষ প্রধান। ৪
অসীম যেহেতু বেদে, দিতে নারে সীমা। ৫
অনন্ত বলিয়া বনে অন্ত না পাইয়া। ৬
অনিন্দ্য সুন্দর তুমি, প্রিয়দর্শন নাম। ৭
আনন্দ-মধুর নিত্য ভক্তিগুণ ধাম। ৮
অভয় নামেতে তুমি বরাভয় দাতা। ৯
অজ্ঞান নাশন গুরু বভার্ণব ত্রাতা। ১০
যুগাবতার শ্রীশ্রী ব্রজানন্দ স্মরণম্
ব্রজানন্দ স্মরণম্ ঈশ্বর ভজনম্
ব্রজানন্দ স্মরণম্ রামচরিত পঠনম্
ব্রজানন্দ স্মরণম্ কৃষ্ণরূপ ধ্যানম্
ব্রজানন্দ স্মরণম্ পূর্ণব্রহ্ম বরণম্
ব্রজানন্দ স্মরণম্পরমাত্মা পূজনম্
ব্রজানন্দ স্মরণম্ওঁ মন্ত্র জপম্
ভগবান ব্রজানন্দ রিসার্চ এন্ড এজুকেইশন ইন্সটিটিউট