ভূমিকা
১. জীবনের লক্ষ্য উদ্দেশ্য নির্ধারণ করা সর্বাগ্রে প্রয়োজন।
২. স্বপ্রয়োজন অপেক্ষা মুক্তি প্রয়োজনই শ্রেষ্ঠ।
৩. নির্ব্বান মুক্তিই একমাত্র কাম্য। মনুষ্য জন্ম লাভও সেই জন্যই।
৪. তুমি আত্মজয়ী হইয়া জন্মমৃত্যুর হাত হইতে মুক্ত হও। তোমার জন্ম সফল হউক।
৫. ত্যাগেই সুখ, ভোগে সুখ নাই। তন্ মন্ ধন্ সব কিছুই ধর্ম্মার্থে লাগাইয়া দাও। জীবনের উদ্দেশ্যও তাই বটে।
৬. খাওন নিধনের জন্য কাঁদিও না। তোমার গোপাল লাভ হয় নাই সেই জন্য কাঁদ। এ দুদিনের ভোগ সুখ দিয়া কি করিবে? ভোগে কি সুখ আছে? সুখ যোগে। সুখ গুরু পাদ পদ্মে। সে সুখ কোন কালে ফুরায় না। সংসার সুখে কেবলি দুঃখ আর জ্বালা। কেবল ঘোরাঘুরি, আসা যাওয়া। মুক্তি নাই।
৭. আত্মসমর্পণের তুল্য আর যোগ নাই।
৮. যার জগৎ তাতে যত বেশী মন দেবে তত শান্তি পাবে।
৯. তুমি উদ্দেশ্য হারাইয়া খালি উপায় নিয়া ঝগড়া করিয়া আত্মচিন্তা হইতে বিমুখ হইও না।
১০. ইচ্ছাময়ের ইচ্ছায় ইচ্ছা মিলাইয়া দাও। তাঁহার যাহা ইচ্ছা তাহাই ভাল, তাহাই আদরের সহিত গ্রহণ কর। ভগবান যতই কেন কষ্ট দিন না ভক্ত তাঁহার দিক ভিন্ন অন্য দিকে তাকান না।
১১. ভক্তির মত এমন শক্তিধর বস্তু আমার চোখে পড়ে না।
১২. ভগবানে ভক্তি বিশ্বাস এবং একান্ত শরণাগতী লাভ করিয়া জীবনের সার্থকতা লাভ কর ও সুখে স্বচ্ছন্দে দিন অতিবাহিত কর।
১৩. ভালমন্দ সবইতো তাঁর, তোমার কি কিছু করার শক্তি আছে?
১৪. সাধু যাহা বলেন তাহাই হয়।
১৫. তুমি সকল বাধন ছিন্ন করিয়া দেহমন সমর্পিয়া শ্রীচরণের দাসী হও।
১৬. যে হৃদয়ে ক্ষমা নাই, দয়া নাই সে হৃদয়ে ভক্তি ও জ্ঞানের বীজ অংকুরিত হইতে পারে না।
১৭. অহিংসা পরম ধর্ম্ম, অহিংসা জীবে দয়া এইসব কর্ম্মই অন্ধকার হইতে আলোর পথে লইয়া যায়। যেখানে হিংসা, দ্বেষ, অপ্রেম সেখানে আলোর প্রকাশ হইতে পারেনা।
১৮. নির্দয়ের হৃদয় অতিশয় কঠিন ও পাষান বৎ হয়। সেই হেতু সৎসঙ্গধারী হাজার সিঞ্চন করিলেও ভক্তিবীজ অঙ্কুরিত হইতে পারেনা।
১৯. যে হৃদয়ে বিরহ নাই সেই হৃদয় শ্মশান সমান। ভগবানেরে পাইতে হইলে কেঁদে কেঁদে প্রার্থনা করতে হয়। হাসিয়া খেলিয়া কি কেউ কোনদিন ভগবানকে পেয়েছে?
২০. দ্বৈতভাবে প্রেম নাই। অদ্বৈতেই প্রেম।
২১. দ্বৈত ভাব ত্যাগ কর, সর্ব্বভূত প্রাণীতে দয়াশীল হও।
২২. কৃতঘ্ন কপাটীর বিনাশ অবশ্যই হইবে।
২৩. জীবের ইচ্ছায় কিছুই হয় না, গুরুর ইচ্ছায় সবই হয়।
২৪. দুর্লভ বস্তু লাভ করিতে গেলে বাধা বিঘ্ন বহুৎ উপস্থিত হয়, ইহা যুগ যুগান্তর হইতেই চলে আসছে।
২৫. সমস্ত কর্ম্ম করিয়া বলিবে, “এতদ্র কর্ম্মফল গুরুনারায়ণে সমর্পিত মস্ত”।
২৬. অন্তর্দৃষ্টিহীন অবিদ্যাগ্রস্ত জীব স্বীয় আত্মাকে ভুলিয়া বহির্দৃষ্টিতে বাহ্যেশ্বর আরাধনা ও ইন্দ্রিয় ক্রিয়ায় লিপ্ত হইয়া অশেষ দুঃখের ভাগী হয়।
২৭. সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে মায়ের নাড়ীর সঙ্গে যোগ থাকে। নাড়ী কাটা হলে তারা আলাদা হয়। কিন্তু আমাদের সাথে ব্রহ্মের যে যোগ, তা কোন দিন আলাদা হবার নয়।
২৮. গুরু ধ্যান, গুরু জ্ঞান, গুরু চিন্তামণি, গুরু বিনে অন্য কিছু না জানিও তুমি।
২৯. এই পথে কিছু রাখিয়া কিছু দিলে চলিবে না। ফাঁক রাখিয়া ধর্ম্ম করিতে নাই।
৩০. তুমি বিপদের মাথায় পা ফেলিয়া সংসার পথে চলিয়া যাও। তোমার গায়ে একটা আঁচর পর্য্যন্ত লাগিবে না। সংসার যাঁতা ঘুড়িতে থাকুক, তুমি খুঁটি আশ্রয় করিয়া পরমানন্দ লাভ কর।
৩১. সদর্থে তোমার কায়িক পরিশ্রম ব্যয় করিলে তোমার প্রাণ ভক্তিপূর্ণ ও পবিত্র হইবে।
৩২. পাওয়ার মত পাইতে হইলে দেওয়ার মত দিতে হয়। তবে তো আমার কৃপালাভে ধন্য হইবে।
৩৩. ইহকালে সুখী ও পরকালে পরামৃত লাভ করিবে ইহাই আমার একমাত্র আশীর্বাদ ও ইচ্ছা। এ ইচ্ছার গতিরোধ করে এমন কেহ নাই। তুমি নির্ভয় ও নিশ্চিন্তে থাক আর দিনান্তে আমাকে একটু স্মরণ করিবে তবেই আমি তোমাদের ভার বোঝা বহিতে পারিব।
৩৪. বৈষ্ণবের আশীর্ব্বাদ শিবের ভূষণ, ঘুঁচায় সংসার দৃঢ বন্ধন।
৩৫. সদ্য ফলের বৈদ্য ব্রজানন্দ হাতে হাতে ফল দেয় বাবা মন খুলিয়া একটু বিশ্বাস ভক্তি ফেল।
৩৬. তোমরা নির্ভয়ে থাক; ব্রজানন্দের শিষ্যেরা মহাভাগ্যবান। জল তাহাকে ক্লিষ্ট করিতে পারিবেনা বায়ু তাহাদিগকে শোষণ করিতে পারিবেনা, এবং অগ্নি তাহাদিগকে দগ্ধ করিতে পারিবেনা।
৩৭. আমার ভক্তের বিনাশ নাই।
৩৮. শ্রীভগবানের চরণ সেবায় তোমার জীবন অতিবাহিত হউক। সাধু গুরুর কৃপায় তোমার সংসার সাগরে ডুবন্ত মন ভাসিয়া নির্লিপ্ত হইয়া উঠুক। তাঁহাদের সেবা পরিচর্য্যায় দেহ প্রাণ ঢালিয়া দাও তবেই এই নশ্বর দেহ সার্থক নতুবা এ হাড় মাংসময় দেহের মূল্য কি?
৩৯. বৈষ্ণবের পদধূলি পরে গৃহে যার সপ্ত কোটী কূল তার হয়তো উদ্ধার”। বৈষ্ণব যে আপন জন বলিয়া তোমার প্রাণে সাড়া দিল শুনিয়া তোমাকে আপন করিয়া উদ্ধার করিতে বাসনা রহিল।
৪০. গুরু দাতা, গুরুভ্রাতা, গুরুই পরমাশ্রয়।
৪১. আমার বাক্য সব সত্য হইবে, বিশ্বাস করিয়া লইলে।
৪২. বুড়াশিবের শিবরাত্রিতে সব লোক হইতে দেবতারা আগমন করিয়া থাকেন। তাহাদের চক্ষু গোচর হইলে দেহের সব রকম পাপের শান্তি হয়।
৪৩. বুড়াশিবের শিবরাত্রি দর্শন কর। বুড়াশিবের শিব রাত্রি দর্শন খুবই ফলপ্রদ যদিও তুমি বর্ত্তমানে কিছুই দেখিতে পাওনা কিন্তু পূণ্য সঞ্চয় হইলে একসময় দৃষ্টি গোচর হইবে।
৪৪. গুরুর অধিক আর কেহ নাই, গুরু সর্ব্বেশ্বর, সকলের নিয়ন্তা ও নির্ব্বাহকর্ত্তা।
৪৫. ‘গুরু বাক্যং সদা সত্যং’ জানিয়া আঁচলে গিট দাও।
৪৬ সর্ব্ব ধর্ম্ম বিসর্জন করিয়া একমাত্র আমার স্মরণ লও, আমি তোমার সর্ব্ব পাপ দূর করিব।
৪৭ আমার ইচ্ছার সাথে তোমার ইচ্ছা মিলাও; ফল আশু হবে।
৪৮. বিনয়ী, নম্র, দয়ালু হৃদয় বিশিষ্ট হইলে তবে সে শিষ্য পদের অধিকারী হয়।
৪৯. গুরুমুখের অমৃত বাক্য মনেতে করিয়া ঐক্য আর না করিও আশা।
৫০. দম্ভ ও অহংকারের মাত্রা না বাড়াইলে আমি বধিব কেমনে।
৫১. গুরুসেবা পরায়ন শিষ্যই আমার সেবার অধিকারী।
৫২. আমার কৃপালাভের যোগ্য হও।
৫৩. দুঃখ, তাপ জ্বালা নামে ও প্রেমে থাকিলে অবসান হইবেই।
৫৪. শ্রীগুরুই যেন তোমার ভাবের বিষয় হয়।
৫৫. “ব্রজানন্দের পা বেতালে পড়ে না” তাঁর লীলা খেলা চলন, বলন সবই যে ভক্তের মঙ্গলের তরে।
৫৬. আমার ভক্তের বিনাশ নাই। তবে সাধনায় চাই ধৈর্য্য।
৫৭. সব আমার উপর ছেড়ে দাও। আসক্তি শূন্য হও। নামে প্রেমে থাক।
৫৮. তোমরা নির্ভয় ও নিশ্চিত থাক; আমার মঙ্গলময় দৃষ্টি সর্ব্বদাই তোমাদের উপর আছে।
৫৯. কর্ত্তার ইচ্ছায় কর্ম্ম যা হইতেছে হইতে দাও তোমার কী যায় আসে।
৬০. তোমার নির্ভয় ও ভক্তি যতই বাড়বে তোমার শান্তি সুখও ততই দেখা দিবে।
৬১. “ব্রজানন্দ” নাম নেওয়া বাগান বন্যায় ভাসাইয়া লইতে পারবে না-না-না।
৬২. ভক্ত আমার হৃদয়ের বস্তু। ভক্তকে ভুলিয়া আর কাহাকে লইয়া থাকিব। ভক্তি মহারাণী। ইহাকে কোন কোন ভাগ্যবান পাইয়া থাকে। জাত চাষা না হইলে ইহাকে ধরা বড়ই মুস্কিল। প্রেম ভক্তি মুখে সবাই বলে। কিন্তু বালির বাঁধের মত চিরদিন উহা সমান থাকে না। প্রকৃত প্রেমভক্তি দুষ্প্রাপ্য। তবে সাধুজনের ভক্তি বিশ্বাস কোন অবস্থাতেই টলে না। যেমন চকমকি পাথর হাজার বছরও যদি মাটির নীচে থাকে তবুও তাহার আগুন কোন প্রকারে দূর হয় না।
৬৩. পুত্র কন্যাগণকে বসন, ভূষণ, প্রেম ও মধুর কথায় সন্তুষ্ট রাখিবে এবং বিদ্যা শিক্ষা দিবে ও লালন করিবে।
৬৪. বেহুলার মত স্বামীর হাড় কয়খানা বগল তলায় করিয়া মৃত পতিকে বাঁচাইবার জন্য বাহির হইয়াছিল-সেই বিশ্বাস রাখ।
৬৫. সংসার সুখ দুঃখময়। পানা পুকুরের মত। ঠেলিয়া দিলে কি হইবে? আবার আসিয়া ঘিরিয়া ফেলে। তুমি নামে থাক তবেই সংসারের তাপটা কিছু কম লাগিবে। নাম ছাড়িয়ে দিলে মোটেই রক্ষা নাই।
৬৬. গুরু সহায় না হইলে জীবের একটি তৃণও তুলিবার ক্ষমতা নাই। গুরু শক্তি ভিন্ন এই হস্তদ্বয় গ্রহণ করিতে পারে না, চক্ষু দর্শন করিতে পারে না, মন মনন করিতে, বুদ্ধি স্বকার্য সাধন করিতে অক্ষম হয়। আমার অপ্রকাশে তাঁহার প্রকাশ, আমার প্রকাশে তাঁহার অপ্রকাশ।
৬৭. গুরুতে করিতে পারে ভবসিন্ধু পার।
৬৮. গুরুতে নির্ভর দাও, বিশ্বাস আন তোমার ইহকালে কি পরকালেও দুঃখ হবে না।
৬৯. নির্ভয় নিশ্চিন্ত থাক। নাম সত্য। নামে থাক, নাম হয়েছে নৌকা। নৌকায় থাকিলে যেরূপ হাঙ্গর কুমীরের ভয় থাকে না সেরূপ নামে থাকিলে সংসার বাঘে তাহাকে পায় না।
৭০. বাবা যেখানে ব্রজানন্দের মহিমাকথা বলবে, সেখানে তার ও তোমার মাঝে আমি হাজির থাকবো বাবা।
৭১. বাবা, সব কর। এ ধারে একটু মন দাও। তোমার মঙ্গল হবে।
৭২. আমি তো বাইরে নই। তোমার অন্তরে।
৭৩. সদ্গুরু শহরে হাটে গঞ্জে মিলে না। বহু জন্মের সুকৃতির ফলে সদ্গুরু লাভ হয়। সদ্গুরু ত্যাগী গুরু।
৭৪. বিধাতার কলম রদ করতে পারে একমাত্র গুরু। একমাত্র গুরুই পারে। গুরু, ত্যাগী। গুরু, সদ্গুরু। তাইতো বলি তোমাদের, অসাড় চিন্তা ছেড়ে দিয়ে গুরু চিন্তা করো। পরিত্রাণ পাবে। বিপদের মাথায় পা দিয়ে চলবে। গুরুই বস্তু। আর সব অবস্তু। গুরুই সার আর সব আলুনি।
৭৫. ভক্তিতেই মুক্তি।
৭৬. এ চরণ শিবের চরণ। এ-চরণ ভজে কেউ বিমুখ হয়নি।
৭৭. যে আমার একান্ত শরণ নেয় সে বিপদের মাথায় পা দিয়ে চলে। আমার ভক্তের বিনাশ নাই।
৭৮. বিধাতার কলম একমাত্র গুরুই রদ্ করতে পারে।
৭৯. সংসারী লোক তো মরিতে আসিয়াছে। আর আমরা মৃত্যুকে জয় করিতে আসিয়াছি।
৮০. তোমাদের ঐহিক ও পারত্রিক কল্যাণের পথ মুক্ত করিয়া দেওয়াই আমার একমাত্র কর্তব্য।
৮১. তোমাদের ইহ ও পারলৌকিক মঙ্গল কামনাই আমার একমাত্র জীবন ব্রত।
৮২. তোমাদের গুরুদেবই ঈষ্ঠ দেবতা।
স্বীয় পরিচায়ক বাণী
১. ব্রজানন্দ “নারায়ণ” যা তা না। আমি অযোনীস্বয়ম্ভু। ব্রজানন্দ সবকা বানানাওয়ালা আদি পুরুষ। ব্রজানন্দ পরমেশ্বর স্বয়ং।
২. “হরে ব্রজানন্দ হরে, হরে ব্রজানন্দ হরে, গৌর হরি বাসুদেব, রাম নারায়ণ হরে ।” -এই নাম আমি গোলক থেকে এনেছি । এই নামের মধ্যেই আমার পরিচয় । সত্যযুগে আমি নারায়ণরূপে, ত্রেতাযুগে রামরূপে, দ্বাপরযুগে কৃষ্ণরূপে ও কলিযুগে গৌরহরিরূপে । এখন ঘোর কলিতে পাপী উদ্ধারী ব্রজানন্দরূপে ।
৩. আমি অব্যক্ত, নিরাকার নির্ব্বিকার হইয়াও জীবের দুঃখে কাতর, হইয়া আজ আমি সাকারে মানুষরূপে অবতীর্ণ হইয়াছি। তুমি চিন আমাকে, তোমার ইহ-পরকাল ভাল হইয়া যাইবে। আমি সর্বভূতে বিদ্যমান। আমাকে বলে যেখানে যা অর্পণ করবে তাহা আমাতেই যাবে।
৪.আমি নির্গুণ নিরাকাররূপে এবং সগুণ সাকার রূপে চরাচর বিস্তার আছি। আমা হইতে দ্বিতীয় কেহ নাই। এই সংসারে সব উপাধিই আমার অথচ কোন উপাধিই আমার নয়।সর্ব্বধর্ম্ম বিসর্জন করিয়া একমাত্র আমার স্মরণ লও, আমি তোমার সর্ব্বপাপ দূর করিব।
৫. এই বৃক্ষআদি জীবকূল যা দেখছো , সব আমারই সৃষ্টি । আবার সব আমতেই লয় হবে । তাই আমার এক নাম বিশ্বনাথ ।
৬. বাবা যত যাবে সব ফাঁকা । সব ফাঁকা । ব্রহ্মা বিষ্ণু মহেশ্বরকেও আমার আরাধনা করতে হয়েছে ।
৭. পৃথিবীর বিভিন্ন ধর্ম্মাবলম্বী চিরস্মরণীয় সাধক ও মহাপুরুষগণের মধ্যে ঠাকুর ব্রজানন্দের স্থান একটু স্বতন্ত্র । কারণ তিনি নিজেই সকলের উপাস্য এবং কোন দেবতার আরাধনা করেন না । তিনি স্বয়ং সাধ্য । সাধক নন্ । অলমিতি ।
৮. আমি একা ছিলাম । বহু হইবার ইচ্ছা হইল । হুংকার দিলাম । এটাই আদি বাক্য । ওঁকার । আগে ব্রজানন্দ । তারপর ব্রহ্মা বিষ্ণু মহেশ্বর । তারপর তেত্রিশ কোটি দেবতা । তারপর তোমরা, বুঝলে বাবা ।
৯. আমি তোমার সেই ব্রজের গোপাল, আমাকে পাইলে ফিরিতে হয় না।
১০. আমি যে ভক্তের অধিন, ভক্তের দাস, ভক্ত আমার নিকট যা প্রার্থনা করে আমি তাহাই দিয়া থাকি। তুমি নির্ভয় ও নিশ্চিত হও। আশীর্ব্বাদ করি তোমার সংশয় দূরীভুত হউক।
১১. আমি স্বয়ং ভগবান । এবারের ঘোরকলিতে বুড়াশিব আমার মর্ত্যপরিচয় । আমি এবার আবার এসেছি জীবের দুঃখ মোচন করতে । প্রেম ও শান্তির বাণী প্রচার করতে ।
১২. দ্বাপরে আমি বসুদেবের ঘরে আগমন করিয়া আমার বাবামাকে কারামুক্ত করিয়াছিলাম। এবারও তোমাদের গৃহধর্ম্ম পালনের সৌভাগ্য দিয়া দেহ ইন্দ্রিয়াদি সবল সুস্থ রাখিয়াছি। আরও অনেক কিছু করিবার সংকল্প আছে।
১৩. ভক্তের প্রাণের পিপাসা মিটানের জন্যই আমার এ অবতার। তোমরা সরল বিশ্বাস নিয়া দিনান্তে একবার অন্ততঃ “জয় ব্রজানন্দ” বলে আমাকে স্মরণ করিবে । আমার আসনে প্রার্থনা জানাবে! আমাকে দেয় পূজা বা ভক্তি আমার ফটোতে দিবে বা আমার আসনে দিবে। আমি গ্রহণ করিব।
১৪. ধর্মাচরণ আর জীবহিতেই আমার এবার আবির্ভাব ।
১৫. ভক্তের কাঙ্গাল কিনা আমি । তাই তারা আমাকে টানে, আর আমিও ভক্তের টানে থাকিতে পারি না ।
১৬. এবার আমি রাধাকৃষ্ণের ভাব নিয়াই অবতীর্ণ হয়েছি । তাইতে তুমি দেখতে পাবে আমার দেহের বর্ণ কিছু কাল আর কিছু পীত, কৃষ্ণ শ্যামবর্ণ আর শ্রীমতি কাব্য বাবুরাণীর পীতবর্ণ দুই বর্ণ মিশিয়া এবার আমার দেহের বর্ণ শ্যামল পীতবর্ণ হয়েছে । এর আগের বার এসেছিলাম পৃথক পৃথক দেহে । এবার পৃথক দেহে আসি নাই দুই দেহ এক করে এসেছি ।
১৭. আমার দৃষ্টিতে শুকনা গাছে ফল ধরে।
১৮. যাও সবে নিচে আমার আসনকোঠায় । সকলে আমার সন্ধ্যারতি দর্শন করো গিয়ে । তেত্রিশ কোটি দেবতা আসে আমার সন্ধ্যারতি দর্শনে । তাদের দর্শনে, বাবা, তোমাদের কর্ম ক্ষয় হবে । যাও । তারকব্রহ্ম নাম যোগে সন্ধ্যারতি দর্শন করো গিয়ে ।
১৯. আমি ফলদাতা। সুফল দেব।
২০. আমি সর্বদাই তোমাদের অন্তরে বাহিরে সর্বত্রই আছি । যখনই ঐকান্তিক ভাবে ডাকিবে সাড়া পাইবে । তোমরা কখনই নিজেদের অসহায় ভাবিও না ।
২১. ভক্তের হৃদয় বৃন্দাবনে আমার নিবাস, আমার ভক্ত চির অজেয় । তবে চাই শ্রদ্ধাভক্তি ভেজাল নয়’ ।
২২. ভক্তের বোঝা আমি বহন করিয়া থাকি ।
২৩. বাবার জীবন আমার হাতের মুঠে, যমের ভয় নাই ।
২৪. অন্তরের শ্রদ্ধাভক্তি দিয়া যে যেভাবে আমার ভজনা করে সে ভাবেই তার পূজা আমি গ্রহণ করিয়া থাকি ।
২৫. মঞ্জুর সম্বন্ধে তুমি আদৌ কোন চিন্তা করিবা না । মঞ্জু আমার হাতের মুঠে রহিয়াছে । আমার হাতের মুঠ ও খুলবে না, তাহার প্রাণ হানিও হবে না ।
২৬. এই জগতে সর্ব্বত্রই একমাত্র গুরুদেবেরই লীলাখেলা । একমাত্র ব্রজানন্দই জগৎ ব্যাপিয়া আছেন । এই জগতে যাকিছু সবই “ব্রজানন্দ” ।
২৭. মুক্তাত্মা ভগবানের স্মরণ লইলে তিনিই কৃপা করিয়া এ মহামায়া হইতে মুক্তি দান করিতে পারেন, নচেৎ অন্য উপায় নাই । তুমি সংসার বন্ধনে আবন্ধ বটে কিন্তু তোমার গুরুতো মুক্তাত্মা মহাপুরুষ। তিনিই তোমার ভববন্ধন ছেদন করিবেন। তুমি শুধু গুরুসেবা ও গুরুবাক্য হৃদয়ে ধারণ করিয়া কর্ম্মে অগ্রসর হও। তোমার আর চিন্তা কি? ভব ভয় হারী শ্রীহরিই গুরুরূপে তোমার সম্মুখে সমাসীন।
২৮. আমি তোমাদের নিজ জন । তোমাদের হৃদয়েই আছি সেখানেই তো আমাকে পাইতে পার ।
২৯. দেহের দৃষ্টিতে আমি তোমার দাস এবং আত্মার দৃষ্টিতে আমি তুমি অভেদ, এইরূপ ধারণা নিয়া জপ্ ধ্যান ইত্যাদি করিবে ।
৩০. আমার ভক্তের বিনাশ নাই-পরাজয়ও নাই ।
৩১. তোমাদের মরণ বাঁচন সব আমার হাতে । তোমরা মুক্ত পুরুষ, আমার লীলার সহায়তা করিতে শরীর ধারণ করিয়া আসিয়াছ। আমি যখন আসিয়াছি, তোমরাও আমার সাথে আমার পরিষদরূপে আসিয়াছ । তোমরা নির্ভয়ে থাক । তোমাদের উপর অন্যের কোন অধিকার নাই ।
৩২. এই বিশ্ব আমারই বিভূতি বা আমার প্রতিমা জ্ঞানে সকলের সেবা করিয়া যাও। স্বজনগণকে সন্তুষ্ট রাখ। প্রীতির সহিত পালন কর। মাতা পিতা গুরু ভার্য্যা। ইহারা তোমার পোষ্যবর্গ। পোষ্য পালনে স্বর্গলাভ; পোষ্য পীড়নে নরক প্রাপ্তি ঘটে।
৩৩. এই চরণ পূজা করিয়া অনেকেই তো পাইতেছে । এমন না যে কেহই পায় নাই । তবে আমার বিশ্বাস আছে, আমাকে পাইলে ফিরিতে হয় না ।
৩৪. তোমার গুরুভক্তি থাকিলে শত্রু কি করিতে পারে । গুরু মেহেরবান ত চেলা পালোয়ান । আমি যারে রাখি তারে মারে কে । থাকো রাখো সাঁইয়া মারি সেকেনা ফো । তুমি নাম তলোয়ার হাতে লইয়া নির্ভয়ে বসিয়া থাক । তোমাদের জয় হবেই হবে ।
৩৫. আমার সখা সখিদের কোন ভয় নাই। তাহারা যেন আমাকে মানুষ জ্ঞান না করে।
৩৬. আমার কৃপার ফোয়ারা তো ছুটাইয়াই রেখেছি। ইচ্ছা মত পান করিয়া লইলেই হয়। তুমি আমার স্মরণ লইয়া থাক।
৩৭. আচ্ছা বাবা, শিশু ভূমিষ্ঠ হলে কী করে ? আমি তা করি নাই । শিবোহ্হম শিবোহ্হম এই আওয়াজ । এই আওয়াজ ছাড়া অন্য কোন আওয়াজ জানতাম না আমি । পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত আমার স্পষ্ট মনে আছে বাবা । আমার আদিস্থান কন্যাকুজ ।
৩৮. তুমি মরতে চাইলে কি মরতে পার? তুমি যে কার সে খবর কি রাখ? তোমার এক পা নরিবার ক্ষমতা নাই। সর্ব্বশক্তিমান ব্রজানন্দ সেই একমাত্র নিয়ন্তা ও সর্ব্ব নির্ব্বাহ কর্ত্তা। তুমি তাঁর হাতের পুতুল মাত্র।
৩৯. তোমার প্রাণ তো আমার হাতের মুঠে তাহা যাবে কি করে এই ভাবে খালি হাতে নিয়ে লাভ কি? কিছু সম্বল করে দিব, তার পর যাবে। খালি হাতে, রিক্ত হস্তে গিয়ে কি সেখানে থাকিতে পারিবে? সে যে বিষম ঠাঁই। খাবার পয়সা না থাকিলে, ফিরে আসতে হবে। তুমি তো এখন গুরুর অধিকারে। যাবার মত করেই পাঠাব। সম্বল কর।
৪০. তোমার যখন যা প্রার্থনা, জানাইতে আলস্য করিবেনা, আমি পূরণ করিব।
৪১. এই জগতে যা কিছু সবই ব্রজানন্দ । একমাত্র ব্রজানন্দেরই লীলা খেলা এই জগৎ ।
৪২. ব্রজানন্দ মানবে কৃষ্ণ, তাজা গোবিন্দ । আমাকে মনুষ্যজ্ঞান করলে সর্বনাশ হবে ।
৪৩. আমার স্মরণ যে নিয়েছে, আমার ভরষা যে করেছে তার আর বিনাশ নাই।
৪৪. যীশু কি বলে বাবা ? যীশু বলে, I & my sun are one. আর আমি কী বলি ? I am he.
৪৫. আমি তুলসী-চন্দন শালগ্রামশিলা চরণে লই। আমার পুরোপুরি বিশ্বাস, আমি সেই। যার এই বিশ্বাস নাই সে ভস্ম হয়ে যাবে।
৪৬. এই জগতে সর্ব্বত্রই একমাত্র গুরুদেবেরই লীলাখেলা । একমাত্র ব্রজানন্দই জগৎ ব্যাপিয়া আছেন । এই জগতে যা কিছু সবই ব্রজানন্দ ।
৪৭. যে চরণ পাওয়ার আশায় যোগী ঋষিরা ধ্যানে নিরবধি, সেই চরণ পেয়ে তোরা অবহেলা করিস ?
৪৮. ব্রজানন্দ সর্ব্বব্যাপক সত্ত্বা ।
৪৯. লোকনাথ তো আকাশের উপর দিয়ে হেঁটে যেত । ওর একবার খুব অসুখ করেছিল, গিয়েছিলাম ওকে দেখতে । বলেছিলাম দেখ কে এসেছ তোমার সামনে । বুড়াশিব এসেছে তোমার কাছে । শোনা মাত্র ও উঠে বসেছিল । অসুখ নিরাময় হয়েছিল । দেখেছ ব্রজানন্দের লীলা ।
৫০. তিনি প্রায়ই স্বীয় পরিচায়ক ধ্বনি দিতেন – “বোল্ একবার সব কা বানানাওয়ালা আদিপুরুষ ভগবান ব্রজানন্দ জীউ কী ।” “বোল্ একবার অযোনী স্বয়ম্ভু ভগবান ব্রজানন্দ জীউ কী ।” “আমি তো নিরাকার ছিলাম । সাকার হলাম হুংকার দিলাম । এই তোমাদের ওঁকার ।”
৫১. এই লীলার উদ্দেশ্য জীব কল্যাণ । আমার সবকিছু খাওয়া-উঠা-বসা জীবের কল্যাণের জন্য ।
৫২. বাবা, যেখানে ব্রজানন্দের মহিমাকথা বলবে, সেখানে তার ও তোমার মাঝে আমি হাজির থাকবো ।
৫৩. আমি যা তাই বলি । আমি শিব, শিবের প্রকাশক । আমি তাই বলি । আমি শিব ছাড়া কি বলবো ।
৫৪. আক্কেল কো দখল্ নেহী । তোমার বুদ্ধি বিচার দিয়ে ব্রজানন্দকে কিছুতেই বুঝতে পারবে না ।কিছুতেই বুঝতে পারবে না ।
৫৫. ভক্ত যে আমার প্রাণের প্রাণ। আমি কখনও ভক্তকে হারাই না ভক্তও আমাকে হারায় না।
৫৬. আমার আরেক নাম পশুপতিনাথ ।
৫৭. বাবা, আমিই তারকনাথ । বাবা মহাদেবগুরু মহাদেব মহাপ্রেমিক । বাবা, এ চরণ শিবের চরণ, এই চরণ থেকেই চতুরবর্গ ফল লাভ হয় । ধর্ম-অর্থ-কাম-মোক্ষ সব এই চরণে । বাবা ব্রহ্মান্ডের আধার এই চরণ ।
৫৮.তোমার দোললীলার আবির অর্ঘ্য শ্রীচরণে পৌঁছিয়াছ। শ্রীচরণ আবির অর্ঘ্য পাঠাইলাম। শিরে ধারণ করিয়া অভীষ্ট ফল লাভ করো। এ সময় তোমাদের কাছে থাকিতে পারিলাম না। চেতন বিগ্রহের চরণে আবির ঢালিয়া যে কি সুখ তা ভাষায় কি জানাবো। আবিরঅর্ঘ্য গোবিন্দ জ্ঞানে ঢালিয়া থাকিলে তোমার বাসনা অবশ্যই পূর্ণ হইবে এবং তুমি যখন যা চাহিবে তাই এই চরণ হইতে পাইবে কারণ যার যেমন ভাব তার তেমন লাভ বৈষ্ণব কবি বলিয়াছেন-“কৃষ্ণ কেমন যার মন যেমন”। জ্ঞানীশ্রেষ্ঠ ভীষ্মদেব কৃষ্ণকে ঈশ্বর বলিয়াই জানিতেন আবার এ দিকে শিশুপালাদি কৃষ্ণকে সামান্য মনুষ্য বলিয়াই মনে করিতেন। বাবা, তাই বলি, ধর্ম্ম, অর্থ, কাম, মোক্ষ সবই এই চরণে আছে-তোমার শক্তি থাকিলে লও। আমি বিলাইতেই আসিয়াছি।
৫৯. ব্রজানন্দের চরণ শিবের চরণ ।
৬০. হ্যাঁ বাবা, স্বয়ং ব্রহ্ম তোমার সামনে । কোন সময় ভুলিও না, আমি কে ।
৬১. ব্রজানন্দের নামে জম পালায় । ব্রজানন্দের অপার লীলা । বুঝলনারে যোগী ঋষি ।
৬২. দ্বাপরের সেই লীলা বহুযুগ আগে ছেড়ে এসেছি । এবার জীবতরাতে বৈকুন্ঠ থেকে ব্রজানন্দ মহানাম নিয়ে এসেছি । কলির শেষে পাপী উদ্ধারী ব্রজানন্দ । এবার ব্রজানন্দ মহানামের অক্ষয় বীজ বপন করেছি । এই নাম একদিন মহীরুহ হয়ে ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়বে ।
৭৩. ব্রজানন্দ বহুরুপী ।
৬৩. রামকৃষ্ণ পরম হংসদেব প্রসঙ্গে একদিন বলছিলেন –আমিই তো শাখা প্রশাখায় ওদের মধ্যে ছড়িয়ে আছি । ওরা তো আমারই নাম করে । আমারই প্রচার করে ওরা
৬৪. আমি মানবে কৃষ্ণ ।
৬৫. ওঁ ব্রজানন্দের একটা নাম । এর থেকেই ব্রহ্মান্ডের সৃষ্টি ।
৬৬. কৃষ্ণের পূর্ণ কান্তি নিয়ে এসেছি ।
৬৭. আমি যা, তাই বলি । আমি শিব । ব্রজানন্দ ভূতনাথ ।
৬৮. যখনই ধর্মের গ্লানি হয় এবং অধর্মের অভ্যুদয় ঘটে, তখনই আমি অবতীর্ণ হই- ধর্মরক্ষার জন্যে, পাপীদের বিনাশকল্পে এবং সত্য ও ধর্মের পুণঃ প্রতিষ্ঠার জন্যে আমি যুগে যুগে কায়া ধারণ করে পুণঃ পুণঃ আবির্ভূত হই । আমি স্বয়ং বুড়াশিব ।
৬৯.
দীক্ষা
১. তোমার দীক্ষা মন্ত্রটী দিনান্তে অন্ততঃ একবার লইও নামই তোমাদের আত্ম উন্নতি ও মুক্তির পথে অগ্রসর করাইবে ।
অবতার
১. এবার আমার অবতীর্ণ হ’বার একমাত্র উদ্দেশ্য ভক্তের উদ্ধার । তোমাদের উদ্ধার না করা পর্য্যন্ত আমারও চিন্তা দূর হ’বে না ।
২. ভক্তের টান শক্ত টান, সে টান কি আমি এড়াইতে পারি ? ভক্ত আমার বড় প্রিয় । ভক্তের জন্যই আমার এবারকার আগমন ।
৩. ভক্তের প্রাণের পিপাসা মিটানোর জন্যই আমার এ অবতার ।
৪. এবার আমার অবতীর্ণ হইবার একমাত্র উদ্দেশ্য জীবজগতের কল্যাণ-জীব উদ্ধার । তাই আমি জীবের সর্ব্বাধিক অশান্তি নিজে গ্রহণ করিয়া শান্তিধারা বিতরণ করি ।
৫. ভক্তের প্রাণের পিপাসা মিটানোর জন্যই আমার এ অবতার । তোমরা সরল বিশ্বাস নিয়া দিনান্তে একবার “জয় ব্রজানন্দ” বলে আমাকে স্মরণ করবে । আমার আসনে প্রার্থনা জানাবে । আমাকে পূজা বা ভক্তি আমার ফটোতে বা আমার আসনে দিবে । আমি গ্রহণ করিব । বাবা তোমরা নিঃসন্দেহে সাধন করে যাও । ফল লাভ ধ্রুব সত্য । তোমরা যতখানি মন দিবে ততখানিই কাজ পাবে । ঠিক ঠিক ভক্তি চাই নইলে হবে না । গুরুতে বিশ্বাসগুরুতে ভক্তি, গুরুতে একনিষ্ঠ হও ।
নাম
১. তোমার ধানাই পানাই ছেড়ে দিয়ে আমার নামে পরে থাক । তোমাকে আর কোন আপদ বালাইতে পাবে না ।
২. তোমাদের নামের মধ্যেই আমার পূর্ণশক্তি রহিয়াছে । সময় মত নাম কর । নামের কাছে যে যা চাইবে সে তাই পাবে ।
৩. হনুমান যেমন রামনামের জোরে এক লাফেই সাগর পার হইয়া গেল আবার গন্ধমাদন পর্বতটাও হাতে করে নিয়ে এল, আমার ইচ্ছা তোমারও আমার নামে সেইরূপ বিশ্বাস হউক । এবার একটা লীলা তোমাকে দিয়ে করে যাই, জগতে একটা দাগ রেখে যাই । আগেও যেমন নামের গুণে এই সব লীলা হয়েছে তবে এখন কেন হইবে না।
৪. আমি এই সুদীর্ঘ জীবন যে নাম লইয়া (জপিয়া) জাগতিক দুঃখ কষ্টের পরপারে গিয়াছি তোমাদেরও সংসার জ্বালার হাত এড়াইতে ঔ ভব সাগর তরিতে সেই নামই দিয়াছি ।
৫. নাম কর । “আমিই সেই ব্রজানন্দরূপ কৃষ্ণ । আমি বড় বাপের বেটা । আমার আবার ভয় কোথায়” ? জোর করে বল । প্রাণ দিলে কি কর্ম্মে ছাড়বে বাবা ? তবে তোমার ভাগ্য ভাল ।সদগুরুর শিষ্য মহাভাগ্যবান ।
৬. তোমার আর কোন ভয় নাই । সদ্ গুরুর শিষ্য মহাভাগ্যবান, তুমি দিনান্তে গুরু নামটা একবার স্মরণ করিও । এই নামই তোমার জীবনের থাম । ঘরে থাম লাগাইলে যেমন ঘর ভাঙ্গবার ভয় থাকে না সেই রুপ ইহা তোমার দেহঘরের থাম, দেহঘর আর ভাঙ্গবার ভয় নাই ।
৭. তুমি নির্ভয় নিশ্চিন্তে থাক তোমার দুঃখ নাই । সদ্ গুরুর শিষ্য মহাভাগ্যবান । দিনান্তে গুরুদত্ত নামটি একবার লইও । নামকে অক্ষর মনে করিওনা, গুরুকে মানুষ মনে করিওনা, প্রতিমাকে শীলা মনে করিওনা । তবেই তোমার উর্দ্ধগতি, অধঃগতি নাই । আমি ও আমার নাম অভেদ । নামের কাছে খোঁজ আমাকে পাইতে হইলে । আমাকে দিয়া তোমার যে কাজ হইত আমার নাম দিয়াও তোমার সে কাজ হইবে ।
৮. তোমরা আমার নাম ধর । আমি ও আমার নাম একইবস্তু । আমাকে দেয় পূজা বা ভক্তি আমার নামে আসনের ফটোতে দিলে আমিই পাবো । সেখান হইতেই তোমাদের অভিষ্ট পূর্ণ হবে । নামের ভেতর দিয়েই তোমাদের অভীষ্ট পূর্ণ হবে ।আমি তোমাদের কোন কিছুই অপূর্ণ রাখি নাই, সবকিছুই পূর্ণ করে দিয়েছি । অন্য কোথাও যেতে হ’বেনা ।
৯. নামের বলে সব দুঃখ দারিদ্র সঙ্কট হইতে উদ্ধার পাইবে ।
১০. নাম তরোয়াল হাতে লইয়া বসিয়া থাক । তোমার কোন ভয় নাই ।
১১. তুমি একান্তমনে আমার নাম করে যাও; নামেই আমি আছি লীলার অভাব হবে না ।
১২. তোমরা সরল বিশ্বাস নিয়া অন্ততঃ দিনান্তে একবার “জয় ব্রজানন্দ” বলে আমাকে স্মরণ করবে । আমার আসনে প্রার্থনা জানাবে । আমাকে দেয় পূজা বা ভক্তি আমার ফটোতে বা আসনে দিবে । আমি গ্রহণ করিব । মাই তোমরা নিঃসন্দেহে সাধন করে যাও । ফল লাভ ধ্রুব সত্য । তোমরা যতখানি মন দিবে ততখানিই কাছে পাবে । ঠিক ঠিক ভক্তি চাই নইলে হবে না । গুরুতে বিশ্বাস, গুরুতে ভক্তি গুরুতে একনিষ্ট হও । তোমরা আমার নাম ধর । আমার দেহটাকে ধরিও না, দেহ একদিন যাবেই । এ অনিত্য দেহ কাজেই তোমাদের নাম দিয়েছি । নাম ধর, পার হবে, সংসার জ্বালার হাত এড়াবে ।
১৩. এ নশ্বর দেহ আর কত কাল সাকার থাকিবে । বাবা তুমি নির্ভয় থাক । আমাকে দিয়া যে কাজ হইবে, আমার নাম দিয়াও সেই কাজ হইবে । আমার নামই সত্য সেই নামই তোমার কাছে রহিল ।
১৪. যে নাম করিয়া আমি উদ্ধার পাইয়াছি সেই নামই তোমাদের দিয়াছি । আমাকে তোমাদের মধ্যে বিতরণ করিয়া দিয়াছি । শ্রদ্ধা বিশ্বাসের সহিত নাম জপ কর, তোমার অহংকে ব্রজানন্দ লয় লয় সোহম্ হইয়া যাও ।
১৫. নামই সত্য চিরনিত্য, নামের অপার মহিমা, যখন যা কিছু অভাব বোধ কর নামের কাছে সরল শিশুর মত চাও, হাত পাত, পাইবে । তোমার কোন কিছুরই অভাব থাকিবে না ।
১৬. নাম সত্য আর সব মিথ্যা । মন মুখ এক করিয়া নামটি চালাও । নামে অবিশ্বাস বা অশ্রদ্ধা আনিওনা । যে নাম করিয়া আমি উদ্ধার পাইয়াছি, সেই নামই আমি তোমাকে দিয়াছি । আমাকে দিয়া তোমার যে কাজ হইবে আমার নাম দিয়া তোমার সেই কাজ হইবে ।
১৭. তোমার যখন যা কিছুর দরকার পড়ে আমার নামের কাছে প্রাণ খুলিয়া চাইবে । শিশু যেমন মাকে ডাকে কাছে, তেমনি তুমি আমাকে ডাকবে । তোমার আশা আকাঙ্ক্ষা আমি মেটাবো । তোমার সব কাজে আমাকে সাথে করিয়া লও, গুরুধাম চালাও । ইহাতেই তোমার গতি মুক্তি অনিবার্য্য ।
১৮. আমার নামের মধ্যেই সব কিছু আছে । আমাকে দিয়া যে কাজ হ’বে আমার নাম দিয়াও সেই কাজ হ’বে ।“নাম বিনে যে কেহ না পায় মুক্তি কোন কালে”।
১৯. অসুখ বিসুখ তোমার কি করিতে পারে ? গোপাল যে তোমার আঁচল ধরিয়া বসিয়া আছে । তোমার দেহ ঘরের খুঁটি শক্ত আছে, ঝড় তুফানে ফেলিতে পারিবেনা । মা, নাম তরোয়াল হাতে রাখ । “কি দিব তুলনা বলনা তাঁহারি ব্রজানন্দ মোর ব্রজের কানাই” । আমার বাবার অবস্থা খারাপ হইতে পারেনা । আমি কি শুধুই এখানে বসিয়া আছি ? আমার চারিদিকেই নজর আছে । আমার বাবার অসুখ নাই । আমার সাধুবাবা আমার স্বরূপ, আমার ভাবকান্তি এ যাত্রাতে রক্ষা পাইবেই । আমার যে আনন্দ করিবার আরও ইচ্ছা আছে । সুরধণীরমা ও কাকার রোগ উপশম কামনা রাখিলাম
২০. দিনান্তে গুরু নামটি একবার স্মরণ করিও । যে নামে আমি সিদ্ধি লাভ করিয়াছি সেই নামই তোমাদের দিয়াছি । আমাকে দিয়া তোমাদের যে কাজ হইত, আমার নাম দিয়াও তোমাদের সে কাজ হইবে । তোমার যখন যাহা দরকার পড়ে নামের কাছে চাহিলেই পাইবে-আরও ।
২১. আমি তোমাদের পূর্ণশক্তি দিয়াছি, অপূর্ণ বলিয়া কিছুই রাখি নাই । গুরুনামই একমাত্র সার ও সত্য আর সব আলুনি । তোমাদের কোনই ভয় নাই । জয় ব্রজানন্দ বলিয়া হুঙ্কার দিয়া আনন্দে ভরপুর থাক ।
২২. গুরুর অধিক আর কেহ নাই । গুরু সর্ব্বেশ্বর সকলের নিয়ন্তা ও নির্ব্বাহ কর্ত্তা । তোমরা এই বোধে নাম কর, ধ্যান কর, গুরু চিন্তাকর, দর্শন কর, জপ কর, সেবা কর, পূজা কর, উপাসনা কর, তোমাদের অভীষ্ট লাভ হইবে । অভাব রাক্ষসীর তাড়না সহ্য করিতে হইবে না । কামনা বাসনা পূর্ণ হইবে বিপদ আপদ, রোগ শোক, দুঃখ কষ্ট দূরে যাইবে । সাপে বাঘে খাইবে না, দৈন্য থাকিবে না । এই কয়টা ত হবেই আধ্যাত্মিক জীবনও মঙ্গলময় হইবে ।
২৩. তোমরা আমার নাম ধর । আমার দেহটাকে ধরিও না । দেহ একদিন যাবেই । এ অনিত্য দেহ তাই তোমাদের নাম দিয়াছি । নাম ধর পার হবে, সংসার জ্বালার হাত এড়াবে ।
২৪. নামটা করবে নামের মধ্যেই সব আছে । আমি তোমাদের কোন কিছুই অপূর্ণ রাখি নাই । নামের মধ্যেই আমার সব কিছু দিয়াছি ।
২৫. আমার নাম ধর । আমার দেহকে ধরিওনা । দেহ আজ আছে কাল নাই । তাই তোমাদের নাম দিয়েছি । নাম চিরদিনই থাকবে । নাম সত্য, নাম সত্য । যখন যা কিছু দরকার পরে নামের কাছে চাইবে । নামের কাছে সব পাওয়া যাবে ।
২৬. তুমি সব ছেড়ে নাম কর । সাধুর তো নামই একমাত্র সম্বল ও বল ভরসা । সাধুর বৈদ্য নারায়ণ আর নাম ঔষধ ।
২৭. আমি তো তোমাদের কাছেই আছি । নাম, নামী অভেদ, আমাকে দিয়ে তোমাদের যে কাম হইবে, আমার নাম দিয়াও তোমাদের সেই কাম হইবে । আমার কাছে পূজা দিয়া যে ফল পাইবে, আমার নামের কাছে পূজা দিয়াও সেই ফলই পাইবে । আমাকে পূজা দেওয়া আমার নামের কাছে পূজা দেওয়া একই কথা ।
২৮. তোমরা যে একদিন সেই সোহহং ব্রজানন্দই তো ছিলে ! আজকে মায়ার ফাঁদে পড়িয়া সেই রূপ হারায়ে ফেলিয়াছ । তাইতেই তো রোগ শোকের অধীন জন্ম মৃত্যুর অধীন হইয়াছে । এক্ষণে ব্রজানন্দ জপ করে ব্রজানন্দ হয়ে যাও । তাহা হইলে রোগ শোকে বা জন্ম মৃত্যুর অধীন হইতে হইবে না ।]
২৯. তোমরা দিনান্তে গুরুদত্ত নামটি একবার স্মরণ করো; তোমাদের কানে যে নাম দিয়েছি উহাশক্তির আধার গুরুদত্ত নাম ও গুরু অভেদমনে করিয়া সাধন করে যাও । নাম এবং নামী অভেদ । সরল বিশ্বাসও ভক্তি লইয়া থাক, তোমরা সমস্ত বিপত্তি হইতে পরিত্রাণ লাভ করিবে । নামটি জপ করিবার কালীন গুরুমূর্ত্তি লক্ষ্য করিয়া জপ ও ধ্যান করিবে । সন্ধ্যা আহ্নিক করিবার কালে প্রার্থনা করিবে ঠাকুর আমি তোমারই স্বরূপ তুমি ও আমি এক বস্তুই । মায়া মোহে আবদ্ধ হইয়া আজ আমরা তোমা হতে পৃথক হয়ে গেছি । এক্ষনে তুমি আমাদের তোমার করিয়া লও, তোমার নিত্য, সত্য স্বরূপ আমায় দাও । মাই তোমরা এইভাবে গুরুকে সাধন করিয়া যাও । তোমাদের উভয় লোকেই মঙ্গল ।
গুরু
১. আশীর্বাদ করি তোমার অভীষ্ট পূর্ণ হউক । তোমার গুরুতে অনন্য ভক্তি হউক । তোমার মন গুরুতে সম্যক বিলীন হউক । সূর্য্য উদয় না হলে সংসারের অন্ধকার ঘোঁচেনা, তেমনই গুরু বিনে মানুষের মনের অন্ধকার দূর হয় না । শ্রী গুরুদেবের চরণ কৃপা হইতে মানুষ সংসার সাগর পার হইয়া থাকে । গুরু বিনে নিস্তার নাই ।
২. গুরুভক্তিতে জন্ম জন্মান্তরের পাপরাশি নষ্ট হয় । যেমন অগ্নিতে যাহা কিছুই পড়ে তাহা ভষ্ম হইয়া যায় । দেবতারা পর্য্যন্ত ইচ্ছা করিয়া থাকে ভারত ভূমিতে জন্মগ্রহণ করিয়া ভক্তি লাভ করিতে ।
৩. শুদ্ধমনে ভাগব্ ত রূপে গুরুতে ভক্তি রাখিলে তাহার সমস্ত মনস্কামনাই সিদ্ধ হইয়া যায় । ভজন, পূজা , পাঠ, দান-আদিকর্ম্ম করিলে যে ফল হইয়া থাকে তাহা এক ভক্তিতেই লাভ হইয়া থাকে । গুরুভক্তি জাগাইবার জন্যই যে গুরুধামের প্রতিষ্ঠা হইল ।
৪. সদ্ গুরুর শিষ্য মহাভাগ্যবান । সদ্ গুরুর আশ্রয় পাইলে তাহার আর চিন্তা ভাবনার কিছুই থাকে না, কামজারীও থাকে না । সে হেলায় হউক, নিষ্ঠায় হউক দিনান্তে নামটি একবার লইলেই হয় । তবেই তোমার ইহ পরকালের কাজ হইয়া যায় । তোমাদের কোন সাধন ভজন নাই, এক বার জয়গুরু বলে ডাক দিবা মাত্র । দয়াল হরির আগমনে জীবের সাধন ভজন সরল হইয়া যায় ।
৫. সদগুরুর শিষ্য মহা ভাগ্যবান, তোমরা আমার আশীর্ব্বাদ শিরে ধারণ করিয়া নির্ভয় ও নিশ্চিত হও ।
“সদগুরুর আশ্রয় বিনে যত দেখ ধর্ম্ম,
সকলই অনর্থ মাত্র শ্রুতিগণের মর্ম্ম ।
যে ধর্ম্ম সংসার পুনঃ পুনঃ উপজায়,
সে ধর্ম্ম অধর্ম্ম মানিয়া শ্রুতি গায় ।
বহু ভাগ্যে যদি হয় সাধুর সঙ্গতি,
বুঝায় যথার্থ তবে ঘুঁচায় দূর্মতি ।’’
৬. গুরু অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ বস্তু জগতে আর কিছুই নাই । যে শিষ্য সর্ব্বদা গুরু মূর্ত্তি ধ্যান করে সে কাশীবাসের ফল লাভ করে । গুরু তারকব্রহ্ম স্বরূপ, নররূপী ভগবান । গ এই বর্ণটি উচ্চারণ করলে মহাপাতক নাশ হয়, উ উচ্চারণে ইহজন্মের পাপ নষ্ট হয় । তুমি একটু আমায় স্মরণ রাখিবে । তবেই আমি তোমাদের দুটি প্রাণীর মুখ উজ্জল ও শান্তি সুখ দান করিতে পারিব ।
৭. গুরু কাঁচ পোকা তুল্য ও শিষ্য তেলাপোকা স্বরূপ । কাঁচ পোকা তেলা পোকাকে ধরলে তেলা পোকা কাঁচ পোকাকে অবিশ্রান্ত চিন্তা করতে করতে আপনার স্বরূপ হারাইয়া কাঁচ পোকার স্বরূপ ধারণ করে, সেই প্রকার তোমরাও আমার সচ্চিদানন্দ স্বরূপের চিন্তা করিয়া সচ্চিদানন্দ হইয়া যাও ।
৮. আশীর্বাদ করি শ্রীগুরুতে তোমার অচলা ভক্তি ও অটল বিশ্বাস হউক । গুরু যে সেই পরমবস্তু, পরমাত্মা, পরমেশ্বর ইহা তোমার বুঝিবার শক্তি লাভ হউক । আমার এই আশীর্ব্বাদেই তোমার ষোল আনা বিশ্বাস হইলেই যে তুমি ত্বরিয়া যাও । তোমার সমস্ত দুঃখের নিবৃত্তি হইয়া যায় । সেই দর্শন পাইলেই যে আনন্দ লাভ করিতে পার, পরম শান্তি পাইতে পার । জীবে ঠিক ঠিক দর্শন পায়না বলিয়াই এত হায় হায় রব ও দুঃখ কষ্ট ।
৯. তোমাদের গুরু করণী অনেক কিছুই করা হয় নাই । বসন, ভূষণ আসন প্রদান ইত্যাদি কর্ম্মদ্বারা সাত্বিকতাময় জীবন লাভ কর । বৈধ কর্ম্ম চিত্তের মলিনতা দূর করে । চিত্ত স্থির হলেই অশ্রান্ত জ্বালা, তীব্র মনস্তাপ পেতে হ’বে না ।
১০. আশীর্ব্বাদ করি গুরুতে তোমার ঈশ্বরজ্ঞান লাভ হউক, তবেই তোমার গুরু করণীয় সার্থক ।
১১. তুমি আমার দিকে চাহিয়া থাক । তোমার সংসার আপনিই চলিবে । তুমি চিন্তা করিয়া কি এক হাত বাড়াইতে পারিবে ? গুরুর ইচ্ছায় যা হইবার হইবেই । আমার সখা সখিদের কোন ভয় নাই । তাহারা যেন আমাকে মানুষ জ্ঞান না করে । গুরুব্রহ্মা, গুরুবিষ্ণু মানে আর কিছুই না গুরুতে সব মেনে নেওয়া । ঈশ্বর তো অসীম অনন্ত, সেই ধারনা করিবার শক্তি কি মানুষের আছে ? তাই গুরুতে ঈশ্বর জ্ঞান হইলেই তাহার আর পাওয়া থোওয়ার কিছুই বাকী থাকে না । মানুষের এই হ’ল সাধন ভজনের শেষ সীমা ।
১২. গুরুর অধিক আর কেহ নাই । গুরু সবচেয়ে আপন । গুরু সর্ব্বেশ্বর জগৎ কর্ত্তা ও নিয়ন্তা, তোমরা এই বোধে নাম কর, ধ্যান কর, চিন্তা কর, দর্শন কর, জপ কর, সেবা কর, পূজা কর, উপাসনা কর; তোমাদের অভীষ্টলাভ অতি শীঘ্রই ও সুনিশ্চিত । অভাব রাক্ষসীর তাড়না সইতে হবেনা, কামনা বাসনা পূরণ হবে, বিপদ আপদ দুঃখ কষ্ট দূরে যাবে । কোন ভৌতিক ভয় থাকবে না । এই কয়টা তো হবেই, আধ্যাত্মিক জীবনও মঙ্গলময় হবে । তোমায় আমায় ভেদ থাকবেনা । অবিনশ্বর শান্তি ও আনন্দের উপলব্ধি হবে । এই নামে যোগ ভোগ দুই আছে । সংসার ও সরল বিশ্বাস নিয়া দিনান্তে অন্তত একবার জয় ব্রজানন্দ বলে আমাকে স্মরণ করবে । আমার আসনে প্রার্থনা জানাবে । আমাকে দেয় পূজা বা ভক্তি আমার ফটোতে বা আমার আসনে দেবে আমি গ্রহণ করবো । তোমরা নিঃসন্দেহে সাধন করে যাও, জন্ম সফল হবে । তোমরা যতখানি মন দেবে ততখানিই কাজ হবে । গুরুতে বিশ্বাস, গুরুতে ভক্তি গুরুতে একনিষ্ট ভাব রাখো ।
১৩. গুরুধর, সংসারে ভয় পাবে না, এতো সুখের জায়গা নয়, একটা হলো, একটা গেল, সে অভাব লেগেই আছে ? তবে গুরুতে মন রেখে কর্ম্ম করে যাও । খুটা ধরবে, তবে আছাড় খাবে না, চূর্ণ হবে না । দেখ না জাত্তার মাঝে যে খুটা রয়েছে, সেই খুটোর তলায় মটরাদি শয্য সকল নিষ্পেষিত হয় না । তেমনি গুরু স্মরণাগত শিষ্যকে গুরুই সহায় হয়ে রক্ষা করেন । কিছু সময় স্থিরভাবে গুরুমূর্ত্তির চিন্তা করবে, তা হইলেই সব পাইবে, সংসার সুখের হবে । ঐহিক পারত্রিক উভয়ই মঙ্গল হবে
১৪. গুরুর চেয়ে আপন আর কে আছে ? পিতাকে ভক্তি করলে স্বর্গ লাভ হয় । মাতাকে ভক্তি করলে সংসার সুখ লাভ হয়। স্ত্রীকে ভালোবাসলে লক্ষ্মী সুপ্রসন্না হন । আর গুরুকে ভালবাসলে ভক্তি করলে এই কয়টাতো হয়ই উপরন্ত কৈবল্য লাভ হয় । তাই গুরু ভক্তি লাভের জন্য বদ্ধ পরিকর হও । গুরু নাম করতাকে ডাক, ডাকতে ডাকতে মনের ময়লা যাবে, তবে গুরুতে ঈশ্বর বুদ্ধি হবে, গুরুতে বিশ্বাস আসবে, ভালবাসতে প্রাণে চাইবে । ঠিক ঠিক ভালবাসা সহজ নয় সাধন চাই ।
১৫. তাই গুরুতে ঈশ্বর বুদ্ধি ফেলে গুরুতে মন রেখে নির্ভয় নিশ্চিন্তে বসে থাক শান্তি আপনেই আসবে ।গুরুগীতাই তার সাক্ষ্য।
দর্শন
১. পুনঃ পুনঃ দর্শন না পাইলে এ দুর্জ্জেয় কর্ম্মভোগ কাটিবে কি করে ? না কাটিলে কর্ম্ম পাশ সকলি যে অশিব । কামনা নাহিক আর লভিতে জনম , কর্ম্মফল শেষ কর নমো নারায়ণ । এই সব অবস্থা লাভ কি করে করবে ?
২. ভগবানের জন্য অনুরাগ, তাঁকে দেখার ইচ্ছা, তাঁর সান্নিধ্য অভিলাষ সে তো পরম এবং চরম কথা, এর উপর আর কিছুই নাই । তাহা হ’লে ত আর কোন কিছুর অভাব থাকে না ।
আবির
১. আমার মাই নামে বিশ্বাস, নামে নির্ভর দিয়া আছে তো ? এই সঙ্গে শ্রীচরণ স্পর্শিত আবির পাঠাইলাম । তোমরা সকলেই মাথায় ছোঁয়াইয়া ভক্তি করিও । থাকবেনা তোমাদের দুঃখ কষ্ট, আপদ বালাই । গুরুব্রহ্মা, গুরুবিষ্ণু, গুরুদেব মহেশ্বর ।
সংসার
১. তুমি আমাতে মন রেখে নির্লিপ্ত সংসারী হও । নির্লিপ্ত সংসার কিরূপ তাহা বলিতেছি । শ্রীগুরুতে মন লিপ্ত করে, ইন্দ্রিয়াদি দ্বারা সংসার উপভোগ করে যাবে । এই সংসার করতে তোমার কোন দোষ নাই । ইহাকেই নির্লিপ্ত ভাবে সংসার করা বলে ।
২. তোমার গুরুতে আসক্তি এলেই সংসার আসক্তি থাকবে না । গুরুতে আসক্তি না জন্মিলে নিরাসক্ত ভাবে বিষয় ভোগ করা চলে না । গুরুতে সম্পূর্ণ নির্ভর করতে না পারিলে আত্ম সমর্পণ না দিলে বিষয় ভাবনা দূর হয় না । আরো পরিষ্কার করে বুঝে লও –গুরুতে মন রেখে স্ত্রী পুত্র লয়ে কিরূপ থাকবে-যেমন বড়লোকের বাড়ীতে চাকরাণী । বাড়ীর সমস্ত কাজ করে, ছেলেপিলেদের লালন পালন করে ঐ ছেলেপিলে মারা গেলে রোদনও করে কিন্তু সে জানে, তাহারা তাহার কেহই নয় । এই ভাবে ঠিক ঠিক সংসার করবে বাবা । তাহলে আর অশান্তি তোমায় পায় কি করে ? তুমি আমার কথিত মত সংসার কর । তুমি সরে যাবে কোথায় ? আমার আদেশ, তুমি কামনা বাসনা হতে সর । তবেই তোমার শান্তি, সুখ, উদ্ধার, মুক্তি ।
৪. সংসার দূর্গে থেকে যুদ্ধ করাই যে ভাল এবং শ্রেয় ।
৫. তুমি খুব সাবধান হয়ে গৃহস্থালী করবে । প্রেম প্রতিষ্ঠার জন্যই গৃহাশ্রম । তুমি ব্রহ্মনিষ্ট গৃহস্থ হও । কর্ম্মের ফল আমাতে অর্পণ কর । কর্ম্মফলে আসক্তি-পতনের কারণ । তুমি নিষ্কাম সাধক হও । কামনার তাড়নায় অধীর হয়োনা । কর্ম্মে ব্যস্ত থাক ।
৬. তোমরা নির্লিপ্ত সংসারী হও । সংসার কর, বিষয়াসক্ত হও,সংসারে ডুবিয়া যাও তাতে কোন ক্ষতি নাই, কিন্তু হুসিয়ার হও যেন সংসার তোমার উপরে সোয়ার না হয় । বাবা এই বিষয়ে খুবই সতর্ক থাকিবে । বাহ্যিক সংসারী সাজ, সাংসারিক কর্ত্তব্য কর্ম কর কিন্তু অন্তরে ত্যাগ বৈরাগ্যের ভাব নিস্ক্রিয় নির্লিপ্ত ভাব জাগাইয়া রাখ ইহাই আমার একমাত্র ভিক্ষা তোমাদের কাছে।
আত্মার উন্নতির জন্য উপদেশ
১. আত্মার উন্নতির জন্য উপদেশ চতুষ্টয় লিখিলাম মনের সাথে গাঁথিয়া রাখ ।
১. তন মন ধন সবদিয়া গুরু সেবা ।
২. অভিমান পরিত্যাগ ।
৩. গুরুবাক্য সর্ব্বোপরি এই জ্ঞান,
৪. গুরু সেবা কালীন আত্মসুখ বিসর্জ্জন ।
২. তোমরা এই বোধে নামকর, ধ্যানকর, গুরু চিন্তাকর, দর্শন কর, জপ কর, সেবা কর, পূজা কর, উপাসনা কর । তোমাদের অভীষ্ট লাভ হবেই । অভাব রাক্ষসীর তাড়না সহ্য করিতে হইবে না । কামনা বাসনা পূর্ণ হইবে । বিপদ আপদ, রোগশোক, দুঃখকষ্ট দূরে যাবে । সাপে বাঘে খাইবে না । দৈন্য থাকিবে না । এই কটা তো হবেই আধ্যাত্মিক জীবনও মঙ্গলময় হইবে ।
৩. তোমাদের কর্নে যে মন্ত্র দিয়াছি উহা ভব সাগর পারি দিবার নৌকা মনে করিবে । গুরুদত্ত নাম ও গুরু এক করিয়া জানিবে । নামদাতা ও নাম অভেদ । জপ ও ধ্যান গুরুমূর্ত্তি লক্ষ্য করিয়া করিবে । সন্ধ্যা আহ্নিকের সময় এই বলিয়, প্রার্থনা করিবে । ঠাকুর আমি তোমারই সরূপ, তুমি আমি এক, অভেদ, মায়া মোহে আবদ্ধ হইয়া আজ তোমা হইতে পৃথক হইয়া আছি । এক্ষণে তুমি আমাদের তোমার করিয়া লও । তোমার নিত্যসত্যসরূপ আমায় দাও ।
৪. তোমাদের আত্মার উন্নতি কল্পে উপদেশ মূলক বাক্য চারটি লিখিলামঃ-
(১) দেহ ধন মন দ্বারা শ্রীগুরুর অর্চ্চনা
(২) আত্ম-সেবা বিস্মৃত হইয়া গুরুসেবা
(৩) অভিমান পরিত্যাগ ও
(৪) গুরুবাক্য সর্ব্বোপরি এই জ্ঞান ।
ভক্তি
১. একান্ত ভক্তি নিয়ে এসে থাকলে তোমায় ভক্তি অটুটই থাকবে । যারা জাত চাষা তারা ফসল হউক আর নাই বা হউক প্রতি বৎসর জমি চাষ করেই যাবে । আর যারা ফসলের আশায় চাষা সাজে তারা এক বৎসর ফসল না পেলেই হাল গরু সব বিক্রি করে হাত গুটাইয়া বসে ।
২. পারিতো এখনই তোমাদের দুঃখ কষ্ট দূর করিয়া দেই, কিন্তু কি করিব বিশ্বাস ভক্তির অভাব যে কিছুই করিতে পারিতেছিনা । ষোল আনা বিশ্বাস ভক্তি লইয়া কেহই আমার কাছে আসেনা আর আমিও কিছু করিতে পারিনা । বাবা, একবার জোরকরে দাঁড়াও জয় ব্রজানন্দ বল
৩. ভগবানের কি কোন অসুখ আছে ? এ সব লীলা এবং ভক্তের ভক্তি পরীক্ষা নানারুপ ধারণ বই আর কিছুই
৪. তোমরা নিঃসন্দেহে সাধন করে যাও । ফল লাভ ধ্রুব সত্য । তোমরা যত খানি মন দেবে ততখানিই কাজ পাইবে । ঠিক ঠিক ভক্তি চাই নইলে হবে না । গুরুতে বিশ্বাস, গুরুতে ভক্তি, গুরুতে এক নিষ্ঠ হও । তোমরা আমার নাম ধর ।আমার দেহটাকে ধরিও না । দেহ একদিন যাবেই । এ অনিত্য দেহ তাই তোমাদের নাম দিয়েছি । নাম ধর পার হবে। সংসার জ্বালার হাত এড়াবে ।
৫. ভক্তির কাঙ্গাল আমি এতদিন ভক্ত না পাইয়া দুঃখিত ও লজ্জিত বলিয়াই পত্র দিতে পারি নাই । মা তোমার গোপাল থাকিতে আবার তোমার অশান্তি কোথায় ? তুমি মনে দৃঢ় বিশ্বাস আন আমার গোপাল শান্তি দাতা শ্রীভগবান তাহলেই তোমার কোন অশান্তিই থাকিতে পারে না । তুমি ইচ্ছা মত সব কিছু পাইবে । তোমার ত্রিকালে সর্ব্বানাশ নাই ।তোমার সব প্রকারে মঙ্গল করিতে আমি আসিয়াছি । দেখ, এতদিনে কোন অমঙ্গল হইয়াছে কি ? একমাত্র শৈলেনের দেনা আছে । তাহা পরিশোধ করিয়া আমি দিব । সেই চেষ্টায় আমি আছি । শৈলেনের ভক্তি থাকিলে আমি নিশ্চয়ই দেনা পরিশোধ করিব । আমার বাক্য সব সত্য হইবে, বিশ্বাস করিয়া লইলে । বাবার অসুখের জন্য কোন ভয় করিও না । আমি বাক্য করিয়াছি বাবার দেহ রক্ষা করিয়া আমি রাখব একটু আধটু, যা আছে আমি সরাইয়া লইতেছি ।
৬. আমার উপর অচল অটল বিশ্বাস থাকিলে অসম্ভব সম্ভব হইতে কতক্ষন ? ভক্তি বিশ্বাস নিয়া নিশ্চিন্তে বসে থাক, কোন ঝামেলায় পাইবে না ।
৭. ইহ পরকালে তোমরা সুখী হও । হাত দেখানো অভ্যাসের কি প্রয়োজন আছে ? কর্মফল খন্ডানো হয় না । তবে ইহা ধ্রুব সত্য যে আমার ভক্তের বিনাশ নাই । ভক্তি মার্গ থেকে বিচ্যুত না হইলে তোমাদের সকল বাসনাই পূর্ণ হইবে । গুরু দাতা, গুরুভ্রাতা, গুরুই পরমাশ্রয় ! সময় খারাপ, গ্রহের কোপ ইত্যাদিতে মন দিও না । নামে থাক । মাভৈঃমাভৈঃ আমি যে রয়েছি !
৮. সবই গুরুর ইচ্ছা, অহংকারের নাই বড়াই, যা করছেন সব আলেক সাঁই । ভক্তি মহাধন ভক্তি মার্গেই থাক । ভক্তি বলেই সব সম্ভবপর অহংকার করিও না । গুরু বল গুরু নামই সম্বল । গুরু ভ্রাতা, গুরু দাতা, গুরু মেহেরবান ত চেলা পাহলবান্। জয় গুরু, জয় গুরু, জয় গুরু ।
ঈশ্বর
১. তিনি ত অসীম অনন্ত তাঁর ধারনা করার শক্তি তো জীবের নাই ।
২. ঈশ্বর তো অসীম অনন্ত, সেই ধারনা করিবার শক্তি কি মানুষের আছে ? তাই গুরুতে ঈশ্বর জ্ঞান হইলেই তাহার আর পাওয়া থোওয়ার কিছুই বাকী থাকে না । মানুষের এই হ’ল সাধন ভজনের শেষ সীমা ।
বাৎসল্য প্রেম
১. আশীর্ব্বাদ করি, আমার সাথে তোমার মৈত্রী সখ্য দাস্য চিরকালকার হইয়া থাকুক । বাৎসল্য রসের পূর্ণ প্রতিমা আমার যশোদা মাই অচিরেই সর্ব্বব্যাধি হইতে আরোগ্য লাভ করিবে । যে ঘরে গোপালের আগমন হয়, সে ঘরে কি অমঙ্গল থাকিতে পারে ?
প্রেম ভক্তি
১. যে দিকে ফিরাই আঁখি, সে দিকেই তোমায় দেখি” । প্রেম ভক্তি সাধনার ক্ষেত্রে এই অবস্থার দাম খুব বেশি । যোগী, জ্ঞানী দেখে আত্মময় জগৎ আর ভক্তে দেখে সর্ব্বময় শ্যামসুন্দরের মূর্ত্তি ।
নারায়ণ বৈদ্য যার গৃহে গোপাল রূপে আর্বিভূত হইয়াছে, সেই গৃহের অমঙ্গল কোথায় ? শুধু গর্ভে জন্ম নিলেই যে পুত্র হয়, জন্ম লওয়ার প্রধান কথা হইল-বাৎসল্য প্রেম ।
ধামদর্শন
১. গুরুধামে গিয়াও প্রার্থনা জানাইলে তোমার প্রার্থনা মঞ্জুর হইবে এবং দুঃখ কষ্টের হাত এড়াইবে । আমি ধাম ছাড়া কোথাও যাইনা । তুমি আশ্বস্ত হও । জয় গুরু বলে মার হুঙ্কার সব অন্ধকার দূর হইয়া যাইবে ।
২. তোমাদের কল্যাণের জন্য ইতো গুরু ধাম তৈয়ার করিয়াছি । আমি নাই তাই কি, আমার আসন, আমার ফটো সব কিছুইতো আছে, যখন যাহা হয়, ভক্তি সহকারে আসনে প্রার্থনা জানাইলেই আমি পাব এবং প্রার্থনানুযায়ী ফলও দিব ।
৩. গুরুধামটি আমার সৃষ্টি উহার প্রত্যেক অণুপরমাণুতেও আমি বিদ্যামান রহিয়াছি । ধাম, ধামেশ্বর দুই নয়, ধাম দর্শনে আমার দর্শন জানিবে । তুমি তোমার অবসর মত ধাম পরস করিয়া আসিবে ।
-0-
শীক্ষার্থী উপদেশ
১. তুমি শ্রীগুরুকে স্মরণ ও ভক্তি করিয়া যে বিষয় লইয়া দাঁড়াও তাতেই আমি তোমার মনোনিবেশ করিয়া দিব এবং তুমি ভালভাবে উত্তীর্ণ হতে পারিবে । তুমি গুরু বাক্যে বিশ্বাস করিয়া তোমার মনে যে বিষয় (Subject) ভাললাগে নিঃসন্দেহ চিত্তে সেই বই পাঠ করে যাও গুরুর কৃপায় অতীব সহজ বোধ হবে ।
২.আমার নাম ও মূর্তি স্মরণ করিয়া যেন প্রশ্ন পত্র পাঠ করে এবং খাতায় লিখিবার সময়ও যেন (জয় ব্রজানন্দ) বলিয়া লিখিতে আরম্ভ করে ।
৩. তুমি “জয় ব্রজানন্দ” নির্ভয়ে বলে মন্দিরে যাবে পরীক্ষা দেবে । আমি তোমার কন্ঠে থাকবো । সামান্য দারগো বাড়ীর চাকরকে দেখে লোকে কেমন ভয় পায়, তোমার তো ভগবান আত্মীয়, তোমায় ফেল কয় কে ? এমন শক্তি কার আছে ? তুমি পড়ে যাও ।
নিরাময়
১. তোমার পেটের অসুখের জন্য কাঁচা বেল পোড়া খাবার ব্যবস্থা করলাম । ছটাকখানি বেলপোড়া সামান্য ইক্ষুগুড় সঙ্গে সকালে অন্ততঃ সপ্তাহ খানেক খালি পেটে খাবে । তোমার পেটের অসুখ থাকবে না । মাথা ঠান্ডা ও স্মৃতিশক্তির বৃদ্ধির জন্য আর একটি বস্তু আদিষ্ট হয়েছি । তুমি এক কাঁচ্চা ইসবগুলের ভূষি ওর সঙ্গে এক কাঁচ্চা চিনি মিশাইয়া সকালে শনি মঙ্গলবার খাবে ।(বেনে দোকানে পাওয়া যায়) তুমি বিশ্বাস করে খেলে হাতে হাতে ফল পাবে ।তোমার মাথার চুল ওঠাবন্ধ করার জন্য আর একটি বস্তু আদিষ্ট হইয়াছি-“আমলা হেয়ার অয়েল” বাজারে তৈলের দোকানে পাওয়া যাবে । এই তৈল মাথায় দিয়ে স্নানের সময় স্নান করো । বুড়াশিবের আদেশ প্রাপ্ত হ’য়ে লিখলাম । আমার বাবা মাইর সেবা ভক্তি আমার হৃদয়ে গাঁথা আছে । তাদের যমে ছোঁবে না, অসুখ বিসুখ কি করতে পারে ?
২. পূরবীমায়েরদেহেরএলার্জিরএবংজ্বালাপোড়াসম্বন্ধেশিবেরআদেশেএইবস্তুটিপাইয়াছি-অশোকারিষ্টও সারিবাদিরিষ্ট একচামচএকচামচ (চাচামচ) দুইটাএকত্রেমিশাইয়ামধ্যাহ্নেভোজনেরপরসেবনকরবে । আশাতীতফলপাবে । শক্তিবাসাধনাঔষধালয়েপাওয়াযাবে ।
৩. মানিকেরঅসুখেরজন্যশিবসকাশেআদেশপাওয়াগেছে-গোয়ালেপাতারশিকড়েররসআধাতোলাআরকাঁচাদুগ্ধআধাপোয়াসকালেবৈকালেসেবনকরিবে । এতেইতারসবরোগসেরেযাবে ।
৪. মাঝে মাঝে ডাইলে সেফালিকা পাতার সফং খাইবে ও ঐ পাতার বরা খাইবে । ইহাতে তোমার দেহে কোন রাগই থাকিবেনা এবং দেহ সবল এবং পুষ্ট হইবে ।
৫. তোমার পেট ব্যথা দূর হইয়া যাইবে, তুমি একটু করিয়া সকাল বৈকাল গোপাল ব্রজানন্দ বলিয়া কাল লবণ খাও । আমার বাবাকে একটু পুরান তেঁতুল ভিজান জল খাইতে দাও সেবার পরে । আর মতিহারি দোক্তা পাতা একটু মুখে রাখিতে দাও । সব আপদ বালাই দূর হইবে ! গোপালের ঔষধ অব্যর্থ ।
বুড়াশিববাড়ী বর্ণনা
১. বুড়াশিববাড়ীতেদূর্গামন্দিরআছে ।চারদিনদূর্গাপূজাহয়। এখানেআমারগুরুপিতারসমাধিমন্দিরআছে ।তাতেদৈনিকপূজাহয় । আমারচারিটিশিষ্যেরসমাধিমন্দিরআছে । শিবেরগোশালায়গাভীআছে । দুধেরকষ্টনাই ।শিবেরফুলেরবাগানআছে ।শাকশব্জিরবাগানআছে । ফল, ফুলশাকশব্জীযথেষ্টপাওয়াযায় ।এখানে “বানেশ্বর” শিবেরমন্দিরআছে । “মহাবীরের”মন্দিরআছে । শিবেরধূনিঘরআছে ।
শিষ্য
১. আমার সুশীতল শান্তিময় কোলে স্থান দিয়াছি । স্থানছাড়া করিব না ইহাই আমার সত্যবাণী ।
২. শ্রীচরণই যখন তোমার একমাত্র সম্বল তবে তো তোমার তরী ভবসাগর হতে সব চেয়ে আগে ফল পাইয়াছে । আর চিন্তা কি ? নির্ভয় ও নিশ্চিন্ত থাক, পারের তরীতো পেয়েছ ।
৩. নববর্ষের মঙ্গলময় শান্তি আশীর্ব্বাদ গ্রহণ করিয়া অতীতের সকল প্রকার হিংসা দ্বেষ,অশান্তি ভুলিয়া সকল গুরুভাই বোন মিলিয়া শ্রীশ্রীব্রজানন্দের অমৃতময় শান্তির আবহাওয়া সৃষ্টি করিয়া সকলেই জীবনকে সাফল্য ও ধন্য কর।
৫. দেশে শান্তি নাই । “উল্টা বিচার করলি রাম” । কোথায় স্বাধীনতা ? এ যে পরাধীনতার একশেষ । মালিককে ভুলিয়া গিয়াছে তাই লোকের এত দুর্গতি আশীর্ব্বাদ করি তোমার শান্তি ফিরিয়া আসুক । তুমি তো পথ হারা হওনি । তোমার অশান্তি ক্ষণিকের । তুমি সাধন ভজন না জানিলে গোপাল পাইলে কি করিয়া ? তোমার গোপাল এইটি ঠিক থাকিলে তোমার সবই হইয়া গেল । আর কোন কিছুরই দরকার নাই তোমার । মাই পুতনার শিক্ষা লাভের কথা মনে কর । যার অপার করুণায় বিষের পরিবর্ত্তে অমৃত পাইল । পুতনা রাক্ষসের জন্ম ঘুচিয়া গেল । গোবিন্দের আনন্দময় শরীর পাইয়া তাঁহার নিজ ধামে স্থান লাভ হইল । আর তুমিতো আমাকে ভালবাসিয়া স্নেহ করিয়া গোপাল ভাব লইয়া ভাল ভাল জিনিষ যখনকার যা সেবা দিয়াছ । তোমার ভাগ্যের তো সীমাই আমি পাইনা, কোন পরমশান্তির লোকে । তুমি ভগবানের কাছে অবধি যাইবে ।
৬. আশ্চর্য্যহইলামযেআমারঘরেঘরেকার্ত্তিকআরমহামায়ায়ভর্ত্তি। তাহানাহইলেতোমারমুখদিয়াআরএকথাবাহিরহইতনা । গুরুদেবআদেশকরেছেনতাতেআবারবিচারকেন ? ভালমন্দসবইতোতাঁর, তোমারকিকিছুকরারশক্তিআছে ? যদিতাইহয়তবেএকথাবললেকেনযেব্রজধামেরঘরবিক্রীআমাদ্বারাহবেনা।গুরুরআদেশ-জগৎজাহান্নামেযাউকনা, তোমারতাতেকি ? তুমিশ্রীগুরুরসেবক।গুরুযাহাআদেশকরেনঅম্লানবদনেতাহামেনেনেওয়াউচিত।একলব্যেরকথাস্মরণকর, গুরুআদেশকরিলেনগুরুদক্ষিণাস্বরূপতোমারদক্ষিণহস্তেরবৃদ্ধাঙ্গুলিআমাকেপ্রদানকর, একলব্যদ্বিধানাকরিয়াতৎক্ষণাৎহস্তস্থিতছুরিকাদ্বারাআপনহস্তেরবৃদ্ধাঙ্গুলিকেটেগুরুদেবকেদিলেন।কৈসেআদর্শ ? তোমরাসাধুতোমাদেরদেখেসংসারীলোকশিখবে।এতেকিশিক্ষাপ্রচারহবে ? অন্যলোকেমানাকরেতাতেতোমারকি ? তাদেরজানাতেহয়তারাজানাবে।তুমিতোমারকাজকরেযাও।এইসেনাকাজ ! তোমাদেরমোহকবেকাটিবে, সর্ব্বধর্ম্মবিসর্জনকরিয়াএকমাত্রআমারস্মরণলও, আমিতোমারসর্ব্বপাপদূরকরিব । মোহকরিওনা । স্বজনত্যাজিলামহারাজবিভীষণ, উপেক্ষিলাবন্ধুবর্গভাইযেরাবণ । পিতাত্যাগকৈলাভাগবতশ্রীপ্রহ্লাদ, যেহেতুভক্তিপথেকরিলবিবাদ । পতিপুত্রআদিত্যাগকৈলবহুজন, গুরুভক্তিঅনুকূলসেইবন্ধুজন ।পুঃকার্ত্তিকসাজিওনা ।
৭. যজ্ঞাহুতি করিবার সময় প্রথমে আচমন অঙ্গন্যাস করিয়া নিজের অভিলষিত বর প্রার্থনা করিবে মনে মনে করজোড় করিয়া । যেমন হে আন্তর্যামী, জ্যোতিঃস্বরূপ গুরু আপনি অমৃত স্বরূপ মঙ্গল ও শান্তিময়, আমরা বিষয় ভোগে আসক্ত হইয়া আপনাকে ভুলিয়া থাকি কিন্তু আপনি নিজগুণে আমাদিগকে ভুলিবেন না এবং আমাদের সকল অপরাধ ক্ষমা করিয়া শান্তি বিধান পূর্ব্বক পরমানন্দে আনন্দ রাখুন, স্থুল শরীর বা মনে কোনও প্রকার দুঃখ কষ্ট না হউক । হে মঙ্গলময় মঙ্গল করুন । আপনাকে পূর্ণরূপে বারংবার প্রণাম করি । এই ভাবে সরল ও নিজ ভাষায় প্রার্থনা করিবে । তারপর শৈবাগ্নি মঙ্গলকারী আগ্নি এই নামাকরণ পূর্ব্ব পত্র লিখিত মন্ত্রে ৩টী বা ৫টী আহুতি দিয়া নির্ব্বাণ করিতে শান্তিঃ ভব শান্তিঃ ভব, শান্তিঃ ভব, শান্তিঃ ভব, বলিয়া জল ছিটাইয়া দিও । ইহাতে কোন ভয় বা সংশয় নাই । আরও সব রকমে মঙ্গলই আছে।অগর তগর কাষ্ঠ বিশেষ বেনে দোকানে পাওনা যাইবে।
৮. তোমরা সবাই গুরুরূপী ভগবানের পাদপদ্মে অর্চ্চনা করিয়াছ তোমরা অকৃতকার্য্য হইবে না । তোমার দীক্ষাটা সেই বারেই হইয়া যাইত । কিন্তু কথা বার্ত্তাতেই দিন অতীত হইয়া গেল, কাজের কাজ কিছুই হইল না । ভক্তি রাখ,আকর্ষণ রাখ, এঁটে সেঁটে ধর তবে ঘোড়া চড় । তাহা না হইলে কি কাজ হয় । সদ্গুরু লাভ না হ’লে সংসার সাঁগর পার হওয়া যায়না ।
৯. তোমার ও তোমার পরিবারস্থ সকলেই ভগবানের ভক্তি বিশ্বাস এবং একান্ত শরণাগতী লাভ করিয়া জীবনের সার্থকতা লাভ কর ও সুখে স্বচ্ছন্দে দিন অতিবাহিত কর । বাবা, তোমরাই যে আমার কৃপার পাত্র এই সব পাত্রেই যে আমি করিয়া কৃপা থাকি ।
১০. মনে কোন অশান্তি আনিওনা । তোমার সচ্চিদানন্দ শ্রীকৃষ্ণ প্রেম ভক্তি জন্মাইবার জন্যই যে আমি গোপাল হয়ে মা যশোদা বলে তোমায় ডাক দিতে আসিয়াছি । প্রেম ভক্তি সেবা যত্ন পাইতে সর্ব্বদা লালায়িত হইয়াছি । এস সব ভাবস্রোত ছুটিতেছে যে – দূর করিয়া লও । সত্য বলিয়া ধারণ কর । তবেই আপনা হইতে প্রাণ ভক্তিতে ভরিয়া যাইবে । প্রেম সংসারে ডুব দিতে কতক্ষণ ? মাই, তোমার প্রেম সাগরে ডুব দিতে বাকী আছে ? তুমি ডুব দিয়াই আছ, তা না হইলে কি আমার মাই হইতে পারিতে ? তোমার সুখ ঐশ্বর্য্যের দিকে মন থাকিলে বা বাসনা থাকিলে সচ্চিদানন্দময় গুরু না হতে দুর্লভ হইত । আশীর্ব্বাদ করি তুমি সচ্চিদানন্দময় হও ।
১১. আমি যাইব কোথায় ? তোমাদের অভীষ্ট পূর্ণ না করিয়া আমার দেহে রোগ পীড়া এতো ভক্ত পরীক্ষার জন্য মাত্র । ভক্ত তৈয়ার না করিলে ভক্ত উদ্ধার কি প্রকারে করিব ?
১২. বাবার প্রতি আমার খুব তীব্র দৃষ্টি আছে । তুমি বাবার সম্পর্কে সম্পূর্ণ নির্ভয় থাক । বাবার জীবন আমার হাতের মুঠে, যমের ভয় নাই । ব্যাধিশাকির জন্য আমি কিছু কাজ করিতেছি, অতি শীঘ্রই ব্যারাম চাপা পড়িবে । আমার বাবার দেহ এখন বহুকাল এ জগতে থাকিবে । আমার ‘অমর’ আশীর্ব্বাদ জানাও । মা, তুমি নির্ভয়ও নিশ্চিন্ত থাকো ।শৈলেনকে আমি দাঁড় করাইতেছি । আমার অনেক আশীর্ব্বাদ বাক্য তার উপর পড়িয়াছে । সে সব বাক্য কভু মিথ্যা হইবে না । মা, আমি তোমার গোপাল ব্রজানন্দ নামের বলে সব দুঃখ দারিদ্র সঙ্কট হইতে উদ্ধার পাইবে । মা, চিন্তা কি তোমার ? শিবোহহম জপটি তোমার এখন জপ করিতে হয় । সে সময় তোমার এখন আসিয়াছে । তুমি সকল সময়ই নামে থাক, এ সব দুঃশ্চিন্তা ছাড়িয়া দাও । এ নামের আগে সব বিপদ কাটিয়া যায় । শৈলেনের গায়ে একটি আঁচর কাটে এমন লোক জগতে আসে নাই । সুরবালা মাই ও রাণীমাই দুজনের নিকট আমি অনেক দিন হয় দুইটি পত্র দিয়েছি । তার কোন উত্তর পাই নাই । বিবাহের খবর বা প্রণামী আমাকে পাঠায় নাই । বাণীর সাথে মিলন হইয়া থাকিলে, বিচ্ছেদ হইতেও দেরী নাই । দম্ভ ও অহংকারের মাত্রা না বাড়াইলে আমি বধিব কেমনে, কৃতঘ্ন কপাটীর বিনাশ অবশ্যই হইবে । তুমি ভক্ত ও কল্যাণময়ী, তোমার দুর্গতি নাই । তুমি আনন্দ কর । তোমার অনিষ্ট কেহই করিতে পারিবে না ।
১৩. তোমরা সকলে মিলিয়া মিশিয়া যাক যেমন নানাবর্ণের ফুল দিয়া মালা গাঁথিয়া গলায় পরিলে কি সুন্দর দেখায় সেইরূপ তোমরা সব ভক্ত মিলিয়া আমার গলার মালার স্বরূপ হইয়া থাক । ইহাই আমার একমাত্র বাঞ্ছনীয় এবং তোমাদের কল্যাণ কর
১৪. তোমাদের জন্য গুরুপাট রহিয়াছে । আমি সেখানে সব সময়ই বিদ্যমান আছি । সেখানে থেকেও তোমাদের আশা আকাঙ্ক্ষা মিটাইতে পার ।
১৫. তোমাদের সব দিকেই আমার মঙ্গলময় দৃষ্টি ফেলিয়াছি, পাখী যেমন আপন ডানা বিস্তার করিয়া তার শাবকদিগকে আবরিয়া রাখে, আমিও তেমনই তোমাদের আবরিয়া রাখিয়াছি । গুরু নামের মহিমা কেহ দিতে নারে সীমা । কোটি লক্ষ্য সৈন্য তোমাকে আক্রমণ করিতে আসিলেও তোমার গায়ের একটি লোম নষ্ট করিতে পারিবেনা । নির্ভয় হও, নিঃশংক চিত্তে বসিয়া থাক ।
১৬. তোমরা সুখী নও আর আমি সুখী হব কি করে ? তোমাতে যে সহ্য গুণের অভাব, ক্ষমাই মহত্বের লক্ষণ । যে হৃদয়ে ক্ষমা নাই, দয়া নাই সে হৃদয়ে ভক্তি ও জ্ঞানের বীজ অংকুরিত হইতে পারে না । অহিংসা পরম ধর্ম্ম, অহিংসা জীবে দয়া এইসব কর্ম্মই অন্ধকার হইতে আলোর পথে লইয়া যায় । যেখানে হিংসা, দ্বেষ, অপ্রেম সেখানে আলোর প্রকাশ হইতে পারেনা । জ্ঞান ভক্তি পাইতে হইলে সদয় অন্তঃকরণ বিশিষ্ট হইতে হইবে । নির্দয়ের হৃদয় অতিশয় কঠিন ও পাষানবৎ হয় । সেই হেতু সৎসঙ্গধারী হাজার সিঞ্চন করিলেও ভক্তিবীজ অঙ্কুরিত হইতে পারেনা । অপ্রীতিকর বাক্য যেরূপ নিজের নিকট কণ্টকবৎ মনে হয় সেইরূপ আত্মবৎ জ্ঞান মনে মনে জপিলে তবে তাঁর আর আপন পর এই ভেদ জ্ঞান থাকেনা, সে সকলকেই সমদৃষ্টিতে দেখিতে সমর্থ হয় । বিনয়ী, নম্র, দয়ালুহৃদয়বিশিষ্ট হইলে তবে সে শিষ্য পদের অধিকারী হয় । গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুও বলিয়া গিয়াছেন-আপনাকে তৃণবৎ জ্ঞান, বৃক্ষের ন্যায় সহাগুণ বিশিষ্ট, মানের অযোগ্যকেও মান দেওয়া হরিভক্তিপরায়ণ ব্যক্তির এই লক্ষণ । মাই তুমি দয়া ধৈর্য্য ও ক্ষমার আধার হও । তবেইতো বুঝব তুমি আমার মেয়ে, দ্বৈত ভাব ত্যাগ কর, সর্ব্বভূত প্রাণীতে দয়াশীলা হও । তুমি আমার শান্তি আশীর্ব্বাদ গ্রহণ কর আর সবাইকে দাও । বাবার হাতে তোমার প্রণামী পেয়েছি জানিবে ।
“ছোট যদি উচ্চ-ভাষে সুবুদ্ধি উড়ায় হেলে,
তুমি তবে স্নেহভরে আদর করিও তারে ।”
১৭. আমি কলিকাতা হতে আসিয়াও ২/৩ দিন ব্যাথায় ভুগিয়াছি । এখন ৮/১০ দিন যাবৎ বেশ ভালই আছি । বাবা সাধুর তো কোন ব্যাধি নাই; তবে ভগবানের লীলার অনুরোধে এই সব লীলা করিয়া লোক উদ্ধারের পথ বাহির করা বইত আর কিছুই নয় ।
১৮. তুমি এই চরণে বিশ্বাস ফেলিয়া নির্ভয় ও নিশ্চিত হইয়া দিন কাটাও । তোমার অশান্তি নাই । স্বয়ং শান্তিময় যাহার সহায় তার আবার ভাবনা কি ? তোমার শারীরিক ও মানসিক সর্ব্বাধিক শান্তি আমি করিব । এবার আমার অবতীর্ণ হইবার একমাত্র উদ্দেশ্য জীবজগতের কল্যাণ-জীব উদ্ধার । তাই আমি জীবের সর্ব্বাধিক অশান্তি নিজে গ্রহণ করিয়া শান্তিধারা বিতরণ করি । বাবা তুমি নিশ্চয়ই আরোগ্য লাভ করিবেই করিবে ।
“লহরে শরণ কলুষহরণ
ঐ ব্রজ-সুন্দর পায় ।
কি ভাবনা আর এসেছে এবার
দাতা শিরোমণি করুণা আধার;
পাপি তাপি যত পামর পতিত
সবাই তরিয়া যায় ।”
১৯. তোমাদের গুরুদেবই ঈষ্ঠ দেবতা । গুরু ইষ্ঠে আলাদা নয় গুরুতেই শ্রী কৃষ্ণ বোধে পূজা অর্চনা ধ্যান জপ ভোগ আরতী ক্ষমাপ্রার্থনা সবকিছুই করে যাবে । কালে গুরুমুর্ত্তিতেই কৃষ্ণ ফুটে উঠবে । আমি তোমাদের দিব্যচক্ষুদান সেই শুভদিনে করিয়া দিয়াছি । গুরুমুর্ত্তিতেই সব কিছু-ধ্যান-জপ করিয়া যাও । তোমরা যে একদিন সেই সোহহং ব্রজানন্দই তো ছিলে ! আজকে মায়ার ফাঁদে পড়িয়া সেই রূপ হারায়ে ফেলিয়াছ । তাইতেই তো রোগ শোকের অধীন জন্ম মৃত্যুর অধীন হইয়াছে । এক্ষণে ব্রজানন্দ জপ করে ব্রজানন্দ হয়ে যাও । তাহা হইলে রোগ শোকে বা জন্ম মৃত্যুর অধীন হইতে হইবে না ।ইবারই তোমাদের পূণঃ পূণঃ আশা যাওয়া ঘুঁচে যাক, ব্রজানন্দ লাভ হউক । নানা যোনি ভ্রমণ করে আর দুঃখ ভোগ করোনা মাই তোমাদের কাছে এই একমাত্র ভিক্ষা প্রার্থনা করি । জঠর যন্ত্রণা কি ভাল ? নির্ব্বান মুক্তিই একমাত্র কাম্য । মনুষ্য জন্ম লাভ ও সেই জন্যই । এই জন্যই তো মনুষ্য জন্ম দুর্লভ । তোমাদের মনুষ্য জন্ম লাভ সার্থক হউক, এই আমার ঐকান্তিক বাসনা ।
২০. আশীর্ব্বাদ করি তোমাদের সকল দুঃখ বিঘ্ন, অভাব অসুবিধা সমস্যা ও অশান্তি দূর হউক । আমার পূর্ণ কৃপা লাভ করিয়া আদর্শ গৃহী ভক্ত হও । মধুময় হউক জীবন । ‘ভক্তের বোঝা আমি বহন করিয়া থাকি । তাই, মুক্তির বিবাহকার্য্য সুষ্ঠভাবে হইয়াছে । ভক্তের হৃদয় বৃন্দাবনে আমার নিবাস, আমার ভক্ত চির অজেয় । তবে চাই শ্রদ্ধাভক্তি ভেজাল নয়’
২১.তোমরা আমার আপনজন । তোমাদের কোনও ভয় নাই-বিপদ নাই । তোমরা যখন আমাগত, তখন তোমাদের আবার ভয় কিসের ? শিশু মায়ের কোলে থাকিলে তাহার ভয় ব্যথা কিছুই থাকে না । যে ব্যক্তি ভগবানে অনুরূপভাবে নির্ভর করিতে পারে সে অজেয় অপ্রমেয় । তোমাদের সকলের প্রতিই আমার কৃপাদৃষ্টি আছে ।
২২.তোমরা প্রেমসে নিত্যসেবা চালাইয়া যাও ।
২৩. আমি তোমাদের খুবই নিকটে আছি । জপ আর ধ্যানটি একটু করিবে । তাহা হইলে দূর বলিয়া মনে হইবে না । তোমার অহংকে ব্রজানন্দ লয় করিয়া সোহহম হইয়া যাও । তবেই দূর বলিয়া মনে হইবে না, আমাতে মিলিয়া যাইবে । এর পরে আর সাধন নাই ।
২৪. তোমাদের ছেড়ে এসে আমিও বড় সুখে নাই । তোমাদের সেই তারকব্রহ্ম নামের সুমধুর সুর আজও আমার কানে বাঁজে । নামটা একটু নিভৃত বসে মনে মনে করো; একটু হালকা হয়ে থেকো; সম্পূর্ণ আমার উপর ভর দিয়ে থেকোনা ।
২৫. তোমরা আমার আপন জন । আমার বুকের একফুটা রক্ত । গুরু শিষ্য কি দুইই ? অভিন্ন করে বর, অভিন্ন হৃদয় জানবে । গুরু সব চেয়েও আপন । আমার গুণ স্মরণ কর ও রূপ ধ্যান কর । সর্ব্বদাই আমার দর্শন পাইবে ! তোমাদের দুইদিকেই আমি চরণে স্থান দিয়েছি । গুরুকে বিশ্বাস কর দেহ মন সমর্পন কর । এই খানেই তোমাদের সাধন শেষ । এরপরে আর কোনই সাধন ভজন নাই । “যাবৎ বিকাইতে না পারে তবে তাই সাধন ভজন এর পরে আর সাধন ভজন নাই ।” তুমি নিত্য তুমি শুদ্ধ, বুদ্ধ, মুক্ত ।
২৬গুরুতে অকপট শ্রদ্ধা ভক্তি রেখ ইহা পরলোক আনন্দ যা হইয়া যাইবার, গুরু বাক্যে কখনও অবিশ্বাস ও সন্দেহ রাখিও না । গুরু বাক্য সাক্ষাৎ ভগবৎ বাক্য বলিয়া জানিও । গুরু বাক্য সর্ব্বান্ত করণে পালন করিবে । গুরুর সামনে হিতাকাঙ্খী তোমার ত্রিভুবনে নাই । গুরু দত্ত অন্তত একবার অবশ্যই স্মরন করিবে । গুরুদত্ত নামেই আমার সর্বশক্তি নিহীত আছে । আমাকে দিয়া যেই কাজ হইবে, আমার দিক্ষা মন্ত্রে ও সেই কাজ হইবে মাই একা আছো তাই ভালো । একত্তেই মনে শান্তি পাওয়া যায় । বহুত্বেই যত অশান্তির মূল মনকে ঠান্ডা রেখ, ঠান্ডা মনই শ্রীগুরুর আরাম খানা, যাই কর না কর মনটা গুরুতে রাখিবে । মনটা যেন একটা সাগর একটু হাওয়া লাগলেই ঢেউ উঠে । হাওয়া থামলে সবস্থির ।
২৭. আমাকে তোমার সব কিছুরই মালিক করে দাও । আমি ষোল আনা চাই, রতীখানা কম হইলে লই না । তবেই ত তুমি তোমার সব চিন্তা হতে রক্ষা পেতে পার । তোমার লাভ লোকসান পাবেনা । জয় গুরু জয় গুরু করতে থাক তোমায় সরায় কে ।
২৮. মঞ্জুর সম্বন্ধে তুমি আদৌ কোন চিন্তা করিবা না । মঞ্জু আমার হাতের মুঠে রহিয়াছে । আমার হাতের মুঠ ও খুলবে না, তাহার প্রাণ হানিও হবে না ।আরামের মাথায় আমি পাথর চাপা দিয়াছি । আরাম আর বড় বেশী বাড়াবাড়ি করতে পারবে না । এখন আস্তে ধীরে ব্যারামকে চালাইতে হইবে । তুমি নির্ভয় ও নিশ্চিত হও ।
২৯. তুমি গুরু চিন্তা কর নামটা দিনান্তে একবার লইও । একটু হালকা হয়ে থাকিও । যাতে আমি সহজেই তোমাকে পাড়ে করতে পারি । গুরু নারায়ণ এই বিশ্বাসটা তুমি ঠিক ঠিক পেয়ে গেলে তুমি জন্ম মৃত্যুর ইতি হইতে নিষ্কৃতি পাইতে পারো । গুরু নারায়ণ তুমি সব সময় ভাববে । ভাবতে ভাবতে তুমি এক সময় নারায়ণ হয়ে যাবে, লক্ষ্মী হয়ে যাবে । তোমার আসল সরূপ বেরিয়ে পড়বো ।
৩০. তুমিগুরুনামজপকরিয়াযাওতাহাতেইগুরুতেভালোবাসাআসিবে । তোমারমনওএকনিষ্টহইবে ।
৩১. তোমারগুরুতেঈশ্বরবুদ্ধিহউক ।
৩২. মঙ্গল আরতি, নগর কীর্ত্তন, ভোগরাগ আমার নামে দিলে আমিই পাইয়া থাকি । আমাকে সময়ে পূজা বা ভক্তি আমার নামে আসনে বা ফটোতে দাও । উহা আমি গ্রহণ করে থাকি । আমি সর্বভূতে বিদ্যমান । আমাকে বলে যেখানে যা অর্পণ করবে তাহা আমাতেই যাবে ।
৩৩. আমার দত্ত গুরু মন্ত্রে সব কিছুই আছে । আমি তোমাদের পূর্ণ বস্তুই দিয়েছি, অপূর্ণ কিছুই রাখি নাই যে অন্য দ্বারস্থ হইতে হবে । আমি এবার রাধা গোবিন্দের ভাবকান্তি লইয়া পূর্ণ রূপেই আসিয়াছি এবং তোমাদিগকে পূর্ণই দান করিয়াছি ।
৩৪. মূলকথা আমাতে মন রাখা চাই ।
৩৫. জীবের ইচ্ছায় কিছুই হয় না, গুরুর ইচ্ছায় সবই হয় । যা হউক, ইহাও তোমাদের মঙ্গলের জন্যই; তোমাদের ভক্তি আর একটু বাড়াইয়া দেওয়াই আমার ইচ্ছা । প্রবল আকাঙ্ক্ষা না জাগিলে দর্শনে ভাল ক্রিয়া করে না । যেমন আহারান্তে পুনরায় আহারের নিমিত্ত কিয়ংকাল বিশ্রামের প্রয়োজন হয় কারণ তাহা না করিলে পুনরায় ক্ষুধারও উদ্রেক হয় না আর আহারও করিয়া তেমন আস্বাদন পাওয়া যায় না । আর দর্শনের জন্য অত ব্যাকুল হইবার কি আছে ? আমি তো তোমাদের সেই অভেদ উপাসনাই দিয়াছি “সোহহম্” আমি সেই, এই ভাবনা নিয়া নাম, জপ, ধ্যান ইত্যাদি করিবে, তাহা হইলে আমাকে তোমাতেই পাইবে । ব্রজানন্দ অভিন্নরুপে তোমাতেই বিরাজ করিতেছেন । সেই তো চিরমিলন, সেখানে বিচ্ছেদ নাই । দেহের দর্শন, মিলন এ তো মিথ্যা, আজ আছে কাল নাই । তখন কি আবার আর এক গুরু করবে ? বাবা ক্ষণিকের উপাসনা দূর কর, সে তো দুঃখের কারণ । সে ভাবে আমার উপাসনা করিবে না । আমি তোমাদেই আছি এই বোধে আমার উপাসনা কর । ত্রিকালেও ব্রজানন্দের অভাব বা বিচ্ছেদ যন্ত্রণা ভোগ করিতে হইবে না । জয় গুরু, জয় গুরু, জয় গুরু ।
৩৬. আমি সেবাপূজা ও পত্রাদি প্রায়ই পাইয়া থাকি । কিন্তু কি একটা মহামায়ার মায়া যে এবার আমি আমার শত চেষ্টা সত্বেও তোমাদের দর্শন দিতে পারলাম না । শেষে একটা কথা মনে পড়িয়া আমার হৃদয় আনন্দে পুলকিত হইয়া উঠিল, “ব্রজানন্দের পা বেতালে পড়ে না” তাঁর লীলা খেলা চলন, বলন সবই যে ভক্তের মঙ্গলের তরে । দর্শন না পাওয়া তোমাদের লাভ ছাড়া লোকসান হয় নাই । আমার অদর্শনে তোমাদের প্রাণের পিপাসা আরও একটু বর্দ্ধিত হউক । যেমন আহারান্তে পুনরায় আহার নিমিত্ত কিছুকাল উপবাস প্রয়োজন হয় । আর এক কথা, আমি তোমাদের নিজ জন । তোমাদের হৃদয়েই আছি সেখানেই তো আমাকে পাইতে পার । তোমাদের দীক্ষা মন্ত্রেও তাই বলে । দেহের দৃষ্টিতে আমি তোমার দাস এবং আত্মার দৃষ্টিতে আমি তুমি অভেদ, এইরূপ ধারণা নিয়া জপ্ ধ্যান ইত্যাদি করিবে । তখন তুমি-আমি হয়ে যাবে । আমাতে মিশিয়া একাত্বই হয়ে যাবে । শিবোভুত্বা শিবম্ যজেৎ, বাবা শিব ভজে শিব হয়ে যাওয়া চাই । এইরূপ সাধনা করিয়াই আমি শিবত্ব লাভ করিয়া সর্ব্ব বিপত্তির হাত এড়াইয়া মুক্ত হইয়া জন্ম মৃত্যুর পরপাড়ে দাঁড়াইয়াছি । তোমাদেরও সেই সাধনা দিয়াছি । এক্ষণে তোমরাও দুঃখের হাত এড়াইয়া মুক্ত হইয়া ভবনদী পার হও । ইহাই আমার একমাত্র ইচ্ছা ও আশীর্ব্বাদ ।
৩৭. ভক্তি রাখ, ফল ফলবেই । গুরুতে একান্ত নির্ভরই সংসার সর্পের দংশন হইতে মুক্তি পাইবার একমাত্র উপায় ।
৩৮. গুরুধাম, গুরুনাম এই তোমার জীবন উপায় । “গুরু ধ্যান, গুরু জ্ঞান, গুরু চিন্তামণি, গুরু বিনে অন্য কিছু না জানিও তুমি । ”
৩৯. আমারবরাভয়লাভেতোমারজীবনসর্ব্বতোভাবেসুখশান্তিপূর্ণহউক । গুরুকৃপায়সকলঅভীষ্টইপূর্ণহয়, তবেশিষ্যেরওতদরূপঅধীকারীহওয়াচাই । গুরুতেঈশ্বরবুদ্ধি, ভক্তিমুক্তিলাভেরজন্যতীব্রব্যাকুলতা, বিষয়েবিতৃষ্ণা, অদম্যউৎসাহইত্যাদিচাই । আমারআগমনতোমাদেরআকর্ষণেরউপরনির্ভরকরে । টানদিলেকিআমিথাকতেপারি ?
৪০. আমারকৃপালাভেরযোগ্যহও । শ্রদ্ধাভক্তিওবিশ্বাসেরঅধিকারিণীহও । কোনইভয়নাইতোমার । আমারভক্তেরবিনাশনাই । তবেসাধনায়চাইধৈর্য্য ।
৪১. তুমি গুরু গুরু বলিয়া কর্ম চালাইয়া যাও
৪২. আমার মঙ্গলাশীষে তোমার অকাল দূর হইবে । তবে কিছু সময় দরকার । তুমি আমার নাম জপ কর । আর মাঝে মাঝে “জয় গুরু”-“জয় গুরু” বলতে থাক । সব ঠিক হয়ে যাইবে । আপাততঃ কিছু কাল ঐভাবেই যাক । তোমার ব্যবস্থা যথাসময়ে আমিই সব ব্যবস্থা করিয়া দিব । আমার ভক্তের বিনাশনাই-পরাজয় ও নাই ।
৪৩. আশীর্ব্বাদ করি এ বছর যেন তোমার সুখ স্বচ্ছন্দে কাটিয়া যায় । আর যেন তোমায় কোন প্রকার অভাবে না পায় । শ্রীগুরুই যেন তোমার ভাবের বিষয় হয় । আর বিষয় জগতের ভাবে ভরিয়া অভাবগ্রস্ত না হও । বাবা, প্রেম ভক্তি রাখ আর খুব সাবধান থাক । যেমন তামসিক দিন আসিয়াছে এ অবস্থায় গুরুকৃপা, প্রসাদ, পদধূলি আর আশ্রয় ভিন্ন গতি নাই । এগুলিতে ভাবটাকে সজীব করিয়া রাখে ।
৪৪. আয়ুষ্মতে সুবাসিনীমাই, তোমার ভক্তিপূর্ণ নববর্ষের প্রণাম পাইয়া পরম আনন্দ লাভ করিলাম । আশীর্ব্বাদ করি এ বছর তোমার সুখের হউক, অমঙ্গল দূর হউক, তোমার সকলে বাঁচিয়া থাকুক আর সাংসারিক ও আধ্যাত্মিক উন্নতি হউক । এমন সৎসঙ্গ যে লাভ করে, তার তো সাত পুরুষ উদ্ধার হইয়া যায় । তুমি দেখ না, এমন ভাবে কোন ঘরে গুরুর চরণে পুষ্পাঞ্জলি ভোগ, আরতি সেবা যত্ন লালন পালন হইয়া থাকে ! আজকাল ভোগী গৃহস্থেরই চারিদিকে ছড়াছড়ি । যোগ আর ভোগ দুই সমান রাখিয়া কয়জন গৃহস্থালী করে । গৃহস্থগুরুভক্তিপরায়ণ, গুরুগতপ্রাণহইবেন । কর্মেরফলগুরুতেসমর্পণকরিবে । কর্ম্মফলেআশারাখিবেনা । উহাপতনেরকারণ । গৃহস্থনিষ্কামীহইবে, ফলেরপ্রতিলক্ষ্যদিবেনা, কেবলকর্ম্মেব্যস্তথাকিবে । সমস্তকর্ম্মকরিয়াবলিবে, “এতদ্রকর্ম্মফলগুরুনারায়ণেসমর্পিতমস্ত” । আমারএইশিক্ষামতসংসারকরিয়াযাও । সংসারআনন্দভবনহইবে । সংসারদিয়াকাজনাই-এইকিবল ? সংসারচাই, নতুবাআমরাকিদিয়ামহানঅর্জ্জনকরিব ? গৃহস্থেরমিথ্যাকথাবলা, সর্বদা করা মহাপাপ। গৃহস্থ দিব্যভাবযুক্ত সাধু ও অতিথি সেবায় রত থাকিবে । পুত্র কন্যাগণকে বসন, ভূষণ, প্রেম ও মধুর কথায় সন্তুষ্ট রাখিবে । এবং বিদ্যা শিক্ষা দিবে ও লালন করিবে । মাই, তুমি আর দুঃখিনী বলিয়া আমার হৃদয়ে ব্যথা দিও না । তোমার গোপাল ব্যথা পায় ।
৪৫. নামে ব্যায়াম পীড়া অভাব দূর হয় কি না তা’ তুমি জানিতে পার, অন্যে জানিবে কি ? যে সমস্ত বিপদের মধ্যে দিয়া তোমাদের লইয়া যাইতেছি তা বিশ্বাসী ভক্ত ছাড়া অন্যে কি বুঝিবে ? লোকের কথায় কান দিও না । নিজের অন্তর দেখিয়া চলিও । শ্যামদাস, তুমি পরের কথায় মনে কষ্ট আনিও না । নিজের মন বিচার করিয়া দেখ
৪৬. চারিদিকে মহামায়ার সংহার লীলা চলিতেছে । তাড়াতাড়ি পত্র লিখিলাম । বাবা, চিন্তা করিও না । আমি দুই হাতে বিপদাপদ ঠেলিয়া রাখিয়াছি । বেহুলার মত স্বামীর হাড় কয়খানা বগল তলায় করিয়া মৃত পতিকে বাঁচাইবার জন্য বাহির হইয়াছিল-সেই বিশ্বাস রাখ । আমি তোমার আপদ বালাই দূর করিতেছি । বাবা,আমার ক্ষমতার কথা কি ভুলিয়া গিয়াছ?এ যাবৎ তোমার জীবনযাত্রা খুব সুখেই কাটিয়াছে । নতুবা তুমি যে সব বিপদের সম্মুখীন হইয়া আসিতেছ অন্যের শক্তি নাই তোমাকে রক্ষা করে । এ কেবল তোমার ঐকান্তিক বিশ্বাস ভক্তির ফল ।
৪৭. মাই, তোমাকে আবার কি শিখাইব । এক মা যশোদার ভাবটি ঠিক ঠিক রক্ষা করিতে পারিলেই তো তোমার ইহ পারমাথির্ক কাজ হইয়া যাইবে । আমার লীলার মধ্যে কোন গুপ্ত সাধন ভজন নাই । তুমি ঐ যে লিখিয়াছ গোপালের সর্ব্বময়রূপ সব সময়ে পিছে পিছে রাখিতে চাই, ঐ খাঁটি কথা । ঐটী হলেই সব হইয়া যায় । সেইদিকে খুব ধ্যান রাখ । আর অন্যদিকে মন দিও না । সংসারের কাজকর্ম্ম যা পার আমার কর্ম্ম বলিয়া করিয়া যাও । তা হলেই আর কোন গোল বাধিবে না । আমার সখিদের খুব খাটাইয়া লও । তারা হাতে পায়ে খুব আছে, আর দুদিন পরেত পালাবে । তারা কথা না শুনইলে তুমি তাদের বলো এটী কি ব্রজানন্দের সংসার নয় ? তবেই তারা মন দিয়া করিবে দেখিও ।
৪৮. তোমার গোপাল ভিন্ন এ সংসারে আর কেহ নাই, তা ঠিকই । গোপাল যশোদার জীবন সর্ব্বস্ব । গোপাল ছাড়া যশোমতীর আর প্রিয় কে আছে ? যশোমতী গোপালের জন্য সর্ব্বস্ব ত্যাগ করিয়াছে । এমন কি দেহের মায়া পর্য্যন্ত করে নাই । সেই তো তুমি । গোপালের মায়ায় আর সব মায়া দূর হইয়া যাইবে । গোপালের মায়ার এই তো শেষ পরিণতি । ভগবানে বাৎসল্য প্রেম আসিলে দুঃখ দৈন্য থাকে না । মনে তার দুঃখ বলিয়া কিছু থাকে না । মাই, আমি তোমাকে মায়ামুক্ত করিতে গোপালরূপে তোমার কাছে প্রত্যক্ষ হইয়াছি । আশীর্ব্বাদ করি তোমার বাৎসল্য প্রেমের ফল তোমার লাভ হউক । তোমার আমিত্ব নাশ হউক, সংসার আসক্তি দূর হউক । খাওন নিধনের জন্য কাঁদিও না । তোমার গোপাল লাভ হয় নাই সেই জন্য কাঁদ । এ দুদিনের ভোগ সুখ দিয়া কি করিবে ? ভোগে কি সুখ আছে ? সুখ যোগে । সুখ গুরু পাদ পদ্মে । সে সুখ কোনকালে ফুরায় না । সংসার সুখে কেবলি দুঃখ আর জ্বালা । কেবল ঘোরাঘুরি, আসা যাওয়া । মুক্তি নাই । দেখ, গোপী প্রেমে আত্মসুখ ছিল না । কায়মনোবাক্যে শ্রীকৃষ্ণ সুখের সেবাই তাহাদের স্বভাব । জয় ব্রজানন্দ হরে, জয় ব্রজানন্দ হরে । তুমি গোপালকে ভালবাস । সেই ভালবাসায় এ জগৎ ভুল হয়ে যাবে । তোমার আমিত্ব যাবে । তখন গালিগালাজ বকাবকি ফুল চন্দন তুল্য লাগিবে । জয় শংকর !
৪৯. তুমিআনন্দেসংসারকর । মায়ারসংসারেপড়িয়াতোমারলাঞ্ছনাভোগকিরকম ? সংসারতোমারনয় । তুমিবৃথামায়াকরিয়াহৃদয়েঅশান্তিভোগকরকেন ? তুমিমনশুদ্ধকরিয়াএকবারবলএসংসারেআমারনয়, এসংসারভগবানের । তাহলেইতোসবঅশান্তিতোমারমিটেযায় । এসংসার “আমার” বর্ত্তাইতেগেলেইঅশান্তিভোগকরিতেইহইবে । সংসারেরলাভলোকসানসবইঘাড়েবইতেহইবে । আরসংসারে “আমিআমারভাব” বর্ত্তাইতেযদিনাযাও, তবেকোনভোগেইতোমারেপাইবেনা । তুমিসদানন্দেকালকাটাইয়াআপনঘরেফিরিয়াআসিতেপারিবে । তোমারে কোন আপেলেপে পাইবে না । যেমন বড়লোকের বাড়ীর কি চাকরাণী খায় দায়, বাসার সমস্ত অন্য কাজ করে, কিন্তু কিছুই বুকে লাগায় না । একবার তুমি করেই দেখ না কেন ? যদি হাতে হাতে ফল নাইই পাও, তবে না হয় আমার উপদেশ অমান্য করিও । জয় গুরু, জয় গুরু, জয় গুরু । অবতার পুরুষব্যাপী জগৎ গুরুর জয় ।
৫০. ভয় কি ? মাই, গোপালরূপে যখন আমাকে পাইয়াছ তখন আর চিন্তা কি ! আমি “গোপালের মা” এইটি তুমি নিশ্চয় করিয়া মনে ঠিক দাও । তবেই তো তোমার সব হইয়া যায় । ষড় রিপুতে তোমার কি করিতে পারে ? ষড় রিপু কি দমন করিতে পারে বিনা গুরুর ইচ্ছায় ।
৫১. তুমি আচার বিচার লইয়া শুধাশুধি লড়াই করিও না । আচার বিচার কেবল মানুষের আত্মজ্ঞান লাভের উপায় মাত্র । আচার বিচার মানিয়া চলার উদ্দেশ্য আত্মজ্ঞান লাভ । তাহা যদি না হইল, তবে জানিবে আচার বিচার মানা বৃথা । তুমি হাজার বছর গঙ্গাস্নান কর বা নিরামিষ খাও তাতে যদি তোমার আত্মবোধ না জন্মে, গুরু চিনতে না পার, তবে তোমার আচার বিচার সবই মিছা । আর আচার বর্জ্জিত হইয়া কেহ যদি আত্মজ্ঞান লাভ করিতে পারে, তবে জানিবে সেই অনাচারই শ্রেষ্ঠ আচার । শাস্ত্রীয় বিধিনিষেধ পালন করার উদ্দেশ্য হইয়াছে বিষয়ে বৈরাগ্য আনিবার জন্য । সেই ত্যাগ বৈরাগ্য যদি না আসে, তবে বিধি নিষেধ পালন করিয়া কি হইল ! তুমি বিধিনিষেধের জালে পড়িয়া জীবন নষ্ট করিও না । তুমি উদ্দেশ্য হারাইয়া খালি উপায় নিয়া ঝগড়া করিয়া আত্মচিন্তা হইতে বিমুখ হইও না । আজকাল লোকেরা কেহ সংযম নিয়ম পালন করে বটে, কিন্তু সেই সব নিয়ম নিষ্ঠা কিসের জন্য করিতে হয়, তা জানে না । লৌকিক গুরুরাও সেইসব শিক্ষা দেয় না । আমার এইসব বাক্য খুব বুঝিয়া বুঝিয়া পড়িবে ।
৫২. তুমি চিন্তা করিও না । ইচ্ছাময়ের ইচ্ছায় ইচ্ছা মিলাইয়া দাও । তাঁহার যাহা ইচ্ছা তাহাই ভাল, তাহাই আদরের সহিত গ্রহণ কর । ভগবান যতই কেন কষ্ট দিন না ভক্ত তাঁহার দিক ভিন্ন অন্য দিকে তাকান না । চাতক মেঘকে ছাড়িয়া কখনও আর কাহারও দিকে দৃষ্টিপাত করে না । বাবা ভক্ত জগতের সকলকে তৃণবৎ মহান করেন । রামপ্রসাদ বলিয়াছিল ‘এ সংসারে ডরাই কারে রাজা যার মামহেশ্বরী ।আনন্দে আনন্দ ময়ীর খাসতালুকে বসত করি । বাবা, এবার সমর্পণ, অকতোভয় হও । ভক্তি এবার অবশ্যই লাভ করিতে হইবে । ভক্তির মত এমন শক্তিধর বস্তু আমার চোখে পড়ে না । তাই, বাবা, ভক্তির কাঙ্গাল সাজিয়েছি । ভক্তির জয় ।
৫৩. তুমি আমার ভক্ত । আমার ভক্তের নাই বিনাশ । তুমি নির্ভয় ও নিশ্চিন্তে থাক । অবিরাম নাম চালাইয়া যাও । শ্বাসে শ্বাসে । নামের আগে যম ভাগে । শয়নে, ভোজনে, উঠিতে বসিতে চলাফেরা করিতে, সব সময়ই, ক্ষণমাত্র কাল বিরাম দিবে না । তোমার আসা যাওয়া ঘুঁচে যাবে । মুক্ত হইবে । ভব বন্ধন থাকবে না । ছিন্ন হয়ে যাবে । এই ত সহজ উপায় মুক্তির ।
৫৪. ভগবানের মহিমা অপার তাঁর কৃপায় কিনা হয় মৃত ব্যক্তি জীবন পায়, শিলা জলেভাসে, কাঠবিড়ালী সাগর বাঁধে ডুবে অতল জলে, করেন ঘোড়া গাধা পিটায়ে তার লীলা কে বুঝে, বাবা, তুমি আনন্দকরে খুব করিয়া নাম চালাইয়া যাও । মনের আধার সব দূর হয়ে যাউক । তাঁর প্রতি-প্রীতি-ভক্তি স্থাপন করিয়া বসিয়া থাক । সর্ব্বসিদ্ধি তোমার করতলগত ।
৫৫. তুমি বিপদের মাথায় পা ফেলিয়া সংসার পথে চলিয়া যাও । তোমার গায়ে একটা আঁচর পর্য্যন্ত লাগিবেনা । সংসার যাঁতা ঘুড়িতে থাকুক তুমি খুঁটি আশ্রয় করিয়া পরমানন্দলাভ কর । বাবা আমি ত্রিসত্য করিয়া বলিয়াছি আমার ভক্তের বিনাশ নাই । আমার বাক্য স্মরণ করিয়া নির্ভয়ে থাক । তোমার নির্ভয় ও ভক্তি যতই বাড়িবে তোমার শান্তি সুখও ততই দেখা দিবে । ব্রজানন্দকে হৃদয়ে বসাইয়াছ তোমার মঙ্গল সৃষ্ট করতে আমার কতক্ষণ । সব কর্ত্তার ইচ্ছায় কখন কী হইতেছে হইতে দাও তোমার কী যায় আসে ।
৫৬. আশীর্ব্বাদ করি, তুমি নির্ভয় ও নিশ্চিন্ত হও । দিন একরূপ চলিয়া যাইবেই । তুমি জয় ব্রজানন্দ হরে বলিয়া আনন্দে মজিয়া থাক । অন্নসহ স্থান সেই করিবে । কোন কিছুরই অভাব বোধ করিও না । আমি যোগাইতেছি । আমার সীমা আশাপূরণ । বাবা, তোমাকে কোনদিন অভাবে রাখি নাই আর রাখিবও না । শ্রীমান শ্যামদাস অচিরেই ভাল হইবে । সে আমার হাতের মুঠে । তাহারা অমরণ আমার সখা ।
৫৭. গুরুনাম দিনান্তে একবার স্মরণ করিবে । আমার সর্ব্ব শক্তি এই নামের মধ্যেই দিয়েছি । একটু নিষ্ঠা ভক্তি সহকারে নিলেই তোমাদের ইহলোকে সুখ ও পরলোকে পরামৃত লাভ হইবে, তোমাদের আর কোন সাধন ভজন নাই
মন
১. মনকে ঠান্ডা রেখ, ঠান্ডা মনই শ্রীগুরুর আরাম খানা, যাই কর না কর মনটা গুরুতে রাখিবে । মনটা যেন একটা সাগর একটু হাওয়া লাগলেই ঢেউ উঠে । হাওয়া থামলে সবস্থির ।
ভক্ত বৎসল ভগবান
১. আমি তোমাদের প্রতি প্রসন্ন আছি।তোমার সেবাভাব দেখিয়া ও স্নেহ মমতা,আদর যত্ন পাইয়া আমার সদৈব মনে হয় যে তুমি আমাকে বাৎসল্যভাব নিয়া সাধন করিতে লাগিয়াছ।এ অবস্থায় তো আমাকে কৃপা পরবশ হইয়া তোমায় ধরা দিতে হইবেই।ভক্ত বৎসল ভগবান ভক্তের অধীন হইয়া পড়েন।মাই,আমাকে লালন পালন করিতে করিতে তোমার কৃষ্ণ দর্শন হইয়া যাবে।দ্বাপরে যদোশামাই যেমন আমার দর্শন না পাইলে ব্যাকুল হইতেন সেইরূপ দর্শন করিবার ব্যাকুলতা এবার তোমাতে দেখিলাম । কোথায় বরিশাল হইতে ঢাকায় আসিয়া দর্শন করিয়া থাক । মাই, এইরূপ ভক্তিপূর্ব্বক আমার ভজনা করিয়া যাও । তোমার মায়াজাল অবশ্যই ছিন্ন হইবে । আমার এই ভক্তিতে পাপ অবিদ্যা দূর হয় । ভগবৎ পদে নিষ্ঠা লাভ হয় । নিষ্ঠা হইতে নামে রুচি হয় । রুচি হইতে আসক্তি জন্মে । আসক্তি হইতে ভাবের উদয় হয় । ভাব হইতে প্রেম লাভ হয় । এখানেই সাধন শেষ হ’ল । আশীর্ব্বাদ করি তোমার সাধন এ পর্য্যন্ত আসিয়া শেষ হউক ।
২. তোমারসেবাভক্তিঅগ্নিশিখারন্যায়আমারহৃদয়েজ্বলিতেছে । আমারকৃপাদৃষ্টিসবসময়ইতোমারউপররহিয়াছে-কোনসময়েরতরেওউহাভুলহয়নাই । তুমিযেআমারযশোদামাইতাহারপরিচয়অক্ষরেঅক্ষরেআমারহৃদয়েপ্রতিফলিতহইয়াআছে । তুমিমহাভাগ্যবতীতানাহলেকিভগবানে ওতাঁহারঅবতারেবিশ্বাসস্থাপনকরিতেপারিতে । তোমারগোপালেরপ্রতিতোমারপ্রচুরস্নেহমমতাআছেতাআমিবেশবুঝিতেপারিয়াছি । মাই, তুমিনির্ভয়ওস্বচ্ছন্দমনেথাক । তোমারউদ্ধার, উদ্ধার, উদ্ধার । তুমিশুদ্ধবুদ্ধমুক্ত ।
৩. তোমার চির বাঞ্চিত কৃষ্ণরূপ আমাতে দেখিয়া ধন্য হইতে পার । এই তো তোমার জ্ঞানের বিকাশ অল্পে অল্পে হচ্ছে । এই সুগম পথে তোমাকে চালাবো বলেই যে ব্রজের গোপাল মা যশোদার ঘরে ননী, মাখন খেতে এসেছে । সেই জন্য যেদিন তোমার চোখ স্পর্শ করিয়া দিব্য চক্ষু দান করিলাম আর কুটস্থ স্পর্শ করিয়া তাহা ভেদ করিয়া দিলাম । এখন তো জ্ঞানের বিকাশ হবেই, আমায় চিনতে পারবেই । আমায় ধরতে বুঝতে মার কোন ইন্দ্রিয় নিগ্রহ করিতে হবেনা । এখন কেবল ইন্দ্রিয়সকল দিয়া সদর্থে কর্ম্ম করিয়া গেলেই অর্থাৎ চক্ষু, কর্ণ, জিহ্বা, হাত পা দিয়া মৎ দর্শন, শ্রাবণ, মৎকীর্ত্তন, ভোগ নৈবেদ্য পুষ্পচয়নাদি করিতে পারিলেই মন আপনিই সংযত হইয়া আসিবে । ইহা ছাড়া শত চোখ বুজিয়া নাক টিপিয়া যোগযাগ করিলে কলির অল্পায়ুতে বেড় পাবেনা । তাই আমি এই সরল পথ জীবনের সর্ব্বভার বিমোচনের এনেছি । মা ভক্তি বিশ্বাস করে মদর্পন বুদ্ধিতে সব কাজ করে যাও । অতি শীঘ্রই তোমার বিষয় বুদ্ধি দূর হইয়া পরম কল্যাণ লাভ হইবে, আর কর্ম্মফলে তোমায় পাবে না । তুমি পদ্মপত্রস্থ জলের ন্যায় আলগা থেকে পাপ পরিশূন্য বিচরণ করে বেড়াবে ।
৪. আশীর্ব্বাদকরি, তোমারইহকালেসুখওপরামৃতলাভহউক । তোমাদেরঐহিকওপারত্রিককল্যাণেরপথমুক্তকরিয়াদেওয়াইআমারএকমাত্রকর্তব্য ।তাহাতোমাদেরভক্তিতেআমিঅপারআনন্দলাভকরিয়াছি । তোমাদেরঅভেদউপাসনায়আমিবাঁধাপড়িয়াছি ।তোমাদেরপ্রতিআমারমনেরকোনওদ্বিধাভাবনাই । তোমরাআমাকেঅভেদেভক্তিকরিতেছ । ইহাআমিবেশপ্রাণেপ্রাণেঅনুভবকরিতেছি । ভক্তওভগবানেঅভেদভাবনাকরিতেনাপারিলে, সাধনহয়কিসে ?
দ্বৈতভাবেপ্রেমনাই । অদ্বৈতেইপ্রেম । তোমরানিজকেযেভাবেভালবাসিয়াথাক, আমাকেসেইভাবেভালবাসিয়াছ । আমিতোমাদেরঅভেদ উপাসনার যথেষ্ট পরিচয় পাইতেছি ।
৫. তোমাদের অভীষ্ট সিদ্ধি কল্পে সততই আমি কল্যাণ কামনা করিয়া থাকি । বাবা, সাধু ইচ্ছা পূর্ণ হবেই হইবে । কারণ এ ইচ্ছা আমার ইচ্ছা নয়, এ যে তাঁর ইচ্ছা । এ ইচ্ছার গতি ফিরায় কে ?
৬. আশীর্ব্বাদ করি, তুমি সত্বর রোগমুক্ত হইয়া পূর্ব্ব অবস্থা লাভ কর । বাবা তুমি নির্ভয় ও নিশ্চিত হও । আমার এই আশীর্ব্বাদ ও ইচ্ছা কিছুতেই রদ হইবার নয় । ইহার প্রতিরোধ করে এমন কেহ নাই । তুমি গুরুভক্ত শিষ্য । আমার এ ইচ্ছা তোমার প্রতি কার্য্যকরী হইবে । তুমি আমার কৃপার পাত্র ।কৃপার পাত্র বিনে কৃপাময় কখনও কৃপা করেন না ।
৭. জানিও-নামে ভক্তাঃ প্রনশ্যতি তবে কর্মফল বিশেষতঃ প্রারব্ধ ফল অখন্ডনীয় । অন্ততঃ কিছুটা ভোগ করিতেই হয় । পরিণামে-যেখানে আমি, সেখানে ধর্ম-সেখানেই জয় । সুতরাং-“মামেকং শরণং ব্রজ”; বাণীকে জীবন পথের পাথেয় করিয়া নাও ।
৮. মুক্তির সংবাদ উৎকণ্ঠা জনক । যাই হোক, তাহার উপর আমার কৃপাদৃষ্টি নিক্ষেপ করিলাম । তোমরা তাহার জন্য চিন্তা করিও না । চিন্তার বোঝাঃ আজ হইতে ব্রজানন্দ চিন্তামনিই গ্রহণ করিলেন ।
৯. অন্তরের শ্রদ্ধাভক্তি দিয়া যে যেভাবে সে ভাবেই তার পূজা আমি গ্রহণ করিয়া থাকি । তোমাদের কোনও অপরাধ নাই । যতটুকু পার নিজেরা করিবে । বাদ বাকিটা আমিই পূরণ করিয়া গ্রেস মার্ক দিয়া পাশ করাইয়া দিব । বাবা, মাই, প্রমোশনত আমারই হাতে ।
১০. তুমি আমার প্রিয় ভক্ত । তোমার সকল শুভ বাসনা আমি পূর্ণ করিব । তোমার সকল দুঃখ, অশান্তি, জ্বালা, নিরানন্দ দূরীভূত হউক । আমার পূর্ণ কৃপালাভ কর ।
১১. যখন যাহা হয় শ্রীচরণে জানাইয়া রাখিবে, তাতেই তোমার ষোল আনা কাজ পূর্ণ হইবে ।
১২. তোমার প্রার্থনা যখন যাহা হয় জানাইয়া যাইবে ।আমি দৃষ্টি দিয়া কাজ করি কচ্ছোপের মত যেমন কচ্ছপ জল হইতে পাড়ে উঠিয়া স্থলে ডিম ছাড়িয়া জলে নামিয়া যায় সেইখান হইতে দৃষ্টি দিয়া ডিম ফুঠায়, আমার কাজ ও সেইরূপ জানিবে ।
১৩. এখানে আমার আর কোন কর্ত্তব্য নাই । আমি আপনাকে তোমাকে বিলাইয়া দিয়াছি । ঐ যে আমার সিদ্ধমহামন্ত্র তোমার কর্ম কুহরে ঢালিয়া দিয়াছি, সেই দিনই আমার কর্মশেষ হইয়াগিয়াছে । তুমি এক্ষনে সর্ব্বান্ত করনে ঐ মন্ত্র আমার স্বরূপে সেবা ও পালন দ্বারা মৎস্বরূপত্ব লাভ করিয়া ব্রজানন্দ হইয়া যাও । এই জন্মেই জন্ম মৃত্যুর বন্ধন ছেদন করিয়া নিত্যানন্দময় হও । তোমার পূর্ব্ব জন্মের দুঃখদৈন্য দূরকর ।
১৪. বাবা রমেন, তোমরা আমাকে পাইবে । তোমরা সত্যই আমার ভজন করিবার অধিকারী । আমার প্রতি তোমাদের বেশ লোভ আছে । তোমাদের সেবা পত্রাদি প্রায়ই পাইয়া থাকি । তোমার গুরুসেবা পরায়নত । গুরুসেবা পরায়ন শিষ্যই আমার সেবার অধিকারী । স্বামীর নিকট স্ত্রীর নাম ও স্ত্রীর নিকট স্বামীর নাম যেমন মধুর লাগে তেমন করিয়া গুরুর নামটিও মধুর করিয়া লও । তবেই নামের মিষ্টত্ব অনুভব করিবে । যেমন আমি এই সুদীর্ঘ জীবন যে নাম লইয়া (জপিয়া) জাগতিক দুঃখ কষ্টের পরপারে গিয়াছি তোমাদেরও সংসার জ্বালার হাত এড়াইতে ঔ ভব সাগর তরিতে সেই নামই দিয়াছি ।
১৫. রমেন, বাস্তবিকই তোমাদের ধর্ম্ম পিপাসার উদ্রেক হয়েছে । এবার তোমাদের গুরু দর্শনের খুবই আকুল বাসনা ছিল । কিন্তু আমি তোমাদের বাসনা কিছুতেই পূরণ করিতে পারিলাম না । তাই দেখি ভগবান ভক্তের কাছে হার মানিল । এ বিষয়ে আমার বাক্য ও আছে যুগ পরম্পরা হতে, আমার চেয়ে আমার ভক্ত বড় । এবার দর্শন না পাওয়ায় ভালই হইয়াছে । তোমাদের অনুরাগটা আরও বাড়িয়া আসুক । কারণ অল্পতে আমার মন উঠে না । বাবা এ পথে সবদিকেইতো লাভ কোন দিগেই ক্ষতি নাই । গুরু দর্শনের প্রতিক্ষায় থাকা ইহা একটি ভক্তি লাভের শুভ লক্ষণ । আমি তোমাদের হৃদয়কালেই বিরাজ করিতেছি । আমার সাধন ভজন ও যে তাই । অভেদ উপাসনা সব সময়ই সোহহম উচ্চারন কর, আর প্রার্থনা কর, ঠাকুর আমি তোমারই স্বরূপে, তুমি আমি অভেদ, মায়া মোহে তোমা হইতে পৃথকহইয়াআছি । এক্ষণেতোমারনিত্যস্বরূপআমায়দাওআরতোমারকরিয়ালও । বাবাএইভাবেসাধন, ভজন, করিয়াযাও । তোমারসংসারেআসাসার্থকহউক । তোমাদেরওগোপারপত্রপাইলাম । তোমারদেহব্যাধিসম্বন্ধেলিখিতেছিতোমারঔষধএকমাত্রগুরুপদপাদকপান, আরগুরুনারায়ণনামজপইহাতেইতোমারদেহব্যাধিভবব্যাধিসবইদূরহইয়াযাইবে ।
১৬. ঘরে পেঁচা, প্রবেশের দরুন যে অমঙ্গল তাহা গুরু নাম স্মরণ মাত্র দূর হইয়া গেছে । তুমি নির্ভয় ও নিশ্চিত থাক । গুরু ভক্ত শিষ্য পরম ভাগ্যবান ।
১৭. তোমরা সকলে আমার মঙ্গলময় শান্তি আশীর্ব্বাদ লও । গুরু ভক্ত শিষ্য পরম ভাগ্যবান । তোমাদের কোন অমঙ্গল নাই । শ্রীগুরু নাম স্মরণে সব অমঙ্গল দুর হইয়া গেছে ।
১৮. এবার তোমাদের সেবাপূজা পাইয়া আমি যথেষ্টই প্রীতি লাভ করিয়াছি । তোমাদের গুরুভক্তির বাস্তবিকই তুলনা নাই, ইহা আমার এবার মনে সারা দিয়াছে । কয়টা দিন তোমাদের সাথে কি আনন্দে কাটাইয়াছি, তোমার ও মঞ্জুর সেবা পূজায় কি যে অনুরাগ দেখিলাম বৃন্দাবন বলিলে অত্যুক্তি হয় না ।
১৯. দুর্লভ বস্তু লাভ করিতে গেলে বাধা বিঘ্ন বহুৎ উপস্থিত হয়, ইহা যুগ যুগান্তর হইতেই চলে আসছে । এতে তার কোন ক্ষতি নাই, বরং অভীষ্ট বস্তু লাভের উৎকন্ঠা আরও দ্বিগুণ বেড়ে যাবে । মাই, দীক্ষার দিন পুনরায় ধার্য্য না হওয়া পর্যন্ত আমার ওখানে যাওয়া স্থগিত রহিল । তোমার উপর আমার কড়া নজর আছে । তোমরা নির্ভয় ও নিশ্চিন্তে “হরে ব্রজানন্দ হরে” নাম কীর্ত্তন (করে করে) প্রাণের পিপাসা মিটায়ে যাও । আমার শান্তি আশীর্ব্বাদ বর্ষিত হবে । কোন চিন্তা করিও না । অভীষ্ট পূরণ হবে ।
২০. আমারতোবাক্যইআছেতুমিবিপদেরমাথায়পাফেলিয়াসংসারপথেচলিয়াযাও । তোমারগায়েএকটাআঁচরপর্য্যন্তলাগিবেনা ।সংসারযাঁতাঘুড়িতেথাকুকতুমিখুঁটিআশ্রয়করিয়াপরমানন্দলাভকর । বাবাআমি ত্রিসত্যকরিয়াবলিয়াছিআমারভক্তেরবিনাশনাই । আমারবাক্যস্মরণকরিয়ানির্ভয়েথাক । তোমারনির্ভয়ওভক্তিযতইবাড়বেতোমারশান্তিসুখওততইদেখাদিবে । ব্রজানন্দকেহৃদয়েবসাইয়াছতোমারঅমঙ্গল নষ্টকরিতেআমারকতক্ষণ । বাবাকর্ত্তারইচ্ছায়কর্ম্মযাহইতেছেহইতেদাওতোমারকীযায়আসে ।
২০. বাবা বরদা, তোমার ভক্তিপূর্ণ পত্র পাইয়া পরম আনন্দ লাভ করিলাম । আমার বিজয়ার শান্তি আশীর্ব্বাদ গ্রহণ কর । তোমার পছন্দমত বাড়ীঘর করিবে । এত তাড়াহুড়ার কি প্রয়োজন ? তোমার ত্রিকালে দুঃখ নাই । তুমি পুত্র কলত্রাদি লইয়া সুখে কাল কাটাইবে । ব্রজানন্দ নাম নেওয়া বাগান বন্যায় ভাসাইয়া লইতে পারবে না-না-না । সৎ হইতে যে অভয়বাণী উদ্ভুত হয় তাহা অখন্ডনীয় জানিবে । আর বাবা, তুমি জীবনে দুঃখ করো নাই । আজ দুঃখ করিবে, একি হইতে পারে ? তোমার পণ্যে গড়া দেহ, পণ্যেই লয় হইবে । তুমি ভগবানেকে ভয় কর বলিয়া তোমাকে কেহই এ জগতে ভয় দেখাইতে পারিবে না । তুমি ভগবানকে ভালবাস বলিয়া তোমাকে সকলেই (জীব মাত্রেই) ভাল বাসিবে । এই আমার সত্য বাণী । বাবা, তুমি আমার চোখে চোখে আছ । আমি তোমার কাজ করিয়া যাইতেছি । তুমি নির্ভয়ে নিশ্চিন্তে থাক । আমি সব ঠিক করিতেছি । বাবা, আমি কি তোমাকে ফেলিয়া নীরব থাকিতে পারি ? তুমি স্থানে স্থানে ঘুরিতেছ সঙ্গে সঙ্গে আমিও তো ঘুরিতেছি । তোমাকে স্থান ধরাইয়া দিতেছি । আর বেশী বিলম্ব নাই । আমার মাইর জ্বর সারিয়াছে । রুণুর বিবাহও অনতিবিলম্বে হইয়া যাইবে । হরিদাস ও শ্যামদাস লেখাপড়িতে ভালই অধিকার করিতেছে । তুমি তো সব সময়ে কুলে আছ । জয় গুরু গৌরাঙ্গ, জয়গুরু গৌরাঙ্গ ।
২১. জমিদারীতেভালম্যানেজারনিযুক্তকরিয়াছ । এখনআরতোমারভাবনাকি ? সংসার আর তোমার হাতে রাখিও না, গুরুর করিয়া দাও । গুরু মহারাজ, তোমার পক্ষে যাহা বিবেচনায় ভাল হয়, তাহাই করিবেন । তুমি পরের চিন্তা ঘাড়ে আনিয়া মিছামিছি মাথা ঘামাইতেছ । সঁপে দাও, সঁপে দাও, সঁপে দাও । আত্মসমর্পণের তুল্য আর যোগ নাই । বাবা, তুমি সাক্ষী স্বরুপ হইয়া আনন্দে ভাতা লইয়া আহার বিহার কর । এতে ভারী আনন্দ পাইবে । এবার আমিত্বটাকে তুমিত্বে ডুবাইয়া দাও । যথা প্রাপ্তিতে । বিচরণ কর । এই আমার ইচ্ছা ও আশীর্ব্বাদ । জয় অবতার পুরুষরূপী জগৎগুরু কি জয় ! তোমার এবারকার কীর্ত্তনটি আমার বেশ লাগিয়াছে । দেশের দাঙ্গা হাঙ্গামায় আমাদের কি ? যাই হউক না কেন ? যার যেমন কর্ম্ম তার তেমন ফল । আমরা সদগুরুর সঙ্গ পাইয়াছি । আমাদের মুখ মলিন বা চিন্তাযুক্ত হইবে না । আমরা অবতারপুরুষরূপী জগৎ গুরুর সন্তান । আমরা নিরানন্দে, দুঃখে, প্রলয়ে মহালয়ে নির্ভীক থাকিব । বাবা, সংসারী লোক তো মরিতে আসিয়াছে । আর আমরা মৃত্যুকে জয় করিতে আসিয়াছি । আমাদের মুখ মলিন হইবে কেন ? বাবা, আজকার কথাগুলো আমার মনে গাঁথিয়া রাখ । ভুলিও না, তোমাদের সঙ্গ সুখ লাভ করিবার তো আমার একান্ত বাসনা আছে । কিন্তু সময় করিয়া উঠিতে পারি না ।
২২. বাবা বরদা, তোমার ভক্তিপূর্ণ পত্র পাঠ করিয়া আমার দ্বিগুণতর উথলিয়া উঠিল । যতই পাঠ করিতে থাকি ততই নতুন বিষয় পাইয়া আনন্দে রোমাঞ্ছিত হই । এমন সব পারিবারিক, সামাজিক কথা এত সুন্দরভাবে গুটাইয়া লিপিবদ্ধ করিতে পার । তাহা পাঠ করিয়া আমার আনন্দের সীমা থাকে না । তোমার মস্তিষ্ক শক্তি সঞ্চালন দেখিয়া আমি অবাক হই । তুমি কবি ও একজন ভাল সাহিত্যিক । বাবা, তোমার কর্ম্ম খারাপ নয় । তুমি জীবনে দুঃখ পাও নাই, পাইবেও না । আমি শিবরাত্রি করিয়া তোমারে একবার দর্শন দিবার বাসনা রাখি । এখন মা চালাইলে হয় । পাকিস্তানই হউক, আর গোরস্থানই হউক, তুমি সুখে নিদ্রা যাও পদচ্ছায়ায় । পূর্ণ পুষ্য পুত্র রাখিতেছে । এর আবার অনুমতি কি, বাবা ? আমি থাকিতে গুরু কোথায় । শ্রীমতিদের বিবাহের জন্য চিন্তা করিও না । চিন্তামণিই উহাদের চিন্তা করিতেছেন । তোমার চেষ্টা বিফল । নিজ শক্তিতে যখন কিছুই হইবে না তখন তুমি সাষ্টাঙ্গে পদতলে পড়িয়া থাক । সবচেয়ে এই চেষ্টাই উত্তম । লোকের কথায় কি বা আসে যায় ? আমি থাকিলে তো বাবা, আমিটাকে তুলিয়া ফেল। এই আমিই সমস্ত অশান্তির মূল । এখন একবার বলো “জয় ব্রজানন্দ হরে” । “গুরু তোমার ইচ্ছাই পূর্ণ হউক । তুমি যাহা কর তাহাই ভাল । আমি তাহাই আদরের সহিত গ্রহণ করিব । তোমার যাহা পছন্দ হয়, আমি রাজী আছি । আমার এও বাহবা তত বাহবা” । বাবা, এইভাবে ষোল আনা আত্মনিবেদন করিয়া আনন্দ লও । ইহা ছাড়া আর এই সংসারে আনন্দ পাইবার দুসরা পথ নাই । এই পথে কিছু রাখিয়া কিছু দিলে চলিবে না । ফাঁক রাখিয়া ধর্ম্ম করিতে নাই । দোষী কর তো নির্দোষী খালাস দাও । এ সবই তোমার দান ।
২৩. তোমার প্রতি আমার বিশেষ লক্ষ্য আছে । তোমার যে কত্তাপনা ভাব নাই তাহও বুঝি । আমার উপরই যে তোমার সমর্পণ নির্ভর তাহাও বেশ হৃদয়ঙ্গম করিতেছি । আর প্রকৃত সত্যও যে তাই-“আমি কভু আমার নয়, এক ভাবি আর হয় ।” আমি যদি আমারই হইতাম, তবে আমার ক্ষমতাধীন যাহা করিব ভাবিতাম তাহা তো করিতেই পারিতাম । তাই গুরু সহায় না হইলে জীবের একটি তৃণও তুলিবার ক্ষমতা নাই গুরু শক্তি ভিন্ন এই হস্তদ্বয় গ্রহণ করিতে পারে না, চক্ষু দর্শন করিতে পারে না, মন মনন করিতে, বুদ্ধি স্বকার্য সাধন করিতে অক্ষম হয় । আমার অপ্রকাশে তাঁহার প্রকাশ, আমার প্রকাশে তাঁহার অপ্রকাশ ।
২৪. মাই, তোমার কোনই অপরাধ নাই আমার শ্রীপাদপন্মে । তুমি অকুতোভয় হও । আমি শিবচতুর্দ্দশীতে তোমার ফুল জলে গ্রহণ করিব । তুমি নিয়ম নিষ্ঠার সহিত আমাকে দিও । আর শিবরাত্রির পর আমি স্থলে দর্শন দিব । তুমি টান রাখিও । পুর্ণ আর পরিষ্কার কি বলিবে ? তার কাজ হইয়া গিয়াছে । আজ অনেকদিন ধরিয়া তাহার কোন খোজ খবর পাই না । আর বেশী দিন নাই । তোমার গোপাল আসিয়া তোমার প্রাণ জুড়াইবে । আমি কি সাধ করিয়া ধামে ফিরিয়া যাইতে ব্যস্ত হই, আমাকে কে জানি ব্যস্ত করে । আমি তোমার কাছে সেবা ত কম পাই না । সেই জন্যই যাই যাই করি না । ভক্তের কাঙ্গাল কিনা আমি । তাই তারা আমাকে টানে, আর আমিও ভক্তের টানে থাকিতে পারি না ।তোমার বাসনা পরণার্থে কতই না কিছু করি । কিন্তু তা একটাও হইয়া উঠিতে চায় না । তোমার গোপালের পরিচয় তো অনেকেই দেখতে পাইয়াছে । আমি যে আমার মায়ের মুখ উজ্জল করিতে গিয়া বিফল মনোরথ হইয়া ফিরি । ইহা অবশ্যই কোন নিগূঢ় কারণ আছে, নইলে এমন হবে কেন ? এই চরণ পূজা করিয়া অনেকেই তো পাইতেছে । এমন না যে কেহই পায় নাই । তবে আমার বিশ্বাস আছে, আমাকে পাইলে ফিরিতে হয় না ।
২৫. নবদ্বীপ ব্রজাধামের জন্য মণিকানন্দ সাধুকে পাঠাইলাম । তোমরা উভয়ে ধামে থাকিয়া তাহাকে সেবা পূজা, আরতি,ভজন, কীর্ত্তন ও ধাম পরিচালনার সর্ব্ব কার্য্যে সাহায্য করিবা, ইহাই আমার একান্ত ইচ্ছা । মণিকানন্দ তোমাদের সাহচর্য্যে ধামের পরিচালনা যথাসাধ্য সুন্দররূপে সম্পন্ন করিবে, আমি নিশ্চিন্তে থাকিব । তোমাদের নিজ নিজ স্বাস্থ্যের প্রতি লক্ষ্য রাখিয়া সাধুকে যথাসাধ্য সাহায্য করিয়া বর্তমানে ধামের সুপ্রতিষ্ঠার সংকল্পেই তোমাদের প্রতি আমার এই আদেশ, তোমাদেরও ভবিষ্যত প্রতিষ্ঠা লাভ আমার লক্ষ্য ।
২৬. স্নেহাস্পদা হৈম, তোমার অসংখ্য প্রণাম ও পত্র পাইয়া পরম আনন্দ লাভ করিলাম । আমার অদর্শন তোমার প্রাণে যে আঘাত দিয়াছে ইহা একটি ভাব-ভক্তির লক্ষণ । তোমার প্রাণে গুরুভক্তি জাগিয়াছে বলিয়াই একমাসের অদর্শন যেন কতদিন বলিয়া মনে করিতেছ । ভক্তি এলে ত পলকে প্রলয় জ্ঞান হবেই । আমার মনে হয় তোমার ভক্তির টানে বড় বেশীদিন এখানে থাকিতে পারিব না । গুরুধামে শিবরাত্রি উৎযাপন করিয়া খুবই ভাল করিয়াছ । ইহাতে তোমার অনেক জন্মের পুঞ্জীভূত পাপরাশি দুরীভূত হইয়াছে । আমিও তোমাকে বলিয়াছি আমার আসল কথা কইবে ! গুরু ভক্ত নব দুই একটা গান গাইবে আমি শুনিব । মহামায়াকে অসুস্থ রাখিয়া আসিয়াছি, তাহার খোঁজ নিলে কোন অসুবিধা দাঁড়াইলে তাহা দূর করিবে ।আমি কি ধামে আসিয়া ভক্তদের টানাটানিতে পড়িয়া গিয়াছি । আমার স্থুল দেহটাও বড় সুবিধা যাচ্ছে না । তুমি গুরুতে নির্ভর দাও, বিশ্বাস আন তোমার ইহকালে কি পরকালেও দুঃখ হবে না । তোমাদের জন্য আমারও প্রাণটা ছট্ফট করে কিন্তু কি করি সবাই যে আমার সন্তান, সবাই যে আমার আপন, সকলেই যে আমার মন দখল করে বসে আছে আশীর্ব্বাদ করি-তোমার স্বাস্থ্যসুখ লাভ হউক ।
২৭. কৃপা দৃষ্টি ফেলিয়া ভক্তদের প্রার্থনা পূর্ণ করি । যেমন জলে কচ্ছপ থাকে, ডিম পারবার বেলায় টানে এসে ডিম পারিয়া জলে গিয়া সে জল হইতেই দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ডিম ফুটায় । ভগবান অবতারি পুরুষের ও কার্য্য তাই । তাই এই ব্যারাম ধামে থাকলেই সেরে যাবে । তোমার এই ব্যারামের সুপথ্যই হল সুখ পাক শুকতার ঝোল একটু দধি দুগ্ধই তোমার সুপথ্য ।
শিবোহম্
১. সবসময়জপকরিবারজন্যশ্বাসেশ্বাসে “শিবোহম” এইমহামন্ত্রইতোমারজন্যব্যবস্থাকরিলাম । ইহাতেকাজভালহইবে । এতেমনেরবিক্ষিপ্তঅবস্থাসহজেদূরহবে । ইহাসবসময়ইউঠিতেবসিতেশ্বাসেরওঠানামারসঙ্গেসঙ্গেইজপচলিতেথাকিবে । আরধ্যানতোগুরুমূর্ত্তিতেঅভেদভাবেকরিয়াযাইতেহইবে । ধ্যানএকবারজমেগেলেআরমনটাস্থিরহ’লেইসবঠিকহইয়াগেল । তখনআরএইমায়ারদুনিয়াথাকিবেননা । তোমারগোপালএবারতোমারজন্যভালব্যবস্থাকরিয়াছে । তুমিএইনামজপকরিয়াখুবআরামবোধকরিবে ।
২. তুমিসর্ব্বদাশিবোহমশিবোহমমহামন্ত্রউচ্চারণকর । হৃদয়েসিংহেরবলসঞ্চারহইবে । জন্মমৃত্যুরভয়থাকিবেনা । আশীর্ব্বাদকরিতুমিআত্মসংস্থহও।
অভেদ উপাসনা
১. জীবসঙ্গে আপন আত্মা পরমাত্মার স্বরুপ, এই অভেদ উপাসনা । এই উপাসনায় জীব সকল সিদ্ধি লাভ করিতে পারিলেই পরস্পরে বিবাদ বিসম্বাদ, হিংসা দ্বেষ থাকিবে না । জীব সকল শান্তি লাভ করিবে, অশান্তি ভোগ করিতে হইবে না । আমি এই জ্ঞান জীবের অন্তরে প্রকাশ করিয়া সর্ব্ব অমঙ্গল দূর করিয়া মঙ্গল স্থাপন করিব । মা, এই সত্য জ্ঞান নিজে আনিয়া অপরকে মানাইয়া মঙ্গল কর । জীব মাত্রকে আপনার আত্মা পরমাত্মার স্বরূপ জানিয়া সকলের উপকার করাই স্বাভাবিক ধর্ম্ম জ্ঞানী পুরুষের । যাহার পরমাত্মারূপী গুরুতে নিষ্ঠা ভক্তি আছে তাহার জীব মাত্রেই দয়া সমদৃষ্টি আছে । মা, তুমি কোন বিষয়ে চিন্তা করিওনা । তুমি আপনাকে ও আমাকে এক স্বরূপ দেখ । আমি নির্গুণ নিরাকাররূপে এবং সগুণ সাকার রূপে চরাচর বিস্তার আছি । আমা হইতে দ্বিতীয় কেহ নাই । এই সংসারে সব উপাধিই আমার অথচ কোন উপাধিই আমার নয় ।
২. সন্ধ্যা আহ্নিক করিবার কালে প্রার্থনা করিবে ঠাকুর আমি তোমারই স্বরূপ তুমি ও আমি এক বস্তুই । মায়া মোহে আবদ্ধ হইয়া আজ আমরা তোমা হতে পৃথক হয়ে গেছি । এক্ষনে তুমি আমাদের তোমার করিয়া লও, তোমার নিত্য, সত্য স্বরূপ আমায় দাও । মাই তোমরা এইভাবে গুরুকে সাধন করিয়া যাও । তোমাদের উভয় লোকেই মঙ্গল ।
৩. মায়ার ফাঁদে পড়ে তোমার নিজ স্বরূপ হারায়ে ফেলেছ । এক্ষনে চিন্তা করে সেই স্বরূপ লাভ কর ।
৪. তোমারসর্ব্বত্রগুরুজ্ঞানহউক । এইজগতেসর্ব্বত্রইএকমাত্রগুরুদেবেরইলীলাখেলা । একমাত্রব্রজানন্দইজগৎব্যাপিয়াআছেন । এইজগতেযাকিছুসবই “ব্রজানন্দ” । গুরুময়ভূমন্ডলতশুনেথাকবে ? কাজেইদেখতোমাতেওগুরুতেকোনপার্থক্যনাই । তুমিওযাগুরুওতা । একভিন্নদুইনাই । তবেযেদুইদেখাচ্ছেমায়াতে । যেইআমিসেইতুমি । তুমিআমিতেকোনভেদনাই ।
৫. মন্ত্রেতুমিদীক্ষিত । তোমারস্বরূপওশ্রীগুরুদেবেরস্বরূপএকভেবেধারনাকরেতবেজপকরিবে । শেষেদেখতেপাইবেগুরুশিষ্যএকইবস্তু । মায়াতেদুইদেখায় । সেইমায়াঅপসারিতহবেজপকরিতেকরিতে । তাকেইবলেআমিতুমিমিলনভূমি, তখনইআমিতুমিরমিলনভূমিতেদাঁড়াব । একত্বজ্ঞানলাভহবে । তখনআমিওনাইতুমিওনাই, কেকারখোঁজলইবে ? একেইবলেনির্ব্বিকল্পসমাধি । গুরুওনাইশিষ্যওনাই । মহাজনবাক্যেওআছে-“সেবড়কঠিনঠাঁই ! গুরুশিষ্যেদেখানাই” তখনযাথাকেতামুখেবলাযায়না । এইচরমঅবস্থায়নাযাওয়াপর্যন্ততুমিওআছআমিওআছি । তোমারওকর্তব্যআছেআমারওকর্তব্যআছে । তুমিওডাকাডাকিকরবেআমায়, সেবাপূজাদেবেআমায় । আমারওকর্তব্যপ্রাণখুলেআশীর্ব্বাদকরা, সেবাগ্রহণকরা । তুমিফটোরকাছেরোজইঘরেযাকিছুথাকেপেঁরা, বাতাসা, ফলমূলভোগদিবে । আরবর্তমানেতআমিইরয়েছিঅন্নব্যঞ্জনযাদিতেহয়গুরুধামেইব্যবস্থাকরেদিবে । তোমারঅম্বুবাচিকরবারআরপ্রয়োজনকরেনা । অম্বুবাচিরকয়দিনশ্রীগুরুদেবেরকাছেভোগদিয়াপ্রসাদখাইয়ালবে । শ্রীগুরুরপাদপাদ্মতিলতুলসীদিবে । শ্রীগুরুরচরণে-১২ মাসইবেলপাতাদেওয়াচলে । তুমিশুধুআমারএইজনমেরআপনজননও । তুমিআমারপূর্ব্বজন্মেরওআপনজন । দিনান্তেনামটাআমারএকবারস্মরণকরিও । তবেইতোমারবিশ্বাসভক্তিক্রমেইবারবে ।
৬. আমি তো তোমাদের সেই অভেদ উপাসনাই দিয়াছি “সোহহম্” আমি সেই, এই ভাবনা নিয়া নাম, জপ, ধ্যান ইত্যাদি করিবে, তাহা হইলে আমাকে তোমাতেই পাইবে । ব্রজানন্দ অভিন্নরুপে তোমাতেই বিরাজ করিতেছেন । সেই তো চিরমিলন, সেখানে বিচ্ছেদ নাই । দেহের দর্শন, মিলন এ তো মিথ্যা, আজ আছে কাল নাই । তখন কি আবার আর এক গুরু করবে ? বাবা ক্ষণিকের উপাসনা দূর কর, সে তো দুঃখের কারণ । সে ভাবে আমার উপাসনা করিবে না । আমি তোমাদেই আছি এই বোধে আমার উপাসনা কর । ত্রিকালেও ব্রজানন্দের অভাব বা বিচ্ছেদ যন্ত্রণা ভোগ করিতে হইবে না ।
-০-
‘
ব্রজানন্দ বেদবাণী
প্রমথ মিত্র
[ ভগবান ব্রজানন্দের দৈনন্দিন উপদেশবাণী হতে সংগৃহীত ।
কথ্য ভাষা হতে লিখিত ভাষায় রূপান্তরিত মাত্র । ]
১. সত্যাশ্রয়ী হও । সত্যই জ্ঞানের উৎস – শক্তির অংকুর – নিষ্ঠার হেতু – তৃতীয় নয়ন ।
২. সত্য-প্রেম-পবিত্রতা-ভক্তি-বিশ্বাস, সংসার জীবন, ধর্ম-জীবন সহজ সরল সুন্দর করে ।
৩. দেব দর্শনে পাপ ক্ষয় হয়, অমঙ্গল দূর হয় । ভক্তি-বিশ্বাস নিয়ে দর্শন করতে হয় ।
৪. শরণাগত প্রতিপালক । যে আমার শরণ নেয় – আমি তার প্রতিপালন করি ।
৫. ভক্ত আমার প্রাণ – ভক্তকে রক্ষা করা আমার ধর্ম্ম – ভক্তের মুক্তি আমার জীবন বেদ ।
৬. ব্রজানন্দ মানুষ-ভগবান । ভক্তি-বিশ্বাস-অনুভূতি চাই । যদি আর কিছু মনে কর, মহাভুল করবে ।
৭. ভগবান জগতের একমাত্র নিয়ন্তা, নির্বাহ কর্ত্তা । ব্রজানন্দ জীবন্ত ভগবান । দর্শন ঠিক রাখ । অন্যকিছু ভেবোনা ।
৮. মাতৃভক্ত হ’লে সংসার স্বর্গরাজ্য হয় । মাকে দেবীজ্ঞানে পূজা করবে ।
৯. ব্রজানন্দ মহাকালী । ভক্ত নানাভাবে আমাকে দর্শন করে । যার যেমন ভাব । কখনও শ্যামা – কখনও শ্যাম – ব্রজানন্দ শিব – রাম ।
১০. এক কথায় সর্ব্ব ধর্মের সমন্বয়ে ব্রজানন্দ ধর্ম । ধর্মের সমন্বয় সাধন ব্রজানন্দের আবির্ভাবের হেতু ।
১১. আমি তুষ্ট হ’লে তোমার ইহকালে সুখ – পরকালে পরামৃত লাভ ।
১২. মায়ায় আবদ্ধ হইওনা । আমাকে সাথী করে সব করবে । সংসার করবে ব্রজানন্দের সংসার । সে সংসার হবে ত্যাগীর সংসার – ভোগীর সংসার নয় ।
১৩. হিংসা-দ্বেষ বর্জিত-প্রাণ শান্তির প্রসবন । হিংসা – দ্বেষ বর্জিত হও ।
১৪. কর্মই বন্ধন । কর্ম-বন্ধন মুক্ত হও । কর্ম থাকতে উদ্ধার নাই । কর্ম ক্ষয় কর – মুক্তি করায়ত্ত্ব হবে ।
১৫. বৈদ্য নারায়ণ হরি – তার শরণ লও । রোগমুক্ত হ’বে ।
১৬. জ্ঞাতা-জ্ঞান-জ্ঞেয় সবার উপরে ব্রজানন্দ ভগবান ।
১৭. বর্ত্তমান শিক্ষা সভ্যতা তামসিক । অহং প্রতিষ্ঠা ।
১৮. রাজধর্ম প্রজা পালন, প্রজাপীড়ন নয়, অসির বলে শাসন নয় ।
১৯. নাম কর।নামের মধ্যে সব কিছু আছে । আমার কাছে যা আছে নামের কাছেও তাই আছে । নাম অক্ষর বিশেষ মনে করোনা, নাম মূর্ত্তিমান মনে রাখবে ।
২০. শান্তি আশীর্বাদ অমোঘ । অশান্তি থাকে না ।
২১. নাম নামি অভেদ । নাম নিয়ে থাকতে হয় । আমাকে যা দিবে নামের কাছে দিলেই আমি পাই । গুরুতো চিরদিন থাকে না । নামই চিরসত্য, নাম কর । নাম নামি অভেদ ।
২২. আমা হতে যা পাবে এই আসন হ’তেও তাই পাবে । জীব-জগতের কল্যাণের জন্যই আসন প্রতিষ্ঠা । আসনই অনন্তকাল থাকবে ।
২৩. শক্ত করে বাক্য ধর সত্বর ফল পাবে, ভক্তি-বিশ্বাস নিয়ে বাক্য পালন করবে ।
২৪. ব্রজের ভাব-ভক্তি তোমার আদর্শ । এর কাছে আর কোন ভাব-ভক্তি লাগে না । যশোদার স্নেহের পুতুল । সেখানে আর ভগবান থাকে না । বাৎসল্যভাব ।
২৫. বেদে নাই ভাগবতে নাই । ব্রজের ভাব-ভক্তি সবার উপরে, তুমি আমার আমি তোমার । ওঁ পরমাত্নণে নমঃ ওঁ ব্রজানন্দায় নমঃ তস্মিন তুষ্টে জগৎ তুষ্ট ব্রজের ভাব ।
গুরু-শিষ্য সংবাদ
(শিষ্য তরণীকান্ত বসুকে লিখিত গুরুদেবের পত্রের অংশ)
২৬. শিষ্যঃ- বাবা, সংসার বড় বিষম স্থান । বাত্যাতাড়িত তরণীর মত মন সততই চঞ্চল; গন্তব্যস্থলে পৌছান বড়ই দুষ্কর । আমার ভক্তিও নাই; মানসিক শক্তিও নাই । কি করা কর্ত্তব্য ?
উত্তরঃ-আমার সব কিছু বরণ করে নিলেই তোমার ভক্তি অচলা হয়ে যায় । আমার ইচ্ছা সাথে তোমার ইচ্ছা মিলে গেলেই হয় । তোমার প্রকৃতির সাথে আমার প্রকৃতির মিল থাকলেই তা হয়ে যায় । আমার সব কিছুই তোমার মিঠা লাগা চাই, তা হলেই যে কোন সংশয় থাকে না । ভক্তি অচলাই থাকে, বিশ্বাস টলে না । বিশ্বাস অটুট রাখতে হ’লে Complete Surrender করতে হয় (সম্পূর্ণ শরণাগতি) । নিজের অস্তিত্ব থাকা পর্য্যন্ত নয় । শুকদেব জনকের কাছে ব্রহ্মবিদ্যালাভের জন্য গিয়েছিলেন । গিয়ে দেখে কি জনক কয়েকটি উলঙ্গ সুন্দরী যুবতী মেয়ে কোলে করে বসে । দেখেই তাঁর ঘৃণা হ’ল । এর কাছে উপদেশ নিব ? তৎক্ষণাৎ ফিরে চললেন, ভক্তি বিশ্বাস তাঁর সেখানেই চট্কে গেল । জনক টের পেয়ে তৈলপুর্ণ একটি বাটি দিয়ে বললেন, তুমি আমার রাজপুরীটা দর্শন করে এসো, দেখো তৈল যেন এক ফোঁটা মাটিতে না পড়ে; তা হ’লে তোমার শিরচ্ছেদন হবে । এই প্রহরী তরবারী হস্তে তোমার পিছনে রইলো । শুকদেব আর পুরী দেখবেন কি ? তাঁর মন তো বাটীর উপর । তেমনি আমার মন গুরুমুখী হয়ে আছে । আমার কাছে স্ত্রীই বা কি,আর পুরুষই বা কি; উলঙ্গই বা কি, কাপড় পরাই বা কি ? বাবা তরণী, তবেই দেখ, সবই মনে । মন পাখীকে এবার “জয় গুরু” বলে ধ্বংস করে ফেল ।”
শিষ্যঃ- আপনি আমাদের ভুলে থাকলে আমাদের দুর্গতি দূর হবে কি করে ? সংসারের ঘূর্ণীপাকে নাজেহাল হয়ে পড়ছি ।
উত্তরঃ- ভক্তের কাঙ্গাল কি ভক্তকে ভুলতে পারে ? যার জন্য আমাকে এই হাড় মাংসের দেহ ধারণ করতে হলো । গুরুতে মন রেখে বিদ্যার সংসার করতে হবে । আর অবিদ্যার সংসার রিপু নিয়ে সংসার । বিদ্যার সংসারে নাম নাই । গুরুতে বিশ্বাস রাখ, মনপ্রাণ সমর্পণ কর, সব হবে । আমি বিশ্বাস রেখেছি, মনপ্রাণ সমর্পণ করেছি, তাই অমর-লোকে বাস করছি । তুমিও আমার মত হও ।”
স্বামী ব্রজানন্দ
শ্রীশ্রী বুড়াশিবধাম
রমনা, ঢাকা, ১৩/৬/৬৬
২৭. “গ্রন্থ-প্রতিপাদ্য প্রকৃত বিদ্যালাভ হতে অনেক দূরে । গ্রন্থ-প্রতিপাদ্য বিষ্য-বিদ্যালাভ । যে বিদ্যাতে আত্মবিকাশ, আত্মজ্ঞান লাভ হয় না – সে বিদ্যা বিদ্যাই নয় ।”
২৮. “মানুষের ধৈর্য্য চাই । ধৈর্য্য না থাকলে মানুষই না । ধৈর্য্য ধরে থাক – আমি আছি পাছে পাছে ।”
২৯. মন্ত্রের তিনটি অংশ – প্রণব, ওঁকার, বীজ । বীজমন্ত্র সোহহং-শিব-বিষ্ণু-কৃষ্ণ যার যে উপাস্য । প্রণব জপ করিলে আত্মজ্ঞান লাভ হয় । যত প্রকার বাক্য আছে সে সমস্ত বাক্যের পরিসমাপ্তি একমাত্র প্রণবে । প্রণবের পরে আর বচন নাই । সর্বদা প্রণব উচ্চারণ করিতে পারিলে চারি বেদের পাঠ হইয়া যায় ? প্রণব একাক্ষর ছন্দ স্ত্রী-পুরুষ সকলেই এই বাক্য উচ্চারণ করিবার অধিকারী । ইহার সূক্ষ্মভাব এই যে আত্মাই সত্য আত্মভিন্ন প্রণবাদি মিথ্যা মায়া মাত্র । আমি আত্মা – জীব নই – দেহ নই – মন, বুদ্ধি, ইন্দ্রিয়াদি নই । এইরূপ নিশ্চয় রাখিয়া প্রণব উচ্চারণ চিন্তা করিবে ।
৩০. আমার প্রকাশেই সকলের প্রকাশ । সেই আত্মার স্বরূপ তুমি । তোমার প্রকাশ দিয়াই সকল প্রকাশ । তুমি স্বপ্রকাশ । তোমার প্রকাশেই সকলের প্রকাশ । তোমাকে কেহই প্রকাশ করিতে পারে না । তুমি চৈতন্য নির্বিকার পুরুষ । যেমন নট নানা প্রকার নাটক করিয়াও সে নটত্ত্ব নিশ্চয় হারায় না । সেইরূপ তুমি প্রাণবাদি চিন্তন, মনন, ধ্যান করিয়াও নিজ স্বরূপ হইতে বিচলিত হইলে তবেই তুমি সংসার সাগর হইতে মুক্ত হইয়া যাইবে । এবং দুঃখ কষ্টের হাত এড়াইবে । তুমিত মুক্তি – তোমাকে আবার মুক্ত করে কে ? মন্ত্রের ইহাই হইল সূক্ষ্ম ভাব ।
৩১. গুরুপথে গুরুরূপ ধ্যান চিন্তা মনন দ্বারা নিজ স্বরূপের প্রকাশ হয় । গুরুদেব নাম দিয়া চিত্ত দর্পণের ময়লা দূর করিয়া যান । তখন নিজ স্বরূপ আপনি প্রকাশ হইয়া পড়ে । যেমন সূর্য্য নারায়ণকে মেঘে আবরণ করে, মেঘ সরিয়া গেলেই সূর্য্য আপনি প্রকাশ হয় ।
৩২. নাম আর বিন্দুভেদে সৃষ্টি দুই প্রকার । এক “বাহা সৃষ্টি” পিতামাতা কর্তৃক । আর এক সৃষ্টি গুরু কর্তৃক “নাম সৃষ্টি” ।গুরু কাণে নাম দিয়া শির্ষ্যের অজ্ঞান অন্ধকার দূর করিয়া জ্ঞান ভক্তি দিয়া উদ্ধার করেন । গুরু সোহহং বীজ কাণে দিয়া পূর্বদেহ নাশ করে – তুমি দেহ নও আত্মা – এই পঞ্চ ভূতাত্মক তাগৎ জর দুঃখজরা দেহ তুমি নও – তুমি সৎ চিৎ আনন্দরূপ আত্মা এই নিশ্চয় জন্মাইয়া দেন ।
৩৩. সোহহং বীজ দানে শিষ্যের অলৌকিক জন্মলাভ হয় । সেই হেতু সোহংকে বীজমন্ত্র বলে । সোহহং মন্ত্রের সূক্ষ্মভাব এই – ব্রজানন্দরূপ শিব, বিষ্ণু বা কৃষ্ণ দেবতা আপন স্বরূপ বোধ করা চাই । অর্থাৎ আমি চৈতন্য স্বরূপ আত্মা সমস্ত জগতের নিয়ন্তা ও নির্বাহ কর্ত্তা । এই বোধে ধ্যান চিন্তা পূজাই সূক্ষ্মভাবের সাধনা । গুরুকে আকার বোধে পূজা ধ্যানই নিত্য ফলদায়ক নতুবা অনিত্য ফললাভ হয় ।
৩৪. বাৎসল্য ভাব নিয়ে যে আমায় লালন পালন করে – কৃপা পরবশ হইয়া আমি তাকে ধরা দেই । দাপরে যশোদা মাঈ এর যেমন কৃষ্ণ দর্শন হইয়াছিল । যে যেভাবে আমায় ভজনা করে – আমি সেই ভাবেই তার সাথে একাত্ম হইয়া যাই । যার যেমন ভাব তার তেমন লাভ ।
৩৫. সভক্তি সাধন ভজনে মায়াজাল ছিন্ন হয় – পাপ অবিদ্যা দূর হয় – ভগবৎ পদে নিষ্ঠালাভ হয় – নিষ্ঠা হইতে নামে রুচি হয় – রুচি হইতে আসক্তি জন্মে – আসক্তি হইতে ভাবের উদয় হয় । ভাব হইতে প্রেমলাভ হয় । এইখানেই সাধনার সমাপ্তি – ঈশ্বরত্বলাভ ।
৩৬. ‘ভগবান মঙ্গলময় শান্তিদাতা, এই দৃঢ় বিশ্বাস থাকলে অমঙ্গল দূর হয় – অশান্তি থাকে না । দৃঢ়বিশ্বাস আন ।
৩৭. আত্মজয়ী হইয়া জন্ম মৃত্যুর হাত হইতে মুক্ত হও । তোমার জন্ম সফল কর । শ্রীভগবানের চরণ সেবায় তোমার জীবন অতিবাহিত কর । সংসার সাগরে ডুবন্ত মন ভাসিয়া নির্লিপ্ত হইয়া উঠুক । সাধু গুরুর সেবা পরিচর্য্যায় দেহ প্রাণ ঢালিয়া দাও । তবেই এই নশ্বর দেহের সার্থকতা । নতুবা এই হাড় মাংসময় দেহের মূল্য কি ?
৩৮. ভক্তের টান শক্ত টান । সে টান কি আমি এড়াইতে পারি ? ভক্ত আমার বড় প্রিয় । ভক্ত আমার প্রাণের প্রাণ । ভক্তের কারণে আসি এ ভুবনে ভক্তজনে করি পরিত্রাণ । ভক্তের জন্যই আমার এই আবির্ভাব ।
৩৯. বৈষ্ণবের পদধূলি পড়ে যার গৃহে সপ্তকোটি কুল তার হইবে উদ্ধার । বৈষ্ণবকে আপজন বলি যদি কাহারও প্রাণে সাড়া দেয় তাহাকে আমার আপন করিয়া লই তাহার সপ্তকোটি কুল উদ্ধার করি ।
সংঘ শক্তি
শ্রী নিবারণ চন্দ্র সাহা
৪০. কলিযুগে সংঘশক্তি অতিপ্রবল । সাধনের এক লক্ষ্যে পৌঁছিতে হইলে সর্বাবস্থায় সংঘবদ্ধ অবস্থায় কাজ করিলে তাহা সহজে সম্পাদন হয় । একের চেষ্টায় বা উদ্যোগে তাহা কখনও সম্ভব হয় না । সকলের প্রাণে আগ্রহ ও ব্যাকুলতা সমভাবে জাগ্রত হইলে সংঘ প্রতিষ্ঠা লাভ করে । সংঘ শক্তি ব্যতীত জগতে কিছুই গঠিত হইতে পারে না । সংঘের শক্তি অপরিসীম । সেই জন্য আমাদের পরমারাধ্য শ্রীগুরুদেব স্বামী ব্রজানন্দ পরমহংস মহাপ্রভু জীউ ধর্ম ও আত্মিক উন্নতি, বিশ্বকল্যাণে – বিশ্বলোক হিতার্থে, বিশ্বজাগরণে সংঘ শক্তির বিশেষ প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন । সেইজন্য তিনি তাঁহার পদাশ্রিত ও শরণাগত সন্তান সন্ততিগণকে উপদেশ প্রদান করিয়া সংঘের শক্তি ও তাহার প্রয়োজনীয়তা প্রসঙ্গে বলেন –
তোমাদের জীবনের লক্ষ্য এক । তোমরা সর্বদা মনে রাখিও সমস্ত গুরু ভ্রাতা-ভগ্নিকে এক পরিবার ভুক্ত, সকলে একই পিতার সন্তান, এই অনুভূতি তোমাদের প্রাণে উদয় হইলে তোমাদের যাবতীয় হিংসা দ্বেষ, ক্ষুদ্র অশান্তি বিদুরিত হইবে ।
বিশ্ববাসী জাতি ধর্ম নির্বিশেষে যখন “তত্ত্বমসি” মহাকাব্যের সুমহান নীতি গ্রহণ করিবে তখন জগতে সচ্চিদানন্দের পূর্ণ আসন প্রতিষ্ঠিত হইবে, মনের কপটতা, হিংসা দ্বেষ পলায়ন করিবে, বিশ্ব আনন্দের-মঙ্গল জয় শংখ পুনরায় বাজিয়ে উঠিবে, নিখিল বিশ্বে শাশ্বত অনাবিল শান্তি প্রতিষ্ঠা লাভ করিবে । প্রাণে প্রকৃত মধুর ভাব উদিত হইলে কিছুই অসাধ্য থাকে না ।
তোমরা গুরুধামের বিশেষ বিশেষ উৎসবে এবং সপ্তাহে একটি নির্দিষ্ট দিবসে একত্রিত হইয়া আসনে প্রণাম, পূজার্চ্চনা, আরতি, ভজন কীর্তন করিবে । সদ্গুরু ভগবানের মহাভাব ও মহাপ্রেমের বিষয় চিন্তা, ধর্মালোচনা, সাধন মার্গে ও আধ্যাত্মিক পথে উন্নতিবিধান, নিঃস্বার্থ সেবাধর্ম উদযাপন করাই এই গুরুধাম মহামিলন মঠের প্রধান উদ্দেশ্য তাহা বিশেষভাবে পর্যালোচনা ক্রমে কর্ম পন্থা নির্দ্ধারণ করিবে, গুরুধামের সুশৃঙ্খলা, রক্ষণাবেক্ষণের সুষ্ঠ উপায় উদ্ভাবন করিবে ।
এই গুরুধাম প্রতিষ্ঠার মূলে কি সত্য, আদর্শ ও উদ্দেশ্য নিহিত আছে তাহা বিশেষ ভাবে পরিস্ফুট করিয়া বিশ্ব কল্যাণে ও লোকহিত কর্মে বিশ্ববাসীর সম্মুখে উত্থাপিত করিয়া আদর্শ নিষ্কাম সেবা ধর্ম্মের কথা ধরিয়া তুলিও । সংঘে একত্রিত হইয়া ভাব বিনিময় ও আলোচনা করিও । আমি স্থুল দেহে ধামে উপস্থিত থাকিলে তোমরা যেরূপ – সংযম, শ্রদ্ধা ভক্তির সহিত উপবেশন কর সংঘে উপস্থিত হইয়াও তোমরা শ্রদ্ধা ভক্তির সহিত উপবেশন করিবে ।
সর্বদা আসনে আমি প্রত্যক্ষ আছি এবং তোমাদের কার্যকলাপ সমস্তই লক্ষ্য করিতেছি । আমি ও আমার আসন এক । এই সিদ্ধ আসনই গুরুশক্তি । তাহা কদাচ কেহ গ্রহণ বা ব্যবহার করিবে না ।
তোমরা ভক্তি নিষ্ঠার সহিত গুরুপীঠ বা গুরুর আসনের সর্বোতভাবে সর্বদা পবিত্রতা রক্ষা করিবে । আমার আসন কথা বলিবে । যাহার যাহা অভিলাষ আসনে জানাইবে । আমি কোথায় নাই ? গুরু কোথায় নাই ? তিনি আছেন আকাশে-বাতাসে প্রতি জীবের অন্তরে । তিনি ভক্তি লভ্য, ভাবগম্য । আসনেই তাঁহাকে খুঁজিয়া পাইবে । কাজেই গুরুর আসনের পবিত্রতা রক্ষা করা প্রত্যেক ভক্ত শিষ্যের কর্তব্য । গুরুধাম কৈলাস ধাম স্বরুপ, গুরুগৃহ চিন্তামণি স্বরূপ, গুরু গৃহস্থিত তরু সমূহ কল্পবৃক্ষ স্বরূপ, জলাশয় অমৃত শাখার স্বরূপ, পুষ্প সকল মণি স্বরূপ । সুবুদ্ধি ব্যক্তির কর্তব্য গুরুস্থান দর্শন মাত্র সিদ্ধজ্ঞান করিয়া দণ্ডব্য নমস্কার করা । গুরুর সিদ্ধ আসন এবং গুরু অভিন্ন । আসনে সরল প্রাণে ভক্তি বিশ্বাসে যে যাহা প্রার্থনা করিবে আমি তাহা পূর্ণ করিয়া থাকি ।
সংঘে যখন গুরু ভাই-বোনগণ সমবেত হইবে তখন পরস্পরের মধ্যে ভাব বিনিময় করিও । এইরূপ আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সাধন মার্গের দোষ ক্রটি ধরা পড়িবে এবং অন্যের সাহায্যে সাধনমার্গে পথ সুগম হইবে । সদ্ভক্তের সঙ্গলাভ এবং নিঃস্বার্থ নিষ্কাম কর্ম উদযাপন করিয়া সাধনপথে অগ্রসর হইবে । তাহাতে মনের মলিনতা, আবিলতা দূর হইবে । প্রাণে বিমল আনন্দ উপভোগ করিবে । চিত্তশুদ্ধিই একমাত্র ভগবানকে লাভ করিবার প্রকৃষ্ঠ পন্থা । কাজেই নিষ্কপটে সুষ্ঠভাবে সংঘ পরিচালনা করিতে পারিলে তোমরা অচিরে শ্রীগুরু ভগবানের কৃপা লাভে সমর্থ হইতে পারিবে । এই জগতে এমন কোন শক্তি নাই তোমাদের অনিষ্ঠ সাধন করিতে পারে । তোমরা সংঘকে দৃঢ়ভাবে ধরিয়া রাখিতে পারিলে – সমগ্র বিশ্ব একত্রিত হইয়াও তোমাদিগকে বিব্রত ও বিপন্ন করিতে পারিবে না । গুরু ও সংঘের সহিত তোমরা ঠিক ঠিক সম্বন্ধ রাখ । সাধু সঙ্কল্পে অবিচলিত থাক । সেই শিষ্য গুরুশক্তি দ্বারা সর্বোতভাবে সুরক্ষিত । চতুর্দ্দশ ভুবনে এমন কোন শক্তি নাই তাহার কেশাগ্র স্পর্শ করিতে পারে ।
এক লক্ষ্য বা ইষ্ট সিদ্ধিলাভের জন্য সকলের প্রাণে আকুলতা জন্মিলে সংঘের সৃষ্টি হয় । এই সংঘ অতুলনীয় । তোমাদের অনৈক্য, মতবৈষম্য, ক্ষুদ্র অশান্তি সমস্ত ভুলিয়া গিয়া প্রাণের নিবিড় বন্ধনে আবদ্ধ হইতে পারিলে তোমরা জগতে অসাধ্য সাধন করিতে পারিবে, মায়াবদ্ধ সংসারে থাকিয়াও অমৃতরস আস্বাদন করিতে পারিবে ।
শ্রীভগবান গীতায় বলিয়াছেনঃ-
যজ্ঞে দান তপঃ কর্ম ন ত্যাজ্যং কার্য্যমেবত্য ।
যজ্ঞেদানং তপশ্চৈব পাবনাণি মণীষিনাম্ ।।
গীতা-১৮/৫ শ্লোক
যজ্ঞ, দান, তপস্যা, কর্ম ত্যাজ্য নহে । এই সকল কর্মফল বিদ্বানগণের চিত্তশুদ্ধিকর । সত্য যুগে তপস্যা, দ্বাপরে যজ্ঞ এবং কলিতে একমাত্র দানই শ্রেষ্ঠ ধর্ম । গৃহীদের ধনসম্পত্তি উপার্জনে বহুবিধ পাপ সঞ্চয় হয় । দান ধর্ম দ্বারা এই সকল পাপের প্রতিকার ও পরিশোধন হইতে পারে । গৃহীদের সাংসারিক উপার্জনের কিয়দংশ ব্যয় করিতে হয় ।
সকল ধর্মেই দানের কথা বলা হইয়াছে । নচেৎ বিত্তশাঠ্য-দোষ ঘটে । অত্যধিক মণি কাঞ্চনের আসক্তি মানুষকে ঘৃণিত পশু পর্য্যায়ে অবতরণ করায় । অত্যাধিক মণি কাঞ্চনের আসক্তি ধর্মপথের প্রধান অন্তরায় । আবার অত্যাধিক দান করিয়াও ভিখারী হইতে শাস্ত্র কাহাকেও উপদেশ প্রদান করে নাই । পরিমিত ব্যয় এবং অর্থের সদ্ব্যবহারের উপদেশ শাস্ত্রে প্রদত্ত হইয়াছে । অর্থ সদ্ভাবে ব্যায়িত হইলে মনেও সত্যিকারের আনন্দ লাভ হয় ।
অনেক ক্ষেত্রে অতুল ঐশ্বর্য্যের অধিকারী হিন্দু দান-ধর্মে সম্পূর্ণ বিতশ্রদ্ধ । গুরু দেবদ্বিজে, মঠ মন্দিরে তাহাদের শ্রদ্ধা ভক্তি বিশ্বাস একটুকুও নাই । অথচ নিজেদের অপরিমিত খরচের জন্য পরোপকার ব্যয়ে তাহাদের কুন্ঠাবোধ হয় । শাস্ত্রে আছে যে নিজ প্রয়োজন ভিন্ন অতিরিক্ত সঞ্চয় রাখে বা নিয়ে আত্মসাৎ করে সে চোর । অপর দিকে দৃষ্টিপাত করিলে দেখা যায় কুটীর নিবাসী অর্থ সামর্থহীন মুসলমান এক পয়সা, দুই পয়সা ভিক্ষা করিয়া খোদার পাকা মন্দির (মস্জিদ) নির্মাণ করেন । এইরূপ ভগদ্ভক্তি, ধর্মানুষ্ঠানে মহৎ প্রেরণা বাস্তবিক প্রসংশনীয় এবং অনুকরণ যোগ্য । অর্থ ভিন্ন সংসার জীবন নির্বাহ হইতে পারে না । সংসারী জীবের অর্থের প্রয়োজন আছে । কিন্তু নিজসুখ স্বাচ্ছন্দের জন্য অযথা অপরিমিত ব্যয় শাস্ত্রবিরুদ্ধ । ধর্মজ্ঞ সৎকর্মে গৃহীর আয়ের কিয়দংশ ব্যয়িত হওয়া শাস্ত্রানুমোদিত । সুতরাং যথার্থ অর্থ সদ্ব্যবহারের জন্য মুষ্টি ভিক্ষা সংরক্ষণ, মঠাশ্রমের জন্য মাসিক চাঁদা মঠাশ্রমের ধর্ম বিষয়ে এবং আধ্যাত্মিক উন্নতিকল্পে প্রকাশিত পত্রিকা গ্রহণ, মঠাশ্রমে বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠিত উৎসবে যথাশক্তি সাহায্য দান এবং নিয়মিত ভাবে যোগদান করা প্রয়োজন । শাস্ত্রমতে মঠাশ্রমের জন্য সর্বাগ্রে মুষ্টি ভিক্ষা রাখিয়া সেই সকল গৃহী অন্নভোজন করেন তাঁহারা যজ্ঞবিশেষের অমৃত ভোজনের ফল লাভ করিয়াছেন । বৌদ্ধগণ সর্বদা তাঁহাদের খাদ্যের অগ্রভাগ বৌদ্ধ ভিক্ষুককে দান করিয়া পরে তাঁহারা নিজে ভোজন করেন । যে গৃহী গুরু ভগবানকে অন্নদান না করিয়া এবং সৎকর্মে দান না করিয়া নিজের উদর পরিপূর্ণ করে শাস্ত্রের বিচারে তাহারা রাক্ষস । ধর্ম্ম সেখানে প্রবেশের পথ পায় না । মঠাশ্রমের ত্যাগী সন্ন্যাসী ও ব্রহ্মচারীগণ গুরু ভাই ভগ্নীগণের বাড়ীতে বাড়ীতে এবং বিভিন্নস্থান ঘুরিয়া ফিরিয়া সেই সকল মুষ্টি ভিক্ষা উপকরণ ও অর্থ সংগ্রহ করে তাহাও তোমাদের গুরু সেবায় ব্যয়িত হয় । মুষ্টি ভিক্ষা এবং আর্থিক সাহায্যে ধামবাসী তোমাদের ত্যাগী সন্ন্যাসী ব্রহ্মচারীভাইগণ এবং অতিথিগণ প্রসাদ ভক্ষণে প্রতিপালিত এবং সেবিত হইতেছে । তোমাদের এইরূপ ক্ষুদ্রদানেও এইরূপ মহৎকার্য সম্পাদিত হইতেছে । ইহা সহজ কথা নহে । গৃহীদের পক্ষে মুষ্টিভিক্ষা সংরক্ষণ সহজসাধ্য ত্যাগ অথচ এই মুষ্টি ভিক্ষায় মহৎ কার্য্য অনুষ্ঠিত হইতেছে । গৃহীগণ অনায়াসে সাধ্যানুসারে ক্রমশঃ,ত্যাগধর্মে অগ্রসর হইতে পারে ।
আমি চাই তোমরা আদর্শ গৃহী হও । তোমরা মনে প্রাণে দৃঢ় হও । গরিষ্ঠ হও, সত্যাশ্রয় হও । সংসারে তোমাদের দ্বারা – পুত্র-পরিজন বিষয়-সম্পত্তি যশখ্যাতি সমস্তই থাকিবে । তোমরা অনাসক্ত ভাবে নিষ্কাম কর্ম করিয়া যাইবে । ভগবানের উদ্দেশ্যে কোন ফলাকাঙ্ক্ষা না করিয়া কার্য্য করার নামই নিষ্কাম নিঃস্বার্থ কর্ম । এই কর্মে তোমাদের বন্ধন নাই । তোমরা ভগবানের সংসারে নিযুক্ত কর্মচারী । তাঁহার রচিত বিশ্বশালায় কর্ম করিয়া যাও । জ্ঞানী সংসার করে অনাসক্তভাবে আর অজ্ঞানী সংসার করে বিষয়-বিষে-আসক্ত হইয়া । তাহাতেই কর্ম্ম বন্ধন ঘটে ।
বাসনাই বারংবার জন্মিবার কারণ । এই সংসারে যাহার যতটুকু পাওনা ততটুকু তাহাকে কড়ায় গন্ডায় পরিশোধ করিয়া দিতে হইবে । অথচ নিজ লক্ষ্যে সর্বদা সজাগ ও ধীর স্থির থাকিতে হইবে । প্রত্যেকের সমান অধিকার আছে । কাহাকেও দাবাইয়া কাহারও অধিকার ক্ষুণ্ণ করা যায় না । যেইখানে ন্যায্য অধিকার ক্ষুণ্ণ হয় সেইখানে প্রেম আসিতে পারে না এবং মনুষ্যপ্রীতি, প্রেম-ভালবাসা বিশ্বমানবতা বিশ্বধর্মের বিলুপ্তি ঘটে । অনাসক্ত আদর্শগৃহী সংসারে হাসিয়া খেলিয়া ভগবানের কার্য্য করিয়া যাইতেছে । মুক্তি তাহাদের করতলগত । আর বিষয় মদিরায় মত্ত হইয়া অজ্ঞান-সংসারী সংসার মরু ভূখন্ডে তৃষিত হরিণের মত ধাবিত হইতেছে । তাঁহাদের মুক্তি কোথায় ? যেই তিমিরে সেই তিমিরেই পড়িয়া থাকিবে ।
অগ্রে তোমরা নিজে আদর্শ হও । তোমাদের নিজ পরিবারস্থ-পরিজনকে আদর্শে গড়িয়া তোল । তোমাদের আদর্শ অবলোকন করিয়া গ্রামবাসী মহৎ আদর্শে অনুপ্রাণিত হইবে । এইভাবে দেশ-বিদেশে আদর্শের উজ্জ্বল প্রতিচ্ছবি ফুটিয়া উঠিবে । তোমাদের আত্মত্যাগে ও নিষ্কাম মহৎকার্য্যে অনুপ্রাণিত হইয়া শত শত সহস্র সহস্র ব্যক্তি ত্যাগের মহামন্ত্রে দীক্ষিত হইয়া দেশ-দেশান্তরে বিজয় অভিযানে বাহির হইবে । আদর্শকে রূপদান করাই তোমাদের কর্ম ও সাধনা । তোমরা বিশ্বজাগরণে ত্যাগের নিঃস্বার্থ মহান কর্মে এগিয়ে চল । মাভৈঃ তোমাদের সকল ভার, সকল বোঝা আমি বহন করিব ।
গুরুর উপর নির্ভর করিয়া তাঁহার নিকট শক্তি সামর্থ প্রার্থনা কর । তিনি তোমাদিগকে শক্তি সামর্থ, প্রেরণা যোগাইবেন । আমার ভক্তের ধ্বংস নাই । আমার ভক্ত যেইখানে যায় আমি তাহার পশ্চাতে গমন করি । আমার ভক্তের পশ্চাতে মুক্তি স্তুতি করিয়া যায় ।
জগতে কর্ম্মেরই প্রশস্তি । কেহ কৈফিয়ত শুনিতে চায় না । তোমরা আদর্শ নিষ্কাম কর্ম করিয়া যাও বিশ্ববাসী তোমাদের সুমহান কর্মের জন্য জয়ের মালা পরাইয়া দিবে।তোমাদের নিঃস্বার্থ কর্মে অনুপ্রাণিত হইয়া তাহারা নব নব কর্মের প্রেরণা লাভ করিবে।তোমরা জ্ঞানে যখন সমদর্শী হইবে,প্রেমে প্রীতিমান হইবে এবং কর্ম্মে সর্বভূত কল্যাণে ব্রতী হইবে তখন এই বিশ্বশান্তির অমিয় হিল্লোল বহিতে থাকিবে।
গৃহীর সাহায্য ভিন্ন কোন আশ্রমই পরিপুষ্টি লাভ করিতে পারে না।গৃহী ও সন্ন্যাসীর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় জগতে মহৎকার্য্য প্রতিষ্ঠা লাভ করিতে পারে।
তোমরা তোমাদের ত্যাগী সন্ন্যাসী ও ব্রহ্মচারী ভাইগণকে তাহাদের কার্য্যে সহায়তা ও পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান কর।তোমাদের সাহায্যে ও পৃষ্ঠপোষকতায় তাহারা শক্তি ও মহৎ কার্য্যের নব নব প্রেরণা লাভ করিবে।তাহাতে জগতের অনেক কল্যাণ সাধিত হইবে।“জগদ্বিতায় বহুজনহিতায়চ” যে কর্ম তাহা সম্পাদন করাই পৌরুষত্ব এবং সুদুর্লভ মানবজীবনের পূর্ণতা ও সার্থকতা । একই লক্ষ্য ও আদর্শের ভিতর দিয়া যে ঐক্য ও মিলন স্থাপিত হয় তাহাই স্থায়ী মিলন, প্রকৃত সম্বন্ধ । নিঃস্বার্থ প্রেমপ্রীতি ভালবাসাই মানুষের হৃদয় জয় করিতে পারে । সমবেদনা ও সহানুভূতি প্রাণে উদিত হইলে কর্মেরপ্রাণে সাড়া ও প্রেরনা জাগ্রত হয় । নিজেরাও গুরু ভাই ভগ্নিদের মধ্যে সাধনার পবিত্র শিক্ষা প্রদান কর । মহান লক্ষ্য ও আদর্শের বেদীমূলে প্রত্যেকে অভিমান, অহংকার, কর্ত্তৃত্ত্ব, প্রভুত্ব ছাড়িয়া নিঃস্বার্থ সেবার ভার লইয়া সুমহান কর্তব্যপথে অগ্রসর হও । প্রতি কর্মে, প্রতি পদক্ষেপে ভগবৎ শক্তি প্রার্থনা কর । তবেই তোমাদের লক্ষ্য সিদ্ধ হইবে । তোমাদের মধুর পবিত্র জীবন হইতে প্রকৃত প্রেরণা লাভ করিবে । তোমাদের অদম্য শক্তি ও সৎ সাহসে সত্যিকার সাহস ও শক্তি লাভ করিয়া সমস্ত বিপদাপদ উপেক্ষা করিয়া সকলে লক্ষ্যে উপনীত হইবে । সহস্র সহস্র লোক তোমাদের নিঃস্বার্থ সেবার কর্তব্য ও দ্বায়িত্ববোধ অবলোকন করিয়া সাগ্রহে তোমাদের সঙ্গে মিলিত হইয়া তোমাদের কর্মে অংশগ্রহণ করিবে । নিঃস্বার্থ প্রেমপ্রীতি ভালবাসাই মানুষের মনে প্রাণে সত্যিকারের আনন্দ জাগায়, মানুষকে সৎকর্মে উদ্বুদ্ধ করে ।
সহকর্মিগণের নিকট হইতে যদি বাস্তবিক আন্তরিক সৌহার্দ্য ও সহযোগিতা পাইতে চাও তবে তোমার গুরুদায়িত্ব, দুঃখ, দুশ্চিন্তা ও উদ্বেগের কিছু অংশ সহকর্মিগণকে বিলাইয়া দাও । তাহারা অংশগ্রহণ করুক । তবেই তাহারা তোমার সহিত সমতা রক্ষা করিয়া সমান দায়িত্ব ও কর্তব্য নিয়া কর্মক্ষেত্রে অগ্রসর হইতে পারিবে । তুমি যেই কর্মে অগ্রসর হইবে তাহারাও সানন্দে প্রয়োজনবোধে বিনা দ্বিধায়, বিনা আহ্বানে জীবনপণ করিয়া বীর সৈনিকের মত জীবনপণ করিয়া তোমার অনুসরণ করিবে ।
৪১. শ্রীগুরুতে ভক্তি স্থাপন কর – ইহা অতি মঙ্গলের কাজ । ভক্তকে বেষ্টন করিয়াই শ্রীগুরুর দৃষ্টি নিবদ্ধ ।
৪২. সত্তগুণী লোকে যাহা বলে – তাহা মিথ্যা হয় না । গুরুবাক্য অবশ্যম্ভাবী ।
৪৩. ভক্তির প্রভাবে ভক্তের সাফল্য অনিবার্য – ভক্ত সর্বজয়ী ।
৪৪. বুড়াশিবের শিবরাত্রি দর্শনের ফলে পূণ্য সঞ্চয় হয় – দিব্যদৃষ্টি গোচর হয়, দিব্যজ্ঞান লাভ হয় । দিব্যজ্ঞান লাভ না হইলে অনুভূতি হয় না ।
৪৫. শাস্ত্র পুরাণের কথা – সাধুর মঙ্গলময় দৃষ্টি যে দিকে পড়ে – সে দিকের অমঙ্গল দূর হ’য়ে যায় ।
৪৬. নাম তরোয়াল হাতে নিয়ে বসে থাক – কোন ভয় থাকবে না । শিবোহহম্ শিবোহহম্ মহামন্ত্র উচ্চারণ কর – দ্বাদশ সিংহের বল সঞ্চার হইবে – জন্ম মৃত্যু রহিত হইবে ।
৪৭. সাধু যাহা বলেন তাহাই হয় । সাধুবাক্য কদাচ মিথ্যা হয় না ।
৪৮. প্রতিনিয়ত জপের জন্য শ্বাসে শ্বাসে শিবোহহম্ এই মহামন্ত্রই ব্যবস্থা । এতে মনের বিক্ষিপ্ত অবস্থা সহজে দূর হয় । সব সময়ই উঠিতে বসিতে শ্বাসের উঠা নামার সঙ্গে সঙ্গেই জপ চলিতে থাকে ।
৪৯. ধ্যান গুরুমূর্তিতে অভেদ ভাবে করতে হ’বে । ধ্যান একবার জমে গেলে – আর মনস্থির হ’লেই সব ঠিক হ’য়ে গেল । তখন আর এই মায়ার দুনিয়া থাকে না ।
৫০. আমি কৃপা-পরবশ হয়ে জীবের চক্ষু স্পর্শ করে চক্ষুদান করি – কন্ঠ স্পর্শ করে তাহা ভেদ করি । ফলে জ্ঞানের বিকাশ হয় – আমায় চিনতে পারে । আমায় ধরতে বুঝতে ইন্দ্রিয় নিগ্রহ করতে হয়না কেবল মদর্থে কর্ম করে গেলেই – (মৎদর্শন-মৎকথাশ্রবণ-মৎকীর্তন) —মন আপনিই সংযত হয় । স্বল্পায়ু কলির জীবের জন্য এই সরল পথ – জীবের সর্বভার বিমোচনের জন্য এসেছি । ভক্তি-বিশ্বাস করে মৎদর্শন বুদ্ধিতে এই সুগম পথে অগ্রসর হও – বিষয়বুদ্ধি দূর হয়ে পরমকল্যাণলাভ হবে – কর্মফলে পাবে না । পদ্ম-পত্রস্থ জলের ন্যায় পাপ পরিশূণ্য দেহে বিচরণ করবে ।
৫১. শিবোহহম্ শব্দের অর্থ – জ্ঞান । আমি সেই ব্রজানন্দরূপ শিব, এই ভাবে জপ ধ্যান না করে এক কথায় – “শিবোহহম্” জপ করা । অর্থ একই, কোন বিভিন্ন না । শিবঃ+অহম্ = শিবোহহম্ সন্ধি শব্দ । শিব অর্থ পরব্রহ্ম-পরমাত্না গুরু, আর অহম্ অর্থ আমি ।
এই আমি দুই প্রকার – বিদ্যা আমি আর অবিদ্যা আমি । বদ্ধজীবে নিজেকে অবিদ্যা আমি মনে করি । আর মুক্তজীবে নিজেকে বিদ্যা আমি মনে করে । নিজেকে বিদ্যা আমি মনে কর । এই বিদ্যা আমিই আত্মপর – নিজ আত্মাকে লক্ষ্য কর । দেহ ইন্দ্রিয়াদি মন বুদ্ধিতে লক্ষ্য করে না । ‘অবিদ্যা আমি’ দেহ ইন্দ্রিয়াদি মন বুদ্ধিকে লক্ষ্য করে । তাই বদ্ধজীব পুনঃ পুনঃ জন্ম-মৃত্যুরূপ-সংসার দুঃখ ভোগ করে । আর মুক্তজীব ইহার কিছুই ভোগ করে না । দেহে থাকিয়াও দেহে নাই – নির্লিপ্ত । তোমার ‘আমিকে” গুরুরূপী – ‘শিবাত্মাকে’ নিজ আত্মা আমি ধর । এই অভেদ উপাসনা । এইভাবে অভেদ উপাসনা করে – ‘রূপজাল ছিন্ন করে – মায়ার গন্ডি ভেঙ্গে সিংহের মত বাহির হ’য়ে পড় । জ্ঞান-ভক্তি না হ’লে –বিবেক বৈরাগ্য না হলে – ত্যাগী না হলে হয় না । মাছির মত একবার মধুর ভাণ্ডে – আর একবার বিষ্ঠার ভাণ্ডে বসে লাভ নাই । ভোগীর মত জপ তপও করি আবার সংসারও করি ।
৫২. যজ্ঞাহুতি করিবার সময় প্রথমে আচমন অঙ্গন্যাস করিয়া নিজের অভীষ্পিত বর প্রার্থনা করিবে, মনে মনে করজোর করিয়া । যেমন হে অন্তর্য্যামী ন জ্যোতিস্বরূপ আপনি অমৃতস্বরূপ, মঙ্গলময় ও শান্তিময় । আমরা বিষয়ভোগে আসক্ত হইয়া আপনাকে ভুলিয়া থাকি । কিন্তু আপনি নিজগুণে আমাদিগকে ভুলিবেন না । আমাদের সকল অপরাধ ক্ষমা করিয়া শান্তিবিধানপূর্বক পরমানন্দে রাখুন । স্থুল শরীরে বা মনে কোন প্রকার দুঃখ কষ্ট না হউক । হে মঙ্গলময়, মঙ্গল করুন । আপনাকে পূর্ণরূপে বারংবার প্রণাম করি । এইভাব সরল ও নিজ ভাষায় প্রার্থনা করিবে ।তারপর শৈবাগ্নি মঙ্গলকারী অগ্নি এই নামকরণ করিয়া পূর্বাপর লিখিত মন্ত্রে তিনটি বা পাঁচটি আহুতি দিয়া নির্বাণ করিবে । শান্তিঃর্ভব শান্তিঃর্ভব শান্তিঃর্ভব বলিয়া জল ছিটাইয়া দিবে, ইহাতে কোন ভয় বা সংশয় নাই । সব রকমে মঙ্গলই আছে ।
৫৩. ব্রজানন্দের চরণে যে মাথা নোয়াইয়াছে – তাহার মাথায় আঘাত দিবার এ – সংসারে কেহ জন্মে নাই । সে মাথায় আঘাত দিয়াছে, কি নিজের মাথায় আঘাত খাইয়াছে ।
৫৪. ভক্ত আমার প্রাণ । ভক্ত কভু আমার চরণ ছাড়া হয় না । আর আমিও তাদের ছাড়া হই না । গুরুধাম তোমাদের হিতকল্পে আবির্ভূত – ভক্ত ভগবানের মিলন-মন্দির ।
৫৫. দেশে শান্তি নাই । উল্টা বিচার করলি রাম । কোথায় স্বাধীনতা ? এ যে পরাধীনতার একশেষ । মালিককে ভুলিয়া গিয়াছে – তাই লোকের এত দুর্গতি ।
৫৬. তোমার গোপাল – এই ভাব ঠিক থাকিলেই, তোমার সব হইয়া গেল । আর কোন কিছুরই দরকার নাই তোমার । পুতনার মোক্ষলাভের কথা মনে কর । যার অপার-করুণায় বিষের পরিবর্ত্তে অমৃত পাইল । পুতনার রাক্ষসের জন্ম ঘুচিয়া গেল । গোবিন্দের আনন্দময় শরীর পাইয়া তাহার নিজধামে স্থানলাভ হইল ।
৫৭. তোমাদের হিতচেষ্টা আমার জীবনব্রত । তোমরা আমাকে ভালবাসিয়া স্নেহ করিয়া গোপালভাব লইয়া ভাল ভাল জিনিষ যখনকার যা সব কিছু সেবা দিচ্ছ । তোমাদের ভাগ্যর ও সীমাই আমি পাইনা । কোন পরম শান্তির লোকে ভগবানের কাছে অবাধে যাইবে । ওঁ শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ ।
৫৮. ভক্তের অভীষ্ট সিদ্ধি কল্পে ভগবান সততই কল্যাণ কামনা করিয়া থাকেন । সাধুর ইচ্ছা অবশ্যই পূর্ণ হয় । কারণ এই ইচ্ছা যে ইচ্ছাময়ের ইচ্ছা । এই ইচ্ছার গতি ফিরায় কে ?
৫৯. শ্রীগুরু দেহতরীর কাণ্ডারী । জ্ঞান-মাঝি শক্ত করিয়া হাল ধরিয়া আছেন । কি করে তরী ডুববে ? হোক না সংসার সাগর । আসুক না তুফান ভারি । জ্ঞান-মাঝির নৌকা জলে ভাসে, দোলে ডোবে না । সংসারের মায়াজাল, হাসি-কান্নার তুফানে এ জড়দেহ দোলাইবে তাতে ক্ষতি কি ? সেই সচ্চিদানন্দ তুমি – তোমার ধ্বংস কোথায় ? তুমি সৎ – তুমি চিরকাল থাকবে । দেহ অসৎ তাই ক্ষণস্থায়ী । সৎ যাহা তাহা গ্রহণ কর – অসৎকে বর্জন কর ।তুমি সৎ – তোমার শান্তি শান্তি অশান্তি কি ? এই মরদেহেরই শাস্তি জরা-ব্যাধি ।
৬০. শান্তি-অশান্তি-জরা-ব্যাধি এই সব চিন্তা অনুক্ষণ কর বলেই, ক্ষণস্থায়ী বস্তুতে আসক্তি থাকিলেই নানা প্রাকার ভয় উদ্বেগ হইয়া থাকে । সৎ কার্যে, সৎ বস্তুতে আসক্তি রাখ – তাহাতে ডর ভয় নাই । মনে মনে বলবে আমি সৎ কার্য করিয়াছি – আমার আবার ডর ভয় কি ? সচ্চিদানন্দের ধ্যান ধারণা ছাড়া শান্তি কোথায় ? সচ্চিদানন্দের পূজা-অর্চ্চনাই জীবনের মুখ্য উদ্দেশ্য । তা হইলে কোন অবস্থাতেই দুঃখ কষ্ট হইবে না । সংসারে থাকিয়া নির্লিপ্তভাবে গুরু সচ্চিদানন্দকে পাইতে হইবে । তবেই জীবন চিরসুখের । সংসারের হাসি-কান্নায় ক্লেশ পাইতে হইবে না ।
৬১. ‘গুরু’ পাঞ্জাব মেইল । সেই মেইলে নাম – টিকেট কাটাইয়া উঠিয়াছ । এখন তাস-পাশা খেলে যাও বা ঘুমাইয়া বসিয়াই যাও পাঞ্জাব পৌঁছিতে হইবেই । এই হল গিয়ে সৎ গুরুর ব্যাপার । তবে আর চিন্তা কি ? আনন্দম্, আনন্দম্, আনন্দম্ । আমিইত সব করে নিব । ওঁ শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ ।
৬২. রাখে কৃষ্ণ মারে কে ? কে বুঝিবে তোমার লীলা – জলেতে ভাসাও শীলা – কর ঘোড়া – গাধা পিটায়ে । কাঠ-বিড়ালী সাগর বাধে ডুবে অতল জলাশয়ে ! বিধাতার বিচিত্র লীলা ।
৬৩. জয় ব্রজানন্দ হরে । নাম তরোয়াল হাতে নিয়ে বসে থাক । বিপদ-আপদ কিছুই থাকবে না ।
৬৪. পুতনা কৃষ্ণের ধাইমা হইয়া মোক্ষপ্রাপ্ত হইল । আমার মাঈরা মায়ার বন্ধন হইতে মুক্তিলাভ করিবে । ভরসা রাখ, নির্ভয় নিশ্চিন্ত হও ।
৬৫. আমার বাক্য অমোঘ । একবার যে বাক বাহির হয় – তা আর ফিরে না । সাধুকাবাত – হাতীকা দাঁত । হাতীর দাঁত বাহির হইলে আর ফিরে না । তেমনি সাধুর জীব-কল্যাণ বাক্য অমোঘ । আমার শতং জীব এই বাক্য অমোঘ । আমার সর্বরোগারোগ্যম্ আশীর্বাদ অমোঘ ।
৬৬. অসুখ-বিসুখ কি করিতে পারে ? দেহ ঘরের খুটি শক্ত করিয়া লও । ঝড় তুফানে কিছু করিতে পারিবে না । নাম তরোয়াল হাতে রাখ ।
৬৭. ভগবানে ও তাঁর অবতারে বিশ্বাস মহাভাগ্য শুদ্ধ-বুদ্ধ-মুক্ত । উদ্ধার অবশ্যম্ভাবী ।
৬৮. আমার ভক্ত আমার সুশীতল শান্তিময় কোলে স্থানলাভ করে । আমার সত্যবাণী ।
৬৯. কৃপার অধিকারী না হইলে দর্শনলাভ হয় না । কৃপা না ইহলে আমার দর্শন দিবার শক্তি নাই ।
৭০. প্রণব চিন্তন বা ধ্যান গুরুমূর্ত্তির পৃথক বোধ করিও না । অর্থাৎ আমি এক – প্রণবাদি গুরুমূর্ত্তি আর এইরূপ দ্বৈতভাব নিয়া উপাসনা করিও না । আমি এবং আমার উপাস্য অভেদ – এই ভাব ধারণ করিয়া লও । তুমি এবং তোমার উপাস্য এক না হলে – উপাস্যে মিশিয়া একাকার হইবে কেমনে ? নানা নাম আর রূপ সকল তোমাতে কল্পিত । নাম রূপ উপাধি সকল পরিত্যাগ করিয়া – সারবস্তু তোমার আত্মা পরমাত্মা স্বরূপ জানিয়া ধ্যান কর – তাহার নানা নাম নানারূপ শব্দ লইয়া বৃথা অশান্তি ভোগ করিওনা । গুরুকে অকার জানিবে অর্থাৎ অশরীরী, কায়া-রহিত বোধে ভজন করিও । আমার ভক্তের আমার মূর্ত্তির জন্য ভাবনা কি ?
৭১. মন খোলা – হাত খোলা – আমার প্রকৃত রূপ ।
৭২. সার্বভৌম দেবালয় – জগৎ জোড়া । ব্রজানন্দ নব যুগের নব অবতার । ভক্ত সার্বভৌম ধর্ম প্রতিষ্ঠার ভাব পায় । সর্বধর্ম সমন্বয়ে কলির যুগধর্ম ।
৭৩. গুরু যদি সহায় থাকে – প্রসন্ন হয় – হাজার মাইল দূর থেকেই শুভ করতে পারে ।
৭৪. আমি কুয়া খুদিনা – আমার ভক্ত পাতালে যাবে না । আমি মঠ তুলি – আমার ভক্ত ব্রহ্মলোকে যাবে ।
৭৫. ভক্তের শক্তি না পেলে – ভগবান শক্তি কোথায় পাবে ? ভক্তের শক্তিতেই ভগবান বলীয়ান । ভক্তই ভগবানকে গড়ে তোলে ।
৭৬. ব্রজানন্দ সর্বত্রই বিদ্যামান । হাম্ যো তুম সো – সর্বত্রই রাম । যাহা যাহা আঁখি কোরে তাহা তাহা কৃষ্ণ স্ফুরে । যে দিকেই আঁখি যায় – সে দিকেই কৃষ্ণ ।
৭৭. গুরু দেন বৈরাগ্য-মন ভোগের দিকে । তার হলনা । গুরু দেন ছেড়া কাঁথা আর রুটি – মন ভোগের দিকে । তার হল না । কবে মোরে নিতাইচাঁদ করুণা করিবে – সংসার বাসনা মোর কবে তুচ্ছ হবে । এই ভাব ধর ।
৭৮. গুরু ভিন্ন আমার গতি নাই । তাই গুরুর চরণে সব সমর্পণ করে বসে আছি । একান্ত শরণ ।
৭৯. তস্মিন্ তুষ্টে জগৎ তুষ্ট । তুমি সুখময় তুমি সুখে থাক । এইই ভক্তের কথা ।
৮০. ভক্তি নিষ্ঠা চাই । সাত খানে কুয়া খুদলে কি হবে ? সাত খানে কুয়া খুদ্লে কি আর জল পাওয়া যায় ? বিশ্বাসে ফল পায় । ছুটাছুটি করলে কি হবে ? ভক্তি আনতে হবে – ভগবৎ বুদ্ধি আনতে হবে । পুরোপুরি বিশ্বাস চাই ।
৮১. যিনি ব্যাধি দিয়েছেন – তিনিই ব্যাধি হরণ করতে পারেন । ডাক্তার কবিরাজ কি করবে । ভাব নিয়ে ভাবতে হবে – তবে ত ফল হবে । ভাব ভক্তি চাই ।
৮২. চাহনির শেষ কর । চাহনি শেষ হলেই পাইয়া যাইবা । চাহনির শেষ কর ।
৮৩.
আর্শীব্বাণী
গুরুধাম
বাঙ্গুর এভিনিউ,দমদম ।
নানা বাধাবিঘ্নের মধ্যে সুদীর্ঘ পথ অতিক্রম করে বিগত ১৯শে জুন, ১৯৭১ সন, শনিবার ঢাকা থেকে কলিকাতায় পৌঁছেছি । অনেক দিনের ব্যবধানের পর ভক্তশিষ্যগণের মধ্যে এখানে ফিরে আসতে পেরে ভাল লাগছে ।
চারিদিকে শুনি আনন্দের জয়ধ্বনি । তবু কেন মনে আমার বিষাদের সুর বাজে ? পূর্ববঙ্গে সাম্প্রতিক বিপর্যয়ে ঢাকাস্থিত বুড়াশিবধাম সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত এবং শ্রীধামে অবস্থানরত পাঁচজন সাধু প্রাণ হারিয়েছেন । আজীবন ত্যাগ ও সাধনায় গড়া আমার সাধের স্বর্গপুরী বুড়াশিবধাম ও তার অধীশ্বর বুড়াশিব বর্ত্তমান বৈপরীত্যে বিধ্বস্ত ।
এখন আমি তোমাদের দুয়ারে একজন শরণার্থী । তোমাদের সেবা পূজা পাওয়ার জন্য আমার মন সর্বদা অধীর হয়ে আছে । তোমাদের মনে আমি যেন একটু স্থান পাই ।
আর্শীবাদের জন্য লেখনির প্রয়োজন হয় না । আর্শীবাদ আমার অন্তর হতে অবিরাম দশ দিকে অবিশ্রান্ত গতিতে ছুটে যাচ্ছে । যে কাজ করবে, সে-ই আর্শীবাদ অনুভব করতে পারবে এবং সেই আশীর্বাদকে সফল করে নিজের জীবনে প্রস্ফূটিত করতে সমর্থ হবে ।
শুভ গুরু পূর্ণিমা তিথিতে গুরুধামের ধর্ম্মীয় মুখপত্র “গুরুধাম” পঞ্চম সংখ্যা প্রকাশিত হচ্ছে ভক্তশিষ্যগণের বিভিন্ন রচনা নিয়ে । আমি আর্শীবাদ করি ভক্তশিষ্যগণের এই প্রচেষ্টা সফল হউক এবং “গুরুধাম” দীর্ঘজীবী হয়ে ভক্তশিষ্যগণকে ব্রজানন্দধর্ম সাধনায় উদ্বুদ্ধ করুক ।
ওঁ শান্তি, ওঁ শান্তি, ওঁ শান্তি । জয় ব্রজানন্দ হরে ।
গুরুপূর্ণিমা
১৩৭৮ সন
আর্শীবাদক
শ্রীশ্রী স্বামী ব্রজানন্দ সরস্বতী
৮৪. প্রাতঃকালে শিবং দৃষ্টা নিশিপাপং ন বিদ্যতে । মধ্যাহ্নে আজন্মকৃতং পাপং সায়াহ্নে সপ্ত জন্মনয় ।
৮৫. প্রতিমায় শীলা বুদ্ধি – মন্ত্রেতে অক্ষর বোধ – গুরুতে মানুষ বুদ্ধি । নরকে যাবার পথ ।
৮৬. সৎ কর্মের প্রভাবে সঞ্চিত প্রারব্ধের অল্পাধিক লাঘব হয় । যেমন দশ বৎসরের কয়েদী দশ বৎসর কারাবাসের পূর্বেও মুক্তি পায় । ক্রিয়মান প্রারব্ধের লাঘব হয় না । যেমন ধনুক হইতে তীর একবার ছাড়িয়া ফেরান যায় না ।
৮৭. গুরু সহায় থাকিলে – আগুনে পুড়বে না – জলে ডুববে না – ছাই মুঠ করলে সোনা হবে ।
৮৮. নাম নৌকা – নদী পার করে – ভবসাগর পার করে ।
৮৯. শ্রীদেহের কুশল জিজ্ঞাসার উত্তরে – ক্ষণে রুষ্ট ক্ষণে তুষ্ট – রুষ্ট তুষ্ট ক্ষণৈঃ ক্ষণৈ ।
৯০. কৃপালাভ করতে হলে – নাম করতে হয় – জয়গুরু-জয়গুরু ।আল্লা হরি করলে হবে না । হয় আল্লা না হয় হরি – এক আশ্রয়ে থাক ।
৯১. গোচনায় নারায়ণ শুদ্ধ হয় । দানপুণ্যে মনের ময়লা দূর হয় – দেহের পাপ ক্ষয় হয় ।
৯২. সাধুর দশজনের সঙ্গে কারবার সকলের সঙ্গে এক রকম ব্যবহার । তা না হলে কেমন সাধু ?
৯৩. মেয়েদের কাজ সংসার দেখা – চাকুরী করা ভাল না – প্রজনন শক্তি নাশ হয় । জনসংখ্যা বৃদ্ধি কোন সমস্যাই না ।
৯৪. পাশ্চাত্য আদর্শে স্ত্রী-শিক্ষার প্রসার-বিষয়াভিমুখী বুদ্ধিদ্বারা পরিচালিত – অর্থোপার্জনে লক্ষ্য । ফলে সংসারের কাজে উদাসীন সংসারে বিশৃংখলা ।
৯৫. গুরুকে সব সমর্পণ করতে হয় – শরণাগত হইতে হয় – গুরুর সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে হয় । তবেই গুরু রক্ষা করেন । স্ত্রীর যেমন স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে হয় – তবেই স্বামী ভালবাসে । সংসার দিয়াই ভগবৎ রাজ্যের পরিচয় পাওয়া যায় ।
৯৬. ভজ ভজ ভজ ভাই শ্রীগুরুর চরণ – মদ মোহ ছাড়ি লও শ্রীগুরুর শরণ । একান্তশরণ – একান্ত শরণ লও । সব সহজ হয়ে যাবে । শ্রীগুরুর চরণে শরণ লও সহজ হয়ে যাবে ।
৯৭. কর্তা সাজবে না – কর্তা হওয়া বড় কঠিন – সোজা না । কর্তার সব দিকে দৃষ্টি রাখতে হয় – পারবেলা কাণ্ডারি কর তাঁহারে তোমার সব সহজ হয়ে যাবে ।
৯৮. ভগবানকে কি করে জানবে ? ভগবানকে জানতে হলে – চেষ্টা করতে হয় – সাধনা করতে হয় । ‘সর্ব ধর্মাণং পরিত্যজ্য মামেকং শরণং ব্রজ’ এর মর্ম উপলব্ধি করতেই সারা জীবন যায় কেটে । সারা জীবন চিন্তা করনা কি খাব – কি খাব ? ভগবানকে জানবে কি করে ?
৯৯. গুরুদত্ত কন্ঠী বিপদ আপদ থেকে রক্ষা করে । ভক্তি বিশ্বাস নিয়ে ধারণ করবে । কন্ঠী বডি গার্ড ।
১০০. সংসার সমুদ্র – কেবলই তরঙ্গ – কেবলই তরঙ্গ । সারা জীবন খাটনী খেটে – একটার পর একটা আছেই আছে । ভূতের কাছে ছুটা ছুটী । গুটান যায় না । ছেলে নাই – ঠাকুর দেবতার কাছে মানত করে । ছেলে হইলে চিন্তা ছেলে বাঁচবেত ? ঠাকুর দেবতার কাছে মানত করে । ছেলে বড় হইল – চিন্তা ছেলে মানুষ হবেত ? পর পর ছেলে পরীক্ষা পাশ করবেত – ভাল চাকরী হবেত – মনের মত পুত্রবধু হবে কি ? একের পর আর শেষ নাই । ভূতের সাথে দৌড়া দৌড়ি । সংসার কেউ গুটাতে পারে না । সংসার সমুদ্র – দশ কলসি ঢাল আর তোল – সমান ।
১০১. দিন নাই ক্ষণ নাই । যার ঘরে গুরু বিরাজ করেন তার সকল তিথিই সকল বারই শুভ । যার ঘরে গুরু বিরাজ করেন না – তার সকল তিথিই সকল অশুভ ।
১০২. বিশ্বাসে সব হয় । আমি তুলসী চন্দন শালগ্রাম শীলা চরণে লই – আমার পুরোপুরি বিশ্বাস – আমি সেই । যার এই বিশ্বাস নাই সে ভষ্ম হয়ে যাবে । নজরের ভয়ে সবাই নিভৃতে সেবা গ্রহণ করে । আমি হাজার হাজার চোখের সামনে বসে সেবা লই । আমার একটুও নজরের ভয় নাই । আমার পুরাপুরি বিশ্বাস আমি সেই ।
১০৩. লাভ লোকসান আসলে সমান । ভাঙ্গা গড়া সংসারের নিয়ম । গুরু সহায় থাকলে – আর একখানা দিয়ে দেয় । একখানা দিয়ে গেলে – গুরু আর একখানা দিয়ে দেয় ।
১০৪. আমাকে যে চায় – আমাকে সে পায় । বিশ্বাসে মিলায় কৃষ্ণ । প্রহ্লাদের বিশ্বাস আমার হরি থামের ভিতর । ভক্ত হনুমান জয় রাম বলে সাগর পার হয়ে গেল । মারিচ রাম রাম করতে করতে রাম হয়ে গেল । ভক্তি বিশ্বাসে সব হয় ।
১০৫. তুমি শুধু আমার চিন্তা কর । আমি সকলের চিন্তা করি । আমি স্থানান্তরে গিয়েও – সব সময় ভাবি কে কেমন আছে ।
১০৬. ব্রজানন্দ বায়ু । তার গতি কে রোধ করে ? স্মরণ মাত্র আমি তোমার অন্তরে বিরাজ করি । ঝড় তুফানে আমার গতিরোধ করতে পারবে না ।
আশীর্ব্বাণী
১০৭.
যুদ্ধের দামামা স্তব্ধ হয়েছে । চারিদিকে শুধু শান্তির বাণী । রণক্লান্ত মানুষ সুখ নীড়ের আশায় পথ চেয়ে আছে । নতুন দিন নতুন জীবন ! অনেক দিনের স্বপ্ন সফল হতে চলেছে ।
এই আনন্দের দিনে মন থেকে দুর্বলতা দূর কর । মনে সাহস সঞ্চার কর । তোমার সকল ভার আমার চরণে অর্পণ কর । তুমি আমিত্ববোধ মুক্ত হও । শুভ আবির্ভাব দিবসে ভক্তি – বিনম্র চিত্তে বল – “জয় ব্রজানন্দ হরে ।”
নির্ভরশীলতাই প্রকৃত ভক্তের লক্ষণ । সরল ভক্তি – বিশ্বাস নিয়ে তোমরা সকলে আমার একান্ত স্মরণ লও । সব সহজ হয়ে যাবে ।
ভক্ত আমার বড় প্রিয় । ভক্ত আমার প্রাণের প্রাণ । ভক্তের টান শক্ত টান । ভক্তের কারণে আসি ভুবনে, ভক্তজনে করি পরিত্রাণ । মানুষের কল্যাণের জন্যই আমার মর্ত্ত্যে আবির্ভাব ।
শুভ মাঘী পূর্ণিমাতিথিতে গুরুধামের ধর্ম্মীয় মুখপত্র “গুরুধাম পত্রিকা” – আবির্ভাব-বার্ষিকী সংখ্যা ভক্ত-শিষ্যগণ বিভিন্ন রচনা নিয়ে প্রকাশিত হল । আমার আশীর্বাদে “গুরুধাম পত্রিকা” ভারতীয় ধর্ম সাধনার জগতে নতুন আলোর দিশারী হউক এবং ভক্তশিষ্যগণকে ব্রজানন্দ ধর্ম অনুশীলনে উদ্বুদ্ধ করুক ।
ওঁ শান্তিঃ, ওঁ শান্তিঃ, ওঁ শান্তিঃ । জয় ব্রজানন্দ হরে ।
মাঘী পূর্ণিমা,
১৩৮৪ সন
আশীর্বাদক
শ্রীশ্রী ব্রজানন্দ সরস্বতী
১০৮. ভক্তি মহারাণী । অসম্ভব সম্ভব ঘটায় । অঘটন ঘটায় । ভক্তি রাখ । বিশ্বাস রাখ ।
১০৯. গুরুময় ভূমণ্ডল । গুরুর ইচ্ছা ছাড়া কিছু হইতে পারে না । গাছের পাতা পড়ে না গুরুর ইচ্ছা ছাড়া ।
১১০. আনন্দময় জগৎ । আনন্দম্ ! আনন্দম্ ! সৃষ্টি স্থিতি লয় আনন্দময় । কেবলই আনন্দ । সুখ দুঃখ বলে কিছু নাই । সুখ দুঃখ মানুষের কল্পনা । কল্পনায় সুখ দুঃখ ভোগ করে মানুষ ।
১১১. নারায়ণ, শিব দুই না । যেই নারায়ণ সেই শিব । নারায়ণও বড় শিব ও বড় । নারায়ণ, শিব ভিন্ন মনে করোনা ।
১১২. লভিতে ফণির মণি থাকে যদি মন, তবে পারিবে কি সহিতে দংশন ? ভেবে দেখ । সংসার পেতেছ ধবংসের সামিল হয়োনা । অজ্ঞ নাবিকের মত সংসার করতে নেই । ভবসিন্ধু-সংসার ভবসিন্ধু । ধীর স্থির নয় । অজ্ঞ নাবিকের নৌকা কুলে পৌছায় না । আবর্ত্ত-সঙ্কুল । ঘুর্ণিপাক আছে । তরঙ্গ পাক দিয়ে উঠছে । বুঝে সুজে চল – হুঁসিয়ার নাবিকের মত । হুঁসিয়ার নাবিকের দরকার । যেমন তেমন নাবিক না – হুঁসিয়ার নাবিকের দরকার । সংসার বুঝে সুজে করতে হয় ।
১১৩. সাপের দন্তে বিষ । সাপের সঙ্গে খেলা করতে হলে – বিষ-দন্তটা উৎপাটন করে ফেলতে হবে । তার পরে সাপ নিয়ে খেলা করতে হবে । আগে বিষদন্ত ফেল । সংসারেরও বিষ – দাঁত আছে । আগে সেই বিষ-দাঁতটী ভেঙ্গে সংসার কর – মজা পাবে ।
১১৪. ভগবানের কাজ যে করতে পারে – সেই ভাগ্যবান । দশজনকে যে পালন করে – সেই ভগবান ।
১১৫. সাধুর চরিত্র – মুদ্রা বোঝে কে ? গুরু নানক বলেন – যিন্ ঢোঁরে তিন্ পায় । যে খোজে সেই পায় । অপরে নয় ।
১১৬. বৈকুন্ঠ – যেখানে কোন কুন্ঠা নেই । ভগবানের উদয় । দীন-দুঃখিওকা হিতৈষী-ভগবান ।
১১৭. নিয়ম, ন্যায়, নীতি পাপে নাশ হয় । পাপে সমস্ত দুঃখ আনে । দেহের পাপ দূর হয় দরশণ – পরশণে ।
১১৮. আমিকভুআমারনা । সবকিছুইতুমি । দ্রৌপদীযতক্ষণবুঝতেনাপারছিলেন, কাপড়ধরেটানাটানিকরছিলেন । নাপেরেকাপড়টানাটানিছেড়েদিলেন । বুঝতেপারলেন, “আমিকিছুনা, আমিকোনশক্তিনা”। যখনকাপড়টানাটানিছেড়েশরণদিলেনতখনরক্ষাপেলেন ।
১১৯. নামেরআশ্রয়নিলে – কর্মভোগসহজেকাটে । নাহলেকর্মভোগকাটতেচায়না ।
১২০. ওঁনমোশিবায় ! ওঁনমোশিবায় ! ওঁনমোশিবায় ! শিবায়শান্তায়কারণত্রয়হেতবেনিবেদয়ামিচাত্মাণংত্বংগতিপরমেশ্বরং ।
১২১. সবাইকে সমান চক্ষে দেখ । প্রত্যেকের প্রতি সমান ভাব রাখ । ফুল-জল ছিটান – এগুলো কিছুনা দ্বন্দ মিটাও । সবাইকে সমান চক্ষে দেখ । এই ধর্ম ।
১২২. সংসার আনন্দময় । ভগবান কি না দিয়েছেন ? তবু ভাইয়ে ভাইয়ে দ্বন্দ । পিতা-পুত্রের মিল নেই ভাইয়ে ভাইয়ে মিল নেই । স্বামী-স্ত্রীর মিল নেই ।
১২৩. গুরুকে সাথে করে সংসার করতে হবে । সংসারে এসেছ মুক্ত হতে, বাধা পড়তে নয় । মুক্তিক্ষেত্র । দেবতারা ইচ্ছা করেন সংসারে আসতে । মুক্তিলাভের অধিকারী হতে সংসারে আসতে হয় । মনুষ্য-যোনি মুক্তির পথ, মুক্তিক্ষেত্র । বাধাপ্রাপ্ত হতে না হয়, এ-রকম করে সংসার করবে । সংসারে এসেছ মুক্তি-লাভের জন্য । ভগবানকে সাথে করে সংসার করবে । গুরুকে সাথে করে সংসার করবে । সেটা সংসার নয় । মুক্তিরই কারণ ।
১২৪. আনন্দময়ী মা-ভুখায়িত অবস্থা-অবচেতন ভাব । কয়েকটি নিষ্কাম ভক্ত তাঁকে প্রতিষ্ঠা করে । চতুর্দ্দিক তাঁর প্রচার হয় । শ্রীগৌরাঙ্গ মহাপ্রভুও ভুখায়িত অবস্থা ছিল । অবচেতন ভাব ।
১২৫. গুরুর অপার মহিমা । বহ্নিকে পর্বত, পর্বতকে বহ্নি বানাতে পারে ।
১২৬. সংসার কর্মবহুল – ঘটনা প্রবাহ জটিল । এই সংসারের রূপ ।
১২৭. অধর্মে দুঃখ – ধর্মে সুখ ।অধর্ম না করলে দুঃখ আসতে পারে না । দুঃখ হবে কেন ? দুঃখহারী সন্তানের দুঃখ দূর করেন । এই জন্যই পিতা । অধর্ম ছেড়ে দাও । দুঃখ আপনিই পালাবে ।
১২৮. অহং থাকতে প্রভুর দর্শন হয় না । অহং নাশ কর – প্রভুর দর্শন পাবে ।
১২৯. ভবসিন্ধু উত্তাল তরঙ্গময় – আবর্ত্ত-সঙ্কুল । পাক দিয়ে দিয়ে তরঙ্গ ওঠে । স্থির-ধীর নয় ।
১৩০. নামের নেশা নামেই হয় – নেশাতে হয় না । নাম যেমন – তেমন বস্তু না ।
১৩১. জীবভাব নিয়ে ধর্মস্থানে এলেও শান্তি পাবে না ।
১৩২. গুরুশে কপট্ – সাদসে চুরি । গুরুর সঙ্গে কপটতা – সাধুর দেবধন চুরি ।
১৩৩. চিকিৎসা যে যা করুক – ভগবান সাথে না থাকলে কিছু হয় না । চিকিৎসা ভগবানকে সাথে রেখে করতে হয়; তবে চিকিৎসা ফলবর্তী হয় ।
১৩৪. একমাত্র তাঁর ইচ্ছায় জগৎ পরিচালিত । জগৎ তাঁর ইচ্ছায় পরিচালিত হয় । তিনিই একমাত্র জগতের স্রষ্টা-নিয়ন্তা-তাঁতেই লয়প্রাপ্ত হয় ।
১৩৫. আসা অর্থ জন্ম সার্থক করা । নইলেত আসা বৃথা । বিবাহ ন কার্য্যায় । বিবাহ ধর্মায় । দুই এ মিলে ধর্ম করা । বিবাহের উদ্দেশ্য ধর্ম অর্জনের জন্য । দুই এ মিলে ধর্ম অর্জন । ন কার্য্যায় ।
১৩৬. ন চ দৈবাৎ পরম্ বলম্ ।
১৩৭. ভবসিন্ধু – সংসার ভবসিন্ধু । আবর্ত্তময়-উত্তাল-তরঙ্গ-ময় । চরণ-ছাড়া হইও না ।
১৩৮. দাহ্যমান ইতি দেহ । সব সময় জ্বলছে – কেবল জ্বলছে ।
১৩৯. কাঠের নৌকা ডুবে যায় । ধর্মের নৌকা ডোবে না ।
১৪০. সংসার সাগরের খরস্রোতে গা ভাসাইও না । দেহ-তরী ভাসাইয়া দিও না ।
১৪১. প্রেম আর সেবা এই দুই-ই বস্তু । আর সব অবস্তু ।
১৪২. নাম অমূল্য জেনো । ভবসিন্ধু পারের জন্য । ভবসিন্ধু উত্তাল-তরঙ্গময়-আবর্ত্ত-সাঙ্কুল । যেমন তেমন তরঙ্গ না । ঘুরেফিরে বেড়ায় । উত্তাল-তরঙ্গ । আবর্ত্ত-সাঙ্কুল । নাম-অমূল্য ।
১৪৩. পুট্লি নিয়ে যেতে পারে না । সারা জীবন পুট্লি বানাবা-নিয়ে যেতে পারবা না । ফালাইয়া যাইতে হইব । পুট্লি বাইন্দ না । আমিও পুট্লি বান্দছিলাম । এই দেখ । একশত টাকার, পাঁচশত টাকার নোট ২৮,০০০ টাকা । এই দেখ পুট্লির দশা । এই দেখ পুট্লির দশা-যা নিয়ে যেতে পারব না । যা পার ভগবানের সেবায় লাগাইবা ।
১৪৪. গুরু যদি সঙ্গের সাথী হয় – যাওয়া স্থায়ী হয় । যাওয়ার মত যাওয়া । আর আসতে হয় না । পুট্লী থাক্লে – যাতায়াত কেবল যাতায়াত । আর ছেচা-গুতাত দেখ্ছ । পুনরপি জনমম্ পুনরপি মরণম । হে মুরারি ত্রাণ কর । বার বার আসা কি ভয়ঙ্কর ব্যাপার !
১৪৫. যে কোন কাজ গুরুর । গুরুর চরণ অমূল্যধন । খরিদদার নাই । লক্ষ টাকা যার তার কাম না । বড় বাপের বেটীর কাম । অমূল্য ধন – গুরুর চরণ । এক লক্ষ টাকা চাই ।
১৪৬. বিষয়ে বিকার । বিষয় থাকবে – বিকার থাকবে না । বিষয়ে বিকার – বিষয়ানল । বিষয়ানল ।
১৪৭. ধর্ম – পথে শত-বাধা । জটিলা কুটিলা হয় বাদী । কৃষ্ণ-সেবার বাদী । চিরকাল বাধা । ননদিনী – তুই বল্গে যা নগরে – ডুবেছে রাই কলঙ্কিনী কলঙ্ক সাগরে ।
১৪৮. ব্রহ্মনাম যার কানে – তারে যমে ছোবে না ।
১৪৯. গুরুনাম মহা পরিত্র নাম । এই নাম নিয়ে যে যেমনে ব্রতী হবে – সে সেই কাজে জয়ী হবে ।
১৫০. সব তিথি সুতিথি – সব বার সুবার বলা যায় । গুরুনাম এমন পরিত্র নাম । তাঁর নাম করে গেলে জয় ছাড়া ক্ষয় নাই । তাঁকে ছেড়েও খুটিনাটি তাঁকে বাদ দিয়ে – এ জন্যই বলেছে – সব তিথি সুতিথি সব বার সুবার – তাঁর নাম করে গেলে । তার লাগে ভদ্রা – যে ভুলে নন্দকুমার । তার লাগে ভদ্রা – যে ত্যাজে নন্দকুমার । ধর্ম-রাজ্যের ভাবই আলাদা । সেই রাজ্যে কেউ পদাপর্নই করে না ।
১৫১. গুরু বাক্য অমৃত বাক্য-ধরতে পারলে হয় ।
১৫২. আধারসে ছোরদে – দুঃখ আপসে ছোর যায়েগা । কায়িক-মানসিক-বাচনিক্ তিন দুঃখই দূর হবে ।
১৫৩. জীবনের উদ্দেশ্য ঠিক করা সর্ব্বাগ্রেকর্তব্য । গুরু সেবায় বিঘ্ন ঘটাইয়া নিজ উদ্দেশ্য সাধন, গুরুকৃপা হতে বঞ্চিত করে । আগে ঠিক করতে হবে জীবনের উদ্দেশ্য । তার জন্য নির্দেশিত পথে চলতে হবে । গুরুসেবায় বিঘ্ন ঘটাইয়া জীবনের উদ্দেশ্য সাধন হয় না ।
১৫৪. ব্রজানন্দ জগন্মাতা – জগৎ পালক ।
১৫৫. কত অপরাধ কর ? ধর্মে থাক – অশান্তি কেন হবে ? অধর্ম ছেড়ে দাও – গুরুনাম কর – আপনিই শান্তি হবে ।
১৫৬.
আশীর্ব্বাণী
‘গুরুগিরি’ আমার পেশা নয় । মানুষের ত্রাণ ও মঙ্গলই আমার উদ্দেশ্য । সেইজন্যই আমার মর্ত্ত্যে আগমন । সংসার ভবসিন্ধু আবর্ত্তময় – উত্তাল তরঙ্গময় । দাহ্যমান এই দেহ । গুরুকে সাথে করে সংসার করতে হয় । সংসারে এসেছ মুক্ত হতে – বাঁধা পড়তে নয় । সংসার মুক্তিক্ষেত্র -মুক্তিলাভের অধিকারী হতেই সংসারে আসতে হয় । অজ্ঞ নাবিকের মত সংসার করবে না বিজ্ঞ ও দক্ষ নাবিকের নৌকা কুলে পৌঁছায়, হুঁশিয়ার নাবিক হও । তবেই সোনার সংসার – আনন্দময় সংসার গড়ে তুলতে পারবে । গুরু পূর্ণিমায় গুরুকে একান্তভাবে স্মরণ করার দিন – গুরুর চরণে আত্মসর্পণ করার দিন । গুরু ভগবান – গুরুর অপার মহিমা । এই শুভদিনে তোমরা নামের আশ্রয় গ্রহণ কর । নামই সার । নামের গুণে সর্বপাপ তাপ নাশ হয় । তোমাদের অহং নাশ করো । অহং থাকতে প্রভুর দর্শন হয় না । “আমি কভু আমার না – সব কিছুই তুমি” এই ভাব আন ।তবেই গুরুর আশীর্বাদ জীবনের সর্বক্ষেত্রে প্রতিফলিত হবে – জীবনে পূর্ণতা আসবে । “গুরুধাম পত্রিকা” দীর্ঘজীবী হয়ে ব্রজানন্দ ধর্মাদর্শ দিকে দিকে ছড়িয়ে দিক । আমার আশীর্বাদে ভক্ত শিষ্য সকলের কল্যাণ হউক ।
ওঁ শান্তিঃ, ওঁ শান্তিঃ,ওঁ শান্তিঃ । জয় ব্রজানন্দ হরে ।
গুরু পূর্ণিমা,
শ্রাবণ-১৩৮৫
আশীর্বাদক
শ্রীশ্রী ব্রজানন্দ সরস্বতী
১৫৭. বাধা বিঘ্নের মস্তকে পা ফেলে চলে আসবে । এই পথে বাধা নেই – তুমি যদি ঠিক থাক । শোন যবন হরিদাস কি বলে – খণ্ড হয়ে যদি যায় দেহ প্রাণ, তথাপি বদনে নাহি ছাড়ি হরিণাম । কেমন জোরের কথা । এই পথে বাধা নেই । নিজে একটু ঠিক থাকলেই হয় ।
১৫৮. নামের প্রভাবে কি না হয় । নামের প্রভাবে হাজার হাজার পাপ ক্ষয় হয় । নামের তুল্য আর কি আছে জগতে ? মানুষ কত পাপ করবে -পরিষ্কার হইতে কতক্ষণ ? হনুমান সেতু বন্ধন না করে জয় রাম বলে এক লাফে সাগর পা হয়ে গেল । নাম এমন বস্তু । নাম ধর শক্ত করে – সব পরিষ্কার হয়ে যাবে । এ নাম সুধামাখা – জীবের পাপ ক্ষয় করে – নামে রুচি জন্মায় – গুরুতে প্রেমের উদয় হয়।ধর নাম শক্ত করে । নুলাপুত হলে চলবেনা । ধর শক্ত করে ‘নায়মাত্না বলহীনেন লভ্য’। বলহীন পুরুষ কি আর শক্তি সঞ্চার করতে পারে ? নাম এমন -কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ, মাৎসর্য্য এই ষড় রিপুকে ভষ্ম করে ফেলে । যবন হরিদাস হরিণাম জপ করছে । এমন সময় কাজী পাঠালেন এক অপ্সরাকে তার ধ্যান ভঙ্গ করতে । কাজী অপ্সরাকে আদেশ করলেন – হরিদাসের ধ্যান ভঙ্গ কর, সাধুগিরি দাও নষ্ট করে । হরিদাস ধ্যানে মগ্ন । কামাতুরা অপ্সরা ডাকে কৈ সাধু, এস না ! হরিদাস বলে, একটু দেরী কর । পুনঃ পুনঃ ঐ একই উত্তর একটু দেরী কর । এদিকে রাত প্রভাত হয়ে এল । কাজী জিজ্ঞাসা করলেন অপ্সরা কি হল ? অপ্সরা উত্তর দিল কিছুই হয় নাই । হরিদাস সারারাত নামে ডুবে ছিল । শুনে কাজী আদেশ করলেন – আজ রাতে আবার যাও । রাত হলে অপ্সরা সাজ সজ্জা করে হরিদাসের কাছে গিয়ে বল্ল – কি সাধু কি হল ? হরিদাস উত্তর দেয় – আর একটু জপ বাকী আছে । অপ্সরা যতবার ডাকে হরিদাস ততবারই উত্তর দেয় আর একটু জপ করে নেই । অপ্সরা ভাবে – এমন সাধু আর আমি নিতান্ত পিশাচিনী নারকী । আমার নরকেও স্থান নেই । হরিদাসের নিকট প্রার্থনা জানায় আমাকে দয়া করে ভেক দিন । টাকা, পয়সা সোনা গয়না সব গঙ্গায় বিসর্জন দিয়া বলে – আমার গতি কি হবে, বাবা ? আমার নরকেও স্থান নেই । সব গঙ্গায় বিসর্জন দিয়ে সন্ন্যাস গ্রহণ করে অপ্সরা । দলে দলে লোক দর্শন করতে যায় এই সন্ন্যাসিনীকে । বেশ্যা হইল পরম মহন্তী রক্ত বস্ত্র পরিহিতা কেমন আশ্চর্য্য পরিবর্ত্তন, বেশ্যা হইল সন্ন্যাসিনী । দলে দলে লোক আসে দর্শন প্রার্থী হয়ে । নামের মহিমা – নাম ব্রহ্মাণ্ড ।
১৫৯. বৈষ্ণবের পদধূলি শিবের ভূষণ করিয়া এড়াও, ভাই, সংসার বন্ধন ।
১৬০. গঙ্গাম্বু সেবন, গঙ্গার তীরে বাস, গঙ্গা স্নান মহা ভাগ্য । তব তট নিকটে যস্য নিবাস – খলু বৈকুন্ঠে তস্য নিবাস ।
১৬১. সে যে ফুরৎ ফুরুৎ করে বেড়ায় – কারো বাধা মানে না । পাবে কি করে ? সাধন না করলে সাধনার ধন পাওয়া যায় না । সাধন করবে তবেত সিদ্ধিলাভ হবে । প্রতি মাস পয়লা দর্শন করে যাবে । কোন খরচ-পাতি নাই ।
১৬২. সেবাতে প্রসন্ন হলে মোক্ষলাভ হয় । সেবা এমন বস্তু ।
১৬৩. ইন্দ্রিয় ও মনের গতির প্রভাব ভয়ঙ্কর । লাগাম কষে ধর । ইন্দ্রিয়ের লাগাম কষে ধর । মনের লাগাম কষে ধর ।
১৬৪. দীক্ষা গ্রহণ করতে দিন ক্ষণ মলমাস আটকায় না ।
১৬৫. চরণ শক্ত করে ধরলে বিপদ কি করবে ? বিপদের মাথায় পা দিয়ে চলবে । বিপদ কি ? আপদে বিপদে যদি মজে রামপদে্, আপদ বিপদ কি করবে ? রূপ সাগরে দেওনা ডুব, আপদ বিপদ দূর হবে ।
১৬৭. এক রোটি যো দেগা এক ছেলের মা হবে । দো রোটি যো দেগা দুই ছেলের মা হবে । তিন রোটি যো দেগা তিন ছেলের মা হবে । রুটির বন্দোবস্ত কর ছেলে আনব ! এক সাধু দুপুর বেলায় এই বলে যাচ্ছিল । ঐ রাস্তার ধারে এক অপুত্রক গৃহস্থের বাড়ী । তার কানে যেই এই কথা গেল সে আনন্দে আত্মহারা । হাম্ তিন রোটি দেগা । ডাল-তরকারী-রুটি দিয়া সাধুর সেবা দিল প্রেমসে । সাধুর আশীর্বাদ পড়ল তিন ছেল হবে । একদিন নারদ ঐ পথে যাচ্ছিল । ইতিমধ্যে গৃহস্তের তিন ছেলে হল । নারদ গৃহস্তের তিন ছেলে দেখে, ভাবেন-ভগবান বলেছিলেন তার সন্তান হবে না । এখন নারদ তিন ছেলে দেখে অবাক । দেখে, তিন ছেলে ছুটাছুটি করছে । নারদ গৃহস্তের বললেন ভগবান বলেছিলেন তোমার সন্তান হবে না – দেখছি তোমার তিন ছেলে হয়েছে । তখন গৃহস্ত প্রকৃত ঘটনা বলে দিল নারদকে ! সাধুর আশীর্বাদেই তার তিন ছেলে হয়েছে । সাধু যদি ভগবান হয় তা হলে এই রকমই হয় ! সাধু ভগবান । তোমার কপালে যদি সন্তান না থাকে – সাধুর কৃপা দৃষ্টিতে সন্তান হবেই । যো না করে লকির সো করে ফকির । কপালের লেখায় যা না করে সাধু তা করে । জিস্কো না দেয় আল্লা – উস্কো দেয় – ফকির মোল্লা – আল্লা যাকে না দেয় – ফকির মোল্লা তাকে দেয় ।
১৬৮. প্রসাদে গোবিন্দে নাম – ব্রহ্মণি বৈষ্ণবে, সর্ব পুণ্যবতাং বিশ্বাসোনৈজায়তে । গোবিন্দে আর প্রসাদে নাম ব্রজে আর বৈষ্ণবে পুণ্যের জোর খুব বেশী যার বিশ্বাস হয়; সকল পুণ্যবানের হয় না ।
১৬৯. এই মূর্ত্তির কাছে কাম, ক্রোধ কাঁপে থর থর । লোভে, মোহ, মদ, মাৎসর্য্য পালায় চকিতে । এই মূর্ত্তি দর্শনে পাপ নিঃশেষ হয়ে যায় । সুখ শান্তিতে সংসার ভরপুর হয় ।
১৭০. জীব কল্যাণের জন্য গুরুধাম গোলকধাম প্রতিষ্ঠা । জীব উদ্ধার হবে । জগৎ উদ্ধারণ নাম ‘ব্রজানন্দ’ । দিনান্তে একবার স্মরণ করবে ।
১৭১. ব্রজানন্দ এই দু’ পোয়া দেহের মধ্যে নয় । ব্রজানন্দ সর্ব্ব-ব্যাপী সত্ত্বা । ব্রজানন্দ অনন্ত, ভজবেত বিরাট অনন্তের – অসীমের ভজনা করবে । সমীমের উপাসনা করবে না । ব্রজানন্দ নিত্যসত্ত্বা । ব্রজানন্দ অসীম, অনন্ত, বিরাট সত্ত্বা । সসীমের উপাসনা করবে না । ব্রজানন্দ বিরাট, অসীম, অনন্ত এই ভাব নিয়ে ভজন, তা হলেই সেই অবস্থা প্রাপ্ত হবে । মন ছড়াইয়া আছে গুটাইয়া আনতে হবে ।
১৭২. দেহ কয় দিনের ? দেহিকে ধর । দেহ টানাটানি করনা । যিনি অনন্ত অনাদি তাঁর সন্ধান কর ।
১৭৩. যে শিষ্য গুরু হতে দূরে সে ভগবান হতেও দূরে ।
১৭৪. শিক্ষার ফল আত্ম-বিকাশ । প্রকৃত শিক্ষালাভ করা চাই ।
১৭৫. যার প্রসাদে ভক্তি আছে – আগ্রহ আছে সে আপনি আসিয়া চাহিয়া লয় – তাকে ডাকতে হয় না ।
১৭৬. উদিতে জপতি নাথে । সূর্য্যোদয়ের পূর্বে গাত্রোত্থান করতে হয় – অন্যথায় সূর্য্যদেবকে অমান্য করা হয় ।
১৭৭. শিক্ষার চরম ফল – প্রকৃত শিক্ষার প্রভাব এই – ধর্ম পরাণয় হবে । প্রকৃত শিক্ষা না পাইলে ধর্মহীন পণ্ডিত হয় । যে শিক্ষা ধর্মহীন পণ্ডিত তৈরি করে – সে শিক্ষা কুশিক্ষা । সে শিক্ষা শিক্ষাই নয় ।
১৭৮. শ্রীগুরুর পদধৌত জল মস্তকে লও । জীবন সফল – কৃত কৃতার্থ – কিছু বাকি থাকে না । ওঁ গুরুবে নমঃ । ন গুরোরধিকম্ । গুরু সব চেয়ে আপন । সফল জনম – সফল জীবন ।
১৭৯. আমার হিত হউক বা না হউক – গুরুধামের হিত হউক – ধাম-বাসীদের এই মহামন্ত্র জীবন বেদ । এই ভাব নিয়ে না থাকলে – না হবে ধর্মের মঙ্গল – না হবে তোমার মঙ্গল । ত্যাগী হতে হবে – গৃহী নয় । ধামের হিতার্থে আপন স্বার্থ বিসর্জন দিতে হবে । ভক্ত-শিষ্যদের আপন জ্ঞান করতে হবে । গুরু ধামের আইনই আলাদা । এখানে নিজ স্বার্থ হারাইতে হবে । অন্যথায় না হবে ইহকালের – না হবে পরকালের মঙ্গল ।
১৮০. ব্রজানন্দ সত্য নাম – ওঁকার মধ্যে কাশীধাম । এই লীলার উদ্দেশ্য জীব – কল্যাণ । আমার সব কিছু খাওয়া-উঠা-বসা জীবের কল্যাণের জন্য ।
১৮১. মাইরা সোনা বাক্স রাখে – দেহটা সেই রকম । মাইরা সোনার বাক্সটা চোখে চোখে রাখে । যেখানেই থাকুক – চোখ থাকে সোনার বাক্সের উপর । সেইরকম দেহটার উপর চোখ রাখতে হয় । দেহটা যেন সুস্থ সবল থাকে ।
১৮২. ধর্ম দিয়া মানুষ শান্তিলাভ করে । ধর্মহীন জীবন – তাই কেবল গোলমাল আর গোলমাল । শান্তি নাই । কর ধর্ম – কর্ম শান্তিলাভ হবে । ধর্ম-কর্ম নাই । শান্তিলাভ হবে কি করে ? দিনরাত অগণিত অধর্ম কর্ম । ধর্মহীন জীবন – শান্তিলাভ হবে কি করে ?
১৮৩. নাম গ্রহণ কর – দেহ পবিত্র হউক । দেহ-মন পবিত্র না হলে কোন কার্য্যই সিদ্ধিলাভ হয় না । নাম গ্রহণ কর – সব দিক দিয়া মঙ্গল হবে ।
১৮৪. তাঁর নামে ক্ষয় নাই । তাঁর নাম দিয়ে আরম্ভ করলে জয় অবশ্যম্ভাবী ।
১৮৫. কাল বড় ভয়ঙ্কর । কালের প্রভাবে মনের পরিবর্তন হতে পারে । শুভ-বাসনা সব সময় মনে জাগে না । কাজেই শুভস্য শীঘ্রম্ । নিঃশ্বাসের নাই বিশ্বাস । মরিয়াও শান্তি পাবে না । মরণইত শেষ নয় – পরকাল আছে । শুভ বাসনা কি সব সময় মনে জাগে ? মনের পরিবর্তন হ’তে কতক্ষণ ? দীক্ষার বাসনা যখনই লুটাইয়া দে-সঙ্গের সাথী কেউ হবে না ।
১৮৬. ভক্ত শিষ্য একার্থ বাচক । ভক্ত শিষ্য উভয়েই সমর্পিত প্রাণ । দীক্ষিতের কাজ একটু তাড়াতাড়ি হয় সাধন ক্ষেত্রে গুরুর সাহায্য পায় । উভয়েরই এক অবস্থা ।
১৮৭. তোমাদের পূর্ণ বস্তু দিয়েছি । অসম্পূর্ণ কিছু রাখি নাই । ঐ যে নাম দিয়েছি – নামের কাছে চাইলেই সব পাবে । চাইলেই আমার দেখা পাবে । এই রকম – যেমন আমার দেহে হাত বুলাচ্ছ – সেই রকম । এই জন্য দেহ নষ্ট করা হয় না, সমাধি দেওয়া হয় । সমাধি থেকে সময় সময় দর্শন দেন । দেহ নশ্বর – এই আইন আমার । আমি কি এই আইন লঙ্ঘন করতে পারি ? পারি না । এই আসন রেখে গেলাম । এই আসন রক্ষা করে রাখবে তা হলে আমাকে পাবে । এই আসনই ব্রজানন্দ এই বিশ্বাস যদি রাখতে পার তবে তোমরা কখনই আমার অভাব অনুভব করবে না । আমাকে চিরকাল পাবে ।
১৮৮. এই জগতে তিনটি বস্তু দুলর্ভ । সাধু দর্শন, মনুষ্য জন্ম, সৎ গুরুলাভ । সাধু দর্শন দুলর্ভ দর্শন । সৎগুরুলাভ সাধন সাপেক্ষ । মনুষ্য-জন্ম দুলর্ভ জন্ম । ৮৪ লক্ষ যোনি ভ্রমণ করে তবে মনুষ্য যোনি লাভ হয় । মনুষ্য জন্ম দুলর্ভ এই অর্থে । মন ঠিক করা সাধন-সাপেক্ষ । মায়ায় মুগ্ধ হয়ে এই মন কত কাল মলিন হয়ে আছে । সেই মনকে শুদ্ধ শান্ত করা সাধন সাপেক্ষ । যজ্ঞ করতে হয় তপস্যা করতে হয় । তপস্যা যজ্ঞ এক কথায় উঠেই গেছে । তপস্যা কেউ বোঝেই না – তপস্যা কি । বিষয়াভিমুখী মন ত মলিন হয়ে আছে । মনকে শুদ্ধ শান্ত কর । অঙ্গারের ময়লা কাটে অগ্নির দহনে । মনের ময়লা কাটে সাধু সম্মেলন – তপোযজ্ঞে । তপস্যা যজ্ঞত উঠেই গেছে । সহজ পথে সাধু সঙ্গ করে মনের ময়লা কাটাও । মনকে শান্ত শুদ্ধ কর । করতে থাক । মহতের দর্শন যেখানেই পাও করো । সহজ পথ দর্শন পরশন । একটা ধরতে পারলেই হয় । মন এদিক সেদিক যায় বলে ছাড়বে না । বস্বে-বস্বে । যুদ্ধ করতে করতে মন বস্বে । ছাড়বে না – ছাড়বে না । মনকে টেনে আনবে । যতবার মন এদিক সেদিক যায় – টেনে আনবে পথে । পানা পুকুরে স্নান করলে – হাত দিয়ে পানা সরাতে হয় । অভ্যাস রাখ । এই জন্যই নাম – জপ । অভ্যাস রাখ । অভ্যাস যোগ যোগাভ্যাস । দর্শন কর – এগিয়ে যাবে । সাধন ভজন করার সময় সুযোগ – সুবিধাত নেই । কাজেই মহাপুরুষের কৃপালাভ করো । যেমন ইঞ্জিনের সাথে মালগাড়ী । মহাপুরুষের সাথে সঙ্গ করো । মনের ময়লা কাটে সাধু সম্মেলনে । সাধন ভজনের যুগত নয় – ঘোর কলি ।
১৮৯. উপাধী, বাড়াবেনা – অশান্তি ভোগ হবে । সংকোচ শক্তি অবলম্বন করতে হবে – উপাধি বাড়াবে না । কেহ মিনিষ্টার – কেহ লাট । এখন গাড়ী ছাড়া চলেনা – এই উপাধি । এই উপাধি । যখন গাড়ী রাখার ক্ষমতার অবসান হ’বে –অশান্তি ভোগ হ’বে । খুব সংক্ষেপ করে চলবে উপাধি বাড়াবে না । খুব ঠাণ্ডাভাবে থাকবে – খুব সিধাভাবে থাকবে – মনটা শান্তিতে থাকবে । ঠাণ্ডাভাবে থাক – কিছুতে পাবে না । উপাধি বাড়ালেই লোকের চোখ পড়ে ।
১৯০. পাপজ ব্যাধি নিরাময় হতে – তীর্থ, ধর্ম, দানপুন্য প্রয়োজন । অর্ন্তব্যাধি বহির্ব্যাধি উভয়ই ।
১৯১. এক রাজরাণী রামভক্ত ছিলেন – কিন্তু রাজা রামভক্ত ছিলেন না । রাণী এজন্য দুঃখিত । রাণীর আক্ষেপ – রাজা যদি রামভক্ত হইতেন – তিনি জোর পাইতেন । এক রাত্রে রানী শুনতে পান রাজা ঘুমন্ত অবস্থায় – রাম রাম উচ্চারণ করছেন । রানীর আনন্দের পরিসীমা নাই । রাণী ভাবেন – এমন রামভক্ত স্বামী – এতদিন চিনতে পারেন নাই । এমন মহাপুরুষ স্বামী – তাঁর উপর এই ভুল ধারণা তাঁর । রাণী মনের আনন্দে প্রজাদের মিঠাই – মণ্ডা খাওয়ালেন । মন্ত্রীকে আদেশ দেন – মন্ত্রী এই মম রাজ্যে ঢোল পিটাইয়া দিলেন । প্রজারা সাজসজ্জ্বা করে দলে দলে এসে ভোজনে আপ্পায়িত হইল । এদিকে রাজা এ বিষয়ে অবহিত ছিলেন না । দেখে শুনে রাণীকে জিজ্ঞাসা করেন ব্যাপার কি ? রাণী আনন্দে সকল কথা রাজাকে বললেন । অবশেষে বললেন এজন্যই আমি প্রজাদের মিঠাই মণ্ডা সেবা দিয়া আনন্দ করতে আদেশ করেছি । আমি রামভক্ত – তুমি কোন দিন রামনাম কর নাই । এজন্য আমার মনে দুঃখের অবধি ছিল না । এক রাত্রে তুমি ঘুমন্ত অবস্থায় রামরাম উচ্চারণ করেছ তাই শুনে আমার এত আনন্দ । এই শুনে রাজা ভাবেন যে কথা এতদিন আমি সযত্নে গোপন রেখেছি, ঘুমন্ত অবস্থায় তাহা প্রকাশ হয়ে পড়ল । এই বলতে বলেতেই সংজ্ঞাহীন অবস্থায় পড়ে গিয়ে রাজার মৃত্যু হয় । সাধন করবে – মনে – বনে কোণে ।
১৯২. মানুষ ভগবানের দর্শন পেয়েছ – জীবন সফল – অমঙ্গল দূর হয়েছে – মনোবাসনা পূর্ণ হবে । দর্শনে অমঙ্গল দূর হয় – মনোবাসনা পূর্ণ হয় । সব দিক দিয়ে জয় হয় ।
১৯৩. আত্মশক্তির উপর নির্ভর দিয়েছিলে – সুফল হয় নাই । এখন ভগবানে নির্ভর দিয়েছ – ফলপ্রসূ হবে । আশীর্বাদ অমোঘ ।
১৯৪. গুরু এসেছেন – জোর কর । এমন দিন আর পাবে না । কি ভাবনা আর, এসেছে এবার, দাতা শিরোমণি করুণা আধার । দাতা গ্রহীতা দুইই বরাবর । যেমন দাতা – তেমন গ্রহীতা । বলি রাজা আর বামন । ত্রিপাদ ভূমি । আর এক পাদ রাখার জায়গা নাই । দুইই বরাবর চাই – রমারম । যেমন দাতা – তেমন গ্রহীতা । ওঁ কৃষ্ণায় ব্রজানন্দায় নমঃ ।
১৯৫. ভক্তালয়ে সেবা-আমার কত আনন্দ । নুপুরের শব্দ কাণে গেল তোমার । নুপুরের ধ্বনি শুনে ধন্য হলে । আর একটু অগ্রসর হলেই – একটা লাঠি নিয়ে – গোপাল দর্শন হয়ে যেত । এক ভক্ত আমায় গোপাল রূপে ভজনা করত । নুপুরের ধ্বনি শুনে তার মনে হল চোর এসেছে তার গোপাল চুরি করে নিয়ে যাবে । চোর তাড়াতে লাঠি নিয়ে এল । পরে আমার চতুভুর্জ মূর্ত্তি দেখে – আমার গোপাল রূপ দর্শন করে বুঝল – চোর নয় গোপাল স্বয়ং । হাত থেকে লাঠি ফেলে দিল – নইলে আমাকে লাঠির বাড়ি খেতে হত – যদি আমি আমার রূপ না দেখাইতাম । নুপুরত বাজবেই ভক্তালয়ে আনন্দধ্বনি – নুপুরত বাজবেই । লাঠির ভয়ে নিজ মূর্ত্তি ধারণ করতে হয় । আর একটু অগ্রসর হলেই – শংখ-চক্র-গদা-পদ্মধারী নারায়ণ দর্শন হত তোমার । মহাভাগ্য !
১৯৬. কোন দিন মনে করনা – তুমি একা । একা তুমি কিছুতেই হতে পার না । তোমার সাথে থাকবই আমি । বেড়া শক্ত করে দিবে – ফাঁক যেন না থাকে । তা হলে গরু বাছুর ঢুকে – সব নষ্ট করে ফেলবে । বেড়ায় কোন ফাঁক যেন না থাকে । হুঁশিয়ার !
১৯৭. ঠিক ঠিকমত ব্যারিষ্টারি করতে পারলে না । একটু খানি গোলমাল করে ফেল্লে । মারু ভক্ত দেখ নাই । সেবাইত বলে – বাবা শয়নে আছেন এখন দর্শন হবে না । মারু ভক্ত উত্তর দেয় – জগৎ যাক্ আর থাক্ – দর্শন না করে যাব না । আমার কর্ম না করে আমি যাই না । আমার আদায় পুরা না করে যাইনা । বাবা যে অবস্থায় থাকুন – শয়ণে থাকুন তুমি ঠকাইবার কে ? মারুভক্ত একেই বলে ।
১৯৮. সময় নাই – সময় নাই, সেবার দ্রব্য হাতে নিয়ে একটু মুখে দিন । মুখে দিয়ে দেখুন । সময় মত হলে হয় । যখন তখন কি সেবা হতে পারে ? এখনও কি আমি গোপাল নাকি ? সময় মত হলে হয় ।
১৯৯. বি. এ.পাশ, এম এ পাশ নামের সঙ্গে যোগ দিয়ে আমাকে শোনাও । গালভরা কথা – কথার সরিত সাগর । প্রশ্ন প্রতিপাদ্য বিষয় প্রকৃত বিদ্যালাভ হতে অনেক দূরে । যে বিদ্যাতে আত্মবিকাশ আত্মজ্ঞান লাভ হয় না সে বিদ্যা বিদ্যাই না । আচার্য্যবাণ স এব বিদ্বান । চরিত্রবাণ লভতে জ্ঞানম্ । বর্ত্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় একমাত্র অর্থকরী বিদ্যালাভই হয় । বর্ত্তমান শিক্ষায় দেশ ছারখার হয়ে গেল । না হয় চরিত্রোন্নতি না হয় ধর্মে বিশ্বাস । চরিত্রবাণ স এব বিদ্বান্ ।
২০০. মানুষের ধৈর্য্য থাকা একান্ত প্রয়োজন । ধৈর্য্য না থাকলে সে মানুষই না । তার পদে পদে পরাজয় । ধৈর্য্য ধরে থাক । আমি আছি তোমার পাছে পাছে ।
২০১. চিরস্থায়ী কর্ম কর । পাকা পাকি কর্ম হলে কিছুদিন থাকে । আম সন্দেশত রাত প্রভাত হলেই নিঃশেষ । পাকা কাম কর কিছুকাল থাকবে ।
২০২. গাভী বিষ্ণুর অবতার । দেবালয় গাভী পালন, গো-সেবা শাস্ত্র-সম্মত । গো-সেবা পরম ধর্ম । পূজা-আর্চ্চায় পঞ্চামৃত, গোরচনা, গোবর প্রয়োজন হয় । কামধেণু গাভী যখনই দোয়ারে দুধ পাবে তখনই । যত্ন পরিচর্য্যা অত্যাবশ্যক । মশায় না কামড়ায় সেই জন্য মশারি টানিয়ে দিতে হয় । আখড়ায়, আখড়ায় কামধেণু পালন করা হয় । কামধেণু যখনই দোয়ায় দুধ দেয় । ইহার জন্য বংশগত শক্তি, উপযুক্ত খাদ্য, যত্ন-পরিচর্য্যা, সেবা যত্ন অত্যাবশ্যক । গো-সেবায় অনুরাগ ভাল গৃহস্থের লক্ষণ । গোগৃহে-দেবগৃহে-পিতামাতাকে প্রত্যুষে শ্রদ্ধাসহকারে ভক্তি প্রদর্শন অবশ্য কর্ত্তব্য ।
২০৩. সেই সমুদ্রেই ঝাঁপ দেও – শান্তির সমুদ্রে ঝাঁপ দেও – শান্তির সমুদ্রে – ভক্তির সমুদ্রে মিশে যাও । একাকার হয়ে যাও । শান্তির জাহাজের সঙ্গে জালিবোট বেঁধে নিব আমি । আমি আমার করে নিব – তুমি মনে-প্রাণে ঝাঁপিয়ে পড় । যার নাই – আমি তারে দিয়ে নেই । যার আছে তার রক্ষা করি । কারো অভাব রাখিনা । সবার অভাব পূরণ করি ।
২০৪. হ্যাম্ থাকো রামে – থাকো রামে সাঁইয়া – জগৎ বৈরী হলেও – জগৎ বৈরী হয়েছে ভি-কুছ না কর সাকে । দুযমন্ কুছ না কর সাকে । যাকো রাখে সাঁইয়া দুষমন কুছ না কর সাকে । বিশ্বাস রাখ ।
২০৫. যো আয়া হ্যায়, সো জায়গা ভি-রাজা, ভিখারী, ধনী, নির্ধন । মন মরি না মায়া মরি । কত ভক্ত চলে গেছে – মায়াকে কেউ মারতে পারে নাই । মনও মরে না – মায়াও মরেনা । আশা তৃষ্ণার শেষ নাই । মায়া অনন্তকাল থেকে আছে – অনন্তকাল থাকবেও ।
২০৬. গাছে ওঠে মরতে – জামিন হয় ভরতে । নিজানন্দ সাধুর মৃত্যু প্রসঙ্গ । ঢাকায় হরতাল । গাভীর জন্য ঘাস ক্রয় করা সম্ভব হয় নাই পর পর কয় দিন । আজ গাভীর অনশনের সম্ভাবনা দূরীকরণার্থে, আম্রপত্র সংগ্রহের জন্য আম্রবৃক্ষে উঠিয়া আম্রপত্র তুলিতেছেন ।এদিকে ঠাকুর তার জন্য বিচলিত হইয়া খোঁজ করিতেছেন – কোথায় যেন নিজানন্দ সাধু ? গাছের উপর তাঁহাকে দেখিয়া – গাছ হইতে নামিতে আদেশ করিলেন । ঠাকুর অমঙ্গল আশঙ্কাই করিতেছিলেন । গাছ হইতে নামিয়া আসিতে আদেশ করিয়া সবে মাত্র আসনে উপবেশন করিয়াছেন – সেই মূহুর্ত্তে সাধু গাছ হইতে পড়িয়া প্রাণত্যাগ করিলেন । সংবাদ পাইবা মাত্রা ঠাকুর ঘটনাস্থলে ছুটিয়া আসিলেন । শোক-সন্তপ্ত হৃদয়ে তাঁহার অন্তোষ্টি-ক্রিয়ার ব্যবস্থা করিলেন । শিব-ধামের প্রাঙ্গণেই তাঁহার অন্তোষ্টি-ক্রিয়া সম্পন্ন হইল । শ্রীশ্রীঠাকুরের একনিষ্ট শিষ্যের স্মৃতি-রক্ষার্থে, শিবের অর্থব্যয়ে তাঁহার স্মৃতিমঠ নির্মিত হইল । কথা প্রসঙ্গে একদিন ঠাকুর নিজানন্দ সাধুর বিবিধ গুণাবলির উল্লেখ করেন । সেই সঙ্গে ঠাকুর একটি ঘটনা ব্যক্ত করেন । একদিন তিনি নিজানন্দ সাধু প্রমুখ ভক্ত-শিষ্যের নিকট-সম্ভাব্য স্বীয় মহা-প্রয়াণের পর কোথায় কিভাবে শ্রীদেহ রক্ষা করিতে হইবে সেই বিষয়ে বিশদ উপদেশ প্রদান করিলেন । অতঃপর নিজানন্দ সাধু কাতর কন্ঠে নিবেদন করিলেন – বাবা আপনিত আপনার নিজের দেহরক্ষার ব্যবস্থা করিলেন । আমার কি ব্যবস্থা হইবে জানিতে বাসনা হয়, দয়াময় । মনে হয় শ্রীশ্রীঠাকুরের দেহরক্ষার সম্ভাব্যতা স্মরণ করিয়া – শোক বিহ্বল চিত্তে তাহার পূর্বেই স্বীয় দেহ রক্ষার প্রার্থনা চরণে নিবেদন করিয়াছিলেন । কৃপাপরবশ হইয়া ঠাকুর তাঁহার আকুল প্রার্থনা সার্থক করিলেন ।ঠাকুর তাঁহার প্রশংসায় পঞ্চমুখ । বলা বাহুল্য তিনি ছিলেন একজন আদর্শ একনিষ্ট গুরু-সেবী । গুরু-সেবাই ছিল তার জীবন বেদ । বাবা বলেন – শিবধাম একেবারে অন্ধকার করে গেল ।
২০৮. গুরু-পাটে ত্রিরাত্রবাস শাস্ত্রের বিধান ।
২০৯. নিরাকার থেকে সাকার মূর্ত্তি ধারণ করেছি । বাক্য দিলাম – বাঁচাইলাম । তার রোগ আমি গ্রহণ করলাম । ভক্ত বলে – ও কথা বলবো না । আমি বলি – মুখে এসে পড়েছে – আমি কি করব ? আমার ভক্তের মধ্যে কুটিপতি আছে – কারবার করে কুটিপতি হয়েছে । ভক্ত বলে – তোমার দয়ায় হয়েছে – তোমার দয়ার নাই বিরাম – ঝরে অবিরাম ।
আশীর্ব্বাণী
২১০. জীব কল্যাণের জন্য “গুরুধাম” গোলকধাম প্রতিষ্ঠা । জীব উদ্ধার হবে । জগৎ উদ্ধারণ নাম ব্রজানন্দ, দিনান্তে একবার স্মরণ করবে । বাধা বিঘ্নের মস্তকে পা ফেলে চলে আসবে । এই পথে কোন বাধা নেই – তুমি যদি ঠিক থাক । শোন যবন হরিদাস কি বলে – খণ্ড খণ্ড হয়ে যদি যায় দেহ প্রাণ, তথাপি বদনে নাহি ছাড়ি হরিনাম । কেমন জোরের কথা ! নিজে একটু ঠিক থাকলেই হয় । এই মূর্ত্তির কাছে কাম, ক্রোধ, কাঁপে থর থর । লোভ, মোহ, মদ, মাৎসর্য্য পালায় চকিতে । এই মূর্ত্তি দর্শনে পাপ নিঃশেষ হয়ে যায় । সুখ শান্তিতে সংসার ভরপুর হয় । ব্রজানন্দ এই দুপোয়া দেহের মধ্যে নয় । ব্রজানন্দ সর্ব্ব-ব্যাপী সত্ত্বা । ব্রজানন্দ অসীম, অনন্ত, সর্ব্ব-ব্যাপী । ব্রজানন্দ বিরাট, অসীম, অনন্ত, এই ভাব লয়ে ভজবে, তা হলেই সেই অবস্থা প্রাপ্ত হবে । মন ছড়ায়ে আছে গুটায়ে আনতে হবে । ব্রজানন্দ সত্য নাম-ওঁকার মধ্যে কাশীধাম । এই লীলার উদ্দেশ্য জীব কল্যাণ । আমার সব কিছু খাওয়া ওঠা বসা জীবের কল্যাণের জন্য । এই জগতে তিনটি বস্তু দুলর্ভ । মনুষ্য-জন্ম দুলর্ভ জন্ম । সাধু দর্শন দুলর্ভ দর্শন । সৎগুরুলাভ সাধন সাপেক্ষ । মানুষ ভগবানের দর্শন পেয়েছে – জীবন সফল, অমঙ্গল দূর হবে, মনোবাসনা পূর্ণ হবে । দর্শনে অমঙ্গল দূর হয়, মনোবাসনা পূর্ণ হয় । সবদিক দিয়ে জয় হয় । শান্তির সমুদ্রে ঝাঁপ দাও – শান্তির সমুদ্রে – ভক্তির সমুদ্রে মিশে যাও, একাকার হয়ে যাও । শান্তির জাহাজে জালিবোট বেঁধে নেব আমি । আমি আমার কর নেব, তুমি মনে প্রাণে ঝাঁপিয়ে পড় ।
২১১. যা সঞ্চয় করেছ, তাই নিয়েই ত আসবে আমার এখানে । তার বেশী নিয়ে আসবে কোথা থেকে ! যা জন্ম জন্ম সঞ্চয় করেছ তাইতো তোমার পুঁজি । এই আসা যাওয়ার মধ্যেই জন্ম জন্মান্তর । যার সুকৃতি আছে শেষ পর্য্যন্ত সে পার হয়ে যায় । ধ্রুবও প্রথম কামনা লয়েই এসেছিল ভগবানের কাছে । পরে ভগবান দর্শন হলে, তার কামনা বাসনা নেই । রাজ্য চাই না, রাজা হতে চাই না । সব চাওয়া পাওয়ার শেষ । পরমার্থ লাভ হলে আর চাওয়া পাওয়ার কিছুই থাকে না । চাইবার ও কিছুই থাকে না । অনেকেই এভাবে তরে যায় । যারা নিতান্ত বদ্ধ জীব, তারাই শুধু পড়ে থাকে । মায়া তেরি তিন নাম পরমা, পরেমা, পরেশরাম । নিরাকার থেকে সাকার মূর্ত্তি ধারণ করেছি । বাক্য দিলাম, বাঁচালাম । তার রোগ আমি গ্রহণ করলাম । ভক্ত বলে ও কথা বলবেন না । আমি বলি মুখে এসে পড়েছে, আমি কি করব ? ভক্ত বলে তোমার দয়ার অন্ত নেই, তোমার দয়ার নেই বিরাম, ঝড়ে অবিরাম । শুভ মাঘী পূর্ণিমায় আমার আবির্ভাব দিবসে গুরুধামের ধর্মীয় মুখপাত্র “গুরুধাম পত্রিকার” নবম সংখ্যা ভক্ত শিষ্যগণের বিভিন্ন রচনা লয়ে প্রকাশিত হল । আশীর্বাদ করি “গুরুধাম পত্রিকা” ভারতীয় ধর্ম সাধনার জগতে নূতন আশা ও আলোর বর্ত্তিকা লয়ে অগ্রসর হউক এবং ভক্ত শিষ্যগণ ব্রজানন্দ ধর্মানুশীলনে সফল হউক ।
ওঁ শান্তিঃ, ওঁ শান্তি, ওঁ শান্তিঃ । জয় ব্রজানন্দ হরে ।
মাঘী পূর্নিমা,
১৩৮৫ সন
আশীর্বাদক
শ্রীশ্রী স্বামী ব্রজানন্দ
২১২. যিনি রোগ দিয়েছেন – তিনিই রোগ নিতে পারেন । যে রোগ দেয় নাই – সে রোগ নেয় কি করে ?
২১৩. আত্ম-সুখ-দুঃখ গোপী না করে বিচার । কি নির্মল-উদার । কৃষ্ণ-সুখ-তরে । জগৎ ছাড়া ভাব – জগতে নাই । কৃষ্ণ-সুখ তরে করে সব ব্যবহার । আত্মসুখ তরে না করে বিচার । কৃষ্ণ সুখে সুখী ।
২১৪. আনন্দে সংসার করবে – নইলে সংসার বন্ধনের কারণ হবে। সংসার যেন বন্ধনের কারণ না হয় । বিদ্যার সংসার কর । অবিদ্যার সংসার বন্ধের কারণ । আমরা সংসারে মুক্ত হবার জন্য এসেছি । মালা-চন্দন পরতে আসি নাই । বিদ্যার সংসার কর – বন্ধনের কারণ হবে না ।
২১৫. তুমি সুখময় – তুমি সুখে থাক । আমি ভষ্ম হয়ে যাই – তাতে ক্ষতি নাই । তুমি সুখে থাক । হিংসা করতে নাই ।
২১৬. মায়া রাক্ষসী – মায়ার হাত থেকে কি এড়ান সহজ ? মায়া রাক্ষসী । মায়া রাক্ষসী এড়াইতে না পারলে-মরণ ।
২১৭. আনন্দের সংসার করবে – লাভালাভের দিক চাইবে না । গুরুর সংসার – সব সময়ই আনন্দে থাকবে । দেওয়া তাঁর নেওয়াও তাঁরই । লাভ-লোকসান গুরুর । লাভ-লোকসান আমার না । এ সংসার আমার না । আমার আঙ্গিনার ধূলিকণাও আমার না । লাভ-লোকসান গুরুর । বাধা না পর-সে দিকে লক্ষ্য রেখে সংসার কর । অবিদ্যার সংসার কর না । লাভালাভ গুরুর । আমার দুঃখ করার কিছু নাই । বিপদে অধীর হতে নাই । আমার কি বিপদ । আমার বিপদ নাই । লাভ-লোকসান আমার না । আমার বিপদ হবে কি করে গুরুর সংসার-লাভ-লোকসান গুরুর । আমার বিপদ নাই । সুখের স্পৃহা রাখবে না – বিপদেও উদ্বিগ্ন হবে না । এই ভাবে সংসার করবে । যেখানে আমি নাই – সেখানে তুমি আছ । যেখানে তুমি – সেখানে আমি নাই । নির্লিপ্ত সংসারী হও । নির্লিপ্তভাবে সংসার কর । এমন অনাশক্তি হয়ে সংসার করবে – লোকে বলবে – কি মোর সংসারীরে ! বুকে লাগবে না । বাইরে আশক্তি – মনে কোন কিছুতে মোহ নাই । এই ভাবে সংসার করতে হবে । বাইরে দেখতে যেন – খুব কর্মী । কিন্তু মনে পরিষ্কার – কোন কিছুতেই লিপ্ত নয় । এই ভাব নিয়ে সংসার করতে পারলে – জন্ম-মৃত্যু রহিত হবে । বর্হিদৃষ্টিতে ঘোর সংসারী – মন নির্লিপ্ত –মোহশূন্য ।
২১৮. দানেন প্রাপ্যতে স্বর্গম্ – দানেন প্রাপ্যতে শ্রীম্ । স্বর্গলাভ করতে ইচ্ছা থাকে – দান কর । দানেন প্রাপ্যতে স্বর্গম্ ।
২১৯. গুরুতে আত্ম-সমর্পণ করার আগেই বিচার – পরে আর বিচার করা চলে না । একবার গুরুতে আত্ম-সমর্পণ হলে – আর তার বিচার চলে না ।
২২০. দুঃখেষু অনুদ্বিগ্ন সুখেষু অনাশক্ত ত এব ধীরা । দুঃখে অনুদ্বিগ্ন সুখে অনাশক্ত তাঁরাই ধীরপদবাচ্য ।
২২১. তৎবিদ্ধি প্রণিপাতেন – পরিশ্রমেন – সেবয়া । তাঁহাকে জানতে হলে প্রণিপাত-পরিশ্রম-সেবাদ্বারাই সম্ভব ।
২২২. আব্ ভালাত জগৎ ভালা । আব্ বুড়াত জগৎ বুড়া ।
২২৩. পুত্র-কন্যার সেবা যত্ন পাওয়া ভাগ্যের কথা ।
২২৪. আমি জীব-কল্যাণের জন্য দেহ ধারণ করেছি । দেহের যা ভোগ – তা ভুগতেই হবে ।
২২৫. কামনাই জন্মের কারণ । কামনা নিয়ে সংসার কর । তাই পুনঃ পুনঃ জন্ম হয় । কামনা রহিত হলে, পুর্নজন্ম হবে না । আমার আচরণ দেখ -বাইরে বিষয়ী – মনে কিছু নাই – পরিষ্কার ।
২২৬. প্রারব্ধ কর্ম্ম-ক্ষণ আংশিক খণ্ডন হয়-ক্রিয়া আরম্ভ হয়ে গেলে । যেমন রাজা জন্মেজয় । মহাভারতে আছে – শাপগ্রস্থ জন্মেজয় – বিংশতি প্রকার কুষ্ঠ হবে তাঁর । কিন্তু এই এই কার্য্য করলে – রক্ষা পাবে । অনেক দানপুণ্য, যাগযজ্ঞ করে গুরু-সেবা, সাধু-সেবা কর – বিংশতি প্রকার কুষ্ঠের জায়গায় – ১৮ প্রকার কুষ্ঠ হয়েছিল । তার মধ্যে এক প্রকার কুষ্ঠ রয়ে গেল ।
২২৭. বিষয় বন্ধনের কারণ নয় । আশক্তিই বন্ধনের কারণ । বিষয় আশক্তিই বন্ধনের কারণ ।
২২৮. আমি মুক্ত পুরুষ – আমি আপন মনে ঘুরে বেড়াই । আমাকে ভক্তালয়ে আবদ্ধ করে রাখা সমীচীন না । আমি মুক্ত পুরুষ – আপন ইচ্ছায় চলি-ফিরি । কোন নিয়মের অধীন না ।
২২৯. করি করি করে – রজগুণের আশ্রয় । সত্য-গুণের যারা আশ্রয় লয় – পয়সা হয় না । ছলনা-কপটতা-মিথ্যা সত্য-গুণের যারা আশ্রয় লয়-পয়সা হয় না । ছলনা-কপটতা-মিথ্যা নাই-পয়সাও হয় না । এক টাকার জমি – একশত টাকা লাভে বিক্রী । এত টাকা লাভেরও একটা ধর্মাধর্ম আছে । মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে – টাকা হবে না কেন ? এক টাকার একশত টাকা লাভ । এত লাভ ধর্মের বিধি – বহির্ভূত । সত্যের আশ্রয় নিলে – এত অর্থ হয় না । অধর্ম্মের পথে বেশী টাকা হয় ।
২৩০. আপদে বিপদে – যদি মজে রামপদে, সম্পদে বিপদে – পদে পদে সকলই তাহার ।
২৩১. কৃষ্ণ-সুখে সুখী – ব্রজ গুপীর ভাব । শতেক কৃষ্ণ ঘরে থাক – দুঃখ নাই । কৃষ্ণ সুখে সুখী মোরা – ব্রজগুপীর ভাব ।
২৩২. এই জগৎ ভগবানের অধীন । তিনিইত জগৎ চালাচ্ছেন । ভগবৎ কৃপা ছাড়া গাছের একটি পাতাও নড়েনা ।
২৩৩. সন্দেহের তুল্য পাপ নাই – সন্দেহ করতেই নাই ।
২৩৪. ভাগ্যকে এড়াতে পারবে না । তোমার ভাগ্যে যা আছে – তা পাবেই । যা ভাগ্যে নাই – তা কিছুতেই পাবে না । নিজের ভাগ্যের দিকে চেয়ে থাক ।
২৩৫. দোনো নাহি মিলে – রবি রজনী এক ঠাই । যাহা রাম – তাহা কাম নাহি মিলে । যাহা কাম – তাহা রাম নাহি মিলে ।
২৩৬. মোর বিষয়ী । গুরুগত প্রাণ – গুরুতে আত্ম সমর্পণ – গুরুতে স্নেহ মমতা । ফুলই ছিটাইল – প্রসাদই খাইল – ঘণ্টিই লাড়ল বিশ বৎসর । বড়ই দুঃখের বিষয়ী – মোর বিষয়ী ।
২৩৭. তা মা ধা তিনটা বস্তুই দিতে হবে গুরুর চরণে । মন দেওয়া কঠিন । গুরু তখনই পাকা পাকি – যেদিন শিষ্য গুরুর চরণে তন মন ধন সমর্পন করে । রসগোল্লা খাও – খাইলে শিষ্যের শান্তিলাভ হয় – কৈলাসবাসী হইতে পারে । রসগোল্লা খাওয়াইয়া স্বর্গলাভ হইতে পারে । নির্বাণলাভ হয় না । আসা যাওয়া থাকবেই । আসা যাওয়া । এক রাজা রাজত্ব গুরুর চরণে সর্ম্পন্ন করে দিল । গুরু পাইয়া বলে –বাবা ! এই হাঙ্গামা আমি করতে পারব না । আমার রাজ্য আমার মনে কইরা তুমি রাজত্ব চালাও । আমাকে অনেকে বাক্স খুলে দেয় – বলে বাবা – যা খুসি নেন । আমি কি সব নেই ? আমি কি মুঠে মুঠে নেই ? বলি- যা নিয়া যা । আমি যা নিবার নিলাম ।
২৩৮. কৃষ্ণপ্রাপ্তি হবে কবে ? ‘আমি’ যাবে যবে !
২৩৯. সর্বতোভাবে দুঃখ নাশ করতে হলে – ভক্তি মহারাণী চাই । ‘আমি’ থাকতে ‘তুমি’ নাই । ‘তুমি থাকতে ‘আমি’ নাই । জোড়াতালি দিয়া হয় না । হিসাব কিতাব করে করতে হবে । ‘আমি’ নিয়া ‘আমি’। ‘আমি’ দিন দিন বড় হয়ে যায় । আমি ব্রজানন্দ প্রতিষ্ঠা করেছি । ঘুরে ঘুরে কাল মুখই দর্শন । দীক্ষা শিক্ষা সবই হয় – কাল বাঁদরের মুখই মনে পরে । একি জ্বালা – কাল মুখ বাঁদরের মুখই চোখে পড়ে । চরণ ধুলি মাখি – চরণামৃত খাই প্রসাদ খাই – ঘুরে ঘুরে কাল বাঁদরের মুখই । ঘর ছাড়লাম – বাড়ী ছাড়লাম – দেশ ত্যাগী হইলাম । সন্ন্যাসী হলাম – এক ঘর ছাইরা অন্য এক ঘরে আইলাম । আগে ছিলাম পাড়াগায় – তা ছাইড়া আইলাম মঠ মন্দিরে – আগে সাদা ধুতি চাঁদর এখন গেরুয়া – এখন মঠ মন্দিরে থাকি – ঘর ছাড়লাম কৈ ? ঘুরে ঘুরে ঐ কাল বাঁদরের মুখ । আগে ছিল সতীশচন্দ্র – এখন ব্রজানন্দ । ‘আমি, ছাড়লাম কৈ ? ছাড়লাম কি ? কিছুই ছাড়ি নাই । ঘুরে ঘুরে কাল বাঁদরের মুখ মনে পড়ে । তখন সাদা ধুতি – এখন গেরুয়া-ছাড়লাম ? ব্রজানন্দ শুকল – এখন স্বামী ব্রজানন্দ । কি ছাড়লাম ? আগেও আমি – পরেও আমি । হবে না ?
২৪০. ধর্ম করলে – ধন আপনিই হয় ।
২৪১. গুরুতে মানুষ জ্ঞান যেই জন করে সে জন নারকী – মনে দুঃখের সাগর ।
২৪২. ভক্ত আমার আপন জন । ভক্তের হৃদয় আমার বালাখানা ভক্তের হৃদয়ে আমার আসন পাতি ।
২৪৩. ব্রজানন্দের সংকল্প সত্য । ব্রজানন্দ যা সংকল্প করে – তা সত্যে পরিণত হয় । ব্রজানন্দের সংকল্প মিথ্যা হয় না । ব্রজানন্দের বেদধ্বনি ।
২৪৪. যার কেউ নাই – তার আমি আছি । পতিত পাবন ।
২৪৫. গুরুর সাথে সর্ম্পক রাখতে হয় – যেমন ছেলে – মায়ের সাথে । গুরুর প্রতি সেই রকম টান হওয়া চাই । গুরুর খোঁজ খবর করতে হয় ।
২৪৬. সুখে অহংকারে স্ফীত হবে না । সুখে দুঃখে সমান থাকবে । সুখে দুঃখে সমান ।
২৪৭. নিস্বার্থভাবে কর্ম্ম করবে । ফলের আশা করবে না । ফলের আশা না করে কর্ম্ম করে যাবে ।
২৪৮. ছয়টা সম্পত্তি আমাদের – টাকা পয়সা, জায়গা জমি ইত্যাদি । সম্পত্তি হল মনকে জয় করা – বাহ্য ইন্দ্রিয়কে দমন করা – সহ্য করা –সহিষ্ণুতা – সহনশীলতা – তিতিক্ষা – বেদান্ত বাক্যে বিশ্বাস – গুরুবাক্য বিশ্বাস ইত্যাদি ইত্যাদি ।
২৪৯. মানুষ দোষগুণে যুক্ত । দোষও আছে গুণও আছে । দোষ দেখে কাহাকেও উপেক্ষা করতে নেই । স্বামী দেবতা । দোষ করে এলেও পূজ্য । ধান দুর্বা দিয়া বইরা নিবে – এই স্ত্রীর ধর্ম । দোষ দেখে অবহেলা করবে না ।
২৫০. কামনা বাসনা জন্মের কারণ । কামনা বাসনা নিয়ে সংসার করি – তাই পুন পুন জন্ম হয় । কামনা রহিত হলে পুনর্জন্ম হবে না । আমার আচরণ দেখ – বাইরে ঘোর বিষয়ী – মনে কিছু নাই । পরিষ্কার ।
২৫১. ভাব আসা কি সহজ ? শিশুর মত সরল না হলে – ভাব হয় না । মন শুদ্ধ না হলে – ভাব হয় না – অভীষ্ট পূর্ণ হয় না ।
২৫২. যজ্ঞাবশিষ্টের অধিকারী যজমান – সর্ব প্রথম প্রসাদ পায় ।
২৫৩. বৈষ্ণবের মেয়ে বিয়ে দিয়ে – খোজ নেয় না । শ্বাশুরী বলে – বিয়ে দিয়া গেল – খবর নেয় না । মেয়ে পুনঃ পুনঃ পত্র লেখে বাপেরে । বাপে হরিনাম করতে করতে এল । বিয়াইন মূর্ত্তি দেইখা আশ্চর্য্য – দেইখাই অগ্নিঅবতার । রাত্রে একটা ভাঙ্গা ঘরে দিছে শয়ন করতে । তার পরে বৌকে জিজ্ঞাসা করে – বাবা কি নিয়ে এলেন ? বৌ উত্তর করে না, কাঁদে । পিতার কাছে গিয়ে বলে – কেন তুমি এলে আমাকে কাঁদাতে ? পিতার দুঃখ হইল শুনে । শ্রীহরি লক্ষ্মী বলেন – এর বাড়ী ভরে ভোগের জিনিষ – পত্র এনে দাও । লক্ষ্মী বৈষ্ণবের বাড়ী ভোগের মাল – পত্র এনে দিলেন বৈষ্ণব গ্রামের সবাইকে নিমন্ত্রণ করলেন । বৌর পিতা বৈবাহিকাকে বলেন – আপনার আত্মীয়-স্বজন সবাইকে নিমন্ত্রণ করুন । গ্রামের সকলেই সেবা করে ধন্য ধন্য – মহা কাণ্ড কারখানা । বৈবাহিকা আর লজ্জায় – ঘর থেকে বার হল না । বৈবাহিককে আর মুখ দেখান না । লজ্জায় ।
২৫৪. ভগবানের নামে যা অর্পন করা যায় – তা অমৃত হয়ে যায় ।
২৫৫. গোবিন্দের ভোগ – সব এক বারেই দিতে হয় । নিবেদন না করে গ্রহণ করি না । গোবিন্দের ভোগ – এক বারেই দিতে হয় সব । তা না হলে সব মিথ্যা । খাওয়া না ভোগ । গোবিন্দের ভোগ জানবে – খাওয়া মনে কর না – গৃহস্থের ভাব । আর দুটা অন্ন দেই – আর একহাতা ডাল দেই -গৃহস্থের ভাব । গোবিন্দের ভোগ এক বারেই সব নিবেদন করতে হয় ।
২৫৬. ছয় মাস যাবৎ মৃত্যু যোগ । যম আশে পাশে ঘুরছে ছয় মাস যাবৎ । মটর একসিডেন্ট মৃত্যু যোগ । পাকিস্থানী সৈন্যের দুইবার বন্দুক উঠান মৃত্যু যোগ । ছয় ছয়টি শিষ্যের একযোগে পাকিস্থানী সৈন্যের গুলিতে মৃত্যু-বরণ – যেমন তেমন ব্যাপার না । ঐ ছয় জনের কল্যাণের জন্য মনে হল – একটা শুদ্ধ অনুষ্ঠান – খাদ্যাদি প্রদান করতে হয় । উজারচর যখন ছিলাম ভারত প্রত্যাবর্ত্তন পথে – এই শুভ বাসনা মনে উদয় হয়েছিল । মনে পীড়া দিতে লাগল । পথে আঘাত পাইলাম । বিষয়টি চাপা পরল । এই এক মাস প্রেতাত্মা আবার পাছে আসা যাওয়া করে । একদিন দেখছি কোন প্রার্থনা নাই – একজন গোপাল ফুল নিয়া আসল । সে ফুল নিয়া আসল, মূলত তারে দেখলাম । মুকুন্দকে দেখলাম কাঁদছে । কি করব – এই দুজনাই দেখলাম ।
২৫৭. কর্মফল ভুগতে হবেই । তবে ঈশ্বরের নাম করলে যেখানে কাল সিঁধুত সেখানে ছুঁচ ফুটবে । ভোগ ভুগতেই হবে তবে ভগবানের নাম করলে এই হয় – যেখানে একজনের পা কেটে যাবার কথা ছিল সেখানে একটা কাঁটা ফুটে ভোগ হোল । ঈশ্বরের শরণাগত হলে তাঁর নিজের কলম নিজ হাতে কাটতে হয় ।
২৫৮. ব্যাধি ও তপস্যা একই জিনিষ; তপস্যা মত ব্যাধিতেও কর্মক্ষয় হয় ।
২৫৯. গুরুর কৃপা হলে কিছু ভয় নাই । গুরু জানিয়ে দেবেন তুমি কি তোমার স্বরূপ কি । কৃপা হলে হাজার বছরের অন্ধকার এক মুহূর্ত্তে দূর হয় । সদগুরু লাভ হলেই জীবের উদ্ধার ।
২৬০. সংসারে থেকেও জানবে এ আমার ঠিক ঘর নয় একটা বাধা মাত্র । শ্রীশ্রী ব্রজানন্দের পাদপদ্মই আমার আসল ঘর । যে কোন প্রকারেই হোক সেথায় আমাকে যেতে হবে । শ্রীবৃন্দাবনে মহানিশায় আধ্যাত্মিক তরঙ্গের প্রবাহ চলতে থাকে । সেই সময় সেখানে জপ, ধ্যান করলে প্রত্যক্ষ ফল পাওয়া যায় ।
২৬১. বিপদকে যে ভয় করে সে যেন ব্রজানন্দকে না ডাকে । যার উপর তাঁর যত কৃপা তার তত বিপদ জানিও ।
২৬২. গুরুশক্তি । যিনি আশ্রয় দিয়েছেন তিনি কোন কালে রুষ্ট হন না । গুরু ইষ্ঠ এবং নিজেকে এক বলে জানবে । ইষ্ট ও জীবাত্মা একই জ্যোতির দুই মূর্ত্তি ।
২৬৩. মায়ায় আবদ্ধ হইওনা । আমাকে সাথী করে সব করবে । সংসার করবে ব্রজানন্দের সংসার । সে সংসার হবে ত্যাগীর সংসার ভোগীর সংসার নয় ।
২৬৪. ভক্ত আমার প্রাণ । ভক্তকে রক্ষা করা আমার ধর্ম; ভক্তের মুক্তি আমার জীবন বেদ । শান্তি আশীর্বাদ অমোঘ । অশান্তি থাকে না ।
২৬৫. আমার এই আসন হতে ও যাহা পাবে, আমা হতেও তাই পাবে । জীব জগতের কল্যাণের জন্যই আসন প্রতিষ্ঠা । আসনই অনন্তকাল থাকবে ।
২৬৬. গুরুর অধিক আর কেহ নাই; গুরু সর্বেশ্বর, সকলের নিয়ন্তা ও নির্বাহ কর্ত্তা । তোমরা এই বোধে নাম কর, ধ্যান কর, গুরু চিন্তাকর, দর্শন কর, জপ কর, সেবা কর, পূজা কর, উপাসনা কর । তোমাদের অভীষ্ট লাভ হবেই । অভাব রাক্ষসটীর তাড়না সহ্য করিতে হইবে না । কামনা বাসনা পূর্ণ হইবে । বিপদ আপদ রোগ শোক দুঃখ কষ্ট দূরে যাবে । সাপে বাঘে খাইবে না । তোমরা সরল বিশ্বাস নিয়া দিনান্তে একবার অন্ততঃ জয় ব্রজানন্দ বলে আমাকে স্মরণ করিবে ।
২৬৭. এ অনিত্য দেহ । তাই তোমাদের নাম দিয়েছি । নাম ধর পার হবে ।
২৬৮. আমাকে দেয় পূজা বা ভক্তি আমার আসনে বা ফটোতে দিলে আমিই পাবো । ভক্তের প্রাণের পিপাসা মিটানোর জন্যই আমার এ অবতার ।
২৬৯. গুরুকে দ্বারমে কুত্তেকে মাফিক পড়ে রহো কুকুরের মত আমাদের প্রভুর দ্বারে একনিষ্ট ভাবে তাঁর শরণাগত হয়ে পড়ে থাকতে হবে । যে শেষ পর্যন্ত তাঁর আশ্রয়ে পড়ে থাকতে পারবে, তার উদ্ধার ।
২৭০. ব্রজানন্দই দুর্গা, কালী, রাম, শিব, শ্রীকৃষ্ণ আবার ব্রজানন্দই সেই নির্বিশেষ শুদ্ধচৈতন্য ।
২৭১. গুরু শিষ্যের সম্বন্ধ পারমার্থিক পিতাপুত্রভাব । সর্বস্ব অর্পন করিলেও গুরুর ঋণ শোধ করা যায় না ।
২৭২. গুরুতে যার সাক্ষাৎ ভগবান বলে বিশ্বাস, তার জন্ম শেষ । যে দিন গুরু মন্ত্র দেন সে দিন পুনর্বার জন্ম হয় এবং পূর্বের যত পাপ সব ধ্বংস হয়ে যায় । গুরুই সমস্ত পাপ গ্রহণ করেন ।
২৭৩. তোমরা আমার নাম ধর । আমি ও আমার নাম একই বস্তু । আমাকে দেয় পূজা বা ভক্তি আমার আসনে ফটোতে দিলে আমিই পাবো । সেখান হইতেই তোমাদের অভিষ্ট পূর্ণ হবে । নামের ভেতর দিয়েই তোমাদের অভিষ্ট পূর্ণ হবে । আমি তোমাদের কোন কিছুই অপূর্ণ রাখি নাই । সব কিছুই পূর্ণ করে দিয়াছি ।
২৭৪. শ্রীচরণই যখন তোমার একমাত্র সম্বল তবে তো তোমার তরী ভব সাগর হতে সব চেয়ে আগে পাইয়াছে । আর চিন্তা কি, নির্ভায় ও নিশ্চিন্ত থাক । পারের তরীতো পেয়েছ ।
২৭৫. যতক্ষণ বলতে পার – ততক্ষণই লাভ । কতকাল সংসার করছো ? এর কি শেষ নেই ? যার শেষ নেই – তার পাছে ছুটে লাভ কি ?
২৭৬. পাপ নিঃশেষ করে যাও । সুখ-শান্তিতে সংসার ভরপুর হবে ।
২৭৭. ঠেকা-ঠেকি পরলেই আসবে । জীব-কল্যাণের জন্য গোলকধাম প্রতিষ্ঠা হল । ঠেকা-ঠেকি উদ্ধার হবে ।
২৭৮. চরণে শরণ লও দিনান্তে একবার । স্মরণ করো – যমে ছোঁবে না । জগৎ-উদ্ধারণ নাম-ব্রজানন্দ ।
২৭৯. মুক্তিদাতা গুরু । মোক্ষপদ পাওয়াতে পারে একমাত্র গুরু । গুরু সবচেয়ে আপন । তাঁর চেয়ে আপন আর কেহ নেই । পিতামাতা পালনীয় – পোষ্যবর্গ, পালন করতে হয় । গুরু ও পোষ্যবর্গ পালন করতে হয় । যেমন পিতামাতাকে পালন করতে হয় । গুরোণোধিকম্ । গুরুর অধিক আর কেহ নাই ।
২৮০. বিদ্যা, ধন যদি সৎপাত্রে পড়ে – তবে অভিমান হয় না । বিদ্যার অভিমান, ধনের অভিমান – এই বিদ্যার, ধনের দোষ । ধর্ম ভিন্ন ধন ও বিদ্যা দুইই অকর্ম্মণ্য ।
২৮১. ঠাকুর দিলেন প্রসাদ-সন্দেশ । ভক্ত নিয়ে গেল ঘরে । দেখে সন্দেশে-হরি । প্রসাদস্তু ভগবান স্বয়ং । ও-কি-দুই ।
২৮২. বাল্মিকী মহা পাতকী – যার মুখে রামনাম উচ্চারণ হয় না । তার সমস্ত পাপ ক্ষমা হয়ে গেল । কবে যে লীলা করে গেছে – আজ হিন্দুর ঘরে ঘরে তাঁর গুণগান । আজ বাল্মিকী-মুনি ।
২৮৩. তোমার শুদ্ধ দেহ – নির্মল দেহ – পবিত্র দেহ । তোমার কোন পাপ নেই । সব পাপ যায় নামে । তোমার কোন পাপ নেই ।
২৮৪. অন্ধ অন্ধকে পথ দেখাতে পারে না – সে অন্ধকার দূর করতে পারে না । বিবাহের পূর্বের দীক্ষিত পাত্র-পাত্রী-ভিন্ন গুরু । বিবাহের পরে স্ত্রী স্বামীর গুরুর নিকট দীক্ষিত হবে । স্বামীর গুরুই স্ত্রীর গুরু হবেন । উভয়ের নাম শুনেই অনুরাগ । উর্বর ভূমি । কারও দেখেও অনুরাগও হয় না -কারও নাম শুনেই অনুরাগ ।
ভ্রমিতে ভ্রমিতে মন যথা গিয়ে রয়,
সে যে পরম গুরু জানিবে নিশ্চয় ।
২৮৫. নাম গুরুরই আর এক রূপ ।
২৮৬. স্বামী মহাজন । মহাজন যেন গত স পন্থা । স্বামীর পথইত অনুসরণ করতে হবে । স্বামীর গুরুইত স্ত্রীর গুরু হবেন ।
২৮৭. পুনরপি জন্নম পুনরপি মরণম্,
পুনরপি জননী জঠরে শয়নম্
সারাদিন ভাবনা-চিন্তা-কি খাব ? মানুষত মুক্তি চায় না ।
২৮৮. নাম মুক্তি খোঁজ । কানা পোলার নাম-পদ্মলোচন ।
২৮৯. কবির উপাখ্যান । কবির ছিল মুসলমান জোলা-কাপড় বুনত । রোজ এক জোড়া বিক্রয় করে সংসার চালাত । একদিন বাজারে এক জোড়া কাপড় লয়ে গেছে বিক্রয় করতে । এক বৈষ্ণব বলে “আমার দরকার” । কবির বৈষ্ণবকে দিল একখান এই মনে করে – মহাভাগ্য । একখান বস্ত্র দান করে বৈষ্ণবকে বৈষ্ণব বলে – দুইখানাই দেও । একখানা পড়ব, আর একখানা ভিজাব । কবির দুইখানাই কাপড় দিল এখন খালিহাতে ভয়ে আর বাড়ী যেতে পারে না । সন্ধ্যায় জঙ্গলে এক মন্দিরে শয়ণ দেয় । বাড়ী গেল না । এদিকে ভক্ত – অভুক্ত, কোথায় না খেয়ে শুয়ে থাকবে – হরি নিজে ব্রাহ্মণের বেশে গাধার পিঠে বস্তা বহে চাল ডাল নিয়ে গেল ভক্তের বাড়ী । এই দেখে কবিরের বাবা মনে করে “এত চাল-ডাল ছেলে কোথা পেল ? লোক পাঠিয়ে কবিরকে খুঁজে আনা হল । কবির মনে করে – হরি ভক্তের কষ্ট সইতে না পেরে, ভক্তের সব অভাব পূরণ করতে দয়াময় নিজে এসেছেন । ভক্তের ভগবান হরি – ভক্তের দুঃখ সইতে পারে না । কবির হরিভক্ত মুসলমান ।
২৯০. ধর্ম ছেড়ে দিলে – দুঃখত সবই । অধর্ম ছেড়ে দাও-দুঃখ দূর হবে, অবশ্য দূর হবেই । চোখে আঙ্গুল দিয়ে না বুঝালে বোঝ না । আমাকে দেখে বুঝে লও । আমারে দেখে বুঝে লও ।
২৯১. দুই রাজা – সোনার পুরী ছারখার করে দিল । ধর্মবল না থাকলে সব মিথ্যা । সাব্ধান-খবরদার । ঐ দেখ আমার আর এক রাজ্য । রাজা ধর্ম বলে বলীয়ান । আমার ধর্মের জোর জোয়ার হচ্ছে ওর মনের উপর । এই জায়গাই এই ছাড়া জায়গা নেই । রাজা ধর্মবলে বলীয়ান ।
২৯২. আমি তোমাদের জন্যই আছি – নরদেহে । নিজের কোন প্রয়োজন নেই – তোমাদের জন্যই এসেছি প্রার্থনা দিয়েছ ঠিক জায়গায় । দর্শন রাখ মনে, সবকিছু হবে । ধর্ম-অর্থ-কাম-মোক্ষ চতুবর্গ ফললাভ হবে । ছোঁয়া মাত্র হয়ে গেছে । সাধু স্পর্শমণি । ছোঁয়ালেই সোনা ।
২৯৩. শুকদেব যেই মাটিতে পড়লো – ওমনি দৌড় । বাবা বলেন -আয়-আয়-কোথা যাচ্ছিস ? শুকদেব বলে না বাবা – আমার হয়ে গেছে । বনমুখী চলল । সেই রকম কোথায় ?
২৯৪. ভজ ভজ ভজ ভাই শ্রীগুরুর চরণ – মদ মোহ ছাড়ি লও শ্রীগুরুর স্মরণ । গুরুর চরণ সংসারের মুখরূপী । খোলা সংসার গলার ফাঁসী । সংসার রূপ গলার ফাঁসী খোলা যায় না, শ্রীগুরুর চরণ-স্মরণ লও ।
২৯৫. সংসারের বাঘ – ভালুকের চেয়ে বনের বাঘ – ভালুক ভাল । বি, এ, এম্, এ পাশ । গলা কাটে । এই বাঘের চেয়ে বনের বাঘ – ভালুক ভাল । কান কাটে-নাক কাটে-চোখ উপড়ে ফেলে । সব শিক্ষিত লোকের কার্য্য । বনের বাঘ-ভালুক আর কি !
২৯৬. সন্দেশ-প্রসাদের সঙ্গে প্রসাদি ফুল । ফুলের মধ্যে পাওয়া গেল হরিতকী একটি ।
২৯৭. এক ব্রাহ্মণ কন্যা-দায়ে একেবারে পাগল-পারা । দুই মেয়ে – গৃহে অর্থশূন্য – কি করে ? বিশ্বনাথের মন্দিরে হত্যা দেয় । অর্থশূন্য গৃহ – তুমি ছাড়া এই দুঃখ মোচন করবে কে ? বিশ্বনাথ আদেশ করলেন । যা বৃন্দাবনে সনাতন ঠাকুরের কাছে গেল কাশী থেকে বৃন্দাবন । টাকা দাও -কন্যাদায় মুক্ত হই । সনাতন ঠাকুর বলেন – আমি সব টাকা ছেড়ে ফকির হয়েছি । আমার কাছে টাকা নেই । ব্রাহ্মণ বলে – তবে বিশ্বনাথে আদেশ মিথ্যা হবে ? এই কথা শুনে সনাতন ঠাকুরের মনে হল পরশ সাহেবের কথা । এনে দিল স্পর্শমনি । মাথা ছোঁয়ালে লোহা সোনা হয় । একমন লোহা ছোঁয়ালে একমন সোনা হয় । তখন ব্রাহ্মণ ভাবে হায় ! হায় ! এর চাইতেও আরও বড় জিনিষ আছে, যা চাইতে হয় । তখন ব্রাহ্মণ বলে সনাতনকে – যে ধনে হইয়া ধনী, মণিরে মাননা মণি – আমি চাই তার এক কণা । এই বলে স্পর্শমণি ফেরৎ দিল সনাতন ঠাকুরকে । স্পর্শমণি ফেরৎ লও । তুমি যে ধনে ধনী তার এক কণা আমাকে দেও । আমার কাছেও এই রকম ৫/৭ টি সাধু ছিল ।
২৯৮. যে যার গুণ জানে না – সে তা তুচ্ছ মনে করে । যেমন গজমুক্তা তুচ্ছ করে – গুঞ্জনফলে পরিত্যাগ করে । গজমুক্ত কি চিনবে – ইচ্ছা করে ফেলে দেয় – পরিধান করে না । গুঞ্জনফল গলায় ধারণ করে – হাতে ধারণ করে ! মুক্তা পরিত্যাজ্য – গুঞ্জনফল মহা মূল্যবান । হাতি মরে থাকে -চিনে না গজমুক্তা – গজমুক্তা ফেলে দেয় । পরিধান করে না ।
২৯৯. ভক্তের কষ্টোপার্জিত পয়সা – যা ভক্তরা দেয়, যথোচিত ব্যবহার করতে হয় ।
৩০০. এক হাজার অমৃতের তুল্য – স্বাস্থ্য যদি ভাল থাকে – এক হাজার অমৃতের তুল্য হাজার নিয়ামত । স্বাস্থ্য সুখের নিধান । এক তুলসী হাজার নিয়ামত ।
৩০১. আমি কভু আমার না । করি এক, হায় আর । মানুষের সর্ব ধুলিসাৎ ।
৩০২. এতদিনের বুড়াশিব লোকালয়ে ছিল । লোকালয় গিয়ে জঙ্গলে পরিণত হল । আমরা এসে আসন পেতে জাগাতে লাগলাম । হাজার হাজার যাত্রীর ভিড় । চিরকালের বুড়াশিব চিরকাল থাকবে । দেখ কি কাণ্ড হয়ে গেল ? এই যে আমার বাক্য – আমি কভু আমার না । করি এক, হয় আর ।
৩০৩. এমন একটা অমানুষিক অবিচার হয়ে গেল – আশ্চর্য্য, অভূতপূর্ব । সমানে গুলি । বাছাবাছি নেই । একধার দিয়ে অত্যাচার । কিন্তু জান্ গিয়া । ফুল-চন্দন ছিট্কে মোর ঘুরাদে ।
৩০৪. গ্রন্থ প্রতিপাদ্য প্রকৃত বিদ্যালাভ হইতে অনেক দূরে । গ্রস্থ প্রতিপাদ্য বিষয়- বিদ্যালাভ । যে বিদ্যাতে আত্মবিকাশ, আত্মজ্ঞান লাভ হয় না -সে বিদ্যা বিদ্যাই না ।
৩০৫. মানুষের ধৈর্য্য চাই । ধৈর্য্য না থাকলে মানুষই না । ধৈর্য্য ধরে থাক – আমি আছি পাছে পাছে ।
৩০৬.
আটখানা রুটির ইতিকথা
‘শিবোহম্-শিবোহম্-শিবোহম্’, – দিব্যকান্তি বিশিষ্ট, জ্যোতির্ম্যয়, সৌম্যদর্শনধারী এক নবীন সন্ন্যাসী উপস্থিত হলেন পাঞ্জাব প্রদেশের এক গৃহস্থের কুটিরে । গৃহস্বামিনী গৃহাভ্যন্তরে ব্যস্ত ছিলেন গৃহকর্মে, তাড়াতাড়ি ছুটে এলেন গৃহদ্বারে, এসে চেয়ে দেখলেন- দর্শন করলেন দু’চোখভরে দর্শন করলেন কটিমাত্র বস্ত্রাবৃত শূলপানি কমগুলুধারী সর্বত্যাগী এক সন্ন্যাসীকে – মন বারবার বলছে এযে সাক্ষাৎ দেবাদিদেব মহাদেব তারই গৃহপ্রাঙ্গণে আজ আবির্ভূত । আনন্দ সাগরে ভাসতে ভাসতে গৃহকর্ত্রী ভুলেই গেলেন এই সর্বত্যাগীকে যথাহিত অভ্যর্থনা করে আসন পেতে দিতে । ভক্তিমতীর তন্ময় অবস্থা কাটানোর জন্য দিব্যলোকের অধিকারী আগন্তুক সন্ন্যাসী আবার সেই কম্বুদকণ্ঠে – স্নেহভরা সুরে বলে উঠলেন, – ‘কিছু খানা চাই মাঈজি !’ যাঁর ধামে কোন কিছুরই অভাব নাই, যাঁর রাজ্যে অন্নপূর্ণ স্বয়ং বিরাজমান সেই কৈলাসপতির আজ দীন ভিখারীর বেশ ! এদিকে গৃহস্বামিনীর মনে চিন্তা, ঘরে আছে বাসী রুটি কয়েকখানা মাত্র । তাহাতো এই পরম পুরুষ্কে দেওয়া যায় না । তাতে যে গৃহস্থের অকল্যাণ হবে । ভক্তিমতী পাঞ্জাবী মহিলাটি সন্ন্যাসীর জন্য যথা শক্তি আহার্য প্রস্তুত করলেন । অন্যান্য আহার্যের সাথে সন্ন্যাসীর ভোগে তুলে দিলেন কয়েকখানা সদ্য তৈরি রুটি । ভোক্তা তুলে নিলেন আটখানা রুটি । এই আটখানা রুটি কি ? না-শিবতন্ত্রানুসারে ঘৃণা, লজ্জা, ভয়, মান, ক্রোধ, মোহ, ক্ষুধা, তৃষ্ণা – মোট এই আটটি পাশ – যা জীবের মুক্তিপথের প্রধান অন্তরায় বা বাধা । করুণাবতার বুড়াশিব ব্রজানন্দ ভাগ্যবতী মহিলাটির এই আটটি পাপ মুক্ত করে তাকে মুক্তি দিলেন – সত্যম্-শিবম্-সুন্দরম্ – এর আনন্দালোক কৈলাস ধামে ।
৩০৭. ভক্ত যার আগে আগে, আমি যাই তার পাছে পাছে । শেষের দিনের সাথী আমি । শেষের দিনের সাথী আর কেহই হ’বে না ।
৩০৮. সাত কুয়ার জল খেওনা; এক কুয়ার জল খেও । ভক্তি বিশ্বাস নিয়ে এক কুয়ার জল খেও, তবেই সব হ’বে ।
৩০৯. ধর্ম ভিন্ন বিদ্যা, ধন অকর্মন্য । ধর্ম ভিন্ন বিদ্যা অবিদ্য; ধর্ম ভিন্ন ধন নিরর্থক ।
৩১০. অভিমান সুরাপান । সাধুর ধর্ম অভিমান শূন্য হওয়া ।
৩১১. স্বাস্থ্য সুখ অমৃত তুল্য । স্বাস্থ্য সুখ না থাকলে সব বৃথা । স্বাস্থ্য বিনা ধন জন কিছু না ।
৩১২. প্রসাদে হরি – ভক্তির উদয় হয় ।প্রসাদস্ত ভগবান্ স্বয়ম্ । প্রসাদে সর্ব দৃঃখাণাঃ হানিঃ ।
৩১৩. পরিষ্কার করে এসেছি, কিছু রেখে আসিনি । ভাঙ্গা-গড়া আমার স্বভাব । একবার ভাঙ্গি একবার গড়ি । আমার স্বভাবই এই ।
৩১৪. তোমার আমার একই । আমার মনে থাক বা না থাক, তোমার মনে থাকলেই হইল ।
৩১৫. গুরুদেব বিনা নাহি ভাগ জাগে । গুরুদেব বিনা ভাগ্য জাগাইবার কারও শক্তি নাই । বন্দুকের হাত থেকেও প্রাণ বাঁচে, গুরুর নামে ভূত পালায় ।
৩১৬. রাজ ধর্ম প্রজা-পালন, প্রজা পীড়ন নয় । রাজ ধর্ম পালন না করে অসুর বৃত্তি । এই হ’বে ধবংসের কারণ । যুগে যুগে তাই হয়েছে ।
৩১৭. ভাগ্য কামাই কইরা না আইলে ভাগ্য – পাওয়া যায়না । ভাগ্য কামাই করতে হয় ।
৩১৮. পথে মন্দির, আশ্রম, বিল্ববৃক্ষ, বটবৃক্ষ উলঙ্গন করে যাওয়া অশুভ লক্ষণ ।
৩১৯. আমার ইচ্ছার সাথে তোমার ইচ্ছা মিলাও । ফল আশু হবে । ভক্ত দিয়াই ভগবানের পরিচয় । আমার চেয়ে আমার ভক্ত বড় । আমার কি মূল্য আছে ? আমার চেয়ে আমার ভক্ত বড় !
৩২০. নাম মহৌষধি । নামে রোগ সারে । নামে ভক্তির উদয় হয় ।
ভগবান ব্রজানন্দ রিসার্চ এন্ড এডুকেশন ইন্সটিটিউট