দিব্যালোকে

সংঘ শক্তি

ভগবান ব্রজানন্দের মুখ নিসৃত বাণী

সংগ্রাহক শ্রী নিবারণ চন্দ্র সাহা

কলিযুগে সংঘশক্তি অতিপ্রবল। সাধনের এক লক্ষ্যে পৌঁছিতে হইলে সর্বাবস্থায় সংঘবদ্ধ ভাবে কাজ করিলে তাহা সহজে সম্পাদন হয়। একের চেষ্টায় বা উদ্যোগে তাহা কখনও সম্ভব হয় না। সকলের প্রাণে আগ্রহ ও ব্যাকুলতা সমভাবে জাগ্রত হইলে সংঘ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। সংঘ শক্তি ব্যতীত জগতে কিছুই গঠিত হইতে পারে না। সংঘের শক্তি অপরিসীম। সেই জন্য আমাদের পরমারাধ্য শ্রীগুরুদেব স্বামী ব্রজানন্দ পরমহংস মহাপ্রভু জীউ ধর্ম ও আত্মিক উন্নতি, বিশ্বকল্যাণে – বিশ্বলোক হিতার্থে, বিশ্বজাগরণে সংঘ শক্তির বিশেষ প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন। সেইজন্য তিনি তাঁহার পদাশ্রিত ও শরণাগত সন্তান সন্ততিগণকে উপদেশ প্রদান করিয়া সংঘের শক্তি ও তাহার প্রয়োজনীয়তা প্রসঙ্গে বলেন –

তোমাদের জীবনের লক্ষ্য এক। তোমরা সর্বদা মনে রাখিও সমস্ত গুরু ভ্রাতা-ভগ্নিকে এক পরিবার ভুক্ত, সকলে একই পিতার সন্তান, এই অনুভূতি তোমাদের প্রাণে উদয় হইলে তোমাদের যাবতীয় হিংসা দ্বেষ, ক্ষুদ্র অশান্তি বিদুরিত হইবে।

বিশ্ববাসী জাতি ধর্ম নির্বিশেষে যখন “তত্ত্বমসি” মহাকাব্যের সুমহান নীতি গ্রহণ করিবে তখন জগতে সচ্চিদানন্দের পূর্ণ আসন প্রতিষ্ঠিত হইবে, মনের কপটতা, হিংসা দ্বেষ পলায়ন করিবে, বিশ্ব আনন্দের-মঙ্গল জয় শংখ পুনরায় বাজিয়া উঠিবে, নিখিল বিশ্বে শাশ্বত অনাবিল শান্তি প্রতিষ্ঠা লাভ করিবে। প্রাণে প্রকৃত মধুর ভাব উদিত হইলে কিছুই অসাধ্য থাকে না।

তোমরা গুরুধামের বিশেষ বিশেষ উৎসবে এবং সপ্তাহে একটি নির্দিষ্ট দিবসে একত্রিত হইয়া আসনে প্রণাম, পূজার্চ্চনা, আরতি, ভজন কীর্তন করিবে। সদ্‌গুরু ভগবানের মহাভাব ও মহাপ্রেমের বিষয় চিন্তা, ধর্মালোচনা, সাধন মার্গে ও আধ্যাত্মিক পথে উন্নতিবিধান, নিঃস্বার্থ সেবাধর্ম উদযাপন করাই এই গুরুধাম মহামিলন মঠের প্রধান উদ্দেশ্য তাহা বিশেষভাবে পর্যালোচনা ক্রমে কর্ম পন্থা নির্দ্ধারণ করিবে, গুরুধামের সুশৃঙ্খলা, রক্ষণাবেক্ষণের সুষ্ঠ উপায় উদ্ভাবন করিবে।

এই গুরুধাম প্রতিষ্ঠার মূলে কি সত্য, আদর্শ ও উদ্দেশ্য নিহিত আছে তাহা বিশেষ ভাবে পরিস্ফুট করিয়া বিশ্ব কল্যাণে ও লোকহিত কর্মে বিশ্ববাসীর সম্মুখে উত্থাপিত করিয়া আদর্শ নিষ্কাম সেবা ধর্ম্মের কথা ধরিয়া তুলিও। সংঘে একত্রিত হইয়া ভাব বিনিময় ও আলোচনা করিও। আমি স্থুল দেহে ধামে উপস্থিত থাকিলে তোমরা যেরূপ – সংযম, শ্রদ্ধা ভক্তির সহিত উপবেশন কর সংঘে উপস্থিত হইয়াও তোমরা শ্রদ্ধা ভক্তির সহিত উপবেশন করিবে।

সর্বদা আসনে আমি প্রত্যক্ষ আছি এবং তোমাদের কার্যকলাপ সমস্তই লক্ষ্য করিতেছি। আমি ও আমার আসন এক। এই সিদ্ধ আসনই গুরুশক্তি। তাহা কদাচ কেহ গ্রহণ বা ব্যবহার করিবে না।

তোমরা ভক্তি নিষ্ঠার সহিত গুরুপীঠ বা গুরুর আসনের সর্বোতভাবে সর্বদা পবিত্রতা রক্ষা করিবে। আমার আসন কথা বলিবে। যাহার যাহা অভিলাষ আসনে জানাইবে। আমি কোথায় নাই? গুরু কোথায় নাই? তিনি আছেন আকাশে-বাতাসে প্রতি জীবের অন্তরে। তিনি ভক্তি লভ্য, ভাবগম্য। আসনেই তাঁহাকে খুঁজিয়া পাইবে। কাজেই গুরুর আসনের পবিত্রতা রক্ষা করা প্রত্যেক ভক্ত শিষ্যের কর্তব্য। গুরুধাম কৈলাস ধাম স্বরুপ, গুরুগৃহ চিন্তামণি স্বরূপ, গুরু গৃহস্থিত তরু সমূহ কল্পবৃক্ষ স্বরূপ, জলাশয় অমৃত শাখার স্বরূপ, পুষ্প সকল মণি স্বরূপ। সুবুদ্ধি ব্যক্তির কর্তব্য গুরুস্থান দর্শন মাত্র সিদ্ধজ্ঞান করিয়া দণ্ডব্য নমস্কার করা। গুরুর সিদ্ধ আসন এবং গুরু অভিন্ন। আসনে সরল প্রাণে ভক্তি বিশ্বাসে যে যাহা প্রার্থনা করিবে আমি তাহা পূর্ণ করিয়া থাকি।

সংঘে যখন গুরু ভাই-বোনগণ সমবেত হইবে তখন পরস্পরের মধ্যে ভাব বিনিময় করিও। এইরূপ আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সাধন মার্গের দোষ ক্রটি ধরা পড়িবে এবং অন্যের সাহায্যে সাধনমার্গে পথ সুগম হইবে। সদ্ভক্তের সঙ্গলাভ এবং নিঃস্বার্থ নিষ্কাম কর্ম উদযাপন করিয়া সাধনপথে অগ্রসর হইবে। তাহাতে মনের মলিনতা, আবিলতা দূর হইবে। প্রাণে বিমল আনন্দ উপভোগ করিবে। চিত্তশুদ্ধিই একমাত্র ভগবানকে লাভ করিবার প্রকৃষ্ঠ পন্থা। কাজেই নিষ্কপটে সুষ্ঠভাবে সংঘ পরিচালনা করিতে পারিলে তোমরা অচিরে শ্রীগুরু ভগবানের কৃপা লাভে সমর্থ হইতে পারিবে। এই জগতে এমন কোন শক্তি নাই তোমাদের অনিষ্ঠ সাধন করিতে পারে। তোমরা সংঘকে দৃঢ়ভাবে ধরিয়া রাখিতে পারিলে – সমগ্র বিশ্ব একত্রিত হইয়াও তোমাদিগকে বিব্রত ও বিপন্ন করিতে পারিবে না। গুরু ও সংঘের সহিত তোমরা ঠিক ঠিক সম্বন্ধ রাখ। সাধু সঙ্কল্পে অবিচলিত থাক। সেই শিষ্য গুরুশক্তি দ্বারা সর্বোতভাবে সুরক্ষিত। চতুর্দ্দশ ভুবনে এমন কোন শক্তি নাই তাহার কেশাগ্র স্পর্শ করিতে পারে।

এক লক্ষ্য বা ইষ্ট সিদ্ধিলাভের জন্য সকলের প্রাণে আকুলতা জন্মিলে সংঘের সৃষ্টি হয়। এই  সংঘ অতুলনীয়। তোমাদের অনৈক্য, মতবৈষম্য, ক্ষুদ্র অশান্তি সমস্ত ভুলিয়া গিয়া প্রাণের নিবিড় বন্ধনে আবদ্ধ হইতে পারিলে তোমরা জগতে অসাধ্য সাধন করিতে পারিবে, মায়াবদ্ধ সংসারে থাকিয়াও অমৃতরস আস্বাদন করিতে পারিবে।

শ্রীভগবান গীতায় বলিয়াছেনঃ-

যজ্ঞে দান তপঃ কর্ম ন ত্যাজ্যং কার্য্যমেবত্য।

যজ্ঞেদানং তপশ্চৈব পাবনাণি মণীষিনাম্‌।।

গীতা-১৮/৫ শ্লোক

  যজ্ঞ, দান, তপস্যা, কর্ম ত্যাজ্য নহে। এই সকল কর্মফল বিদ্বানগণের চিত্তশুদ্ধিকর। সত্য যুগে তপস্যা, দ্বাপরে যজ্ঞ এবং কলিতে একমাত্র দানই শ্রেষ্ঠ ধর্ম। গৃহীদের ধনসম্পত্তি উপার্জনে বহুবিধ পাপ সঞ্চয় হয়। দান ধর্ম দ্বারা এই সকল পাপের প্রতিকার ও পরিশোধন হইতে পারে। গৃহীদের সাংসারিক উপার্জনের কিয়দংশ ব্যয় করিতে হয়।

সকল ধর্মেই দানের কথা বলা হইয়াছে। নচেৎ বিত্তশাঠ্য-দোষ ঘটে। অত্যধিক মণি কাঞ্চনের আসক্তি মানুষকে ঘৃণিত পশু পর্য্যায়ে অবতরণ করায়। অত্যাধিক মণি কাঞ্চনের আসক্তি ধর্মপথের প্রধান অন্তরায়। আবার অত্যাধিক দান করিয়াও ভিখারী হইতে শাস্ত্র কাহাকেও উপদেশ প্রদান করে নাই। পরিমিত ব্যয় এবং অর্থের সদ্ব্যবহারের উপদেশ শাস্ত্রে প্রদত্ত হইয়াছে। অর্থ সদ্ভাবে ব্যায়িত হইলে মনেও সত্যিকারের আনন্দ লাভ হয়।

অনেক ক্ষেত্রে অতুল ঐশ্বর্য্যের অধিকারী হিন্দু দান-ধর্মে সম্পূর্ণ বিতশ্রদ্ধ। গুরু, দেবদ্বিজে, মঠ মন্দিরে তাহাদের শ্রদ্ধা ভক্তি বিশ্বাস একটুকুও নাই। অথচ নিজেদের অপরিমিত খরচের জন্য পরোপকার ব্যয়ে তাহাদের কুন্ঠাবোধ হয়। শাস্ত্রে আছে যে নিজ প্রয়োজন ভিন্ন অতিরিক্ত সঞ্চয় রাখে বা নিয়ে আত্মসাৎ করে সে চোর। অপর দিকে দৃষ্টিপাত করিলে দেখা যায় কুটীর নিবাসী অর্থ সামর্থহীন মুসলমান এক পয়সা, দুই পয়সা ভিক্ষা করিয়া খোদার পাকা মন্দির (মস্‌জিদ) নির্মাণ করেন। এইরূপ ভগদ্ভক্তি, ধর্মানুষ্ঠানে মহৎ প্রেরণা বাস্তবিক প্রসংশনীয় এবং অনুকরণ যোগ্য। অর্থ ভিন্ন সংসার জীবন নির্বাহ হইতে পারে না। সংসারী জীবের অর্থের প্রয়োজন আছে। কিন্তু নিজসুখ স্বাচ্ছন্দের জন্য অযথা অপরিমিত ব্যয় শাস্ত্রবিরুদ্ধ। ধর্মজ্ঞ সৎকর্মে গৃহীর আয়ের কিয়দংশ ব্যয়িত হওয়া শাস্ত্রানুমোদিত। সুতরাং যথার্থ অর্থ সদ্ব্যবহারের জন্য মুষ্টি ভিক্ষা সংরক্ষণ, মঠাশ্রমের জন্য মাসিক চাঁদা মঠাশ্রমের ধর্ম বিষয়ে এবং আধ্যাত্মিক উন্নতিকল্পে প্রকাশিত পত্রিকা গ্রহণ, মঠাশ্রমে বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠিত উৎসবে যথাশক্তি সাহায্য দান এবং নিয়মিত ভাবে যোগদান করা প্রয়োজন। শাস্ত্রমতে মঠাশ্রমের জন্য সর্বাগ্রে মুষ্টি ভিক্ষা রাখিয়া সেই সকল গৃহী অন্নভোজন করেন তাঁহারা যজ্ঞবিশেষের অমৃত ভোজনের ফল লাভ করিয়াছেন। বৌদ্ধগণ সর্বদা তাঁহাদের খাদ্যের অগ্রভাগ বৌদ্ধ ভিক্ষুককে দান করিয়া পরে তাঁহারা নিজে ভোজন করেন। যে গৃহী গুরু ভগবানকে অন্নদান না করিয়া এবং সৎকর্মে দান না করিয়া নিজের উদর পরিপূর্ণ করে শাস্ত্রের বিচারে তাহারা রাক্ষস। ধর্ম্ম সেখানে প্রবেশের পথ পায় না। মঠাশ্রমের ত্যাগী সন্ন্যাসী ও ব্রহ্মচারীগণ গুরু ভাই ভগ্নীগণের বাড়ীতে বাড়ীতে এবং বিভিন্নস্থান ঘুরিয়া ফিরিয়া সেই সকল মুষ্টি ভিক্ষা উপকরণ ও  অর্থ সংগ্রহ করে তাহাও তোমাদের গুরু সেবায় ব্যয়িত হয়। মুষ্টি ভিক্ষা এবং আর্থিক সাহায্যে ধামবাসী তোমাদের ত্যাগী সন্ন্যাসী ব্রহ্মচারীভাইগণ এবং অতিথিগণ প্রসাদ ভক্ষণে প্রতিপালিত এবং সেবিত হইতেছে। তোমাদের এইরূপ ক্ষুদ্রদানেও এইরূপ মহৎকার্য সম্পাদিত হইতেছে। ইহা সহজ কথা নহে। গৃহীদের পক্ষে মুষ্টিভিক্ষা সংরক্ষণ সহজসাধ্য ত্যাগ অথচ এই মুষ্টি ভিক্ষায় মহৎ কার্য্য অনুষ্ঠিত হইতেছে। গৃহীগণ অনায়াসে সাধ্যানুসারে ক্রমশঃ,ত্যাগধর্মে অগ্রসর হইতে পারে।

আমি চাই তোমরা আদর্শ গৃহী হও। তোমরা মনে প্রাণে দৃঢ় হও। গরিষ্ঠ হও, সত্যাশ্রয় হও। সংসারে তোমাদের দ্বারা – পুত্র-পরিজন বিষয়-সম্পত্তি যশখ্যাতি সমস্তই থাকিবে। তোমরা অনাসক্ত ভাবে নিষ্কাম কর্ম করিয়া যাইবে। ভগবানের উদ্দেশ্যে কোন ফলাকাঙ্ক্ষা না করিয়া কার্য্য করার নামই নিষ্কাম নিঃস্বার্থ কর্ম। এই কর্মে তোমাদের বন্ধন নাই। তোমরা ভগবানের সংসারে নিযুক্ত কর্মচারী। তাঁহার রচিত বিশ্বশালায় কর্ম করিয়া যাও। জ্ঞানী সংসার করে অনাসক্তভাবে আর অজ্ঞানী সংসার করে বিষয়-বিষে-আসক্ত হইয়া। তাহাতেই কর্ম্ম বন্ধন ঘটে।

বাসনাই বারংবার জন্মিবার কারণ। এই সংসারে যাহার যতটুকু পাওনা ততটুকু তাহাকে কড়ায় গন্ডায় পরিশোধ করিয়া দিতে হইবে। অথচ নিজ লক্ষ্যে সর্বদা সজাগ ও ধীর স্থির থাকিতে হইবে। প্রত্যেকের সমান অধিকার আছে। কাহাকেও দাবাইয়া কাহারও অধিকার ক্ষুণ্ণ করা যায় না। যেইখানে ন্যায্য অধিকার ক্ষুণ্ণ হয় সেইখানে প্রেম আসিতে পারে না এবং মনুষ্যপ্রীতি, প্রেম-ভালবাসা বিশ্বমানবতা বিশ্বধর্মের বিলুপ্তি ঘটে। অনাসক্ত আদর্শগৃহী সংসারে হাসিয়া খেলিয়া ভগবানের কার্য্য করিয়া যাইতেছে। মুক্তি তাহাদের করতলগত। আর বিষয় মদিরায় মত্ত হইয়া অজ্ঞান-সংসারী সংসার মরু ভূখন্ডে তৃষিত হরিণের মত ধাবিত হইতেছে। তাঁহাদের মুক্তি কোথায়? যেই তিমিরে সেই তিমিরেই পড়িয়া থাকিবে।

অগ্রে তোমরা নিজে আদর্শ হও। তোমাদের নিজ পরিবারস্থ-পরিজনকে আদর্শে গড়িয়া তোল। তোমাদের আদর্শ অবলোকন করিয়া গ্রামবাসী মহৎ আদর্শে অনুপ্রাণিত হইবে। এইভাবে দেশ-বিদেশে আদর্শের উজ্জ্বল প্রতিচ্ছবি ফুটিয়া উঠিবে। তোমাদের আত্মত্যাগে ও নিষ্কাম মহৎকার্য্যে অনুপ্রাণিত হইয়া শত শত সহস্র সহস্র ব্যক্তি ত্যাগের মহামন্ত্রে দীক্ষিত হইয়া দেশ-দেশান্তরে বিজয় অভিযানে বাহির হইবে। আদর্শকে রূপদান করাই তোমাদের কর্ম ও সাধনা। তোমরা বিশ্বজাগরণে ত্যাগের নিঃস্বার্থ মহান কর্মে এগিয়ে চল। মাভৈঃ তোমাদের সকল ভার, সকল বোঝা আমি বহন করিব।

গুরুর উপর নির্ভর করিয়া তাঁহার নিকট শক্তি সামর্থ প্রার্থনা কর। তিনি তোমাদিগকে শক্তি সামর্থ, প্রেরণা যোগাইবেন। আমার ভক্তের ধ্বংস নাই। আমার ভক্ত যেইখানে যায় আমি তাহার পশ্চাতে গমন করি। আমার ভক্তের পশ্চাতে মুক্তি স্তুতি করিয়া যায়।

জগতে কর্ম্মেরই প্রশস্তি । কেহ কৈফিয়ত শুনিতে চায় না । তোমরা আদর্শ নিষ্কাম কর্ম করিয়া যাও বিশ্ববাসী তোমাদের সুমহান কর্মের জন্য জয়ের মালা পরাইয়া দিবে । তোমাদের নিঃস্বার্থ কর্মে অনুপ্রাণিত হইয়া তাহারা নব নব কর্মের প্রেরণা লাভ করিবে । তোমরা জ্ঞানে যখন সমদর্শী হইবে, প্রেমে প্রীতিমান হইবে এবং কর্ম্মে সর্বভূত কল্যাণে ব্রতী হইবে তখন এই বিশ্বশান্তির অমিয় হিল্লোল বহিতে থাকিবে ।

গৃহীর সাহায্য ভিন্ন কোন আশ্রমই পরিপুষ্টি লাভ করিতে পারে না। গৃহী ও সন্ন্যাসীর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় জগতে মহৎকার্য্য প্রতিষ্ঠা লাভ করিতে পারে।

তোমরা তোমাদের ত্যাগী সন্ন্যাসী ও ব্রহ্মচারী ভাইগণকে তাহাদের কার্য্যে সহায়তা ও পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান কর। তোমাদের সাহায্যে ও পৃষ্ঠপোষকতায় তাহারা শক্তি ও মহৎ কার্য্যের নব নব প্রেরণা লাভ করিবে। তাহাতে জগতের অনেক কল্যাণ সাধিত হইবে। “জগদ্বিতায় বহুজনহিতায়চ” যে কর্ম তাহা সম্পাদন করাই পৌরুষত্ব এবং সুদুর্লভ মানবজীবনের পূর্ণতা ও সার্থকতা। একই লক্ষ্য ও আদর্শের ভিতর দিয়া যে ঐক্য ও মিলন স্থাপিত হয় তাহাই স্থায়ী মিলন, প্রকৃত সম্বন্ধ। নিঃস্বার্থ প্রেমপ্রীতি ভালবাসাই মানুষের হৃদয় জয় করিতে পারে। সমবেদনা ও সহানুভূতি প্রাণে উদিত হইলে কর্মেরপ্রাণে সাড়া ও প্রেরনা জাগ্রত হয়। নিজেরাও গুরু ভাই  ভগ্নিদের মধ্যে সাধনার পবিত্র  শিক্ষা প্রদান কর। মহান লক্ষ্য ও আদর্শের বেদীমূলে প্রত্যেকে অভিমান, অহংকার, কর্ত্তৃত্ত্ব, প্রভুত্ব ছাড়িয়া নিঃস্বার্থ সেবার ভার লইয়া সুমহান কর্তব্যপথে অগ্রসর হও। প্রতি কর্মে, প্রতি পদক্ষেপে ভগবৎ শক্তি প্রার্থনা কর। তবেই তোমাদের লক্ষ্য সিদ্ধ হইবে। তোমাদের মধুর পবিত্র জীবন হইতে প্রকৃত প্রেরণা লাভ করিবে। তোমাদের অদম্য শক্তি ও সৎ সাহসে সত্যিকার সাহস ও শক্তি লাভ করিয়া সমস্ত বিপদাপদ উপেক্ষা করিয়া সকলে লক্ষ্যে উপনীত হইবে। সহস্র সহস্র লোক তোমাদের নিঃস্বার্থ সেবার কর্তব্য ও দ্বায়িত্ববোধ অবলোকন করিয়া সাগ্রহে তোমাদের সঙ্গে মিলিত হইয়া তোমাদের কর্মে অংশগ্রহণ করিবে। নিঃস্বার্থ প্রেমপ্রীতি ভালবাসাই মানুষের মনে প্রাণে সত্যিকারের আনন্দ জাগায়, মানুষকে সৎকর্মে উদ্বুদ্ধ করে।

সহকর্মিগণের নিকট হইতে যদি বাস্তবিক আন্তরিক সৌহার্দ্য ও সহযোগিতা পাইতে চাও তবে তোমার গুরুদায়িত্ব, দুঃখ, দুশ্চিন্তা ও উদ্বেগের কিছু অংশ সহকর্মিগণকে বিলাইয়া দাও। তাহারা অংশগ্রহণ করুক। তবেই তাহারা তোমার সহিত সমতা রক্ষা করিয়া সমান দায়িত্ব ও কর্তব্য নিয়া কর্মক্ষেত্রে অগ্রসর হইতে পারিবে। তুমি যেই কর্মে অগ্রসর হইবে তাহারাও সানন্দে প্রয়োজনবোধে বিনা দ্বিধায়, বিনা আহ্বানে জীবনপণ করিয়া বীর সৈনিকের মত জীবনপণ করিয়া তোমার অনুসরণ করিবে।